গার্মেন্ট কারখানা গুলোর গেইটে গেইটে ঘুরে
দেখা যাচ্ছে, কারখানার গেইটে শ্রমিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকলেও
প্রতিদিন শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। আবার অনেক কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ
বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে, কোন কোন কারখানা, শ্রমিক কলোনি এলাকায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার
কথা উল্লেখ করে মাইকিং করছে শ্রমিক নিয়োগ করার জন্য। গার্মেন্ট
মালিকরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় তারা শ্রমিক পাচ্ছেন না। সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ,
গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বড় বড় গার্মেন্ট কারখানা
গড়ে উঠছে, কিছু চালু হয়েছে আবার অনেক গার্মেন্ট কারখানা চালু করতে পারেনি, শ্রমিকের
অভাবে।
অথচ হাজার হাজার পুরুষ শ্রমিক
প্রতিদিন চাকুরী পাওয়ার আশায় কারখানার গেইটে গেইটে ঘুরেও চাকুরী পাচ্ছেন না। চাকুরী
প্রত্যাশী পুরুষ শ্রমিকরা চরম হতাশায় জীবন যাপন করছেন। অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন নানান ধরণের
অপকর্মে।
পুরুষ শ্রমিকরা সব থেকে বেশি কাজ
করতো সোয়েটার কারখানা গুলোতে, বর্তমানে সোয়েটার কারখনা গুলোতে অটোমেশিন জেকার্ড
চালু হওয়ার কারণে হাজার হাজার পুরুষ শ্রমিক চাকুরী হারিয়েছেন, তারা অনেকেই এখন
বেকার জীবন যাপন করছেন, অনেকেই বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে রিক্সা-ভ্যান চালক, ছোট
চায়ের দোকান, ফুটপাতের দোকান ইত্যাদি ইত্যাদি করে জীবন যাপন করছে। আবার কোন গার্মেন্ট
কারখানায় শ্রমিকরা দাবী দাবা উত্থাপন করলেই প্রথম ছাটাইয়ের তালিকায় পড়তে হয় পুরুষ শ্রমিকদের।
আশুলিয়া, ধামরাই এলাকার তারাসিমা,
গ্লোবাল, সোনো টেক্স, অকো টেক্স, মাহামুদ জিন্সসহ অনেক অনেক বড় বড় কারখানার গেইটে ঘুরে
দেখা গেছে নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকরা চাকুরীর জন্য লাইনে দাড়ালেও পুরুষ এবং একটু
বয়সে বেশি নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছেন না। গার্মেন্টের কাজ একটু কম জানলেও ১৮ থেকে
২৫ বয়সী নারী শ্রমিকদের নেওয়া হচ্ছে।
চাকুরীর প্রত্যাশায় লাইনে দাঁড়িয়ে
থাকা শ্রমিক মামুন, সুজন, সুমন, জসীম, শাহীন, আল-আমীন, কামরুল,
রুবেল, গফুর, জালাল জানান তারা সবাই অপারেটর তারা বিভিন্ন কারখানায় চাকুরী করতেন। ছোট
খাটো বিভিন্ন কারনে কাওকে ৩ মাস আগে কাওকে এক মাস কাওকে ২ মাস আগে চাকুরী হারাতে
হয়েছে , প্রতিদিন তারা, তারাসিমা, গ্লোবাল, সোনো টেক্স, অকো
টেক্স, মাহামুদ জিন্স ও ঢাকা ইপিজেড সহ বিভিন্ন কারখানার
গেইটে চাকুরীর জন্য ঘুরছেন কিন্তু তারা চাকুরী পাচ্ছেন না, চাকুরী না পাওয়ার কারণে
পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে, অনেকের সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যেসব পুরুষ শ্রমিকের স্ত্রী গার্মেন্টে কাজ করে তাদের কিছুটা অর্থ সংকট কম থাকলেও
তারা পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছেন, তাদের অনেকের স্ত্রীরা মনে করেন তার স্বামী ইচ্ছে
করেই চাকুরী করছেন না। অনেক পুরুষ শ্রমিক নিজের হাত খরচের জন্য স্ত্রীর কাছে টাকা
চাইতে লজ্জা করেন, শিশু সন্তান তার বাবার কাছে কিছু চাইলেও দিতে না পারা এক জন
বাবা হিসাবে অনেক লজ্জার মনে করেন অনেক পুরুষ শ্রমিক। এই সব পুরুষ শ্রমিকরা মানসিক
ভাবে চরম হতাশায় ভুগছেন।
শ্রমিকরা মনে করেন কারখানায় পুরুষ শ্রমিক
নিয়োগ বন্ধ রেখে নারী শ্রমিকদের দিয়ে বেশি কাজ করানো হয়। নারী শ্রমিকদের নির্যাতন করলেও
তারা প্রতীবাদ করতে পারেনা, বিশেষ করে অল্প বয়সী নারী শ্রমিকরা শত নির্যাতন সত্তেও
তারা প্রতীবাদ করেনা, তাই মালিক পক্ষ অল্প বয়সী নারী শ্রমিকদের প্রয়োজনে কাজ শিখীয়েও
হলে তাদের নিয়োগ দেন।
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক
সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন