Biplobi Barta

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শ্রমিক নেতা খাইরুল মামুন (কেএম) মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু।



আজ ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ইং রোজ শুক্রবার বিকাল ৩ ঘটিকায় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সমম্মেলন উপলক্ষে বাইপাইল থেকে জামগড়া লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে বিকাল ৪ ঘটিকায় আশুলিয়ার জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিন কমিটির সভাপতি খাইরুল মামুন মিন্টুর সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু’র পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা ইদ্রিস আলী, সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমীন,আঞ্চলিক কমিটির সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আল মামুন, নদের চান মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন দেওয়ান, সপ্তর সম্পাদক আব্দুল মজিদ।
বক্তারা, গার্মেন্টসহ সকল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটায় নির্যাতন বন্ধ, শিল্পাঞ্চল ভিত্তিক ৫০০ শষ্যা বিশিষ্ঠ বার্ন ইউনিটসহ সরকারি হাসপাতাল নির্মান করে শ্রমিকদের দিবা-রাত্রি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও রিক্সা ও ভ্যান চলাচলে বাধা প্রদান, চাঁদাবাজি, হয়রানী বন্ধ করে, চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মান করতে হবে, রিক্সা ও ভ্যান চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে, মহাসড়কের পাশে রিক্সা ও ভ্যান স্ট্রেন্ড করতে হবে এবং শ্রম আইনের আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে পেনশন স্কীম চালু করতে হবে, দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা এবং আহত ও আজীবন পঙ্গুত্ববরণকারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এর দাবী জানান।
সমাবেশে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণে নির্মিত রানা প্লাজা স্মৃতিস্তম্ভ উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরকারি উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ এর দাবী জানান।
সমাবেশ শেষে গত ২৬ নভেম্বর ২০১৯ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে নির্বাচিত খাইরুল মামুন মিন্টু সভাপতি ও মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু সাধারণ সম্পাদক সহ ২৭ সদস্য বিশিষ্ঠ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক নতুন কমিটি ঘোষনা করা হয়।

ক্রঃ নং
নাম
পদবী
মোবাইল নং
০১
খাইরুল মামুন মিন্টু
সভাপতি
০১৭৫১-৬৭৫৫৪৭
০২
সাইফুল্লাহ আল মামুন
সহ সভাপতি
০১৭১৪-৩৪৪৭১৬
০৩
মোঃ নান্নু মিয়া
সহ সভাপতি
০১৭৫৯-০০৫৩৪৬
০৪
নদের চান মিয়া
সহ সভাপতি
০১৭৪৩৯৭৭৬৬৬
০৫
মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু
সাধারণ সম্পাদক
০১৭১৮-৮১০৫৯২
০৬
নবীয়াল ফকির
সহ সাধারণ সম্পাদক
০১৭৫৮৪৮৩১৯১
০৭
মামুন দেওয়ান
সাংগঠনিক সম্পাদক
০১৬২০-৪২৪৭১০
০৮
আব্দুল মজিদ
দপ্তর সম্পাদক
০১৭৯৫-৮১৬২৩৬
০৯
আলতাব হোসেন
প্রচার সম্পাদক
০১৭১৬-২০২৩৬২
১০
মোঃ সাগর
আইন বিষক সম্পাদক
০১৭৩৫-১৫৩১০৮
১১
মোহন মিয়া
অর্থ সম্পাদক
০১৯৩৪-৯৮৮৫০০
১২
ইদ্রীস আলী
কার্যকারী সদস্য
০১৭১১-২৬২৩৭৫
১৩
আলম পার্ভেজ
কার্যকারী সদস্য
০১৯১১-৪৫৬৯৬৪
১৪
মোঃ ফারুক হোসেন
কার্যকারী সদস্য
০১৭৭১-৭৯৭৬৩৭
১৫
ফজলুল হক
কার্যকারী সদস্য

১৬
আফজাল হোসেন
কার্যকারী সদস্য

১৭
হিরন মিয়া
কার্যকারী সদস্য

১৮
মজিবার রহমান
কার্যকারী সদস্য

১৯
জিয়াউর রহমান
কার্যকারী সদস্য

২০
লাইলী বেগম
কার্যকারী সদস্য

২১
চম্পা আক্তার
কার্যকারী সদস্য

২২
রিপন মহন্ত
কার্যকারী সদস্য

২৩
সাইদুর রহমান
কার্যকারী সদস্য

২৪
মোঃ শফিক
কার্যকারী সদস্য

২৫

কার্যকারী সদস্য

২৬

কার্যকারী সদস্য

২৭

কার্যকারী সদস্য


বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

গার্মেন্ট শিল্পে অশনি সংকেত


সুযোগসন্ধানী গার্মেন্ট মালিকরা গাছেরটাও খায় তলারটাও কুড়ায়। তারা শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হয়েই ক্ষান্ত না, তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জনগণের টাকা আত্মসাতের জন্য সবসময়ই সরকারের উপর চাপ রাখে। যেহেতু সরকারের মধ্যে এবং সমাজে মালিকদের প্রভাব অনেক বেশি সেহেতু তারা প্রতিবছরই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নগদ সুবিধা আদায় করে। এবছরও ২, ২৭৫ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছে। এরপরে বিজিএমইএ আরো এক শতাংশ নগদ সহায়তা দাবি করছে। তারা এটাও বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী এই সহায়তা দিতে সম্মত এখন শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। অথচ শ্রমিকদেরতো বটেই শিল্পের এবং জাতির জন্যও প্রয়োজন রেশনিং ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি কিন্তু তার কোনো আলোচনাই নাই, শুধু তেইলার মাথায় তেল দেয়া হচ্ছে। পোশাক খাতে ৪ ধরনের নগদ প্রণোদনা দেয়া হয় যার পুরোটাই মালিকদের জন্য আর শ্রমিকদের শুধু শোষণ বঞ্চনা।

শোষণের অংশ হিসেবে প্রত্যেক শ্রমিককে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করে বাড়তি মজুরি সমন্বয় করে নিচ্ছে। আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় কিছু কিছু কারখানা শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কারখানাগুলোতে এই সময়ে কাজ কম যা আগামী নভেম্বর মাস নাগাদ পূরণ হবে মর্মে সরকার ও মালিকরা বলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কাজ কম থাকায় অনেক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাঁটাই চলছে। নানা কারণে কারখানায় সংকট হওয়ায় শ্রমিকদেরকে সময়মত মজুরি দেয়া হচ্ছে না। বিনা নোটিশে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আন্দোলন করতে গেলেই বলা হচ্ছে কারখানা চালুই রাখা সম্ভব হচ্ছে না তারপর আবার বেতন দেয়া হবে কোথা থেকে। বরং আন্দোলন করলে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু মালিকদের জীবনে বিলাসীতার কোনো কমতি নেই। সকল সংকট শুধু শ্রমিকদের পাওনা দিতে গেলে। কিন্তু গার্মেন্ট শিল্পের অতীতের দিকে তাকালে আমরা বলতে পারি যে, এই মালিকরা এতো সম্পদ, এতো অর্থ-বিত্তের মালিকতো এই শ্রমিকদের শ্রমের মজুরি এবং ন্যায়সঙ্গত পাওনা আত্মসাৎ করেই হয়েছে।

আমাদের ভয় দেখানো হয় যে, শ্রমিকরা আন্দোলন করলেই বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের ইমেজ নষ্ট হয়ে যায়। বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বন্ধ করে দেয়। আমাদেরকে পাট শিল্পের কথা বলে বলা হয় যে, গার্মেন্ট শিল্প যেন পাটের মতো না হয়। বুঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, ট্রেড ইউনিয়ন শিল্প ধ্বংসের জন্য দায়ী। অথচ এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, পাটশিল্প ধ্বংসের প্রধান কারণ ভুলনীতি, দুর্নীতি, বিজেএমসি’র অব্যবস্থাপনা অথচ তা বলা হয় না। সাম্প্রতিক ট্যানারি শিল্পের কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে শিল্পের উপর মালিকদের ব্যয়ের চাপ এবং মালিকদের অর্থ পাচার– এগুলোকে আড়াল করে রাখা হয়। ক্রেতারা আমাদেরকে অর্ডার না দিয়ে ভিয়েতনাম, মায়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ইত্যাদি দেশে অর্ডার দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মনে রাখা দরকার ঐ সব দেশের শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা তো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। মাসের পর মাস বেতন বাকি রেখে বিদেশে টাকা পাচার করার সংস্কৃতি তো ভিয়েতনামে নাই। ঐসব দেশে নেই।

শিল্প-অর্থনীতির সাথে রাজনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যেই রাজনৈতিক দল পালন করছে তারা সুষ্ঠুভাবে শিল্প পরিচালনা করতেও ব্যর্থ। তারা দেশকে অস্থিতিশীলতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাদের লুটপাটে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে যার প্রভাবে শিল্পের উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি ব্যহত হবে। এই ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে না পারলে অর্থনীতিতে অগ্রগতি সম্ভব নয় বরং সংকট ঘনীভূত হতে থাকবে। সুতরাং পরিবর্তন আবশ্যক। পরিবর্তন হলে দেশের প্রধান শিল্প ও রপ্তানি খাত গার্মেন্ট বর্তমানে ৮৩ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত পোশাক রপ্তানির জন্য আলোচনা চলছে। চীন পোশাক শিল্প কমিয়ে দেওয়ায় চীনের ক্রেতাদের নিকট বছরে ন্যূনতম ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পোশাক বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে লুটপাটতন্ত্র বন্ধ করে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার ও মালিকদেরকে লুটেরা চরিত্রের পরিবর্তন করে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। শ্রমিকদের উপর মিথ্যা অভিযোগ আনলে সমস্যার সমাধান হবে না। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট এর প্রভাব বিবেচনায় রাখতে হবে।

কয়েকটা বিদেশি ক্রেতা তারা সময়মত মূল্য পরিশোধ না করায় বেশ কয়েকটি কারখানা সংকটে পড়েছে। বিদেশি ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে পোশাক কিনে কমপক্ষে ৫-৬ গুণ দামে বিক্রি করা সত্ত্বেও এখানে মূল্য বাড়াচ্ছেন না। তাদের সাথে দর কষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি না করে আমাদের মালিকরা নিজেদের মধ্যে কাজের অর্ডার প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা করে মূল্য কমাতে বিদেশি ক্রেতাদের সুযোগ করে দেয়। অথচ মালিকরা শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে শ্রমিকদের পাওনা মেরে দিয়ে সেই টাকাকে মুনাফা হিসেবে দেখতে চায়।

শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে দুঃখ-কষ্টকে আমলে না নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আবিষ্কার করলে চলবে না। বিজিএমইএ বলছে গত ছয় মাসে নাকি ৪৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছে। বন্ধের কারণগুলো আমাদেরকে খতিয়ে দেখা দরকার। এখানে বড় পুঁজির সাথে ছোট পুঁজির একটা প্রতিযোগিতা আছে। এই প্রতিযোগিতায় ছোট পুঁজি টিকে থাকতে পারছে না। যার ফলে ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হচ্ছে। আবার কোনো কোনো মালিক নিজেই পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক এবং ব্যাংকের টাকা মেরে দিতে সংকট তৈরি করে। কেউ কেউ এ দেশ থেকে স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। এমনই নানারকম ঘটনা বিরাজমান। যা গার্মেন্ট শিল্পের জন্য এক অশনি সংকেত।

এই পরিস্থিতিতে খবর বেরিয়েছে ১১.৪৯ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে, ৪.৪২ শতাংশ আয় বেড়েছে এটা খতিয়ে দেখা দরকার। আদৌ সঠিক কিনা? রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মুনাফা বৃদ্ধি হতে হবে। মুনাফা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের আয় ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেতে হবে। কেননা প্রতিদিন খাদ্যদ্রব্য, শিক্ষা ব্যায়, চিকিৎসা ব্যয় ইত্যাদি বেড়েছে। যার ফলে প্রাপ্ত মজুরিতে জীবিকা নির্বাহ করতে প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খেতে পারছেন না। এরপর কারখানায় শারীরিক মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।

২০০৬, ২০০৭ সালের দিকের সময়কালের আন্দোলনে কারখানা ভাঙচুর হতো, অগ্নিসংযোগ হতো। ট্রেড ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মহল এর নানামুখী কর্মকাণ্ডের ফলে ভাঙচুর বন্ধ হয়। এটাকে মালিকরা শ্রমিকদের দুর্বলতা মনে করে সন্ত্রাসী ও পুলিশী নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যেও দিনদিন ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হলে শিল্পের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হয়ে পড়বে। তার ফলে যে ক্ষতি হবে তার দায়-দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। পোশাকের মূল্য, শ্রমিকের জীবনমানসহ নানামুখী অশনি সংকেত মোকাবেলা করে তৈরি পোশাক শিল্প-দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে।

সরকারকে বিদেশি ক্রেতাদের নিকট থেকে অর্ডার নেয়ার ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সেল চালু করা দরকার। তাহলে মালিকদের মধ্যে দরকষাকষির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমে যাবে। আমাদের দেশের পোশাকের মূল্য বাড়িয়ে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মালিকদের পকেটস্থ নীতিহীন ট্রেড ইউনিয়ন বা বিদেশি মদদপুষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন নয়, ব্যক্তিস্বার্থের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব নয়। বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এবং নেতৃত্ব শক্তিশালী হতে হবে। ব্যাংকিং, পোর্ট, পরিবহনসহ সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। সুষম শিল্প, সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে শ্রমিকদের আইনানুগ সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আসুন শিল্প বিকাশে শ্রম শোষণ নয় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করি। তাহলেই এই শিল্পের সংকট সমাধান হবে নতুবা শ্রমিকদেরকে অবশ্যই তীব্র লড়াই গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : কাজী রুহুল আমিন : সদস্য, সিপিবি, কেন্দ্রীয় কমিটি

মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯

বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা কমরেড জসীম উদ্দীন মণ্ডল-এর আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, এ দেশের শ্রমিক আন্দোলনের কিংবদন্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা,
বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা কমরেড জসীম উদ্দীন মণ্ডল-এর আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ।
২০১৭ সালের ২ অক্টোবর ভোর ৬টায় রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ দেশের শ্রমিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা কিংবদন্তীর। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনো কিছুকেই তিনি পরোয়া করেননি।
আজীবন বিপ্লবী কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল তরুণদের স্বপ্নের নায়ক। তিনি হাজার হাজার তরুণকে কমিউনিস্ট আদর্শ ও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সহজ-সরল-সাবলীল অথচ অনলবর্ষী বক্তৃতায় তিনি সহজেই জনতাকে আকৃষ্ট করতেন। ৯০-এর দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলন তীব্রভাবে আক্রান্ত হলে, তিনি আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে বিলোপবাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
কমরেড জসীম উদ্দীন মণ্ডলের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটি আজ ২ অক্টোবর, বুধবার, বিকেল ৫টায় পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে অবস্থিত মৈত্রী মিলনায়তনে স্মরণসভা আয়োজন করেছে।

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শ্রম ও শ্রমিক ভাবনা



Bbw÷wUDU di Gbfvqib‡g›U A¨vÛ †W‡fjc‡g›U (AvBBwW) hye msjvc

7 †m‡Þ¤^i 2019, †nvqvBU K¨‡mj †i÷z‡i›U, XvKv


লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু

প্রকৃত অর্থে শ্রম কি এবং শ্রমিক কারা । যে কোন কাজ করাকেই শ্রম বলা হয়। যিনি শ্রম বিনিয়োগ করে উপার্জন করেন এবং তা দিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করেন, তিনিই শ্রমিক।

বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’র ১৪ নং ধারাতে বলা আছে-
‘’রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে, কৃ্ষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’’
জাতীয় শ্রমনীতি’র ভূমিকাতে বলা আছে-

‘’স্বাধীনতার জন্য সুদীর্ঘ ঐতিসাসিক সংগ্রাম ও নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল কৃ্ষক-শ্রমিকসহ মেহনতি মানুষের জন্য শোষণমুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টব্দ পরবর্তী স্বৈরশাসক ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বস্তরের জনগণের সাথে শ্রমজীবী মানুষের অবদান সর্বজনবিদিত
বর্তমান শ্রমনীতির মূল উদ্দ্যশ্য শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে অধিকার সুরক্ষা, শোভন কর্মপরিবেশ ও সুস্থ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা,জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রত্যাশার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে অধিকতর অবদান রাখার সূযোগ সৃষ্টিসহ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রয়াসে দক্ষ মানব সম্পদ তৈ্রির মাধ্যমে বৈষম্য, শোষণ, দারিদ্র ও কুসংস্কারমুক্ত সৃজনশীল ও কর্মমুখী শ্রমশক্তি গড়ে তোলা। সর্বস্তরের জনগণের মানসম্মত জীবন যাত্রার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংস্থান ও সেবামূলক কার্যক্রম বৃ্দধির জন্য সুষম অর্থনৈ্তিক উন্নতি বিধান করা একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য
এরই প্রেক্ষাপটে সরকার এমন একটি ইতিবাচক, বাস্তবমুখী এবং ন্যায়সংগত নীতি অনুসরণ করতে চায় যার ফলে শ্রমিক শ্রণীর ন্যায্য প্রপ্যতা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি শ্রমিকরাও আন্তরিকভাবে উৎপাদন বৃ্দধিতে আত্ননিয়োগ করেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে মালিক ও শ্রমিকসহ সকল পক্ষের আইন ও ন্যায়সংগত অধিকার এবং দায়িত্ববোধ সুসংহত হবে বলে সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।‘’

বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী-

ক) শ্রমিক অর্থ শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি, তাহার চাকুরীর শর্তাবলী প্রকাশ্য বা উহ্য যে ভাবেই থাকুক না কেন। যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোন (ঠিকাদার, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, এর) মাধ্যমে মজুরী বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরী, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন, কিন্তু প্রধানতঃ প্রশাসনিক তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না।”

কৃষি শ্রমিক অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যিনি দৈনিক, মাসিক অথবা বাৎসরিক চুক্তির ভিত্তিতে অথবা নির্দিষ্ট কোন কাজ সম্পাদনের চুক্তিতে মজুরীর বিনিময়ে কৃ্ষি কাজে নিযুক্ত থাকেন।”

বাস্তবে কি? শ্রমশক্তি বিক্রি করে যে শ্রমিক, সেই শ্রমিক কি তার শ্রম সময়ের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে? কতোক্ষণ কাজ করলে, কতটুকু শ্রমের মূল্য পেলে তার জীবন বিকশিত করার সুযোগ সে পাবে?

গার্মেন্ট কারখানা গুলোতে মোট প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। এই শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগই নারীশ্রমিক এবং তাদের সকলেই যুব। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যেএই শিল্পের মালিকরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও শ্রমিকরা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।

বিশ্বসভ্যতা বিনির্মাণে শ্রমিক মেহনতি মানুষের ভূমিকা ব্যাপক। আজ আমরা বিশ্বব্যাপী যে সকল উন্নতি ও অগ্রগতি, বিলাস, চাকচিক্য, জাকজমক দেখতে পাই তার সব কিছুর পিছনে আছে শ্রমিকের ঘাম। আশির দশকের শুরু থেকেই এই শ্রমশক্তিতে ব্যাপকভাবে যুক্ত হয়েছেন এদেশের প্রন্তিক নারীরা। উৎপাদনের চারটি মূল উপাদানের অন্যতম প্রধান হলো শ্রম। জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় ও সহজতর হলেও শ্রমিকবিহীন উৎপাদন কখনও কল্পনা করা যায় না। সৃষ্টির শুরু থেকেই উৎপাদন ব্যবস্থায় এই শ্রম একটি অপরিহার্য্য উপাদান। কিন্তু যারা যুগে যুগে এই শ্রম দিয়েছে, ঘাম ঝরিয়েছে তারা মূলত এর তেমন কোনো ফল ভোগ করতে পারেনি কখনোই। সম্পদের মালিকানাকে কেন্দ্র করে যে ব্যবস্থা বিকাশিত, সেখানে দুটো আলাদা শ্রেণির অস্তিত্ব দৃশ্যমান অর্থাৎ একটা মালিক শ্রেণি ও অন্যটি শ্রমিকশ্রেণি। এই শ্রেণী বিভাজিত ব্যবস্থায় শ্রমিককে মূলত দাসেত্বের শৃংখলে বেধে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রায় ৪২টি আনুষ্ঠানিক খাত রয়েছে যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছে। এই শ্রমিকের মজুরী এবং অন্যান্য ব্যবস্থাবলী সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় নীতি ও বিধিমালা রয়েছে। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বিষয়টি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সেসব আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে যথেষ্ট দূর্বলতা ও অবহেলা লক্ষণীয়। তাছাড়াও কোনো কোনো আইন শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থীও বটে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ৬ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৮৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যারা শ্রম আইনের আওতাভুক্ত নয়। এসকল শ্রমিকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তারা বিভিন্নভাবে একটুখানি বেঁচে থাকার তাগিদে নীরবে তাদের শ্রম দিয়ে যাচ্ছেনতারা বিভিন্নভাবে শোষিত, বঞ্চিত, যার খবর আমরা কেউ রাখিনা। তাদের কর্মঘণ্টা, বেতন/মজুরি কাঠামো বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দূরের কথা, কাজের স্বীকৃতি আজও সুনির্দিষ্ট বা স্পষ্ট নয়। তাদের সব কিছুই মালিকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অথচ এই শ্রমিক বিহীন যেকোনো ব্যক্তি, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও অচল।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কৃষি এবং অন্যান্য ছোট ও মাঝারি শিল্প। বাংলাদেশের শ্রম-নিয়োজনের ক্ষেত্রসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শ্রমজীবী মানুষের অবস্থান তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ: (১) সরকারী শিল্প শ্রমিক – পাট, টেক্সাটাইল, চিনি, কাগজ প্রভৃতি (২) বেসরকারী শিল্প শ্রমিক – গার্মেন্ট, হালকা যান, পরিবহন, টেনারী প্রভৃতি এবং (৩). অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শ্রমিক – গৃহ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, হকার প্রভৃতি। তবে পরিতাপের বিষয় এই যে, একজন নারী কৃষি শ্রমিকের যেমন সাংবিধানিক কোন স্বীকৃতি নেই তেমনি কৃষি শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দেয়ার মতো পরিচয়পত্রও নেই। এমনকি জীবন, স্বাস্থ্য, অক্ষমতা, মাতৃত্ব সম্বলিত সামাজিক নিরাপত্তা সুযোগ এবং বৃদ্ধ বয়সের পেনশন / ভাতার সুযোগ নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বা জাতীয় বোর্ড গঠন এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন।

কৃষিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার ফলস্বরূপ গ্রামাঞ্চলের এক বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠী (যাদের সিংহভাগই নিরক্ষর কিংবা আধা-দক্ষ) কাজের সন্ধানে শহরমুখী হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে কিছুটা বাজার অর্থনীতি, অকৃষিজ পেশার সুযোগ বৃদ্ধি, কাজের খোঁজে শহরমুখী প্রবণতা এবং বহুমূখী ‍শিল্পের অভাব– প্রধানত এই চারটি কারণে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ত্বরান্বিত করেছে। এর মাধ্যমে ফাটকাবাজী, কালোবাজারী আর লুটপাটের অর্থনীতি বিকশিত হয়ে শ্রমিককে আরো আরো প্রান্তিক করছে। গ্রাম-শহরে জন্ম নিয়েছে বিশাল আকৃতির এক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এই খাতে কম মজুরিতে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবীর কর্ম নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। সুতরাং সামগ্রিকভাবে স্থায়ীত্বশীল কর্মসংস্থান বাড়েনি। তৈরী হয়েছে এক জগাখিচুড়ি সমাজব্যবস্থা। শ্রমবাজার কাঠামোতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা কোন অর্থনৈতিক অগ্রগতির নির্দেশক নয় বরং এটাকে বলা যেতে পারে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি’।

বিশ্ববাস্তবতা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সুফল হিসেবে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আইসিটি একটি সম্ভাবনাময় নতুন শিল্পখাত। আশাকরা যায়, এ খাত একদিন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধিশীল খাত। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে এর অবস্থান তৃতীয় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই খাত দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হতে পারে, এমন সম্ভাবনা প্রবল। প্রতিবছর অসংখ্য তরুণ আইসিটি খাতে যুক্ত হচ্ছে। অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় আইসিটি বেশ বিকশিত হচ্ছে। এই খাতে রয়েছে নানা সমস্যা। এরপরও মোটামুটিভাবে আমরা আমাদের আইসিটি খাত নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।

দেশের আইসিটি খাতের নানা সমস্যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- আমাদের গ্রামের লোকেরা এখনও আইসিটি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব; সার্বিকভাবে প্রায়োগিক জ্ঞানের অভাব; ব্যান্ডউইডথের চড়া দাম; আইসিটি পণ্যের উচ্চমূল্য; ভালো হার্ডওয়্যার কারখানার অভাব; অবকাঠামোগত সমস্যা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঙ্কট, পরিপূর্ণ ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারে হার্ডওয়্যার সঙ্কট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণ। দেশের ৬০ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তেমন কোনো প্রাযুক্তিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। তাদের সন্তানদেরও রয়েছে প্রাযুক্তিক জ্ঞানের অভাব। সফলতার সাথে এই জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করা গেলে তা হবে বড় ধরনের একটি অর্জন। ব্যান্ডউইডথের উচ্চমূল্য এ খাতের জন্য একটি বড় সমস্যা। বিশ্বের, অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যান্ডউইডথের মূল্য সবচেয়ে বেশি। অথচ এই ব্যান্ডউইডথ হচ্ছে আইটি শিল্পের জ্বালানি। আমরা আমাদের আইটি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার কারখানা গড়ে তুলতে না পারলেও তরুণদের উদ্যোগে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠছে সফটওয়্যার শিল্প। আইসিটি শিল্পের অনেক খাতে আমাদের বেশ কিছু অর্জন থাকলেও পিসি, ল্যাপটপ, মোবাইল সেট ও প্রিন্টারসহ অন্যান্য আইটি পণ্যে দাম এখনও অনেক বেশি। এসবপণ্যের দাম একটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ভিতরে নিয়ে আসতে পারলে আরো বেশিসংখ্যক ব্যক্তি, শিক্ষত-প্রশিক্ষত তরুণকে আইসিটি শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বেকার সমাস্যার সমাধান সম্ভব।

শ্রমের আরেকটি বড় খাত হলো বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও। সমাজসেবা অধিদপ্ত ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ ও সংশ্লিষ্ট বিধি, ১৯৬২ এর আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পেয়ে থাকে। এ অধ্যাদেশে নিবন্ধন গ্রহণকারী সংস্থাগুলো ১৫টি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নিবন্ধন নিয়ে থাকে। কার্যক্রমসমূহ হলো, শিশু কল্যাণ, যুব কল্যাণ, নারী কল্যাণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, পরিবার পরিকল্পনা, সমাজবিরোধী কার্যকলাপ হতে জনগণকে বিরত রাখা, সামাজিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, কারামুক্ত কয়েদীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন, কিশোর অপরাধীদের কল্যাণ, ভিক্ষুক ও দুস্থদের কল্যাণ, দরিদ্র রোগীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন, বৃদ্ধ ও দৈহিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, সমাজকল্যাণকার্যে প্রশিক্ষণ এবং সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহের সমন্বয় সাধন।

এসব অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি, সময়মত বেতন ও ভাতাদি প্রদান, ছুটিনিয়োগ ও পরিচয়পত্র, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনার ঝুঁকিসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে কিন্তু শ্রম আইনে তাদের সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যার দিক থেকে বিপুল পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবি মানুষ। অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনা আর বৈষম্য শিকার তারা। ধনী-গরিবে বৈযম্য, দারিদ্র ও বেকারত্ব বাড়ছে। সাংবিধানিক অধিকার ও শ্রম আইনের পাতায় লেখা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা প্রয়োগে নেই। আইএলও সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী হওয়া সত্ত্বেও লোভ-লালসার-ক্ষমতার দাপটে ক্ষমতাবানরা দুর্বলকে ক্রমেই কোণঠাসা করছেন।

কাজেই বলা যায়, আমাদের দেশে শ্রমিকদের অধিকার আজও সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। স্বাধীন শ্রম অধিকার চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগের ক্ষেত্র এখনতৈরি করার সময় এসেছেসময় এসেছে প্রত্যেক শ্রমিক ন্যায্য মজুরী, উন্নত জীবন, কর্মনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি করতে হবে। যার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং সকলে তার সুফল ভোগ করবে।