Biplobi Barta

বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯

ছোট আকারের কারখানা স্থাপন করতে চাইলে তাকে কঠোর নিরীক্ষা এবং পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।


 শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ কমেছে। কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার শর্ত মেনে স্বল্প মূলধনে ছোট আকারের কারখানা স্থাপন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে নতুন উদ্যোক্তাদের ইচ্ছা থাকলেও বিপুল বিনিয়োগের ভয়ে এ শিল্পে আসতে পারছেন না তারা। স্বল্প মূলধনে ছোট আকারের কারখানা স্থাপন কারি মালিকরা বড় কারখানার মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে তাদের কারখানা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
 
তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ধসসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় দুর্ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতা এবং ব্রান্ডের প্রতিনিধিরা ছোট কারখানায় কাজ দিচ্ছে না। অনিরাপদ কর্মপরিবেশের অভিযোগে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তারা এ ধরনের কারখানায় ক্রয় আদেশ দিচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে। এসব ছোট কারখানা গুলোতে সাধারণত সাব-কন্ট্রাক্টে চলত। সাধারণত কোনো কারখানায় অতিরিক্ত কার্যাদেশ থাকলে তারা দ্বিতীয় কোনো কারখানায় কার্যাদেশ দিলে তাকে সাব-কন্ট্রাক্টিং বলে। এটি বিদেশি তৈরি পোশাক ক্রেতাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহে সহায়তা করে। কম খরচের কারণে প্রাথমিকভাবে নতুন উদ্যোক্তারা এ ধরনের কারখানা স্থাপন করেই পোশাক শিল্পে তাদের যাত্রা শুরু করতেন। তবে পরপর দুটি দুর্ঘটনায় সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার সম্ভাবনা বা সুযোগ রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কম মূলধন এবং স্বল্প পরিচালন ব্যয়ের কারণে সাব-কন্ট্রাক্টিং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। তৈরি পোশাক শিল্পে বড় উদ্যোক্তা হওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অনেকেই সাব-কন্ট্রাক্টিং শুরু করেন। গার্মেন্ট মালিকরা মনে করেন, সাব-কন্ট্রাক্ট ব্যবসা তৈরি পোশাক শিল্পে নিষিদ্ধ হয়নি। তবে কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে একটি কারখানা স্থাপন অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। যার কারণে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ছোট কারখানার অনিরাপদ কর্মপরিবেশের কারণে সাব-কন্ট্রাকের কাজ তাদের দেয়া হচ্ছে না। শুধু ক্রেতা রাজি হলে বড় কারখানায় সাব-কন্ট্রাক্টিং কাজ হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের পর কোনো নতুন সাব-কন্ট্রাক্টিং ইউনিট তৈরি হয়নি। শুধু কর্মপরিবেশের দিক থেকে নিরাপদ বড় কারখানায় এ ধরনের কাজ হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূল কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে এমন কাজ হচ্ছে। যার কারণে বড় বড় কারখানার মালিকরা প্রয়োজনে তাদের কারখানার শাখা বাড়াচ্ছেন।

বর্তমানে কেউ এখন ছোট আকারের কারখানা স্থাপন করতে চাইলে তাকে কঠোর নিরীক্ষা এবং পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আগে এসব বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল, ক্রেতার শর্ত অনুযায়ী এখন একটি কমপ্লাইন্স কারখানা স্থাপন তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

রানা প্লাজা ধসের পর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কর্মপরিবেশ উন্নতি না করতে পারা বা সংস্কার কাজ না করতে পারায় ১২০০-এর বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বড় বড় গার্মেন্ট মালিকরা তা কিনে নিয়েছেন। বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ১৫০টি সদস্য কারখানা ছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৫ হাজার ৮৭৬টিতে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর আমেরিকা এবং ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স এবং অ্যাকর্ডের পরিদর্শনের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এদের মধ্যে সাব-কন্ট্রাক্টিং করত এমন কারখানার সংখ্যাই বেশি। মাত্র এক বছর পরেই বিজিএমইএর সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২২টিতে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বড় কিছু শিল্প গ্রুপ তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ করে এবং নতুন কারখানা স্থাপন করে। যার ফলে এ বছরে বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৬০টিতে। গার্মেন্ট মালিকের সংখ্যা কমে গেলেও কারখানা ও শ্রমিকের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। 

সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই দিকই রয়েছে। প্রথমত এটি কাজের সময় কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত অদক্ষ এবং আধা দক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। কারণ এ ধরনের কারখানায় অপেক্ষকৃত কম জটিল কাজ করা হয়। অন্যদিকে খারাপ দিকটি হলো কর্মপরিবেশ নিরাপদ করার জন্য এ ধরনের কারখানাগুলোর কোনো উদ্যোগ থাকে না। শ্রম আইন যথাযত মেনে চলেনা, এটি এ শিল্পে বড় দুর্যোগের জন্য দায়ী। সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের বিষয়ে কোনো নির্দেশিকা না থাকায় কর্মপরিবেশ নিরাপদের বিষয়টি শুধু ক্রেতার চাহিদার ওপর নির্ভর করে। তবে সাব-কন্ট্রাক্টিং চালু না থাকলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। শুধু বড় কারখানা মালিকরাই তাদের ব্যবসা এবং বিনিয়োগ বাড়াবে।

লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
০৪ এপ্রিল ২০১৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন