সার্বজনীন ভোটাধিকার ও অবাধ-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের
জন্য বহুদিন ধরে এদেশের মানুষকে
সংগ্রাম করতে হয়েছে। পাকিস্তানের আইয়ুবী শাসনামলের প্রায় একযুগ ধরে ‘এক লোক এক ভোট’, ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচন’ ইত্যাদি দাবিতে দেশবাসীকে রক্ত দিতে হয়েছে। জিয়াউর
রহমান ও এরশাদের মোট দেড় দশকের শাসনকাল জুড়ে
‘আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব’ দাবিতে তাদেরকে রক্তঝরা সংগ্রাম করতে হয়েছে। এভাবে সার্বজনীন
ভোটাধিকার ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের
দাবিটি
হয়ে থেকেছিল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতন্ত্রায়নের বৃহত্তর সংগ্রামের একটি অন্যতম প্রধান দাবি।
নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণজাগরণের ফলশ্রুতিতে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের
অবসানের পর দেশবাসীর মনে তাই যুক্তিসংগত কারণে আশা
জেগেছিল যে, এরপর আর এই দাবিতে
সংগ্রাম করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু
জনগণের সেই আশা ধূলিসাত্ হয়েছে। গত আড়াই দশক ধরে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দুটি দল, তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, সার্বজনীন ভোটাধিকার ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের
ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয় তাদের
হাতে নির্বাচন এক প্রহসন ও তামাশায় পরিণত হয়েছে।
সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বাঙ্গীন গণতন্ত্রায়নের বিষয়টি হলো
বহুমাত্রিক। এর রয়েছে নানা
অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি
মাত্রা। একইসাথে তার রয়েছে নানা রাজনৈতিক মাত্রাও। ‘রাজনৈতিক-গণতন্ত্র’ হলো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সার্বিক গণতন্ত্রায়নের ক্ষেত্রে একটি
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এবং ‘রাজনৈতিক-গণতন্ত্র’ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে অপরিহার্য হলো
তার কাঠামোগত ব্যবস্থার যথোপযোগী
সুনির্দিষ্ট বিকাশ। এদিকে, সার্বভৌম জাতীয় সংসদ
ও তার অবাধ ও নিরপেক্ষ
নির্বাচনের স্থায়ী ও নিশ্চিত ব্যবস্থা হলো সেই কাঠামোগত ব্যবস্থার একটি আবশ্যিক উপাদান।
এক্ষেত্রে আবার জনগণের অবাধ-ভোটাধিকার
প্রয়োগ
ও ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছা ও মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করাটি হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ
নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক ও মৌলিক পূর্বশর্ত। কিন্তু
আমাদের দেশে নির্বাচন জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনের বদলে টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজি ইত্যাদির প্রহসনমূলক প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। এই প্রহসনের
খেলা থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে মুক্ত করা এখন জরুরি
কর্তব্য। প্রশ্ন হলো, এ কর্তব্য পালনে
সুনির্দিষ্ট করণীয় কী?
অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কেবলমাত্র কিছু লোক দেখানো উপরভাসা সংস্কারে আর কাজ হবে
না। এজন্য আজ প্রয়োজন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার
আমূল পরিবর্তন। এক্ষেত্রে কনস্টিটুয়েন্সির ভিত্তিতে ‘অনেক
প্রার্থীর মধ্যে যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে সে জয়ী হবে’ (First Past The Post-FPTP) এই ব্যবস্থা বদল করে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক’ (Proportional Representation-PR) ব্যবস্থা চালু করতে
হবে।
‘সংখ্যানুপাতিক
প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাটি’ আসলে কী? তার বৈশিষ্ট্যগুলোই বা কী?
এই
ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে তা থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাবে? সে সব বিষয়গুলো এখানে এখন সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
এক. ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ তথা PR ব্যবস্থায়, জাতীয় সংসদের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত কাজ-কর্ম সম্পর্কে
নীতি-কর্মসূচি-প্রস্তাবনা-পরিকল্পনা ইত্যাদি বর্ণনা করে রাজনৈতিক দলগুলো দেশবাসীর সামনে নিজ নিজ
ইশতেহার উপস্থিত করবে। এসবের মধ্যে
ভোটার
যেখানে তার ইচ্ছার সর্বোত্কৃষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাবে সেই দলের মার্কায় সে ভোট দেবে। যে দল যত শতাংশ
ভোট পাবে সেই দল জাতীয় সংসদে ততো শতাংশ সংখ্যক
প্রতিনিধি পাঠাবে। অর্থাত্ ৩০০ আসনের সংসদে কোনো দল ৫০% ভোট পেলে ১৫০ আসন পাবে, কোনো দল ৫% ভোট পেলে ১৫টি আসন পাবে
ইত্যাদি।
দুই. PR ব্যবস্থায় প্রতিটি
রাজনৈতিক দল ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি সংসদে আসন নেওয়ার জন্য তাদের দলের প্রতিনিধিদের
তালিকা অগ্রাধিকারক্রম অনুসারে নির্বাচনের আগেই
দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে যে কয়টি আসন সেই দলের প্রাপ্য হবে, তালিকার ক্রমানুসারে সেই কয়জন ব্যক্তি
সংসদ সদস্য হিসেবে গণ্য
হবেন।
তিন. এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের পৃথক দু’টি তালিকা থাকবে। যদি
কোনো দলের প্রাপ্য আসন সংখ্যা ৫০ হয়, এবং বিধান থাকে যে সংসদে পুরুষ ও নারীর
সংখ্যানুপাত হবে ৫০:৫০, তাহলে উভয় তালিকা
থেকে ২৫ জন করে
অগ্রাধিকারক্রম অনুযায়ী ব্যক্তিগণ সংসদ সদস্য বলে গণ্য হবেন।
এই ব্যবস্থায়, সংসদ সদস্য হিসাবে
তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে দলীয়
প্রধানের
স্বেচ্ছাচারিতার আশঙ্কা রোধ করার জন্য, দলের অভ্যন্তরে
গণতন্ত্রের চর্চা বিধিবদ্ধভাবে
বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে তার অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে।
চার. PR ব্যবস্থা প্রবর্তিত
হলে নির্বাচিত সংসদ
সদস্যগণ স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, প্রশাসনিক অথবা অন্য
কোনো কাজের সাথে জড়িত
থাকবেন না। তারা শুধু জাতীয় নীতি-নির্ধারণ,
আইন
প্রণয়ন, কেন্দ্রীয়
রাষ্ট্রীয়-প্রশাসনের কাজ-কর্ম তদারক করা ইত্যাদিতে জড়িত থাকবেন। স্থানীয় সব উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক
কাজ-কর্ম সেই এলাকার নির্বাচিত স্বশাসিত স্থানীয়
সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। এই কাজকর্মের ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও প্রশাসনের গণতান্ত্রিক
বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারের প্রকৃত ক্ষমতায়ন এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের
ক্ষেত্রে তৃণমূলে জনগণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ গভীরতর করা
সহজতর হবে।
পাঁচ. বর্তমানে নির্বাচন যেভাবে কুিসত ‘টাকার
খেলা’ হয়ে উঠেছে, PR ব্যবস্থায় তা অনেক কমে যাবে। এর প্রধান কারণ হলো, তখন
জাতীয় নির্বাচন আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও এলাকাভিত্তিক হবে না বিধায় এমপি জিতিয়ে আনার জন্য এখন যেভাবে
নানা সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় নির্বাচনে একধরনের ‘পুঁজি বিনিয়োগ’ ঘটে থাকে, সেই
অবস্থা খর্ব করা সহজতর হবে।
ছয়. বর্তমানে প্রচলিত FPTP
ব্যবস্থায়
সংসদে প্রাপ্ত আসনের সাথে মোট প্রাপ্ত ভোটের
অনুপাতের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে
দেখা যায় যে, সেবার ৪০.২১ ভোট
পেয়েও আওয়ামী লীগ পেয়েছিল
মাত্র ৬২টি আসন, অর্থাত্ ২১% আসন। আর
বিএনপি-জামায়াত জোট ৪৫.১৫% ভোট পেয়ে
আসন পেয়েছিল ২০৮টি, অর্থাত্ ৬৯% আসন।
অর্থাত্ তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে
মাত্র ৪.৯৪% বেশি ভোট পেয়ে আসন পেয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত আসনের চেয়ে ১৪৬টি বেশি অর্থাত্
২৩৫% বেশি আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির
অনুকূলে ঠিক উল্টো রকম ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছিল। এ থেকে একথা খুবই স্পষ্ট যে জনপ্রতিনিধির
ক্ষেত্রে FPTP ব্যবস্থা প্রকৃত
জনমতকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত
করে না।
FPTP ব্যবস্থায় একটি
নির্দিষ্ট নির্বাচনী আসনের
ক্ষেত্রেও প্রকৃত জনমতের সঠিক প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। যেমন ধরা যাক যে, একটি আসনে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে যদি
তারা যথাক্রমে ২৭%, ২৬%, ২১%,
১৭%
ও ৯% করে ভোট পায় তাহলে যিনি মাত্র ২৭% ভোট পেয়েছেন তিনিই নির্বাচিত হয়ে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধি’ হিসাবে গণ্য হবেন (যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট তিনি মোটেও
পাননি)। এসব থেকে স্পষ্ট যে, বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে সংখ্যানুপাতিক
প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রকৃত জনমতকে অনেক বেশি
ন্যায্যভাবে প্রতিফলিত করতে সক্ষম।
সাত. বর্তমান FPTP ব্যবস্থার স্বাভাবিক
প্রবণতাটা হলো দেশে একটি কার্যত (de-fecto)
দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেমনটি কিনা আমরা
এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিত্তিক প্রধান দুই রাজনৈতিক
মেরুকরণের বাস্তবতার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। এই ব্যবস্থা দেশি-বিদেশি নিয়ন্ত্রক শ্রেণির জন্য
খুবই সুবিধাজনক। কারণ তারা শুধুমাত্র
দুটি
‘প্রধান দলকে’ নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের দ্বারা ‘সরকার’ ও
‘বিরোধী দল’ উভয়কেই তুলনামূলকভাবে সহজে তাদের
প্রভাবের মধ্যে রাখতে পারে। ফলে ‘গদি-বদল’ ঘটলেও তাদের নিয়ন্ত্রণের স্বার্থের
অনুকূলে গড়ে তোলা ‘ব্যবস্থা-বদল’ ঘটার আশঙ্কা থাকে না। এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে
তাদের পক্ষে শোষণ ব্যবস্থা অব্যাহত
রাখা
সম্ভব হয়।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (PR) ব্যবস্থা
বড় দলগুলোকে এসব বহুবিধ
অন্যায্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করবে। এই ব্যবস্থায় বড় দলগুলোর বাইরেও উদীয়মান অথচ
তুলনামূলকভাবে এখনো ছোট রয়েছে এমন সব দলকে ন্যায্য
প্রতিযোগিতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দিবে। ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো
প্রসারিত হবে, রাজনীতিতে
প্লুরালিজমের (Pluralism) চর্চা বৃদ্ধি পাবে, রাজনীতি আরো নীতি-আদর্শ ভিত্তিক হওয়ার সুযোগ পাবে।
আট. দেশের সংবিধানের ৭০(১) ধারা মোতাবেক নির্দিষ্ট কনস্টিটুয়েন্সির ভোটারদের ভোটে
নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও কোনো সংসদ সদস্য দলের
সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট না দিলে, বা তার বিরুদ্ধে ভোট
দিলে, তিনি তার সংসদপদ হারাবেন। এর অর্থ হলো, প্রত্যেক সংসদ সদস্য শেষ বিচারে দলের সিদ্ধান্তের অধীনস্থ। কনস্টিটুয়েন্সির
ভোটারদের মতামতের প্রতি দায়বদ্ধতার
ঊর্ধ্বে
দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সে দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য। অতীতে পাকিস্তানি আমলে ‘ফ্লোর
ক্রসিং’-এর মাধ্যমে সরকারকে
অস্থিতিশীল করার কারসাজির তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে, এরকম অবস্থা পরিহার করার উদ্দেশ্যে, এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য যদি দলীয় আনুগত্যকে
প্রাধান্য দিতেই হয়, তাহলে তার সাথে
কনস্টিটুয়েন্সি ভিত্তিক FPTP ব্যবস্থা কোনোভাবেই
সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য দলের প্রতি আনুগত্যকেই যদি
সর্বোচ্চ স্থান দিতে হয় তা হলে সেক্ষেত্রে
PR ব্যবস্থাই
তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
নয়. বর্তমান FPTP ব্যবস্থার কনস্টিটুয়েন্সির ভোটারদের জন্য
প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার সুযোগ রাখার যে দাবি
প্রগতিশীল মহল বহুদিন ধরে করে আসছে তা PR ব্যবস্থাতেও প্রবর্তন
করা সম্ভব হবে। তবে
এক্ষেত্রে কেবলমাত্র একজন সাংসদকে নয়, একটি গোটা দলকে অথবা পুরো সরকারকে ও সংসদকে প্রত্যাহার করার
জন্য দেশবাসীর সুযোগ রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
দশ. যুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে যে, আমাদের
দেশের মানুষকে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার’ পরিচিত করে তোলা সম্ভব হবে না। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ
কলোনির অংশ থাকার কারণে আমাদের দেশে FPTP ব্যবস্থা মানুষের
কাছে পরিচিত। অনেকের একটা ভুল ধারণা হলো এই যে,
এই পদ্ধতিই পশ্চিমা সব গণতান্ত্রিক দেশে
সাধারণভাবে অনুসৃত হয়। কিন্তু বাস্তব
সত্য
হলো, ইউরোপের প্রায় সব
দেশে, দক্ষিণ আমেরিকা ও
আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশে, জাপানে, অস্ট্রেলিয়ায়
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা PR ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কায়
ও নেপালে এই ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। দেশবাসীকে এই
নতুন পদ্ধতির সাথে পরিচিত করে তোলা খুব কঠিন কাজ হবে সেকথা তাই বলা যায় না।
এগারো. সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা PR পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও এর সাথে
আংশিকভাবে FPTP পদ্ধতিও যুক্ত করার
সুযোগ রাখা যেতে পারে। অনেক
দেশে ৫০% আসন PR পদ্ধতিতে এবং অপর
অর্ধেক আসন FPTP পদ্ধতিতে নির্বাচিত
হয়। আমরা দুটো পদ্ধতিকেই কাজে লাগাব কিনা এবং লাগালে কীভাবে দুটোর সমন্বয় ঘটাব—এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে
নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে
প্রথমে মৌলিকভাবে স্থির করে নিতে হবে যে, আমরা প্রচলিত নির্বাচন-ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে PR ব্যবস্থা সাধারণভাবে প্রবর্তন করব।
সাহসের সাথে নির্বাচন ব্যবস্থার এরূপ আমূল সংস্কার করতে পারলে দেশে গণতন্ত্র দৃঢ়মূল করার পথে
তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি ঘটানো যাবে। এ নিয়ে এখনই
বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। কাদেরকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত সে বিষয়ে ঢাক-ঢোল
পিটিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে যে
সংলাপ-পর্ব
চলছে, এই বিষয়টি তার চেয়ে
কম তো নয়ই, বরঞ্চ আরো অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
(২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন