Biplobi Barta

শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮

সেই চিরচেনা কর্মব্যস্ত শিল্পাঞ্চল, সেখানেই আমার ঠিকানা

 গার্মেন্ট শ্রমিকরা বছরে দুই বারের বেশি গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ সাধারনত পায় না। দুই ঈদেই সাধারনত পরিবার পরিজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত থেকে শুরু করে আনন্দ কষ্ট গুলো ভাগাভাগি করার সুযোগ পান এই শ্রমিকরা। যে দিনগুলির জন্যে পুরো বছর ধরে অপেক্ষা আর প্রতিক্ষা সে দিনের সমাপ্তি হয় দুই ঈদে। যে গার্মেন্টসের জন্য পরিবার প্রিয়জন আর আত্বীয়স্বজন সবার সাথে হৃদয়ের সকল সংযোগ গুলি প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে, সেখানে বছর পর ঈদ উপলক্ষে ছুটি তাও আবার তিন বা চার দিন! যার অনেকের ক্ষেত্রেই যেতে একদিন আসতে একদিন আর পরিবার-প্রিয়জনদের সাথে এক বা দুই দিন। বহু প্রতিক্ষিত সেই দিন গুলি নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথেই যেন শুরু হয় নতুন এক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম নিজের জীবনের বিনিময়ে দুই-তিনটা দিন ছুটি বাড়িয়ে নেওয়ার সংগ্রাম। ঈদ উপলক্ষ্যটি নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথেই মালিক পক্ষক, শ্রমিকদের প্রিয়জনদের প্রতি দূর্বলতার এ সুযোগকে পুঁজি করে শ্রকিদের সাথে প্রতারনার এক খেলায় মেতে ওঠেন মালিক পক্ষ। ছুটি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওভার টাইম ছাড়া কাজ করিয়ে নেওয়া হয় ছুটির দিন বা শুক্রবার গুলিতে। এতো অভিযোগ এতো কষ্ট গার্মেন্ট শ্রমিকদের তবুও ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা । গার্মেন্ট মালিকদের পাথরের মন একটু কোমল করে দেন আর তারা যেন সাত থেকে দশ দিন ছুটির ব্যবস্থা করে দেন, শ্রমিকরা মনে মনে এই কামনা করে। ঈদের ছুটির সাথে সমন্বয় করা হবে বলে শুক্রবার আর সরকারী ছুটির দিন গুলিতে ওভারটাইম ছাড়া দিব্যি কাজ করিয়ে নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ৪-৫টা শুক্রবার কাজ করে আনন্দের জোয়ারে মন ভাষান পোশাক শ্রকিরা। এক এক করে গুনে হিসাব করে বের করেন তারা ঈদে ছুটি পাচ্ছেন দশ দিন । অনেক গার্মেন্ট আবার বেতন বোনাস নাদিয়েই পালিয়ে যান, অনেক গার্মেন্ট আবার সুযোগ বুঝে শ্রমিক ছাটায় করেন, কোন কোন গার্মেন্টে ঈদের বোনাস দেন না, অনেক কারখানায় বোনাস দিলেও তা যৎসামান্য তবুও সবাই প্রস্তুত, প্রয়োজনীয় মালামাল গুছিয়ে নিয়ে, সাধ্যমত হয়তো চেষ্টা করেছেন প্রিয়জনদের জন্য রাস্তার পাশে গড়েওঠা দোকান গুল থেকে কিছু কিনতে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা/১০টা পর্যন্ত কাজ করা রুগ্ন শরীর নিয়ে পরিবার পরিজনের সাথে দেখা করার জন্য গ্রামের বাড়ীর পথে পা বাড়ায় এই পোশাক শ্রমিকরা। সামনে তাদের যত বাধা সব জয় করতে হবে এই জীর্ণ আর রুগ্ন শরীরেই। কারখানা থেকে বের হওয়ার পর তাদের জানা নেই কোন পথে কিভাবে কোন যানবাহনেই বা প্রিয় মানুষগুলোর কাছে ফিরবেন তারা। বাস বা ট্রেনের ছাদে কেউবা ট্রাকে বা লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যাত্রা শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পুরো পথ পাড়ি দিয়ে হয়তো ঈদের দিনের ২/১ ঘন্টা পূর্বে পৌঁছান গ্রামের বাড়িতে। কেওবা গ্রামে গিয়ে নতুন বিয়ে করেন কেও তার ছোট বোনটাকে সাথে করে নিয়ে আসেন গার্মেন্টে চাকুরী করানোর জন্য ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষ না হতেই এরই মধ্যে সুতোয় টান পড়ে, ফিরতে হবে গার্মেন্টসে! আবার সেই কর্মস্থলে ফেরার প্রস্তুতি শুরু। আবারও একটা জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরতে হবে চিরচেনা সেই গার্মেন্টে, সেলাই মেসিন, সুপারভাইজার, চিরচেনা বকাবকি তবুও ফিরতে হবে। অশ্রুসজল প্রিয় বাবা-মা, অতি আদরের প্রিয় সন্তান বিদায়!!! দেখা হবে আবার আগামী ঈদে.........
আসা-যাওয়ার এই পথে যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তবে কেউ হয়তো চিরতরে পঙ্গু বা মহামূল্যবান জীবটাই হারিয়ে ফেলেন। বিদ্ধস্থ হয় পরিবার! আমরা হারায় সহকর্মী! আর তো কারও কিছু যায় আসে না......!!! না মালিকের, না সরকারের, সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়, হয় নিজেকে, না হয় পরিবার গুলকে এটায় জীবন তবুও থেমে থাকার নই গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবন যুদ্ধ
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন