আশুলিয়া্র জামগড়া এলাকার
ফ্যাশনীট কোম্পানি লিমিটেড সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা গত ০৯ এপ্রিল-২০১৮ তারিখে
বেতন পাওয়ার সময় জানতে পারে তাদের পিসরেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে শ্রমিকরা কম
বেতন নিতে আপত্তি জানায় কিন্তু মালিক পক্ষের পিসরেট বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাসে শ্রমিকরা
সেইদিন বেতন নেন। শ্রমিকরা সেইদিন আরও দাবী জানায় তাদের যে টিফিন ভাতা ও নাইট ভাতা
দেওয়া হয় তা বাড়াতে হবে, মাতৃত্বকালীন
ছুটির টাকা, সার্ভিস বেনিফিট
দিতে হবে, নারী শ্রমিকদের
যৌন হয়রানী বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকরা দাবী জানানোর পরেও নিয়মিত কাজ করতে থাকে।
গত ১০
এপ্রিল-২০১৮ তারিখে শ্রমিকরা দাবীগুলো জানানোর জন্য কারখানার কর্মকর্তাদের কাছে
যাওয়ার চেষ্টা করলে কারখানার লিংকিং ইনচার্জ কামাল হোসেন, সুপারভাইজার আলআমীন, সুপারভাইজার সিহাব সহ স্টাফরা মিলে আশা বেগম,
আলপনা, রোকসানা, লাভলী, জাহানারা সহ অনেক নারী শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করে। আশা বেগমকে নারী
ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
কারখানা
কর্তৃপক্ষ শ্রমিক লাঞ্ছিত কারী লিংকিং ইঞ্চার্জ কামাল হোসেন, সুপারভাইজার আলআমীন, সুপারভাইজার সিহাব এর বিচার নিশ্চিত করবে এবং
শ্রমিকদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস এর ভিত্তিতে শ্রমিকরা আবারো শান্তিপূর্ণভাবে
কাজ করতে শুরু করে ।
২৫ এপ্রিল-২০১৮
ইং তারিখ কারখানা ছুটির পর শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষ আনিসুর রহমান পিটারের কাছে
জানতে চান তাদের দাবীগুলো কবে মানা হবে। তিনি শ্রমিকদের হুংকার দিয়ে বলেন, দাবী
মানা হবেনা তোমরা যে যে চাকুরী করতে চাও কর আর না করলে বের হয়ে যাও । এর মাঝে
লিংকিং ইনচার্জ কামাল হোসেন, সুপারভাইজার আল
আমীন, সুপারভাইজার সিহাব সহ
স্টাফরা শ্রমিকদের উপর হামলা করে এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে মারামারি বেধে যায় ।
মারামারিতে শ্রমিক ও স্টাফ দুপক্ষের লোকই আহত হয় । কারখানা কর্তৃপক্ষ আশুলিয়া
থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি সাহেব মামলা দায়ের না করে আলোচনা করে সমস্যা
সমাধানের কথা বলেন । কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা না করে শ্রমিকদের
সাথে আরও খারাপ আচরণ করতে থাকে, শ্রমিকরা কেন
নারী নির্যাতন অভিযোগ করলো এর জন্য হুমকি-ধমকি দিতে থাকে ।
শ্রমিকরা এই সব
বিষয় আমাকে জানানোর পর আমি আশুলিয়া থানার ওসি সাহেবকে সকল বিষয় অবহিত করি । ৩ মে
২০১৮ ইন তারিখ শ্রমিকরা কারখানাতে কাজ করতে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের
জানায় যে তোমাদের কোন দাবী মানা হবেনা, সকল সেকশনের শ্রমিকরা এই কথা শুনার পর তারা কাজ বন্ধ করে দিলে কারখানা
কর্তৃপক্ষ কিছুক্ষণ পর কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা যারযার বাসায় চলে যায় ।
বিকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ আনিসুর রহমান পিটার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের
করে । ০৩ মে ২০১৮ ইং তারিখ রাত্রি ১২ টায় কারখানার শ্রমিক আশরাফুল, নাহীদ, রাসেল, রানা কে গ্রেফতার
করে ০৪ মে ২০১৮ ইং তারিখ শুক্রবার কোর্টে চালান করে, কোর্ট শ্রমিকদের কথা শুনে জামিন দিয়ে দেয় । ০৫
মে ২০১৮ ইং তারিখ শ্রমিকরা তাদের দাবী না মানা পর্যন্ত কাজ করবে না বলে জানায় ।
বিকালে আশুলিয়া থানার ওসি সাহেবের সাথে আমি সহ শ্রমিকদের সাথে থানায় আলোচনা হয় যে
শ্রমিক লাঞ্ছিত কারী লিংকিং ইনচার্জ কামাল হোসেন, সুপারভাইজার আল আমীন, সুপারভাইজার সিহাব এর বিচার নিশ্চিত করবে ও
তাদের কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং শ্রমিকদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস এর
ভিত্তিতে শ্রমিকরা কাজ শুরু করবে ।
০৬ মে ২০১৮ ইং
তারিখ ভোর ৫ টায় আশুলিয়া থানা পুলিশ দু-জন শ্রমিককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়
এবং ২০ জন শ্রমিককে কারখানাতে প্রবেশে বাধা দিলে শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে বিক্ষোভ
করতে থাকেন। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ বাধ্য
হয়ে শ্রমিকদের দাবী মেনে নেন । গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্ত করে সকল শ্রমিকেরা
কাজে যোগদান করে । এই আন্দোলনে এটাই প্রমাণিত হয় যে, শ্রমিকদের সংগঠিত আন্দোলনের
মাধ্যমেই তাদের দাবী আদায় করা সম্ভব।
লেখকঃ কে এম মিন্টু
লেখকঃ কে এম মিন্টু
সাংগঠনিক সম্পাদক
গার্মেন্ট শ্রমিক
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন