Biplobi Barta

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

কমিউনিস্ট পার্টির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ডাক_ বিপ্লবের মাধ্যমে শোষণ নিপীড়ন দুঃশাসন উচ্ছেদ করতে ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলি


ঢাকার তোপখানা রোডস্থ বিএমএ মিলনায়তনে কমিউনিস্ট পার্টির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশে কমিউনিস্ট ও বামপন্থী শক্তিসমূহের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি কমিউনিস্ট পার্টিসমূহকে একটি পার্টিতে সামিল হওয়ার আবেদন জানান। কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন।
কমরেড সেলিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ ৬ মার্চ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)’র দ্বিতীয় কংগ্রেসের শেষ দিন পাকিস্তানের কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ বিশেষ সম্মেলনে মিলিত হয়ে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি এবং পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি প্রতিষ্ঠিা করেন। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নাম ধারণ করে। সিপিবি এ ভ‚খণ্ডে কমিউনিস্ট আন্দোলনে ১০০ বছরের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একেক সমাজ একেকভাবে অগ্রসর হয়। কমিউনিস্ট পার্টিকে নানান লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গণতন্ত্র, শ্রমিকের, কৃষকের সংগ্রাম, নারী মুক্তি সকল সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির একটি বিশাল ভ‚মিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশকে বিপথে পরিচালনার নীতি থেকে যথাযথ ভ‚মিকায় ফিরিয়ে আনতে সিপিবি লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি লুটেরা ধনিকশ্রেণীর দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। রাজনীতিতে আদর্শ নিচে পড়ে গেছে। যারা ভাবেন ভিতর থেকে আওয়ামী লীগকে পরিবর্তন করা যাবে তারা ভুল ভাবছেন। কমিউনিস্টদের বাম বিকল্প গড়ে তোলার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে। কমিউনিস্টদের মানুষের মধ্যেই থাকতে হবে। একটা জেনারেশনকে দেশের স্বার্থে নিয়োজিত হতে হবে। নেপালে কমিউনিস্টরা এক পার্টি হতে পারলে বাংলাদেশেও সকল কমিউনিস্টরা মিলে এক পার্টি হতে পারবে না কেন। তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক পার্টি গড়ার আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাজ্জাদ জহীরের স্মৃতিচারণ করে তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি মিথ্যা ‘রাওয়ালপিণ্ডি ষড়যন্ত্র মামলা’র বিবরণ দেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় শাস্তি দিয়ে সাজ্জাদ জহীরকে পাকিস্তান থেকে বিতাড়ন করা হয়।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্টদের উপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন-নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির ক্রম র‌্যাডিকালাইজেশন ধারায় পরিবর্তিত হওয়ার বিবরণ দিয়ে ৭০এর নির্বাচনে শ্রমিক-কৃষকের দাবি রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিল মেহনতি মানুষ। বর্তমান বাংলাদেশে যে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার পেছনে রয়েছে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের অবদান। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা, প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনছে। কৃষকরা কৃষি উৎপাদন পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল প্রকৃত উৎপাদকরা পাচ্ছে না। প্রকৃত উৎপাদক কৃষক-শ্রমিকরা যাতে উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য লড়াই গড়ে তুলতে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য টিকিয়ে রাখতেই দেশে আজকে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তিনি রাজনীতির গণতন্ত্রায়নের জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলতে উপস্থিত রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উদীচী’র সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, সমাজতন্ত্র ছাড়া আমাদের মুক্তির আর ভিন্ন কোনো পথ নেই। আজকে বামপন্থীরা জোট বেঁধেছেন। যারা বসে আছেন, যারা পার্টি ছেড়ে গেছেন তাদেরকে আবার পার্টিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি একটা আন্তর্জাতিক পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টি নিজের ভুল স্বীকার করতে পিছপা হয় না এটাই কমিউনিস্ট পার্টির শক্তির দিক। ১৯৯০ সালে যারা ভেবেছিল সমাজতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে তারা ভুল ভেবেছিল। কারণ সমাজতন্ত্র একটি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা। নানা আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে তা এগিয়ে যাবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা এসেছিল মুক্তি আসেনি। ৪৬ বছর ধরে শোষকরা ক্ষমতায় আছে। শোষণমুক্তির পরিবর্তে বৈষম্য বেড়েছে। তিনি বলেন, দ্বি-দলীয় লুটপাটতন্ত্রের অচলায়তন ভাঙ্গতে কমিউনিস্ট পার্টিসহ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু বলেন, দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চার যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তাকে দৃঢ়বদ্ধ করতে হবে। শাসকদের ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে তাদের পরাজিত করতে হবে।
আলোচনা সভার শুরুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকসহ উদ্দীপনামূলক গান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন