Biplobi Barta

বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখী বিক্ষোভ সমাবেশে বামপন্থী নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে চিহ্নিত ব্যাংক লুটপাটকারীদের গ্রেফতার করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার কর



ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আহুতবাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখী বিক্ষোভকর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি উপরোক্ত আহ্বান জানান।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ব্যাংকমুখী বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ (মার্কসবাদী)র ফখরুদ্দিন কবীর আতিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক। বিক্ষোভ মিছিল কদমফোয়ারা, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা ক্রসিং পার হয়ে মতিঝিল সড়কের মুখে ব্যাপক পুলিশী ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। দুই প্রান্ত ব্যারিকেড অতিক্রম করে পুলিশী বাধায় সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার নেতা-কর্মীগণ সড়কে বসে পড়ে। ব্যারিকেড অপসারণ করতে গিয়ে অন্তত ১০জন নেতাকর্মী আহত হন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরফো মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ। উভয় সমাবেশে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, এ সরকারের আমলে সেনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকসহ ব্যাংকখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু সরকারি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সাথে যুক্ত ছিল। দুদক ও ব্যাংক তাকে দায়মুক্তি দিলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুদক তাদের পুনর্বার জেরা করতে গিয়ে তার দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর তার ভাতিজা অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল হকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে লুট করে নিয়েছে উদ্যোক্তারা। ফারমার্স ব্যাংকের এখন পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক পরিশোধ করারও সামর্থ্য নেই। ফারমার্স ব্যাংকে রাখা জনগণের আমানতের পাশাপাশি তারা সরকারের জলবায়ু সংক্রান্ত তহবিলের শত শত কোটি টাকা যা ফারমার্স ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল, তা লোপাট করে দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ এসকল হার্মাদদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের জনগণের সম্পদ লুটপাটের অপরাধে বিচারের দাবি উত্থাপন করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নিকটজন বলে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাসউদ্দীন বলেছেন, গত ৯ বছর অর্থাৎ সামরিক বাহিনী পৃষ্ঠপোষিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দুই বছর ও আওয়ামী লীগের সাত বছরের শাসনামলে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আরেক নিকটজন অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেছেন, ঠিক মত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতা কাম ব্যাংক পরিচালক ও লুটেরা ধনিক গোষ্ঠী যোগসাজশে ব্যাংকে রাখা জনগনের আমানত লুট করে নিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর একজন উপদেষ্টা গত ত্রিশ বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক লুটপাটের সাথে যুক্ত। আওয়ামী লীগ আমলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ার বাজার লুটপাটে তিনি ছিলেন প্রধান ব্যক্তি।
নেতৃবৃন্দ বলেন এ সরকার যে লুটেরাদের প্রশ্রয় প্রদানকারী গতকাল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতি তা প্রমাণ করেছে। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক (বর্তমান ইস্টার্ন ব্যাংক) লুণ্ঠনকারীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রীর পাশে ছিলো আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারী। নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর চোর হিসেবে আত্মস্বীকৃতি এবং অন্যান্য মন্ত্রীরাও যে চোর সেই মন্তব্য এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যাংক লুটেরাদের পাশে নিয়ে সঙ্গীত উপভোগ জনগণকে বুঝিয়ে দিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ব্যাংকের আমানত লুটপাটকারীদের রক্ষাকারী সরকার। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা কার্যালয়গুলোর সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন