Biplobi Barta

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯

মোমবাতি জ্বালিয়ে হতাহত ও নিখোঁজদের স্মরণ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র




সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ছয় বছর পূরণ হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। দিনটি সামনে রেখে আজ ২৩ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাভারের ঘটনাস্থলে ১১৩৪ মোমবাতি জ্বালিয়ে হতাহত ও নিখোঁজদের স্মরণ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, উদ্ধারকর্মী ও হতাহত শ্রমিকদের স্বজনরা।
আজ সন্ধ্যায় ওই ভবনের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে নিহত কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত হন ১ হাজার ১৩৪ জন।

মোমবাতি প্রজ্বালনে আসা গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা খাইরুল মামুন মিন্টু ও শ্রমিকরা রানা প্লাজার জমিটি শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহারসহ বেশ কিছু দাবি জানান। এর মধ্যে রয়েছে আহতদের আজীবন চিকিৎসা দেওয়া, ঘটনার দিনটিকে শোক দিবস ঘোষণা, হতাহত ও নিখোঁজ পরিবারের শিশুদের লেখাপড়া নিশ্চিত করা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, আহত উদ্ধারকর্মীদের চিকিৎসা, স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, হতাহত পরিবারের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৯

শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী গার্মেন্ট মালিক ও সরকারী কর্মকর্তারা সবায় এক প্রকার দায়মুক্তি নিয়েছেন।

 ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল ৮:৪৫ এ সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। ভবনের কয়েকটি তলা নিচে দেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এ ঘটনায় এক হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজার পাঁচ শতেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
 
সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে ৬টি পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এর মাত্র পাঁচ মাস আগে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর তাজরিন পোশাক কারখানায় একটি বড় অগ্নিকান্ডের পর এই দুর্ঘটনাটি হয়, যেটি বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা। গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন গুলোর দাবী, এটি একটি পরিকল্পিত শ্রমিক হত্যাকান্ড। 

ভবনটি রানা প্লাজা হিসেবে পরিচিত এবং এর মালিক সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল। সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি। এতে ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা। দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ব্রাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল প্রথম তলায়। 

রানা প্লাজায় ৬টি গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ৫০০০ এর মত শ্রমিক কাজ করত যার বেশীর ভাগ শ্রমিক ছিল নারী। ২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। ভবনের উপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল।

২৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর ভবন ছেড়ে শ্রমিকদের চলে যেতে বলা হচ্ছে সত্ত্বেও, গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরের দিন কাজে ফিরতে বলা হয়, কারখানা গুলোর তাদের সুপারভাইজার ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষণা করে শ্রমিকদের কাজে ফেরার জন্য চাপ প্রদান করে, কাজে যোগদান না করলে চাকুরী হারাতে হবে বলে শ্রমিকদের ভয় দেখান। শ্রমিকরা চাকুরী হারানোর ভয়ে তারা কাজে যোগদেন, এসময় ভবন মালিক সোহেল রানা ও তার গুন্ডা বাহিনীর লোকজন এবং পুলিশ প্রশাসনের লোকজন উপুস্থিত ছিল। ব্যাংক এবং দোকান মালিকরা ভবনে ফাটলের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল।
কারখানায় ফাটল সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল। ৯তলা ভবনটি ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল ৯:০০ টার দিকে প্রথম তলা বাদে বাকি সবগুলি তলা ধসে পড়ে। ধসে পড়ার সময় ভবনটিকে প্রায় ৪০০০ শ্রমিক ছিল। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং কাঁপনে শ্রমিকরা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেন। আশে পাশের মানুষ বেরিয়ে দেখেন বিরাট এলাকা ধুলা বালিতে ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়।

২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকাল থেকেই গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কর্মিরা রানা প্লাজায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার জন্য সাভারের থানা বাস স্ট্যান্ডে ক্যাম্প স্থাপন করেন। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য রানা প্লাজা গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন করে এবং রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের পরিবারের লোকজন নিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, আহত-নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, নিখোঁজ শ্রমিকের সন্ধান, ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারকে পুনঃবাসন এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোসহ ৬ দফা দাবীতে সাভারে গড়ে তোলে। এঘটনার পর গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে একি দাবিতে ব্যপক আন্দোলন গাডে তোলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ শে এপ্রিল ২০১৩ ঢাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন মালিক সোহেল রানা,  ঐ ভবনের নিউ ওয়েভ বটমস লিঃ এর মালিক বজলুস সামাদ আদনান, ফ্যন্টম গার্মেন্টসের মালিক আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েভ বটমস লিঃ এর আরও এক জন  মালিক, মাহবুবুর রহমান তাপস, সাভার পৌর প্রকৌশলী ইমতেমাম হোসেন ও সাভার পৌর সহকারী প্রকৌশলী আলী মিয়াকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারীভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আহ্বান করা হয়। ২৭শে এপ্রিল এই ভবনের দুটি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দুজন প্রকৌশলী, ইমতেমাম হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী, আলী মিয়াকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। ২৮শে এপ্রিল এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে সবাই জামিনে থাকলেও ভবন মালিক সোহেল রানা জেলে আছে।  কিন্তু একে কেন্দ্র করে করা মামলা গুলোর একটি ছাড়া বাকি প্রায় কোনটিরই আজও নিষ্পত্তি হয় নি। এ ঘটনার পর মামলা হয়েছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে রয়েছে অবহেলা-জনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর দায়ের করা খুনের মামলা।

মূলত: ঘটনার পরেই সাভার থানা পুলিশ একটি মামলা করে। পরে একজন শ্রমিকের স্ত্রীও খুনের মামলা করলে দুটি মামলা একটিতে রূপ নেয় তদন্তের পর। অন্য আরেকটি মামলা হয়েছিলো ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত। বাকী এগারটি মামলা করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এসব মামলার কোনটিরই চূড়ান্ত ফল আসেনি। তবে দুদকের মামলায় সাজা হয়েছে যদিও সেটি ছিল ভিন্ন মামলা। মূলত সব মামলার প্রায় আসামিরা একই। অর্থাৎ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিলো ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে। এখন শ্রম আদালতে এগারটি মামলা বিচারাধীন আছে। বিচারিক আদালতে ফৌজদারি মামলা ও ক্ষতিপূরণের মামলাও বিচারাধীন।

ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর শ্রমিকদের কাজে ফেরার জন্য চাপ প্রদান করে ২৪ এপ্রিল ১১৩৪ জন শ্রমিককে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং ২৪৩৮ জন শ্রমিক স্থায়ী ভাবে পঙ্গুত্য বরণ করে বেঁচে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ্ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। দেশি-বিদেশি মানুষের অনুদানে তারা যে টুকু সহযোগিতা তারা পেয়েছে তা দিয়ে কোনরকম বেঁচে আছে। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থ্ শ্রমিকদের সহযোগিতা দেওয়ার নাম করে যে সব সরকারী-বে-সরকারী বিভিন্ন সংস্থা যারা টাকা পয়সা এনেছিল তারা এখন রানা প্লাজার শ্রমিকদের থেকে অনেক ভালো কেও কেও আছে ফুলে ফেঁপে অনেক বড় হয়ে গেছে। আবার কেও এমপি-মন্ত্রী হয়েছে, কেও কেও বাড়ী গাড়ীর মালিক হয়েছে। রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা তারা কেও কেও চিকিৎসার অভাবে ছটফট করছে, বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতে পারছেনা। অনেক পরিবার অর্ধা হারে অনাহারে কোন রকম বেঁচে আছে। কিছু আহত শ্রমিক আছে যারা পেটের তাগিদে অনেক কষ্ট করেও কোন না কোন কর্মে নিয়জিত হয়েছেন। তবে বেশীর ভাগ শ্রমিক বেকার জীবন যাপন করছেন। কিছু শ্রমিক আছে যারা কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও তাদের কোথাও কাজ দেওয়া হচ্ছেনা। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছি রানা প্লাজা ভবনের স্থানে জমি অধিগ্রহন করে শ্রমিকদের জন্য মার্কেট নির্মান করে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের পুনঃবাসন ব্যবস্থা করা, এই মার্কেটে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারী উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মান করা, যাতে আহত শ্রমিকরা এখানে চিকিৎসা নিতে পারে। নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ভবনের সামনে স্থায়ী বেদী নির্মান করা। রানাপ্লাজা ধ্বসের ঘটনায় দায়ী বেক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা। 

রানা প্লাজায় ৬ টি গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তারা এখন অন্য যায়গায় গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, ভবন মালিক রানা রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের মামলাতে জামিনে আছে কিন্তু অন্য মামলাতে জেলে আছে, রানা জেলে থাকলেও আলিশান জীবন যাপন করছেন। রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী গার্মেন্ট মালিক ও সরকারী কর্মকর্তারা সবায় এক প্রকার দায়মুক্তি নিয়েছেন।
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯

সাভার রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্থ্ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি।


আগামী ২৪ এপ্রিল ২০১৯ রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পূর্ন হতে চলেছে। সাভার রানা প্লাজায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ১১৩৪ জন শ্রমিককে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে, ২৪৩৮ জন শ্রমিক স্থায়ী ভাবে পঙ্গুত্য বরণ করে বেঁচে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ্ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। দেশি-বিদেশি মানুষের অনুদানে তারা যে টুকু সহযোগিতা তারা পেয়েছে তা দিয়ে কোনরকম বেঁচে আছে। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থ্ শ্রমিকদের সহযোগিতা দেওয়ার নাম করে যে সব সরকারী-বে-সরকারী বিভিন্ন সংস্থা যারা টাকা পয়সা এনেছিল তারা এখন রানা প্লাজার শ্রমিকদের থেকে অনেক ভালো কেও কেও আছে ফুলে ফেঁপে অনেক বড় হয়ে গেছে। আবার কেও এমপি-মন্ত্রী হয়েছে, কেও কেও বাড়ী গাড়ীর মালিক হয়েছে। রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা তারা কেও কেও চিকিৎসার অভাবে ছটফট করছে, বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতে পারছেনা। অনেক পরিবার অর্ধা হারে অনাহারে কোন রকম বেঁচে আছে। কিছু আহত শ্রমিক আছে যারা পেটের তাগিদে অনেক কষ্ট করেও কোন না কোন কর্মে নিয়জিত হয়েছেন। তবে বেশীর ভাগ শ্রমিক বেকার জীবন যাপন করছেন। কিছু শ্রমিক আছে যারা কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও তাদের কোথাও কাজ দেওয়া হচ্ছেনা। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছি রানা প্লাজা ভবনের স্থানে জমি অধিগ্রহন করে শ্রমিকদের জন্য মার্কেট নির্মান করে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের পুনঃবাসন ব্যবস্থা করা, এই মার্কেটে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারী উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মান করা, যাতে আহত শ্রমিকরা এখানে চিকিৎসা নিতে পারে। নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ভবনের সামনে স্থায়ী বেদী নির্মান করা। রানাপ্লাজা ধ্বসের ঘটনায় দায়ী বেক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা। 

রানা প্লাজায় ৬ টি গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তারা এখন অন্য যায়গায় গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, ভবন মালিক রানা রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের মামলাতে জামিনে আছে কিন্তু অন্য মামলাতে জেলে আছে, রানা জেলে থাকলেও আলিশান জীবন যাপন করছেন। রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী গার্মেন্ট মালিক ও সরকারী কর্মকর্তারা সবায় এক প্রকার দায়মুক্তি নিয়েছেন।
রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ড এটা নতুন কিছু না। বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্প গড়ে ওঠার পর থেকেই এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই আছে। 

১৯৯০ সালে আগষ্টে গ্লোব নিটিং কারখানায় আগুনে মারা যান ১২ জন শ্রমিক এবং ১৭ ডিসেম্বরে ঢাকার মিরপুরে সারাকা গার্মেন্টসে আগুনে পু‍‌ড়ে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন পোশাক শ্রমিক। ১৯৯৫ সালে রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের লুসাকা অ্যাপারেলসের কারখানায় নিহত হন ১০ জন গার্মেন্ট কর্মী। ১৯৯৬ সালে  ঢাকার তাহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন এবং সানটেক্স লিমিটিডের কারখানায় ১৪ জন আগুনে পুড়ে মারা যান। ২০০০ সালে ২৫ নভেম্বর নরসিংদী চৌধুরী নিটওয়্যার এ্যাণ্ড গার্মেন্ট লিমিটেডে আগুনে পুড়ে মারা যান ৫৩ জন শ্রমিক ও ডিসেম্বরে নরসিংদীর শিবপুরে এক গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৪৮ জন শ্রমিক এবং একই বছর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে গ্লোব নিটিং ফ্যাশন লিমিটেড গার্মেন্টে কারখানায় মারা যান ১২ জন শ্রমিক।

২০০১ সালে ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ২৫ জন শ্রমিক এবং মিরপুরে মিকো সুয়েটার লিমিটেডে আগুন লাগার পর পদদলিত হয়ে নিহত হন ২৪ জন শ্রমিক। ২০০৪ সালে ৩ মে মিসকো সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের এক গার্মেন্টে আগুন লেগে ৯ জন শ্রমিক মারা যান এবং নরসিংদীর শিবপুরে গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৪৮ শ্রমিক নিহত হন। ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে আগুন লেগে ২২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন এবং সাভারের আশুলিয়া পলাশ বাড়ীতে ১১ এপ্রিলে স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টসের ভবন ধ্বসে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৮৬ জন। ২০০৬ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি গাজিপুরের যমুনা স্পিনিং মিলে আগুনে পুড়ে মারা যান ৬ জন শ্রমিক ও ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কেটিএস কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলে আগুনে ৯১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঢাকার তেজগাঁয়ে অবৈধভাবে সংস্কার চালানোর সময় ফিনিক্স ভবন ধ্বসে মারা গেছিল ১৮ জন শ্রমিক এবং একই বছর মার্চ মাসে সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডে আগুনে ৩ জন শ্রমিক মারা যান। ২০১০ সালে ২৫শে ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে গরীব এ্যাণ্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে মারা যান ২১ জন শ্রমিক এবং ২৪শে ডিসেম্বর আশুলিয়াতে হামিম গার্মেন্টস অগ্নিকান্ডে নিহত হয় ৩০ জন। 

২০১২ সালে ২৪শে নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে মারা গেলেন ১১ জন পোশাক-শ্রমিক। ২০১৩ সালে ২৪শে এপ্রিল সাভার রানা প্লাজায় ভবন ধ্বসে মারা যান ১১৩৪ জন পোশাক-শ্রমিক এবং ২৬ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে এলাকায় স্মার্ট এক্সপোর্ট নামের কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ৭ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। ২০১৬ সালে ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ টঙ্গীর টাম্পাকো ফুয়েল কারখানায় আগুনে পুড়ে ৪০ জন শ্রমিক মারা যায়। ২০১৭ সালে ৩ জুলাই গাজীপুরের কোনাবাড়ী নয়াপড়া এলাকায় মাল্টিফ্যাব লিমিটেড পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ শ্রমিক মারা যায় । 

বাংলাদেশে পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার পর প্রথম দিক থেকেই আগুনে পুড়ে, ভবন ধ্বসে, বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে অথচ এপর্যন্ত দায়ী বেক্তিদের কোন বিচার বা শাস্তি হয়েছে বলে আমি শুনিনি। প্রথম দিকেই কারখানায় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী বেক্তিদের যদি শাস্তি নিশ্চিত করা হতো তাহলে এত শ্রমিকের প্রান হারাতে হতো না। এবং এই সব দুর্ঘটনার আগে-পরে, মাঝে মাঝে কিছু দিন পরে পরেই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গার্মেন্ট শ্রমিক মারা যেতেই আছে। এর একটি ঘটনাতেও কারো কোন শাস্তি হয়নি। কয়েকটি কারখানার মালিক নাম মাত্র ক্ষতিপূরণ দিলেও প্রায় বেশীর ভাগ কারখানার মালিক শ্রমিক-শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেননি এবং এই সব দুর্ঘটনায় হাজার হাজার শ্রমিক আহত হয়ে যারা বেচে আছে তাদের চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ, পুনবাসন কোনটায় করেননি গার্মেন্ট মালিকরা। অথচ এই সব গার্মেন্ট মালিকরা তারা তাদের ব্যাবসা দিনে দিনে আরো উন্নত করে চলেছেন।
২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার ঘটনার পর বায়ারদের দুটি জোট একোর্ড এবং এলাইন্স বাংলাদেশে গার্মেন্ট কারখানা গুলোর ভবনের নিরাপত্তা তদারকির পরে গার্মেন্ট কারখানা গুলো অনেকটা নিরাপদ মনে হলেও যতেষ্টনা। কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি কারখানার বাইরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

যেমন, শ্রমিকদের নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য পরিবহণ ও পায়ে হেটে চলা শ্রমিকের জন্য রাস্তার পাশে ফুটপাত, রাস্তার পাশে ময়লা ফেলা বন্ধ এবং অলিগলি সহ সকল রাস্তায় বাতির ব্যবস্থা করা, কারখানার গেইটে শ্রমিক ছাউনি নির্মান করা, স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ বাস্থানের ব্যবস্থা, সরকারী স্কুল-কলেজ নির্মান করে শ্রমিকদের সন্তানের লেখাপড়া ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুকরা, প্রতি শিল্পাঞ্চলে বার্নইউনিট সহ সরকারী হাসপাতাল নির্মান করা। শ্রমিকদের বাচ্চাদের রাখার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মান করা।

খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৯

জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ৭১ তম জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা


বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ১৯৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল আজকের এই দিনে ঢাকার অদূরে সাভারে জন্ম গ্রহণ করেন।
 
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বাবা মোসলেহ উদ্দিন খান ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা আর মা উম্মে হানী খানম ছিলেন নারীনেত্রী ও সমাজসেবক। স্কুল জীবনে স্কাউটসহ নানাবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। স্কুলছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৬ সালে আউযুব খানের বিরুদ্ধে মিছিল করতে গিয়ে সেলিম কারাবরণ করেন। কলেজে পা দিয়েই সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনীতিতে। এ সময় তিনি গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও যুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)’র সভাপতি। তিনি স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর প্রথম সহ সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্র জীবন শেষে সেলিম পার্টি-জীবনকে বেছে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করার কাজে মনোযোগ দেন। তিনি বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে শুরুর দিক থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০১২ সালে পার্টির দশম কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে প্রায় আট বছর কারাবরণ ও আত্মগোপনে ছিলেন এই নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে সেলিম এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক।