বাংলাদেশে
গার্মেন্ট কারখানাতে ৬৬১ টি বেসিক ইউনিয়ন এবং ৭২ টিরও বেশি ফেডারেশন আছে।
বেশীর ভাগ ইউনিয়ন ও ফেডারেশন কারখানার মালিক ও সরকার অনুগত হওয়ার কারণে শ্রমিকরা
বেতন বৃদ্ধির দাবী তুললেও দাবী আদায় না করেই শ্রমিকদের ঘরে ফিরতে হয়। এবারের
গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনের দিকে তাকালেই তার প্রমান পাওয়া যাবে।
তবে এবার শ্রমিকরা শ্রমিকনেতাদের অপেক্ষায় না থেকে তারা তাদের মত করে রাজপথে
থেকেছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা ২০১৬ সাল থেকে নিম্নতম মজুরী ১৬,০০০ টাকার দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে হাজার হাজার
শ্রমিক ছাঁটায়-নির্যাতন, মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। বিপ্লবী
ধারার শ্রমিক সংগঠন গুল ছাড়া কোন শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়নি। ২০১৬
সালের গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে সে সময় যেসব শ্রমিকনেতা
গ্রেফতার হয়েছিলেন দু-একজন বাদে তারা আসলে শ্রমিকদের এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন,
কেও কেও পুলিশকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন বাম্পন্থি শ্রমিক সংগঠন গুলকে
কেন সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের যে ভাবে মুখ বন্ধ করে
অবরুদ্ধ পরিস্থিতি করে রাখা হয়েছে তার জন্য কিছু শ্রমিক সংগঠন দায়ী। ২০১৮ সালে ১৪
জানুয়ারী নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠনের পর মোটামুটি প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১৬,০০০ টাকা দাবী আদায় না পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন কিন্তু গত
১৪ সেপ্টেম্বর’২০১৮ তারিখ গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী বেসিক ৪,১০০ টাকা, বাড়ী ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া,
চিকিৎসা ভাতা, খাদ্য ভাতা সহ নিম্নতম মজুরী ৮,০০০ টাকা খসড়া গেজেট প্রকাশ করার পর কারখানার মালিক ও সরকার অনুগত শ্রমিক
সংগঠন গুল সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে নিম্নতম মজুরী ৮,০০০ টাকা
শ্রমিকদের মেনে নেওয়ার কথা বলে তারা আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। বাম্পন্থি শ্রমিক
সংগঠন গুল নিম্নতম মজুরী ১৬,০০০ টাকার দাবিতে ঢাকা
প্রেসক্লাব কেন্দ্রীক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। যে কারখানা গুলতে বেসিক ইউনিয়ন যার মধ্যে বেসির ভাগ কারখানা বন্ধ আর যে কইটি কারখানা চালু
আছে তাদের ট্রেড ইউনিয়ন এর যে বার্গেডিং সেই ক্ষমতা নেই। বাম্পন্থি শ্রমিক সংগঠন
গুলর গার্মেন্ট কারখানা গুলতে তেমন একটা বেসিক ইউনিয়ন নেই, ইউনিয়ন
করার উদ্যোগ নিলেও সরকার এবং গার্মেন্ট মালিকরা মিলে সেই ইউনিয়ন এর রেজিষ্ট্রেশন হইতে দেন না। বাম্পন্থি শ্রমিক সংগঠন গুলর কারখানা ভিত্তিক কমিটি, শিল্পাঞ্চলে ইউনিট কমিটি, আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যেমে শ্রমিকদের
অধিকার আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২০১৬ সালের পর থেকে জেলা
পুলিশ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কঠর ভূমিকার কারণে বাম্পন্থি শ্রমিক
সংগঠন গুল কারখানা ভিত্তিক কমিটির কার্যক্রম চালাতে পারেনি যার কারণে শ্রমিকরা কারখানা
ভিত্তিক সংগঠিত হতে পারেনি বলেই আজ শ্রমিক নেতারা শ্রমিক থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন।
মালিক-সরকার-শ্রমিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি শুনছে না শ্রমিকরা। মালিক- সরকার ও শ্রমিক
নেতাদের প্রতি শ্রমিকদের বিশ্বাস হারিয়েছে অনেকটা। গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর
দাবিতে গত ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে (নির্বাচন এর
সময় কয়েকদিন বাদ দিয়ে) জানুয়ারি ২০১৯ টানা ২০ দিনেরও
বেশি কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শেষে কাজে যোগ দেওয়ার পর সাভারের আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক
ছাটায়-মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। বিক্ষোভের ঘটনায় সাভার-আশুলিয়া, উত্তরা, গাজীপুর এলাকার
অন্তত ১৫/২০ কারখানায় ছাঁটাই করা হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক।
অনেক কারখানার ফটকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি আন্দোলনের সময় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া, গাজীপুর, উত্তরা
বিমান বন্দর থানায় বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে অন্তত ১২/১৫টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোয়
আসামি করা হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিককে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও উত্তরা আঞ্চলিক কমিটির
সভাপতি শ্রমিকনেতা জয়নাল আবেদীন, উত্তরা আঞ্চলিক নেতা মাসুদ, সাজুসহ ৪০/৫০ জন
শ্রমিক। হাজার হাজার শ্রমিক গ্রেফতার অতংকে আছে।
অথচ আমরা দেখতে
পেলাম ২০১৬ সাল থেকে যে শ্রমিক সংগঠন গুল ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন করে আসছিল তারা ডিসেম্বর
২০১৮ থেকে জানুয়ারি ২০১৯ গার্মেন্ট শ্রমিকদের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে তেমন একটা ভূমিকা
রাখতে পারেনি। অনেক শ্রমিক নেতারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে নির্বাচন নিয়ে
ব্যস্ত ছিল। জানুয়ারি ২০১৯ এর প্রথম দিকে শ্রমিকরা যখন রাজপথে তখনো অনেক শ্রমিকনেতা
নির্বাচনের কাজ শেষ করে ঢাকায় ফেরেনি। শ্রমিকদের এই আন্দোলনে শ্রমিকনেতারা যদি এই সময়
শ্রমিকদের পাশে থাকতে পারতো তাহলে এই আন্দোলন সংগঠিত ভাবে হইতো এবং শ্রমিকদের বেতন
আরো কিছুটা বাড়তো, শ্রমিকদের এই ভাবে ছাঁটায়-নির্যাতন হইতো না। বিভিন্ন কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক
ছাটায়-মামলা-হামলার শিকার হওয়ার পরেও
শ্রমিক সংগঠন গুলোর তেমন একটা ভূমিকা দেখতে পাচ্ছিনা। নাম মাত্র কর্মসুচি দিয়েই
দায় সারছেন অনেক শ্রমিক সংগঠন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন