যেকোনো বেতন কাঠামোতে শ্রমিকের প্রাপ্য ভাতা ও সুবিধাগুলো নির্ভর করে মূল
মজুরির ওপর। দেশে চামড়া,
জাহাজভাঙা, নির্মাণ শিল্পসহ কয়েকটি খাতের শ্রমিকের
নির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো রয়েছে। দেখা গেছে, রফতানি আয়ে শীর্ষে
থাকা পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাই অন্যান্য খাতের শ্রমিকের তুলনায় মূল মজুরি কম পাচ্ছেন।
খোদ পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোতেও শ্রমিকের মূল মজুরি বিগত সময়ের তুলনায় ক্রমশ
কমছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নিম্নতম ৮ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা
করা হয়েছে। এতে নিম্নতম গ্রেডে মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১০০ টাকা। ১৯৯৪ সাল
থেকে এ পর্যন্ত ঘোষিত পোশাক খাতের মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাতে শ্রমিকের
মূল মজুরির হার ক্রমেই কমছে। পোশাক শিল্পে শ্রমিকের মূল মজুরির পরিমাণও অন্যান্য
খাতের তুলনায় সবচেয়ে কম বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে নির্ধারণ হওয়া বিভিন্ন মজুরি
কাঠামো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৪ সালে পোশাক শ্রমিকের মূল
মজুরি ছিল মোট মজুরির ৬৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০০৬ সালে মূল মজুরি বেড়ে মোট মজুরির ৬৭
দশমিক ৬৯ শতাংশ হয়। এর পর থেকে ক্রমেই কমছে মূল মজুরির অংশ। ২০০৬ থেকে ২০১৮
পর্যন্ত ঘোষিত মজুরিতে মূল মজুরির অংশ যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ৬৭, ৫৬ দশমিক ৬০ ও ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত চামড়া, নির্মাণসহ ১৬টি খাতে শ্রমিকের মূল মজুরি মোট
মজুরির ৫৪ দশমিক ৬৯ থেকে ৬৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছর পোশাক খাতের
শ্রমিকদের মোট মজুরিতে মূল মজুরির অংশ হয়েছে ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
২০১৩ সালে মূল মজুরি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, যা সবচেয়ে কম। আমরা নিম্নতম গ্রেড
নিয়ে আলোচনা করলেও অন্যান্য গ্রেড নিয়ে আলোচনা তেমন একটা করি
না। মূল মজুরি বৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। মূল মজুরির ওপর অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি
নির্ভর করে। তাই মূল মজুরিকে মানসম্মত পর্যায়ে নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মূল মজুরি
৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। মূল মজুরি না বাড়লে ন্যূনতম
মজুরিকে সুবিধাজনক পর্যায়ে নেয়া যাবে না।
গার্মেন্ট
শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সহ অনেক শ্রমিক সংগঠন মজুরি রিভিশনে
পিটিশন করেছে কিন্তু মজুরি রিভিশনে উদ্যোগ সরকারের আছে বলে
মনে হচ্ছেনা। অন্যদিকে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ
শ্রমিক অপারেটর। তাদের মজুরি বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি দরকার। এখনো সুনির্দিষ্টভাবে এই
শ্রমিকদের মজুরি ঘোষণা হইনি। বুলগেরিয়ার মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশে
পোশাক শ্রমিকের মজুরি ২০০ ডলার হলেও বাংলাদেশে তা ১০০ ডলারে উন্নীত করা যায়নি। গেজেট
ঘোষণার আগেই দাবিগুলো জরালো ভাবে সরকারের সামনে তুলে ধরা দরকার।
এ
বিষয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ১২
শতাংশ শ্রমিক মেঝেতে ঘুমায়। ১৭ শতাংশের বৈদ্যুতিক পাখা নেই। ৮৩ শতাংশকে টয়লেট
শেয়ার করতে হয়। ৮৪ শতাংশ শ্রমিক একই রান্নাঘর ব্যবহার করে। সিপিডি প্রস্তাবিত মোট
মজুরি ছিল ১০ হাজার ২৮ টাকা, মূল মজুরি ৫ হাজার ৬৭০।
শ্রমিকের সঞ্চয়ের প্রস্তাবও ছিল। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে উপরের গ্রেডে যেন মজুরি
সুষমভাবে বৃদ্ধি হয়। গ্রেড ৮ রয়েছে শিক্ষানবিশ। এ গ্রেডটি থাকার দরকার আছে বলে মনে
হয় না। শ্রমঘন এলাকায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধি হয় তুলনামূলকভাবে বেশী। এক্ষেত্রে
বাড়িওয়ালাকে ঋণ দিয়ে বহুতল করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা যেতে পারে। চিকিৎসা
ব্যবস্থা ও স্কুল নির্মাণে এনজিওদের উদ্যোগ নিতে হবে। মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর ব্র্যান্ড
বায়ারদের প্রতিক্রিয়া জানা দরকার। পোশাক কেনার মূল্য বৃদ্ধি করে মজুরি বাড়ানোয়
ব্র্যান্ডগুলোর কোনো উদ্যোগ থাকবে কিনা দেখতে হবে। মজুরি বোর্ডের অবস্থান ও কাঠামো
নিয়ে দুর্বলতা রয়ে গেছে।
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড
ইউনিয়ন কেন্দ্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন