বাংলাদেশের
মানচিত্র বারবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। সাধারণ চলিত একটা কথা আছে: ‘লাশ ভাসা বঙ্গদেশ,
তবু রঙ্গে ভরা’। তবে বারবার এই বিভাজনের দায় বাংলার জনসাধারণের নয়। সাম্প্রদায়িক
রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তের দুষ্টচক্রের ফলেই বারবার এই বিভাজন। ১৯০৫ সালে
বঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ ঘটেছিল ইংরেজ শাসকদের উপনিবেশী স্বার্থে। ১৯৪৭-এর বিভাজন ছিল
মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের কারণে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, ভারতবর্ষে মুসলিম আর হিন্দু
দুটি পৃথক জাতি, অখণ্ড ভারতে তারা একসঙ্গে থাকতে পারে না। সাম্প্রদায়িক
রাজনীতির যূপকাষ্ঠে বলি দেওয়া হয়েছিল ধর্ম-ভাষা-বর্ণ-বিত্তনির্বিশেষে ভারতবর্ষের
প্রায় ২০ লাখ নিরীহ মানুষকে।
তবে আমরা সবাই
জানি, সর্বশেষ যে বিভাজন, তাকে
কেউ বিভাজন বলে না, মুক্তিযুদ্ধ বলে। এই বিভাজনের ফলে
উপনিবেশী শোষণ উচ্ছেদ করে এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়—স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক
এক রাষ্ট্র, বাংলাদেশ। প্রণয়ন করা
হয় এক অনন্যসাধারণ সংবিধান। সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র,
জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে
গ্রহণ করে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
নয় মাসের
অবর্ণনীয় কষ্টের পর শুধু মুক্তি আর জীবনের নিরাপত্তার বিনিময়ে কঠিন সময় পেরিয়ে
যাওয়ার এত দৃঢ় মনোবল আর কখনো দেখিনি। তবু ঠিক এরই মাঝখানে থেকে যে বাংলাদেশ গঠন
পেতে শুরু করে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ,
মুক্তিযুদ্ধের লাল টকটকে রক্তে স্নাত বাংলাদেশ, হাজার বছরের বাঙালির স্বপ্ন বাংলাদেশের যখন সত্যিই বাস্তবে রূপ পেতে থাকে
মায়াহীন, স্বপ্নহীন বাস্তবের রুক্ষ-কঠিন জমি থেকে, তখন তার মধ্যেই দেখা দেয় যত্রতত্র চোরাবালি। সে কথা বলার লোক থাকলেও শোনার
লোক ছিল না। কিংবা বলারও লোক ছিল না, শোনারও লোক ছিল না। এই
অবস্থায় কোথাও এতটুকু দ্বিধা বা আপত্তি প্রকাশ করাটাও যেন একটা স্যাক্রিলেজ। তা
যেন অসহ্য ঔদ্ধত্য, বিরক্তিকর বেয়াদপি। চিন্তা নয়, ভেসে যাওয়াটাই তখন বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া
শরতের নির্মল ভোরের সূর্যের মতো রক্তে ডোবানো বাংলাদেশ কি বিজয়ের পরদিন থেকেই
পালাতে শুরু করেছিল? সে কি কেবলই পিছলে
পিছলে সরে যাচ্ছিল? এ কথা বাহাত্তরের গোড়ায় যে বলতে পারে,
এমনকি চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ-দুর্গতির দিনেও যে বলতে পারে, তাকে হঠকারীই বলা উচিত। বুকে থাপ্পড় মেরে গর্বের সঙ্গে ভাঙা দেয়ালের ওপর
মোরগের মতো ডানা ঝাপটে বলা যায় বৈকি যে বাংলাদেশ তার যাত্রার শুরুতেই গণতন্ত্রের
ধ্রুবপদ বেঁধে নিয়েছে। গণতন্ত্রের লড়াই আমরা কখনো থামাইনি এবং সেই লড়াই আজও চলছে। পাকিস্তানিরা
২৪ বছরের শাসনে আমাদের এক দিনের জন্যও গণতন্ত্র দেয়নি, পাকিস্তানের
জন্মলগ্নেই গণতন্ত্র তার নাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, কোনো না কোনোভাবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল একটানা, এমনকি
পশ্চিম পাকিস্তানই যখন গোটা পাকিস্তান হয়ে গেল, তখনো তার
গণতন্ত্র সহ্য হয়নি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ সম্বন্ধে কি বলা যাবে? মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে আসা বাংলাদেশ কেন বিজয়ের কমবেশি সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই
পাকিস্তানি ঐতিহ্যই অনুসরণ করে বসল? আমাদের সেনাবাহিনীর
কয়েকজন অফিসার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করল, মুক্তিযুদ্ধের
প্রধান নেতাদের অতি নৃশংসভাবে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল। তবু নতুন শাসকদের কাছে তারা
শাস্তি পেল না, পুরস্কারই পেল।
নব্বই সাল
পর্যন্ত বুলেটঘেরা এই গণতন্ত্রের মধ্যে আমাদের কেটে গেল। লাতিন আমেরিকার নিষ্ঠুর
স্বৈরতন্ত্র নয়, বাংলাদেশের মোলায়েম গণতান্ত্রিক
স্বৈরাচার। তারপর দেশের সম্পদ কবজা করা সেনাবাহিনী থেকে দলে দলে অবসরপ্রাপ্তরা
ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে—এসবই অন্যদের জন্য শিক্ষণীয় বৈকি! কিন্তু এখন যে তার চেয়েও বড়
কথা দাঁড়িয়ে গেছে। নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও
বছর চারেক তার
চর্চার পরপর আজ কারও কারও কাছে কি মনে হচ্ছে বর্তমান গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনায় স্বৈরাচার আরেকটু গণতান্ত্রিক ছিল? সর্বনাশ! গণতন্ত্র কি এখন দশদশায় এসে পৌঁছেছে?
চর্চার পরপর আজ কারও কারও কাছে কি মনে হচ্ছে বর্তমান গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনায় স্বৈরাচার আরেকটু গণতান্ত্রিক ছিল? সর্বনাশ! গণতন্ত্র কি এখন দশদশায় এসে পৌঁছেছে?
এটা আমাদের
গৌরবের কথাই বটে যে গণতন্ত্রকে আমরা কখনোই ফেলে দিতে পারিনি;
কখনো ফেলে দেওয়া যাবেও না। রাষ্ট্রব্যবস্থায় কিছু ফল পেতে গেলে
গণতন্ত্র থেকেই পেতে হবে, কিন্তু এই নির্মম সত্য কথাগুলোও
মনে রাখা দরকার যে সবচেয়ে বড় আদর্শের স্লোগানগুলো গণতন্ত্রের মধ্যেই আউড়ে যাওয়া
চলে, জনসাধারণের সর্বনাশ চালিয়ে যেতে যেতেও জনগণের ক্ষমতার
কথা নিয়ে গলা ফাটানো যায়। সত্যিই গণতন্ত্রের মতো এমন নির্দোষ নিরাপদ সর্বধারক
স্থিতিস্থাপক পাত্র আর কোথায় পাওয়া যাবে? গণতন্ত্রের মধ্যেই
কেবল একাত্তরের ঘাতক মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা যায়, বাংলাদেশের মৌলিক অস্তিত্ববিরোধী অনুশোচনাশূন্য অতি নিকৃষ্ট
যুদ্ধাপরাধীটিকেও রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা যায়, গণতন্ত্রের
খাতিরেই মৌলবাদী উত্থানের সঙ্গে সহাবস্থান করা যায়, ভয়াবহ
সন্ত্রাসকে গণতান্ত্রিকভাবেই জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক গণতন্ত্রেই কেবল
২৪ বছরের মধ্যে পাকিস্তানি কোটিপতিদের শূন্যস্থান মুক্তিযুদ্ধোত্তর হাজার হাজার
কোটিপতিকে দিয়ে পূরণ করা যায়। শুধু গণতন্ত্রের সাহায্য নিয়েই বাংলাদেশকে মৃতের
বাংলাদেশে পরিণত করা যায়। এত অনাহার, এত অশিক্ষা, এত দারিদ্র্য, এত নিরাময়হীন ক্যানসারে আক্রান্ত অব্যবস্থা
গণতন্ত্রের বিশাল উদর ছাড়া আর কোথায় জায়গা পেতে পারত? তবু গণতন্ত্রকে
ছাড়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মতোই গণতন্ত্রকেও আমরা খুঁজে বেড়াব। এ
জন্যই গণতন্ত্রকে আমরা ফেলতে পারিনি, কিন্তু সমাজতন্ত্রকে ধরতে
না ধরতে ছুড়ে ফেলে দিতে পেরেছি।
তড়িঘড়ি করে
আমরা সমাজতন্ত্রের ইঞ্জিন চালিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা ইতিহাসে বিশ্বাস করি না। আমাদের
কাছে কোনো কিছুরই পূর্বাপর নেই। আমরা রেডিমেড জিনিস বাজারে ছাড়ি,
আবার রেডিমেড জিনিসই বাজার থেকে তুলে নিই। কেনই বা এককথায়
সমাজতন্ত্র চালু, কেনই বা এককথায় সমাজতন্ত্রের বিদায়,
তা কারও জানার উপায় নেই। জানানোর তোয়াক্কাও নেই। যে বিশ্বাস আর
রাজনীতি নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন, একেবারে তার
বিপরীত প্রান্তে অবস্থান নিয়ে কী করে তাঁর আদর্শেই চলছি বলা যেতে পারে, তা নিয়ে যেহেতু জিজ্ঞাসা নেই, কাজেই উত্তরও নেই।
একটা চরম সুবিধাবাদী কথা ‘রাজনীতিতে শেষ কথা নেই’—এটাই হতে পারে একমাত্র
উত্তর। সমাজতন্ত্রকে বিদায় জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তার যে একটা মূল কথা—মানুষের সঙ্গে মানুষের ভয়ানক
বৈষম্য রাখা যাবে না, এ কথাটারও দায় থেকে
মুক্তি পেতে গণতন্ত্রকে এখন অবাধ করা গেছে। পর্বতপ্রমাণ ধনসংগ্রহ, আকাশচুম্বী বিষমতা এখন সমাজের মধ্যে সত্যিই অবাধ। এটা যদি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী
না হয়, তাহলে কী যে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তা আমার জানা নেই।
খুবই ভালো
হয়েছে, ১৯৭৫-এর পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে
ছিবড়ের মতো দূর-দূর করে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সত্যিই তো, পাকিস্তানপ্রেমীদের
জন্য এর চেয়ে পথের কাঁটা আর কী হতে পারে? নিজেদের বিবেচনাকে
আমাদের ধন্যবাদ জানাতে হয় এ জন্য যে দুষ্ট লোকে ধর্মনিরপেক্ষতার যে মানে করে,
অর্থাৎ রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্ম-বিবেচনা কোনো ভূমিকা নেবে না, ব্যক্তির ধর্মাচরণে রাষ্ট্র কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না এবং ধর্ম সম্পর্কে পুরোপুরি
অনাগ্রহী, উদাসীন থাকবে, শুধু এই ছাড়া
যে রাষ্ট্র কারও ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না—সেখানে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার
অর্থ দাঁড়াল সব ধর্মের পোষকতা করা। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের ভূরিপরিমাণ পোষকতা
করা। এই পোষকতায় সত্যি সত্যিই ধর্মের পোষকতা হয়েছে কি না,
তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, কিন্তু এই পোষকতাকে
যে ধনসম্পত্তি সংগ্রহ ও লুণ্ঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে
এবং সমাজে ধনবান ও শক্তিমানদের প্রচুর কাজে আসছে, তাতে
সন্দেহ নেই। দেখা যায়, রাষ্ট্রের ধর্মপোষকতার সঙ্গে ধর্মের বিন্দুমাত্র
যোগ নেই, যোগ আছে লুটের। লুটের স্বার্থেই সমাজ ও রাজনীতির সাম্প্রদায়িক
বিভাজন ঘটাতে হয়।
বাকি রইল
আরেকটি স্তম্ভ—জাতীয়তাবাদ।
ইতিহাসের পথ প্যাঁচালো। ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের পথও প্যাঁচালো। অবিকল দুটি এক রকম জাতীয়তাবাদ
কখনো দেখা যায়নি। উগ্র, অত্যুগ্র যে বিশেষণই
লাগানো হোক না কেন, জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব বহুবর্ণিলই বটে।
আমার ধারণা, বাঙালি হওয়ার জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের খুবই
প্রয়োজন ছিল। ওই তত্ত্ব দিয়েই আমরা পাকিস্তানি শোষণের চেহারাটা বোঝাতে পেরেছিলাম।
বাঙালি
জাতীয়তাবাদের নিজস্ব তাত্ত্বিক ব্যবহার কেমন হতে পারে,
আমার জানা নেই। কিন্তু প্রবল প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনে-সংগ্রামে তার
কী ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। কাজেই
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বলতে, এমনকি একটা সাবানের বুদ্বুদ
বিদ্যমান না থাকলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে পাকিস্তানিরা যা বলতে পারত,
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঠিক তা-ই। পাকিস্তানি আমলে বাংলাদেশি
জাতীয়তাবাদ ছিল না। কারণ, বাংলাদেশই ছিল না, কিন্তু ‘পাক-বাংলার কালচার’, ‘ইসলামাইজেশন’,
‘পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ’ ইত্যাদি লব্জ তখনো ছিল, যদিও পশ্চিম পাকিস্তানে চার-চারটি জাতি থাকার ফলে পাকিস্তানিরা এ বিষয়ে
বেশি উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু এখন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে শোরগোল তোলার লোকের
অভাব নেই। আমার ধারণা, বাংলাদেশকে একটি সতেজ স্বাস্থে্যর
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের একটু
ক্রুদ্ধ, একটু অসহিষ্ণু ভূমিকার ইতি ঘটত।
বাংলাদেশের
এখন স্বাভাবিক বাঙালি হওয়ার রাস্তা নেই, বাঙালি বলতে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়া হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে।
স্বাভাবিক বাঙালিকে স্বাভাবিকের পথ থেকে সরিয়ে এনে উদ্ভট এক মানুষ বানিয়ে তোলার জন্যই
তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। স্বাভাবিকের পথটাকে খোলা রাখার জন্যই
প্রয়োজন বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
বাংলাদেশ-গভীর
অন্ধকারে তার ভাঙনের শব্দ, ধস নামার গম্ভীর ধুপধাপ
আওয়াজ; ধস নামছে বিক্রমপুরে, ঢাকায়,
মানিকগঞ্জে, তিতাসের তীরে, কর্ণফুলীতে, সিলেটে সুরমায়, টাঙ্গাইলে,
ভূঞাপুরে, গাইবান্ধায়, তিস্তার
পাড়ে, রংপুরে, যমুনায়, সিরাজগঞ্জে—অন্ধকারে, ক্রমাগত
ধস নামছে, ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশ, অন্ধকারে,
বাতাসের ঝড়ের ঝাপটে জাহাজ ডুবে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যায়, ঢাকার সবচেয়ে দীর্ঘ দালানের চূড়াটি অদৃশ্য হচ্ছে আর ওদিকে উজাড় হয়ে যাচ্ছে
সুন্দরবন, চিংড়ি-ডলারের জন্য বন্দুকের নির্দেশে লোনাপানি উঁচু
হয়ে আসে, খালপাড়ে রক্তের লবণ লাল টকটকে হয়ে ছড়িয়ে যায়,
সব সুন্দরী, গেউয়া মরে যায়, মুমূর্ষু কুকুরের মতো বেঙ্গল টাইগার কেঁউ কেঁউ করে ডাকে, আবার উত্তরের মাটির নিচ থেকে পানি সরে যায়, বিশাল
বিশাল ফাটল দেখা দেয় প্রসূতি বাংলাদেশের তলপেটে, বাংলাদেশের
মাটির এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত, মাটির ওপরে ক্রমাগত
বালিয়াড়ি এগিয়ে আসে। এই সব, এই সব কি বীভৎস বর্ণনা, না বীভৎস বাস্তব!
কাকে আমৃত্যু
বয়ে বেড়াতে হবে এই যন্ত্রণা?
(২৬ জুন ২০১৮ তারিখে দেওয়া ‘১৯৪৭-এর দেশভাগ এবং বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক
রাজনীতি’ শীর্ষক জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতার সংক্ষেপিত রূপ)
লেখকঃ
হাসান আজিজুল হক, কথাসাহিত্যিক; সাবেক অধ্যাপক, দর্শন
বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
০১ জুলাই ২০১৮
ইং তারিখ প্রকাশিত প্রথম আলো প্রত্রিকা থেকে নেওয়া ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন