(ক)
মুখ্যতঃ শ্রমিক এবং মালিকের সম্পর্ক, অথবা শ্রমিক এবং শ্রমিকের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ
করার লক্ষ্যে কোন পার্থক্য ছাড়াই সকল শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার এবং
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সাপেক্ষে তাহাদের নিজস্ব পছন্দের ট্রেড ইউনিয়নের
যোগদানের অধিকার থাকিবে ।
(খ)
মুখ্যতঃ মালিক এবং শ্রমিকের সম্পর্ক, অথবা মালিক এবং মালিকের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ
করার লক্ষ্যে কোন পার্থক্য ছাড়াই সকল শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার এবং
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সাপেক্ষে তাহাদের নিজস্ব পছন্দের ট্রেড ইউনিয়নের
যোগদানের অধিকার থাকিবে ।
(গ)
শ্রমিকগণের এবং মালিকগণের ট্রেড ইউনিয়নের ফেডারেশন গঠন করার এবং উহাতে যোগদান করার
অধিকার থাকিবে, এবং উক্তরূপ কোন ইউনিয়ন বা ফেডারেশন এর শ্রমিক অথবা মালিকগণের
সংগঠনের কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কনফেডারেশন এর সহিত সম্বন্ধীকরণের অধিকার
থাকিবে ।
(ঘ)
ট্রেড ইউনিয়নসমূহের এবং মালিকদের সমিতিসমূহের নিজস্ব গঠনতন্ত্র ও বিধিমালা
প্রণয়নের, সম্পুর্ন স্বাধীনভাবে নিজস্ব প্রতিনিধিদের নির্বাচনের, সমিতির প্রশাসন ও
কর্মতৎপরতা, সংগঠনের এবং কর্মসুচী প্রনয়নের অধিকার থাকিবে ।
(ঙ)
যে প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হইবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রম শক্তি বা
সদস্যে শতকরা ২০ ভাগ মহিলা থাকিলে সে ক্ষেত্রে ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটিতে ন্যূনতম ১০
ভাগ সদস্য থাকিতে হইবে ।
(তবে
শর্ত থাকে যে, এই আইন দ্বারা যে ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন হইবে সেই ইউনিয়ন এই আইন
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে)
বাংলাদেশ
শ্রম আইন ২০০৬ এর এই অধ্যায়ে শ্রমিকদের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি
বৃদ্ধিসহ মালিক পক্ষের সহিত সুসম্পর্ক বজায় রেখে আইন ও বিধির আওতায় প্রয়োজনীয়
সুজগ-সুবিধা এবং বিবিধ সমস্যা সমাধানসহ যাবতীয় বিষয়াদী সুষ্ঠভাবে সমাধানের
নিমিত্তে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার দেওয়া হইয়াছে । তাছাড়া মালিকপক্ষ এবং
শ্রমিকগন ট্রেড ফেডারেশন ইউনিয়ন গঠন এবং উহাতে যোগদান করার অধিকার সবার থকিবে ।
অথচ
বাস্তবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার নেই বললেই চলে । বাংলাদেশে
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি গার্মেন্ট কারখানা আছে আর মাত্র ৫০০
গার্মেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন আছে, তাও সচল না, বা সচল হতে দেওয়া হয়নি, যদি দু-একটি সচল
থাকেও তা মাকিলদের অনুগত ট্রেড ইউনিয়ন । এবং গার্মেন্ট শিল্পে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত
মিলিয়ে প্রায় ১০০’র বেশি ফেডারেশন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে । কিন্তু বাস্তবে
দু-একটি ফেডারেশন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করলেও বেশির ভাগ ফেডারেশন মালিকদের
অনুগত, তারা গোপনে কিংবা প্রকাশ্য মালিকদের পক্ষ নিয়েছে ।
আর যে ফেডারেশন শ্রমিকদের অধিকারে অটল থাকে তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়না ।
তার
জলজ্যান্ত প্রমান রামপুরা অবস্থিত আশিয়ানা গার্মেন্টস ইন্ডঃ লিমিটেড’এ গার্মেন্ট
শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাড্ডা-রামপুরা আঞ্চলিক কমিটি’র উদ্যেগে আশিয়ানা
গার্মেন্টস ইন্ডঃ লিমিটেড কারখানাতে শ্রম আইনের সকল বিধি-বিধান মেনে ট্রেড ইউনিয়ন
গঠন করে রেজিষ্ট্রার অফ ট্রেড ইউনিয়নে নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করা হয় ।রেজিষ্ট্রার
অফ ট্রেড ইউনিয়ন ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে কিছু সংশোধনের জন্য নুটিশ পাঠায় । শ্রম আইন
অনুযায়ী ৩০দিনের মধ্যে সংশোধন জমা দিতে গিয়ে জানা যায় উক্ত কারখনাতে এরি মধ্যে
আরেকটি ইউনিয়ন নিবন্ধন হয়ে গেছে । তার পর যে শ্রমিকরা গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড
ইউনিয়ন কেন্দ্রে’র পক্ষে ইউনিয়ন গঠন করে ছিলেন সেই শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে
দেওয়ার মালিক পক্ষ নানান ষড়যন্ত্র করতে থাকেন । সর্বশেষ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড
ইউনিয়ন কেন্দ্রে’র আশিয়ানা গার্মেন্টস ইন্ডঃ লিমিটেড’এ নেতা মামুনকে ৩য় ফ্লোর থেকে
মৌখিক ভাবে বদলি করে ৫ম ফ্লোরে বদলি করে, মামুন বদলীর লিখিত আদেশ দাবী করায় তাকে
কারখানা থেকে বহিষ্কার করে শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানালে মালিক পক্ষ সমাধান না করে ইচ্ছে
করে কারখানাটি গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ইং
তারিখ বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩(১)ধারা অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করেন । যা বাংলাদেশ শ্রম
আইন ১৩(১)ধারা অনুযায়ী সঠিক হয়নি । সমস্যা সমাধানে পরের দিন ৩১ জানুয়ারি
২০১৮ইং তারিখ নির্ধারিত সভাকে কেন্দ্র
করে শ্রমিকরা মালিক সমিতি বিজিএমইএ কার্যালয়ে গেলে আলোচনা হবে না বলে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে
দেন । শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে সেখানে
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরু করলে একপর্যায়ে বিজিএমইএ’র সিনিয়র অতিরিক্ত
সচিব মনসুর খালেদের নেতৃত্বে শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হয় । হামলায় ৪০ জন নারী
শ্রমিক গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । রিক্সা-মাইক
ওয়ালার হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং রিক্সা-মাইক ভেঙ্গে চুর্ন চুর্ন করে দেয় । বিজিএমইএ
মামলা করেছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে । অথচ শ্রমিকদের মামলা পুলিশ নেয়নি । বিজিএমইএ-র দায়েরকৃত মামলায় ১২ জন শ্রমিকনেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যাদের ৯ জনই ঘটনাস্থলে ছিল
না। বাকি ১৫০ জন শ্রমিক অজ্ঞাতনামা । আশিয়ানা গার্মেন্ট কারখানার গেট থেকে কারখানার শ্রমিকনেতা এবং
প্রস্তাবিত আশিয়ানা গার্মেন্ট ইন্ডা. লি. শ্রমিক ইউনিয়নের
অন্যতম সংগঠক রাসেল আহমেদ ও মুন্না মিয়াকে
গ্রেফতার করে। তাদের রমনা
থানার পুলিশ হেফাজতে রাতভর
রেখে সিএমএম
আদালতে হাজির করে ১০ দিনের
রিমান্ড চাওয়া হয়
। শ্রমিকনেতা রাসেল ও মুন্নার আইনজীবীগণ জামিন আবেদন করলে এবং নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে
উত্থাপিত অভিযোগ
মিথ্যা মর্মে যুক্তি প্রমাণ
উপস্থাপন করার প্রেক্ষিতে তাদের
১ দিনের রিমান্ড আদেশ দেয়া হয়
এখনো তাদের জামিন মঞ্জুর হয়নি । এদিকে ২৬ জন শ্রমিককে বে-আইনি ভাবে চাকুরি চ্যুত
করা হয়েছে ।
আশিয়ানা
গার্মেন্টস ইন্ডঃ লিমিটেড’এর মত আরো অনেক ঘটনা আছে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার কারনে
নির্যাতন-নিপিড়ন-মামলা-হামলা’স্বীকার হতে হয়েছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন