সমস্যার শেষ নেই শ্রমিকের। গার্মেন্ট, কৃষি থেকে শুরু করে সর্বস্তরে
শ্রমিকরা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ও ন্যায্য মজুরির বঞ্চনা নিয়েই কাজ করছেন।
এ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শ্রমিকের সংকটের সমাধান কোনোভাবেই হয় না।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, শিল্পবিরোধ, স্বাস্থ্য সমস্যা, বকেয়া মজুরি, বিনা
নোটিসে ছাঁটাই, নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানিসহ ঘাটে ঘাটে সমস্যা থেকেই
যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নতি না হলে পরিস্থিতির
উন্নতি হবে না। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই রয়েছে সমাধান। সসম্যা সমাধানে
শ্রমিক, মালিক ও সরকারের যৌথ প্রয়াস জরুরি। দেশের শ্রমিকদের বর্তমান
অবস্থা তুলে ধরলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। মাথাপিছু
আয় বেড়েছে। এগুলো শুনতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নে
ছোঁয়া লাগেনি। শ্রম আইন সংশোধনের নামে শ্রমিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের পক্ষে আগের মতোন সামাজিক শক্তিও নেই। আগে শ্রমিকরা অশিক্ষিত
ছিলেন। এখন শিক্ষিত শ্রমিকরাও বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন, তারাও শ্রম আইনে বঞ্চিত।
তাদেরও সুযোগ-সুবিধা নেই। শ্রমিকরা এখন অসহায় হয়ে পড়ে আছেন। তাদের
শক্তিশালী কোনো সংগঠন নেই। দেশের ৮৩ শতাংশ শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার
অধিকার নেই। এর ফলে শ্রমিকরা সংগঠিত হতে পারছেন না। এই সুযোগ নিয়ে মালিকরা
মুনাফা ছাড়া কিছুই ভাবছেন না। তিনি শ্রমিকদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে
তাদের দাবি আদায়কেই প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন, চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
শ্রমিকদের আস্থায় নিয়ে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করে শিল্পায়ন সম্ভব। দেশে নারী
ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে বৈষম্য বিরাজ করছে। এসব সমস্যা নিরসনে শক্তিশালী
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের বিকল্প নেই। দেশের পোশাক খাত থেকে শুরু করে বিড়ি
খাত, চা বাগান, নির্মাণ ও গৃহে শ্রমিক হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়েই কাজ করছেন
এবং সামগ্রিকভাবে শ্রমিক হিসেবে আজও বাংলাদেশে শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উন্নত
হয়নি। তারা আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ দেশের শ্রমিকরা এখনো
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। মুনাফার প্রলোভন বেশি হওয়ায় শক্তিশালী
মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করায়। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক যত দুর্বল
হয় মালিক তাকে দিয়ে তত বেশি কাজ করায়। বাংলাদেশে আদিবাসী, নারী ও প্রান্তিক
শ্রমিকদের শোষণের মাত্রাও বেশি। এ ক্ষেত্রে পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের
মজুরিবৈষম্য লক্ষণীয়। পোশাক খাতের আন্দোলনকারীদের দুর্বল প্রতিপক্ষ মনে
করেই এ খাতের মালিকরা বার বার তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
শ্রম আইনে শ্রমিকের নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হলেও
সেই অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। সুস্থ শ্রমিক হলে তার
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন