Biplobi Barta

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও ফাদি নামের এই পা বিহীন তরুণ আমাদের শিখিয়ে গেল দাসত্ব নয় স্পর্ধাই জীবন, দালালি নয় প্রতিরোধেই মুক্তি।

 ৭০ বছর আগে এদিন ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নেয় এবং সেখানে বাস করা সাধারণ ফিলিস্তিনের বিতাড়ন করে। এর প্রতিবাদে প্রতি বছর ১৫ মে নাকাবা দিবস পালন করে ফিলিস্তিন। ঠিক এর আগেরদিন সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর কর করা হয়। এটা মূলত শান্তিকামী ফিলিস্তিনিদের উস্কে দেয়ারই নামান্তর।
স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিরা। আর এই প্রতিবাদী কনভয়ে অনবরত গুলিবর্ষণে নিহত হয় ৫৮ জন ফিলিস্তিনি। আর এই শহীদদের মধ্যে ছিলেন দেশ মাতৃকার জন্য অসীম ভালোবাসা পুষে রাখা ২৯ বছর বয়সী ফাদি আবু সালাহ। আবু সালাহ'র মৃত্যু গোটা বিশ্বকে শুধু কাঁদায়নি, দিয়েছে দেশপ্রেমের এক বিরল ভালোবাসার বার্তা।
আবু সালাহ'র দুই পা নেই। হুইল চেয়ারে বসেই চলাচল করতেন। অবশ্য পা দুটোও হারিয়েছেন ইসরায়েলিদের বিমান হামলায়। ২০০৮ সালে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই পা হারিয়েছিলেন ফাদি আবু সালাহ। তবে সেবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
হুইল চেয়ারে বসে হাতে বানানো গুলতি নিয়ে থাকতেন ফাদি আবু সালাহ। দেশমাতৃকার পক্ষে স্লোগান দিতেন। টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটের প্রতিরোধে হাতে বানানো গুলতি দিয়ে ছুঁড়তেন পাথর। সোমবার জড়ো হওয়া প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে সকাল থেকেই হুইল চেয়ারে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন  সালাহ। একটা পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালালে তিনিও প্রতিরোধ করা শুরু করেন। দুপুরের পরেই ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন এই বীর।   শেষ সময়েও হাতে ছিল গুলতি, পাশে ছিল হুইল চেয়ার।
অল্প বয়সেই বিয়ে করা ফাদি আবু সালেহ একটা সময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন বেশ কয়েক বছর। পরবর্তীতে এক মার্কিন সমঝোতায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রচেষ্টায় ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পান আবু সালাহ। তার সাথে আরও ৮৯ জন ফিলিস্তিনি বেরিয়ে আসে দখলদারদের কারাগার থেকে।
কয়েকমাস ধরে চলমান বিক্ষোভে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার নিয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পশ্চিম তীর থেকে এসে গাজাতেই আশ্রয় নেন তাঁবু গেড়ে। চার শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানেই অস্থায়ীভাবে সংসার গাড়েন তিনি।
একজন নেটিজেন মন্তব্য করেন, মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও ফাদি নামের এই পা বিহীন তরুণ আমাদের শিখিয়ে গেল দাসত্ব নয় স্পর্ধাই জীবন, দালালি নয় প্রতিরোধেই মুক্তি। মানুষকে বাঁচতে হবে মর্যাদার সাথে। মানুষ অর্থ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করা।
অনেকেই মনে করছেন আবু সালাহ, নিজ প্রাণের বিনিময়ে লাখো ফিলিস্তিনের মনে জ্বেলে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতার অগ্নিস্ফূলিঙ্গ। অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আবু সালাহ এখন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তরুণদের এক সঞ্জীবনী শক্তির নাম।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইহুদিবাদী ইসরাইল সাড় সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করে নেয়। এদিনটি নাকবা দিবস হিসেবে গত ৭০ বছর ধরে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। ঠি এর আগের দিনের ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন