Biplobi Barta

বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বামপন্থি নেতৃবৃন্দ বলেন-জরুরী ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে অধিবেশন আহবান করে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী স্বীকৃতি দিন




 মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেম নগরীকে একতরফাভাবে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিবাদে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আহুত ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৯৩ সালে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তিতে জেরুজালেম বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইস্যুটি পরবর্তীতে নির্ধারিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। জেরুজালেমের উপর ইসরাইলী সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ১৯৯৫ সালে জেরুজালেম অ্যাম্বেসী অ্যাক্টপ্রণীত হওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাষ্ট্রপতিগণ এ আইন বাস্তবায়ন না করে প্রলম্বিত করেছেন।  নেতৃবৃন্দ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকে বাস্তবতার প্রতি স্বীকৃতিপ্রদান বলে দাবি করেছেন, যা সত্য নয়। সত্য হচ্ছে ট্রাম্প তার জায়নবাদী ইহুদী সমর্থকদের নির্বাচনের সময় যে অঙ্গীকার করেছিলেন সে অঙ্গিকার পূরণের জন্যই এ ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সাম্রজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ইসরাইল-ফিলিস্তিন চুক্তির বরখেলাপ করে মার্কিন রাষ্ট্রপতির অতি উৎসাহী এ উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। ফিলিস্তিনীদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম নস্যাত করার এ চক্রান্ত মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিবে। সারা পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উগ্রতাকে উসকে দিবে। নেতৃবৃন্দ মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে উস্কানী প্রদানকারী এ সিদ্ধান্ত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পিছিয়ে আসার আহবান জানান। আন্তর্জাতিক আইন ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তি মান্য করে জেরুজালেম নগরীকে সকল ধর্মের মানুষের পবিত্র নগরী হিসেবে উন্মুক্ত রাখার আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনির জনগণ ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই ফিলিস্তিনির স্বাধীনতার জন্য ইসরাইলে বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে জীবন দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ সরকারকে জরুরীভাবে জাতীয় সংসদে অধিবেশন আহবান করে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে বাংলাদেশকে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহবান জানান। সেইসাথে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী মার্কিন চক্রান্তের সৃষ্ট সৌদি যুদ্ধজোট থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহারের আহবান জানান।
সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চা নেতৃবৃন্দ ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি তাদের সংহতি ঘোষণা করেন। নেতৃবৃন্দ মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাম্রজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর অসাম্প্রদায়িক, শান্তিকামী, সাম্রজ্যবাদবিরোধী জনতার মত বাংলাদেশের মানুষকেও জোটবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে প্রতিবাদমুখর হওয়ার আহবান জানান।
সমাবেশ শেষে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিলি মার্কিন সাম্রজ্যবাদ বিরোধী শ্লোগান দিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন