গাজীপুর,
কোনাবাড়ী অবস্থিত নিউ টাউন কোম্পানি লিমিটেড গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের তিন
মাসের বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা গত ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ
থেকে লাগাতার ভাবে বিভিন্ন কর্মসুচি চালিয়ে আসছে।তার মধ্যে শুকনো চিড়া-মুড়ি খেয়ে
গত ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএ এর ঢাকা অফিসের সামনে অবস্থান করে।প্রচন্ড শিত
উপেক্ষা করে সবাই গাদাগাদি করে খাওয়া দাওয়া না করেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
সিপিবি অফিসে রাত্রি যাপন করে।৬ ডিসেম্বর সকাল
৯ টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসুচি পালন করেছে শ্রমিকেরা।৬ ডিসেম্বর জাতীয়
প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান চলা কালীন বেলা ১১ টায় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে
ক্রাইসিস ম্যানেজম্যান্ট কোর কমিটির মিটিং করে একটি কমিটি করে দিয়েছেন, কমিটি ৭
দিনের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এই কারখানায়
প্রায় ১৮০০ শ্রমিক কাজ করে যার বেশির ভাগী শ্রমিক নারী। এই কারখানায়
শ্রমিকদের বেশীর ভাগ চাকুরীর বয়স ১০ বছরের বেশি, কারো কারো ২০ বছরের বেশি।শ্রমিকদের
সাথে কথা বলে যানা যায়, এই কারখানার মালিক এই কারখানার লাভের টাকায় ভিয়েতনামে একটি
কারখানা কিনেছেন। এদিকে এই কারখানার শ্রমিকরা পরিবার পরিবার পরিজন নিয়ে না খেতে
পেয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে, বাচ্চাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এক শ্রমিক অর্থের
অভাবে আত্যহত্যা করেছেন।এই গার্মেন্ট মালিকের বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে টাকা
পাচারের সাথে গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জড়িত।শ্রমিকদের ধারণা নিউ টাউন
কোম্পানি লিমিটেড গার্মেন্ট কারখানার মালিক গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম
এর বাড়ীতেই আছেন।শ্রমিকরা যখনই বকেয়া বেতনের দাবী তুলেছে তখনই গাজীপুরের বর্তমান
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম শ্রমিকদের হুমকি-ধামকি, ভয়ভীতি দেখিয়েছেন শ্রমিকদের এবং বিভিন্ন
দালাল শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের মাঝে লেলিয়ে দিয়েছেন, শ্রমিকদের ম্যনেজ করার জন্য।একজন
জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ আসা করেনি শ্রমিকরা।শ্রমিকরা ভেবে ছিল
গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম শ্রমিকদের পাশে থেকে তাদের পাওনা আদায় করে দিবে
কিন্তু তিনিই শ্রমিকদের বলেছেন তার পাওনা ৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা মালিকের কাছ থেকে
আদায় করে দিতে।গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের এই আচরণ প্রমান করে যে শ্রমিকদের পাওনা থেকে
বঞ্চিত করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার সাথে গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম
জড়িত।
নিউ
টাউন কোম্পানি লিমিটেড গার্মেন্ট কারখানায় প্রতি এক মাসে প্রায় ১৮০০ শ্রমিকের বেতন
দিতে লাগে দুই কোটি টাকারও বেশি, তিন মাসে শুধু বকেয়া বেতন ৬ কোটি টাকারও বেশি
লাগবে।আর যদি কারখানা স্থায়ী ভাবে বন্ধ করতে হয় তাহলে শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনা
দিতে আরো প্রায় ২০ কোটি টাকা লাগবে।তার মানে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লাগবে
শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করে কারখানাটি স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দিতে।এই টাকা যাতে শ্রমিকদের না দেওয়া লাগে তার জন্য
কারখানার মালিক বিভিন্ন ধরনের টাল বাহানা শুরু করেছে।যার সাথে কারখানার মালিক,
গাজীপুরের বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, বিকেএমইএ, সরকারের কিছু লোকজন এবং কিছু
দালাল শ্রমিক সংগঠন। মালিক পক্ষ মনে করেছিল সামনে নির্বাচনের ডামাডলে শ্রমিকেরা
আন্দোলন করতে পারবেনা তাই শ্রমিকদের যেভাবে বোঝাবে সে ভাবেই বুঝবে, কিছু লাম-সাম
পাওনা দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় দিবে।কিন্তু শ্রমিকেরা সংগঠিত থাকার কারনে তারা তা
পারছেনা।
লিখেছেনঃ খাইরুল
মামুন মিন্টু
সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন