Biplobi Barta

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৭

গার্মেন্ট শ্রমিকরা সংগঠিত শক্তির লড়াই এর মাধ্যেমে তাদের এই দাবি আদায় করবে ।

বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পে প্রায় ৫৩০ টি রেজিষ্টাট বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন এবং প্রায় ৪৩টি রেজিষ্টাট ফেডারেশন আছে । অথচ ২০০৬ / ২০১০ / ২০১৩ সালের মজুরী বৃদ্ধীর আন্দলন থেকে শুরুকরে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিটা শ্রমিক আন্দলনে তাদের সেই ভাবে ভূমিকা রাখতে আমি দেখিনি । ২০১০ সালে নিম্নতম মজুরী ৫০০০ টাকার দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা যখন মরণপন লড়াই করছিল তখন অনেক শ্রমিকনেতাই বলেছিল গার্মেন্ট শ্রমিকরা হটকারিতা করছে ।
আমি ২০০২ সাল থেকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাথে কাজ করছি , আমি দেখেছি গার্মেন্ট শ্রমিকরা যখন তাদের ন্যায়সংগত দাবিদাবা নিয়ে কথা বলে তখন তাদের বোঝানো হয় এই শিল্পকে বাঁচাতে হবে গার্মেন্ট মালিকদেরকে বাঁচাতে হবে অথচ কাউকে বলতে শুনিনি গার্মেন্ট শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে ।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সকল আইন কানুন মেনেই সঠিক ভাবেই ২০০৬ সালের অনেক আগেই সরকারের কাছে রেজিষ্টেশনের জন্য আবেদন করেছে অথচ সরকার এখন পর্যন্ত রেজিষ্টেশন দেইনি কিংবা বাতিলো করেনি । কারন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র শত বিপদেও গার্মেন্ট শ্রমিকদের পাশে থেকেছে , সরকার কিংবা গার্মেন্ট মালিকদের চামচামি করেনি ।
গার্মন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র রেজিষ্টেশনের অপেক্ষয় বসেনাথেকে ২০০৬ /২০১০ / ২০১৩ সালের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধীর আন্দলন সহ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দলনে কঠর ভূমিকা পালন করে আসছে ।
অথচ
জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২ এর ৭ নং ধারাতে বলা আছে
--------------------------------------
৭.০০. ন্যায্য মজুরি :
সরকার শ্রমিক ও তার পরিবারের জন্য মানসম্মত জীবন ধারণ উপযোগী ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যার মধ্যে অন্যতম হবে :
১. নিম্নতম মজুরির মানদণ্ড নির্ধারণ;
২. দ্রব্য মৃল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে নিয়মিত মজুরি পর্যালোচনা ও পুনঃনির্ধারণ;
৩. শ্রমিকের দক্ষতা ও কাজের প্রকৃতির সাথে সামন্জ্ঞস্যপৃর্ণ বিভিন্ন স্তরের মজুরি নির্ধারণ; এবং
৪. নারী-পুরুষ ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে মজুরির বৈষম্য নিরসনসহ বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ ।
ন্যায্য মজুরি ও মজুরির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে এবং শ্রমিক সমাজকে কাজে আত্মনিয়োগে ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করবে ।
২০১৩ সালে শ্রমিকর দাবি জানিয়ে ছিল নিম্নতম মূল মজুরি ৮,০০০ টাকা । নভেম্বর মাসে অনেক অন্দলনের পর সরকার ঘোষনা করেছিল ।
শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য নিম্নতম মজুরীর হার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৩
গ্রেড-১ : বেসিক ৮,৫০০/- সর্বমোট ১৩,০০০/-
গ্রেড-২ : ৭,০০০/- ১০,৯০০/-
গ্রেড-৩ : ৪,০৭৫/- ৬,৮০৫/-
গ্রেড-৪ : ৩,৮০০/- ৬,৪২০/-
গ্রেড-৫ : ৩,৫৩০/- ৬,০৪২/-
গ্রেড-৬ : ৩,২৭০/- ৫,৬৭৮/-
গ্রেড-৭ : ৩,০০০/- ৫,৩০০/-
গ্রেড-৮ : ২,২০০/- ৪,১৮০/-
অথচ
সরকারি এক জন কর্মচারি সর্বনিম্ন বেসিক বেতন পান ৮,২৫০ টাকা সব মিলিয়ে মোট মজুরি পান ১৮,৫০০ টাকা । তাই আমরা দাবি জানিয়েছি নিম্নতম মূল মজুরি ১০,০০০ টাকা , বাড়ি ভাড়া ৪,০০০ টাকা, গাড়ি ভাড়া ১,০০০ টাকা , চিগিৎসা ভাতা ১,০০০ টাকা ।আশুলিয়ার শ্রমিকরা শান্তি পূর্ণ ভাবে বেতন বৃদ্ধির উক্ত দাবি সমর্থন করার কারনে তাদের ছাটায় দমন নির্ষাতন-মামলা হামলা নেমে এসেছে । গার্মেন্ট শ্রমিকরা সংগঠিত শক্তির লড়াই এর মাধ্যেমে তাদের এই দাবি আদায় করবে ।

টাম্পাকো শ্রমিকের এ লাশ ফেলে ঈদ করি কিভাবে

টাম্পাকো শ্রমিকের এ লাশ ফেলে ঈদ করি কিভাবে
: কেএম মিন্টু


এবারের ঈদটা ঢাকাতেই কাটিয়ে দিলাম, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু যাওয়া হল না। এবারও অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিষদ করেননি, তাদের নিয়ে আমরা যখন আন্দোলন করছিল ঠিক সেই সুময় গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত টাম্পাকো ফয়েল কারখানাতে ব্রয়লার ব্রাস্ট হয়ে, অসং¶ শ্রমিকের জীবন গেল। তাদের এই অবস্থা রেখে কিভাবে ঈদ করতে আমি গ্রামের বাড়িতে যায়। আমার মত টাম্পাকো ফয়েল কারখানার শ্রমিকেরা, পরিবারের সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল কিন্তু তাদের যাওয়া হলনা।

যত দূর শুনেছি টাম্পাকো কারখানাটি অনেক আগে ঝুকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছিল, তবুও কারখানার মালিক জোর করে কারখানাটি চালাচ্ছিল। কারণ কারখানার মালিকদের কাছে শ্রমিকের জীবনের মূল্য নেই, তাদের কাছে মুনাফাই হল মূল কথা। কে বাঁচলো আর কে মরলো এটা যেন তাদের দেখার বিষয় নয়! এবং কারখানার মালিকরা খুব ভালো করে জানে, যেভাবেই হউক তাদের কারখানায় শ্রমিক মারা যাক না কেন তাদের কোন শাস্তি  হবে না। অল্প কিছু টাকা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যার কারণে আমার মনে হয় টাম্পাকোর মত আরো অনেক ঘটনা আগামীতে আরো ঘটবে। কারণ আমাদের সবার মনে থাকার কথা এর আগে ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর তাজরিন গার্মেন্টের আগুনে পুড়ে ১১৪ জন শ্রমিক পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, দোষীকে শান্তির আওতায় আনা যায় না। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ১১৩৫ জন শ্রমিক ভবনের নিচে চাপা পড়ে ও আশুলিয়ার নরসিংহপুর হা-মিম গার্মেন্টে ৩৩জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা হলো, কারো কোন শাস্তি হয়নি। ১৯৯০ সালে মিরপুরের সারাকা গার্মেন্টে ২৭ জন, ১৯৯৪ সালে মিরপুরে প্রোস্টার গার্মেন্টে ৫ জন, ১৯৯৫ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে লুসাকা গার্মেন্টে ১০ জন, ১৯৯৬ সালে ঢাকার সান্টেস্ক গার্মেন্টে ১৪ জন, তোহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন, নারাণগঞ্জে পদ্মা গার্মেন্টে ০১ জন, ১৯৯৭ সালে বিভিন্ন কারখানায় ০৫ জন, ১৯৯৮ সালে মগবাজারে বিপি গার্মেন্টে ০১ জন এবং ১৯৯৯ সালে গাজীপুরে রোজ গার্মেন্টে ০৫ জন মারা যায়। ২০০০ সালে নরসিংদীর শিবপুরে চোধুরী নীটওয়ারে ৬২ জন ও বনানির গ্লোব নিটিং ফ্যাশনে ১২ জন, ২০০১ সালে ঢাকার কাফরুলে ক্যাপিটাল গার্মেন্টে ২৬ জন ও মাইক্রো সোয়েটারে ২৪ জন শ্রমিক মারা যায়। ২০০৪ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ২৩ জন, ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে সান নিটিংএ ২৬ জন ও আশুলিয়ার স্পেক্টাম গার্মেন্টে ভবন ধসে ৬৬ জন শ্রমিক মারা যায়। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের কেটিএস গার্মেন্টে ৬৫ জন মারা যায়, ২০০৮ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ০৮ জন মারা, ২০০৯ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ০৫ জন, ২০১০ সালে ফতুল্লার ম্যাট্রিক্স সোয়েটারে ০১ জন, আশুলিয়ার ইন্টারকো সোয়েটারে ০৩ জন, গাজীপুরে কাদেরীয়া সিনথেটিকে অগ্নিকান্ডে ১০ জন, জামালপুরে আরিফ ট্রেক্সটাইল  মিলে ০১ জন, চট্টগ্রামে ফ্যাশন পার্ক গার্মেন্টে ০১ জন, ২০১১ সালে পদ্মা ফ্যাশন গার্মেন্টে ০১ জন, গাজীপুরে ওয়ান ট্যাক্স গার্মেন্টে ০১ জন, ঢাকার চমক ডাইং এন্ড টেক্সটাইলে ০৬ জন, ইউরো টেক্স ০২ জন, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টে ০১ জন, ২০১২ সালে তাজরিন সহ বিভিন্ন গার্মেন্টে ১১৮ জন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা , হা-মিম, স্মাট, তুংহাই সহ ১১৮৮ জন, ২০১৪ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ৫৩ জন, ২০১৫ সালে ফতুল্লার এসবি নিটওয়ার কারখানাই ০৫ জন নিহত হয়েছিল। তাদেও বিচার পাইনি।  হাজার হাজার শ্রমিক পুঙ্গু হয়েছে তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি এবং ঠিকমত জিজ্ঞাসাও দেওয়া হয়নি। কারো কোন সাজা হয়েছে কিনা আমার যানা নেই। কারখানার মালিকদের ঠিক মত যদি বিচার হত-বিচারে সাজা হত তাহলে বারবার কারখানায় শ্রমিকদের জীবন দিতে হতনা ।

টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে ১১ জন নিখোঁজ আছে। নিখোঁজ যারা তারা হয়তো কারখানার ভেতরে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা একটি কারখানাই আগুন নেভাতে  যদি এত সময় লেগে যায় তাহলে এর থেকে আরও বড় ঘটনা যদি ঘটে তাহলে কি হতে পারে?

GWTUC News Link:















আশুলিয়ায় আলোচনার মাঝপথেই কারখানা বন্ধ করে দেন মাল...

আশুলিয়ায় আলোচনার মাঝপথেই কারখানা বন্ধ করে দেন মাল...: আশুলিয়ায় আলোচনার মাঝপথেই কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকরা

“পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ঃ সমাধান কোন পথে?”

৬ জানুয়ারি ২০১৭
প্রগতি সম্মেলন কক্ষ,
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত
পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ঃ সমাধান কোন পথে?”
গোলটেবিল আলোচনায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন উত্থাপিত বক্তব্য

সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন
প্রিয় সুধীমন্ডলী,
গত চার দশকে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করে আসছেদেশের মোট রপ্তানী আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ অর্জনকারী গার্মেন্ট শিল্পের রপ্তানী আয় গত অর্থ বছরে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে 
শ্রমিকদের উপর জুলুম-নির্যাতন-দমননীতি চালিয়ে সস্তা শ্রমের উপর বিকশিত গার্মেন্ট শিল্পে আমরা দুটি চিত্র দেখতে পাইএকটি হলো সামান্য পুঁজি বিনিয়োগকারী মালিকরা নব্য ধনিকে পরিণত হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেনদেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেনঅপরটি হলো শ্রমিকদের জীবনে চলছে চরম অভাব-অনটন, ক্ষুধা-দারিদ্রতাআজও অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে রোগাক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় অসংখ্য শ্রমিককেবেঁচে থাকলে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরী করার কথা কিন্তু ৪০-৪৫ বছর বয়সেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে হয়বাকী ১৫-২০ বছরের কর্মক্ষমতাকে শোষণ-নির্যাতনের মাধ্যমে নীরবে হত্যা করা হয়সামান্য পুঁজির মালিকরা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টকে কোনোরকম বিবেচনায় নেন নাযে কারণে শ্রমিকদের জীবন ধারণ উপযোগী ন্যায্য মজুরি নাইঅতীতের প্রাপ্ত রেশনিং, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের ন্যূনতম ব্যবস্থা নাইমালিকরা অর্থ-সম্পদ ও প্রাচুর্যের প্রভাবে রাষ্ট্র ও সমাজে ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন করার ফলে আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না বিধায় অধিকাংশ কারখানায় আইনানুসারে শ্রমিকদের প্রসুতি কল্যাণ সুবিধা ও অন্যান্য ছুটি প্রদান করা হয় নাউৎসবভাতা, গ্র্যাচুইটি নাইচাকুরী শেষে সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করা হয় নাএমনকি আজও আইডি কার্ড নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নিশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে ও সমাজজীবনে নিরাপত্তা আজ ও পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়নিযার ফলে এ পর্যন্ত রানাপ্লাজা, তাজরিনের পরেও অব্যাহতভাবে দুর্ঘটনাজনিত হত্যাকান্ড চলছেএ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কারখানায় অগ্নিকান্ড ও ভবন ধ্বসে প্রায় চার হাজার শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছেহাজার হাজার শ্রমিককে পঙ্গুত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছেএসব জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে কখনও কখনও গার্মেন্ট শ্রমিকরা জীবন বাঁচাতে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়মালিকরা তখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের আওয়াজ তোলেন উস্কানীর আওয়াজ তোলেনসরকারও মালিকদের সুরে সুর মেলায়শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টকে বিবেচনায় না নিয়ে দমননীতি চালানো হয়সাম্প্রতিক আশুলিয়ায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে দমন করার জন্য নানারকম বিভ্রান্তমূলক অসত্য বক্তব্য পেশ করা হয়েছেসে বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়সরকার এবং বিজিএমইএ বললেন যে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো দাবিনামা পেশ করা হয়নিআমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর নিকট এবং ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর নিকট নিম্নতম মূল মজুরি ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা এবং মোট মজুরি ১৬,০০০/- (ষোল হাজার) টাকা নির্ধারণের দাবিতে দাবিনামা পেশ করেছিঅপরাপর শ্রমিক সংগঠন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দাবিনামা পেশ করেছেনদাবির বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং ফৌজদারী কার্যকলাপ ছাড়াই শ্রমিকদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে কারগারে আটক বলা হয়েছেহাজার হাজার শ্রমিককে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছেবিজিএমইএ ঘোষণা দিয়ে ১৩(১) ধারায় ৫৯ টি কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদেরকে বন্ধকালীন সময়ের বেতন না দেয়ার ঘোষণা দিলেন যা আইন সংগত নয়কেননা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুসারে কোন কারখানার কোন সেকশন বা বিভাগের শ্রমিকরা বেআইনী-ধর্মঘট করলে অন্য সেকশন বা বিভাগ চালাতে অক্ষম হলে সে ক্ষেত্রে কারখানার মালিক শ্রম পরিদর্শকের অণুমতি সাপেক্ষে ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ করতে পারবেসেক্ষেত্রে শ্রমিকদের বন্ধকালীন প্রথম তিন দিন মজুরি প্রদান করতে হবেপ্রথমতঃ নির্দিষ্ট কোনো কারখানার কোনো সেকশন বা বিভাগে বেআইনী ধর্মঘট হয়নিফলে ১৩(১) ধারা প্রযোজ্য নহেদ্বিতীয়তঃ শ্রম আইন বিজিএমইএকে কারখানা বন্ধ বা খোলার অধিকার দেয়নি 
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নেইট্রেড ইউনিয়ন করতে গেলেই চাকুরীচ্যুতি, হামলা-মামলার স্বীকার হতে হয়নানাচাপে সাম্প্রতিক চার শতাধিক গার্মেন্ট কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হলেও মালিকরা তার স্বীকৃতি দেয় না এবং ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপ করা সম্ভব হচ্ছে নাযেই মর্মে ইতিমধ্যেই আইএলও সরকার এবং মালিকদের বলেছেএদিকে আইএলও কনভেনশনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বারবার শ্রম আইনকে শ্রমিকদের বিপক্ষে মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করা হচ্ছেশ্রম বিধিমালা-২০১৫ নামে একটি বিধিমালা করে শ্রমিকদের নির্যাতনের জন্য মালিকদের হাতে এটিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে তুলে দেয়া হয়েছেবাংলাদেশের শ্রমিকদের অতীতের প্রাপ্ত রেশনিং, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা খর্ব করা হয়েছেঅনেক মালিক ১টি ২টি থেকে ২০/৩০টি এমনকি ৪০/৫০টি কারখানার মালিক হলেও শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার জন্য কোনো ব্যবস্থা করেননিসার্বিকভাবে বিবেচনা করলে নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, আমরা এসব অধিকারের কথা বললেই মালিকরা সক্ষমতার কথা বলেন, মজুরিবৃদ্ধি ও প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্পের সক্ষমতা এবং শ্রমিকের চাহিদা দুটি বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবেআমরা এক্ষেত্রে তিন স্তরের কারখানার কথা জানিকিছু কারখানা বড় হয়েছেকিছু মাঝারি, কিছু ছোট কারখানা আছে যেখানে সময়মত মজুরি ও সারাবছর কাজ না থাকায় সেখানকার শ্রমিকদেরকে সম্পূর্ণরূপে অমানবিক জীবনযাপন করতে হয়এ বিষয়ে কারখানার সক্ষমতা অর্জন না করায় শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছেআমরা এতোক্ষণ মালিকদের উন্নতি ও শ্রমিকদের উপর অন্যায়ভাবে নির্যাতনের কিছু বিষয় বুঝেছিএকইসাথে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে যে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি পৃথিবীর যেকোনো দেশের শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় কমবর্তমান প্রাপ্ত মজুরিতে খেয়ে পরে বেঁচে থেকে শ্রমিকদের পক্ষে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা রক্ষা করা কোনো ক্রমেই সম্ভব হচ্ছে নাশ্রমিকদের জীবনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছেমুদ্রাস্ফীতি হয়েছেমন্ত্রী, এমপি, আমলা, সরকারি, চাকুরীজীবিদের বেতন ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে কিন্তু গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির তোলায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলছেন, শ্রম আইন অনুসারে ৫ বছরের পূর্বে মজুরি বৃদ্ধির বিধান নেইবাস্তবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুসারে ৩ বছর পর মজুরি বৃদ্ধির আইনী বিধান রয়েছেযা অতীতে ২ বছর পর পর বৃদ্ধি করার আইনী বিধান ছিলতাছাড়া বর্তমান আইন অনুসারেও শ্রমিকরা ২ বছর পর পর দাবি নামা পেশ করতে পারেএমনকি শ্রমিকের জীবনের ব্যয়ভার বৃদ্ধি হলে ১ বছর পরেও শ্রমিকপক্ষ দাবি জানালে মজুরি বৃদ্ধির বিধান রয়েছে২০১৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির সময় সর্বনিম্ন মূল মজুরি ৩০০০ টাকা এবং মোট মজুরি ৫,৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুলকেননা ৩০০০-৪০০০ টাকা বাড়ীভাড়া বাবদ প্রদান করার পরে মাত্র ১৩০০-২৩০০ টাকায় কিভাবে একটি পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদনের খরচ মেটায়২০১৩ সালের মজুরি বৃদ্ধির সময়েই ৩ বছর পর পুনরায় মজুরি বৃদ্ধি করা হবে মর্মে মালিকরা আশ্বাস দিয়েছিলেন যা ইতিমধ্যেই শ্রমসচিব জানিয়েছেনএমতাবস্থায় সারাদেশের সকল গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা অতিব জরুরি 
আজকের এই আলোচনায় শ্রমিক বাঁচাও-শিল্প বাঁচাও-দেশ বাঁচাওনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রেখে শিল্পকে বিকশিত ও জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে মজুরি বৃদ্ধির দাবিসহ নিম্নলিখিত সুপারিশ আপনাদের সুচিন্তিত গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য পেশ করছি ঃ- 
নিম্নতম মূল মজুরি দশ হাজার (১০,০০০/-) টাকা, (বাড়ি ভাড়া চার হাজার (৪,০০০/-) টাকা, চিকিৎসা ভাতা এক হাজার (১,০০০/-) টাকা এবং যাতায়াত ভাতা এক হাজার (১,০০০/-) টাকা,) সর্বমোট ষোল হাজার (১৬,০০০/-) টাকা এবং সোয়েটারের পিসরেটসহ সকল শ্রমিকদের একইহারে মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে 
অতিসত্তর মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করতে হবে 
গ্রেফতারকৃত শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দের মুক্তি দিতে হবেরাষ্ট্রদ্রোহীসহ সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে
চাকুরীচ্যুত শ্রমিকদের চাকুরীতে পুর্নবহাল করতে হবে 
বেআইনীভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ১৩ (১) ধারায় বন্ধকালীন সময়ের মজুরি দিতে হবে 
গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য কারখানা ভিত্তিক রেশনিং প্রথা চালু করে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদান করতে হবে 
গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক কলোনী গড়ে তুলে বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবেস্বাস্থ্যসেবা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে 
শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা পরিবর্তন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং আইএলও কনভেনশন অনুসারে শ্রমআইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে 
আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসারে শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করে সংঘবদ্ধ হওয়া পছন্দমত সংগঠন করা, দাবিনামা উত্থাপন, দরকষাকষি এবং ধর্মঘট করার অবাধ অধিকার দিতে হবে 
১০অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি এবং সার্বিক পরিস্থিতির সমাধান করুন