এবারের ঈদটা ঢাকাতেই কাটিয়ে দিলাম, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু যাওয়া হল না। এবারও অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিষদ করেননি, তাদের নিয়ে আমরা যখন আন্দোলন করছিল ঠিক সেই সুময় গাজীপুরের টঙ্গিতে অবস্থিত টাম্পাকো ফয়েল কারখানাতে ব্রয়লার ব্রাস্ট হয়ে, অসং¶ শ্রমিকের জীবন গেল। তাদের এই অবস্থা রেখে কিভাবে ঈদ করতে আমি গ্রামের বাড়িতে যায়। আমার মত টাম্পাকো ফয়েল কারখানার শ্রমিকেরা, পরিবারের সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল কিন্তু তাদের যাওয়া হলনা।
যত দূর শুনেছি টাম্পাকো কারখানাটি অনেক আগে ঝুকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছিল, তবুও কারখানার মালিক জোর করে কারখানাটি চালাচ্ছিল। কারণ কারখানার মালিকদের কাছে শ্রমিকের জীবনের মূল্য নেই, তাদের কাছে মুনাফাই হল মূল কথা। কে বাঁচলো আর কে মরলো এটা যেন তাদের দেখার বিষয় নয়! এবং কারখানার মালিকরা খুব ভালো করে জানে, যেভাবেই হউক তাদের কারখানায় শ্রমিক মারা যাক না কেন তাদের কোন শাস্তি হবে না। অল্প কিছু টাকা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যার কারণে আমার মনে হয় টাম্পাকোর মত আরো অনেক ঘটনা আগামীতে আরো ঘটবে। কারণ আমাদের সবার মনে থাকার কথা এর আগে ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর তাজরিন গার্মেন্টের আগুনে পুড়ে ১১৪ জন শ্রমিক পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, দোষীকে শান্তির আওতায় আনা যায় না। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ১১৩৫ জন শ্রমিক ভবনের নিচে চাপা পড়ে ও আশুলিয়ার নরসিংহপুর হা-মিম গার্মেন্টে ৩৩জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা হলো, কারো কোন শাস্তি হয়নি। ১৯৯০ সালে মিরপুরের সারাকা গার্মেন্টে ২৭ জন, ১৯৯৪ সালে মিরপুরে প্রোস্টার গার্মেন্টে ৫ জন, ১৯৯৫ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে লুসাকা গার্মেন্টে ১০ জন, ১৯৯৬ সালে ঢাকার সান্টেস্ক গার্মেন্টে ১৪ জন, তোহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন, নারাণগঞ্জে পদ্মা গার্মেন্টে ০১ জন, ১৯৯৭ সালে বিভিন্ন কারখানায় ০৫ জন, ১৯৯৮ সালে মগবাজারে বিপি গার্মেন্টে ০১ জন এবং ১৯৯৯ সালে গাজীপুরে রোজ গার্মেন্টে ০৫ জন মারা যায়। ২০০০ সালে নরসিংদীর শিবপুরে চোধুরী নীটওয়ারে ৬২ জন ও বনানির গ্লোব নিটিং ফ্যাশনে ১২ জন, ২০০১ সালে ঢাকার কাফরুলে ক্যাপিটাল গার্মেন্টে ২৬ জন ও মাইক্রো সোয়েটারে ২৪ জন শ্রমিক মারা যায়। ২০০৪ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ২৩ জন, ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে সান নিটিংএ ২৬ জন ও আশুলিয়ার স্পেক্টাম গার্মেন্টে ভবন ধসে ৬৬ জন শ্রমিক মারা যায়। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের কেটিএস গার্মেন্টে ৬৫ জন মারা যায়, ২০০৮ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ০৮ জন মারা, ২০০৯ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ০৫ জন, ২০১০ সালে ফতুল্লার ম্যাট্রিক্স সোয়েটারে ০১ জন, আশুলিয়ার ইন্টারকো সোয়েটারে ০৩ জন, গাজীপুরে কাদেরীয়া সিনথেটিকে অগ্নিকান্ডে ১০ জন, জামালপুরে আরিফ ট্রেক্সটাইল মিলে ০১ জন, চট্টগ্রামে ফ্যাশন পার্ক গার্মেন্টে ০১ জন, ২০১১ সালে পদ্মা ফ্যাশন গার্মেন্টে ০১ জন, গাজীপুরে ওয়ান ট্যাক্স গার্মেন্টে ০১ জন, ঢাকার চমক ডাইং এন্ড টেক্সটাইলে ০৬ জন, ইউরো টেক্স ০২ জন, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টে ০১ জন, ২০১২ সালে তাজরিন সহ বিভিন্ন গার্মেন্টে ১১৮ জন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা , হা-মিম, স্মাট, তুংহাই সহ ১১৮৮ জন, ২০১৪ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টে ৫৩ জন, ২০১৫ সালে ফতুল্লার এসবি নিটওয়ার কারখানাই ০৫ জন নিহত হয়েছিল। তাদেও বিচার পাইনি। হাজার হাজার শ্রমিক পুঙ্গু হয়েছে তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি এবং ঠিকমত জিজ্ঞাসাও দেওয়া হয়নি। কারো কোন সাজা হয়েছে কিনা আমার যানা নেই। কারখানার মালিকদের ঠিক মত যদি বিচার হত-বিচারে সাজা হত তাহলে বারবার কারখানায় শ্রমিকদের জীবন দিতে হতনা । টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে ১১ জন নিখোঁজ আছে। নিখোঁজ যারা তারা হয়তো কারখানার ভেতরে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা একটি কারখানাই আগুন নেভাতে যদি এত সময় লেগে যায় তাহলে এর থেকে আরও বড় ঘটনা যদি ঘটে তাহলে কি হতে পারে? |
Biplobi Barta
শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৭
টাম্পাকো শ্রমিকের এ লাশ ফেলে ঈদ করি কিভাবে
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন