বিজিএমইএ এর সভাপতি সিদ্দিকুর
রহমান গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৬৩৬০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন ন্যূনতম মজুরি এর বেশি হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ৭সেপ্টেম্বর’২০১৮, রবিবার
রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক জরুরি
সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বাহির থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মজুরি বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের দিয়ে অযথা
আন্দোলন করাচ্ছে। কিন্তু এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারা জানে না যে অতিরিক্ত
মজুরি বৃদ্ধি করা হলে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে নতুন করে অনেক
বেকারত্ব সৃষ্টি হবে। তাই অযথা আন্দোলন না করে দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে টিকিয়ে
রাখতে সহযোগিতা করুন। বিকেএমই সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের
যারা শ্রমিক আছেন তারা আমাদের পরিবারের সদস্যের মতো। তাই তাদের যতটুকু চাহিদা সেই
অনুপাতে মজুরি নির্ধারণ করবো। তিনি বলেন, আমরা যে মালামাল
রপ্তানি করছি বিভিন্ন কারণে সেই পণ্যের দাম কমে গেছে। এতে করে গার্মেন্টস শিল্প
অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই অযথা বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করবেন না। বিজিএমইএ এর
সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বর্তমানে যে অবস্থায়
আছি তা খুব ভয়াবহ। তাই আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা
এই বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। তাহলে অতিশীঘ্রই এই গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস
হয়ে যাবে।
১৯৯৩ সালের পর ২০০৬/ ২০১০/২০১৩
সালে গার্মেন্ট শ্রমিকরা যখন তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে ছিল তখনও গার্মেন্টস মালিকেরা বলেছিলেন অতিরিক্ত মজুরি
বৃদ্ধি করা হলে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ
আমরা কি দেখছি ২০০৬/ ২০১০/২০১৩ সালে তিন দফায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের
মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু কোনো গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ
হয়েছে তা আমি শুনিনি। বরং দিনে দিনে গার্মেন্টস কারখানা গুলো আরো বিকশিত হয়েছে। ছোট
ছোট গার্মেন্টস কারখানার মালিকেরা আজ বড় বড় গার্মেন্টস কারখানার মালিক হয়েছেন। এক্সপোর্টাস এসোশিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি এবং বিজিএমইএ’র সাবেক
সভাপতি সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীর মাসিক আয়ের হিসাব অনুযায়ী একজন গার্মেন্টস
মালিকদের মাসিক গড় আয় ৪৭ লক্ষ টাকা। আর একজন গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক মজুরী ৬,৩৬০
টাকা দিতে চান গার্মেন্টস মালিকেরা। বিকেএমই সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের যারা শ্রমিক আছেন তারা আমাদের পরিবারের সদস্যের মতো। তাই তাদের
যতটুকু চাহিদা সেই অনুপাতে মজুরি নির্ধারণ করবো। আমি সুধু বিকেএমই সভাপতি সেলিম
ওসমানের কাছে জানতে চায়, আপনার পরিবারের একজন সদস্য প্রতিদিন কি খায়, কি পোষাক
পরে, কোথাই ঘুমায়, কোথায় লেখাপড়া করে, কোথায় চিকিৎসা নেন আপনি আমাদের বলুন। আর একজন
গার্মেন্টস শ্রমিকের পরিবারের সদস্য প্রতিদিন কি খায়, কি পোষাক পরে, কোথাই ঘুমায়,
কোথায় লেখাপড়া করে, কোথায় চিকিৎসা নেন আপনি কি খোঁজ খবর রাখেন?। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা
খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগেন, গভীর রাত্রি পর্যন্ত কাজ করে বাসায় ফিরে ঝুপড়ীর
একটা ছোট্র ঘরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকেন, যেখানে আলো বাতাশ নেই বললেই চলে, চিকিৎসকের
ফি জুগাড় না করতে পেরে পাশের ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নেন গার্মেন্টস শ্রমিকেরা। সন্তানদের
লেখাপড়া শেখাতে পারেনা। এভাবে যদি চলতে থাকে আর কিছুদিন পরে গার্মেন্টস কারখানাতে
কাজ করানোর জন্য কোন শ্রমিক পাওয়া যাবেনা। তাই শ্রমিক ও শিল্পের সার্থেই গার্মেন্টস
শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী ১৬,০০০ টাকা করতে হবে।
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠিক
সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন