গার্মেন্ট শ্রমিকদের চলমান মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আজ ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, বিকেল ৪টায় জাতীয় যাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের নিম্নতম মূল মজুরি ১০ হাজার টাকা, মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা এবং সোয়েটারের পিসরেটসহ সকল গ্রেডে শ্রমিকের একই হারে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান। সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, পুষ্টিবিদ, আইন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ যোগদেন।
গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসি’র সভাপতি অ্যাড. মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদ ড. হামিদা হোসেন, চিকিৎসক অধ্যাপক আবু সাইদ, বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট’র সভাপতি জাহেদুল হক মিলু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ’র সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, ট্রেড ফেডারেশন (টাফ) সভাপতি আতিউল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসি’র কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট’র সভাপতি আহসান হাবীব বুলবুল, গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ইসমাইল প্রমুখ।
সমাবেশে সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, স্বাধীন দেশে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ শোষণ থেকে মুক্তি অর্জন করবে এটাই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সাত কোটি মানুষের স্বপ্ন। দুর্ভাগ্যহলো স্বাধীন দেশের শাসক গোষ্ঠী সেই চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে এবং মানুষের স্বপ্নকে পদদলিত করে চলেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে নিজেদের দাবি করে কিন্তু শ্রমিকদের ওপর চলমান তীব্র শোষণ যারা চালাচ্ছে তাদের স্বার্থে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে সেখানে মালিকদের আধিপত্য পরিষ্কার। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি করলে সরকার জুলুম-নির্যাতন করে তা দমন করে। তিনি আরো বলেন, সরকার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লুটেরাদের স্বার্থের পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে। তিনি অবিলম্বে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ষোল হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে অব্যাহত ভাবে লুটপাট চলছে। তার মধ্যে এক মহা লুটপাট হলো শ্রমিকের মজুরি লুটপাট। তিনি বলেন, দেশের সমস্ত মেগা প্রকল্প এবং চাকচিক্যের অর্থ যোগান দিচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। প্রায় আশি ভাগ রপ্তানী আয় আসে এই শ্রমিকদের হাত দিয়ে, অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বঞ্চিত। তিনি বলেন, দেশের মালিক শ্রেণি শ্রমিকদের ওপর প্রাত্যাহিক যে লুটপাট চালাচ্ছে তা অংকের হিসাবে প্রকাশ করলে সবচেয়ে বড় লুট হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদ ড. হামিদা হোসেন বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা সারা পৃথিবীতে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদের যোগান দেয়, কিন্তু তাদের আহার, বস্ত্র, বাসস্থান, শিশুদের শিক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই নির্মমতা বর্তমান সময়ে মেনে নেয়া যায় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শ্রমিকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নাই, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নাই, বাঁচার মত মজুরি দেয়া হয়না এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে আমরা এত বছরে কি পেলাম।
শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একজন শ্রমিক উৎপাদন কাজে যতটুকু শক্তি ক্ষয় করে ন্যূনতম সেইটুকু শক্তি পুনরায় অর্জন করতে হলে যে খাবার গ্রহণ করা দরকার তা পাচ্ছে না। আমাদের দেশের শ্রমিকরা ক্ষয়কৃত শ্রম শক্তি পুনরুদ্ধার করার মত কাজের আর্থিক প্রতিদান পায় না। এর কারণ দেশে এক শ্রেণির মানুষ লালসার বসে সোনার দিম পাড়া হাস জবাই করে চলেছে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে মহা বিপর্যয় আসন্ন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা ইতোপূর্বে ২০১৬ সালে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ায় যখন আন্দোলন শুরু করেছিল, সেই আন্দোলন নিষ্ঠুর কায়দায় দমন করা হয়েছে। একবছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছে, কিন্তু বোর্ডের কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা এখনো অনিশ্চিত। সরকারের দায়িত্বশীল কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছর নতুন মজুরি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, মজুরি বৃদ্ধি যত বিলম্বিত হবে শ্রমিকরা ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি অবিলম্বে মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করে দ্রুত নতুন মজুরি হার ঘোষণার দাবি জানান।
সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরিবৃদ্ধির আন্দোলনের প্রতি বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন প্রেরিত সংহতি বার্তা পাঠ করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন