Biplobi Barta

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের প্রতি বামপন্থী নেতৃবৃন্দ বলেন- বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে কোন অপতৎপরতা হরতাল-অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি দিয়ে প্রতিহত করা হবে



নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাও জনগনের জান বাঁচাও-নিয়ন্ত্রণহীন দ্রবমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা ও দৈনন্দিন জীবনের নৈরাজ্য সন্ত্রাস-সংকট নিরসনের দাবিতে আজ ২২ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার আহবানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত হুশিয়ারি প্রদান করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মাকর্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের আপামর জনগণ আজ দিশেহারা। নিম্নআয়ের মানুষ আধপেটা খেয়ে দিন-যাপন করছে। যেসকল মানুষের আয়ের বেশির ভাগ অংশ ব্যয় হয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্য তারা লাগামহীন খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে আজ অসহায়। বাজার সিন্ডিকেট, আমলা এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতৃবৃন্দের অসৎ চক্রের কারসাজির কারনেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে তা হু হু করে বাড়ছে। সরকারের নিস্ক্রিয়তা এসকল অসৎ চক্রকে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, টিসিবির মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে সরকারকে এসকল অসৎ চক্রের উদ্দেশ্য বানচাল করে দিতে হবে। তারা দরিদ্র মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর দাবিতে পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে প্রচারাভিযান চালানোর জন্য সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কর্মীদের আহ্বান জানান।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বিইআরসির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিপণনকারী সংস্থাগুলি বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির অশুভ পাঁয়তারা লিপ্ত রয়েছে। সরকার এসকল লুটেরা মালিক ও আমলাদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে কোন অপচেষ্টা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জনগণের দৈনন্দিন জীবনে চলছে নৈরাজ্য। হত্যা-গুম-খুন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক-সাংবাদিক-ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মীসহ সব পেশার মানুষই গুম এবং খুনের শিকার হচ্ছে। এ সকল গুমের ঘটনার সাথে সরকারের নানা বাহিনী ও সংস্থার সংশ্লিষ্টতার কথাই বেরিয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা গুমের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেই দায়ী করে আসছেন। তাদের দাবি সত্য হলে তা এক ভয়াবহ বিষয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জনগণকে নিরাপদ রাখার পরিবর্তে তারাই জননিরাপত্তা হরণ করে সন্ত্রাসী ভমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ভাতের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। উপরন্তু জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের এই ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে নেতৃবৃন্দ দেশের মানুষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭

আশুলিয়া থানা রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এর প্রথম সম্মেলন

 আজ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ রবিবার, সকাল ১১ টায় আশুলিয়া প্রেসক্লাবে আশুলিয়া থানা রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এর প্রথম সম্মেলনে পতাকা উত্তোলন ও বর্নাঢ্য র‍্যালী উনুষ্ঠিত হয় । সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক আয়েশা ইসলাম, উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আলম পারভেজ, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ সভাপতি ইদ্রিস আলী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাইরুল মামুন মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সহ সভাপতি সাইফুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু । বক্তারা বলেন এই আশুলিয়া অঞ্চলে অনুমানিক প্রায় ১লক্ষের বেশি রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালক আছে । অথচ রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালকদের প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি-হয়রানি ও নির্যাতনের সিকার হতে হচ্ছে । বর্তমানে গার্মেন্টে পরিকল্পিত ভাবে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকার কারনে বিলল্প কাজ হিসেবে অনেকে রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালকের কাজ বেছে নিয়েছেন । অথচ আমরা দেখছি সরকার এই শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসস্থান নিশ্চিত নাকরেই রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চলাচলে বাধা প্রদান করছেন । রিক্সা-ভ্যান জাহারা চালায় আর জাহারা চড়ে উভয়য়েই নিম্ন আয়ের মানুষ । রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালকদের অধিক প্রতিশ্রমের কাজ হওয়ার ফলে তাহারা নিয়মিত রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালাতে পারেননা ফলে তাদের অনেকেই অর্ধা হারে অনাহারে দিন জাপন করেন, সন্তানের লেখা পড়া করাতে পারেননা, নিজে এবং পরিবারের কেও অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা নিতে পারেননা । অনেক রিক্সা-ভ্যান অটো রিক্সা চালক চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু জীবন জাপন করছেন । সম্মেলন থেকে নিম্ন ০৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয় ।
১। পুর্নবাসন না করে রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চলাচলে বাধা প্রদান বন্ধ করতে হবে ।
২। রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চালকদের পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে ।
৩। রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চালকদের উপর চাঁদাবাজি-হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে ।
৪। রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মান করতে হবে ।
৫। রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চালকদের জন্য রেসনিং, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে ।
৬। রিক্সা-অটো রিক্সা ও ভ্যান চালকদের ভবিষ্য নিশ্চিত করার লক্ষে ভবিষ্য তহবিল গঠন ও বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে ।


সম্মেলনে আঃ মজিদ সভাপতি, আলম পারভেজ কার্ষকারি সভাপতি, মোঃ নান্নু মিয়া সহ সভাপতি, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু সাধারণ সম্পাদক, মামুন দেওয়ান সহ সাধারণ সম্পাদক, মোঃ ফারুক হোসেন সাংগঠিক সম্পাদক, মোঃ মজনু মিয়া অর্থ সম্পাদক, মোঃ স্বপন মিয়া প্রচার সম্পাদক, মোঃ মস্তফা দফতর সম্পাদক, কেএম মিন্টু আইন ও দরকষাকোষী সম্পাদক, আলতাব হোসেন কার্ষকারী সদস্য, মোঃ সাইফুল ইসলাম কার্ষকারী সদস্য, শামিম সিকদার কার্ষকারী সদস্য মোট ১৩ সদস্য কমিটি নির্বাচিত হয় ।

বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর একাদশ অধ্যায়ে নিম্নতম মজুরী বোর্ড প্রতিষ্ঠা আইন

ধারা- ১৩৮। (১) সরকার নিম্নতম মজুরী বোর্ড নামে একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করিবে।
(২) নিম্নতম মজুরী বোর্ড, অতঃপর এই অধ্যায়ে মজুরী বোর্ড বলিয়া উলিস্নখিত, নিম্নরূপ সদস্য-সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথাঃ-
(ক) চেয়ারম্যান;
(খ) একজন নিরপেৰ সদস্য;
(গ) মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য; এবং
(ঘ) শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য।
(৩) ধারা ১৩৯ এ উলিস্নখিত দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে, মজুরী বোর্ডে নিম্নলিখিত সদস্যদ্বয়ও অনত্দর্ভুক্ত হইবেন, যথাঃ-
(ক) সংশিস্নষ্ট শিল্পের মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য;
(খ) সংশিস্নষ্ট শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য।
(৪) মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন।
(৫) মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নিরপেৰ সদস্য এমন ব্যক্তিগণের মধ্যে হইতে নিযুক্ত হইবেন যাহাদের শিল্প শ্রমিক ও দেশের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে, এবং যাহারা কোন শিল্পের সহিত সংশিস্নষ্ট নহেন অথবা কোন শ্রমিক বা মালিকগণের ট্রেড ইউনিয়নের সহিত সংযুক্ত নহেন।
(৬) সরকারের মতে, যে সকল প্রতিষ্ঠান মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী সে সকল প্রতিষ্ঠানের কোন মনোনয়ন থাকিলে উহা বিবেচনা করিয়া উপ-ধারা (২) বা (৩) এর অধীন মালিক এবং শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যগণকে নিযুক্ত করা হইবেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, যদি একাধিক প্রচেষ্টায় মালিক কিংবা শ্রমিক প্রতিনিধির মনোনয়ন না পাওয়া যায় তাহা হইলে সরকার, নিজ বিবেচনায়, যাহাকে উপযুক্ত মনে করিবে তাহাকেই মালিক কিংবা শ্রমিক প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করিতে পারিবে।

কতিপয় শ্রমিকের জন্য নিম্নতম মজুরী হারের সুপারিশ
===========================================
ধারা-১৩৯। (১) যে ৰেত্রে কোন শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকগণের বিরাজমান মজুরী হারের পরিপেৰিতে সরকার এই মর্মে অভিমত পোষণ করে যে, উক্ত শিল্পে নিযুক্ত সকল বা যে কোন শ্রেণীর শ্রমিকের নিম্নতম মজুরী হার স্থির করা প্রয়োজন এবং যুক্তিসংগত সে ৰেত্রে সরকার মজুরী বোর্ডকে প্রয়োজনীয় তদনত্দানত্দে উক্ত শ্রমিকগণ বা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য নিম্নতম মজুরী হার সুপারিশ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে।
ব্যাখ্যাঃ কোন শিল্পের মালিক কিংবা শ্রমিক পৰ অথবা উভয় পৰের দাখিলকৃত আবেদনক্রমে সরকার সেই শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের নু্যনতম মজুরীর হার নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করিতে পারিবে।
(২) মজুরী বোর্ড উক্তরূপ নির্দেশ প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে সরকারের নিকট উহার সুপারিশ পেশ করিবেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, মজুরী বোর্ডের অনুরোধে সরকার উক্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর নির্দেশ মোতাবেক মজুরী বোর্ড কোন গ্রেডের সকল শ্রমিক শ্রেণীর জন্য নিম্নতম মজুরী হারের সুপারিশ করিতে পারিবে, এবং উক্তরূপ সুপারিশে-
(ক) মেয়াদী কাজ এবং ঠিকা কাজের জন্য নিম্নতম মজুরীর হার; এবং
(খ) ঠিকা কাজে নিযুক্ত শ্রমিকগণের জন্য নিম্নতম মেয়াদী হার;
এরও সুনির্দিষ্টভাবে উলেস্নখ করিতে পারিবে।
(৪) মজুরী বোর্ড কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদী হার ঘন্টা, দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে হইতে পারিবে।
(৫) মজুরী বোর্ড উহার সুপারিশে নিম্নতম মজুরীর হার সমগ্র দেশের জন্য একইভাবে গ্রহণ করা উচিত হইবে না কি উহাতে উলিস্নখিত স্থানে উহাতে বর্ণিত স্থানীয় ব্যতিক্রম সহকারে গ্রহণ করা উচিত হইবে-ইহাও নির্দেশ করিবে।
(৬) কোন শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকের জন্য স্থিরকৃত নূ্যনতম মজুরীর হার সরকারের নির্দেশক্রমে প্রতি পাঁচ বছর অনত্দর পুনঃনির্ধারণ করিবে।

নিম্নতম মজুরী হার ঘোষণা করার ক্ষমতা
===========================================
ধারা-১৪০। (১) ধারা ১৩৯ এর অধীন মজুরী বোর্ডের সুপারিশ প্রাপ্ত হইবার পর সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ঘোষণা করিতে পারিবে যে, মজুরী বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন শ্রমিকের জন্য সুপারিশকৃত নিম্নতম মজুরীর হার, প্রজ্ঞাপনে উলিস্নখিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে, উক্তরূপ শ্রমিকগণের জন্য নিম্নতম মজুরীর হার হইবে।
(২) যদি সরকার মনে করে যে, উক্তরূপ সুপারিশ কোন ব্যাপারে মালিকগণের বা শ্রমিকগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত নহে, তাহা হইলে সরকার সুপারিশ প্রাপ্তির ১[ পঁয়তাল্লিশ] দিনের মধ্যে, উহা পুনরায় বিবেচনা করিয়া দেখিবার জন্য মজুরী বোর্ডের নিকট ফেরৎ পাঠাইতে পারিবে, এবং উক্তরূপ ফেরত পাঠাইবার সময়, সরকার উচিত বিবেচনা করিলে, সুপারিশের উপর উহার কোন মন্তব্য এবং তৎসম্পর্কে কোন তথ্যও প্রদান করিতে পারিবে।
(৩) যে ক্ষেত্রে কোন সুপারিশ উপ-ধারা (২) এর অধীন মজুরী বোর্ডের নিকট ফেরত পাঠানো হয় সে ক্ষেত্রে, মজুরী বোর্ড সরকারের মন্তব্য ও তৎকর্তৃক প্রেরিত তথ্য বিবেচনা করিয়া উহার সুপারিশ পুনরায় পর্যালোচনা করিয়া দেখিবে, এবং প্রয়োজন হইলে, আরও তদন্ত পরিচালনা করিবে, এবং তৎপর সরকারের নিকট একটি সংশোধিত সুপারিশ পেশ করিবে অথবা, যদি বোর্ডের বিবেচনায় সুপারিশের কোন সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন না থাকে, তাহা হইলে, কারণ বিবৃত করিয়া সেই মর্মে সরকারকে অবহিত করিবে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন সুপারিশপ্রাপ্ত হইবার পর সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ঘোষণা করিতে পারিবে যে, মজুরী বোর্ড কর্তৃক উক্ত উপ-ধারার অধীন ২[ অথবা সরকার কর্তৃক সংশোধিত উক্ত সুপারিশকৃত] বিভিন্ন শ্রমিকগণের নিম্নতম মজুরীর হার, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত সংশোধন ও ব্যতিক্রম সাপেক্ষে, উক্ত শ্রমিকগণের জন্য নিম্নতম মজুরীর হার হইবে।
(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রজ্ঞাপনে যদি এতদসম্পর্কে কোন তারিখ উল্লেখ না থাকে তাহা হইলে উহার অধীন ঘোষণাটি উহা প্রকাশিত হইবার তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।
(৬) যে ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) অথবা (৪) এর অধীন কোন প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হইবার পর অথবা উহার অধীন ঘোষিত কোন নিম্নতম মজুরীর হার কার্যকর হইবার পর ইহা সরকারের নজরে আসে যে, উক্তরূপ ঘোষিত নিম্নতম মজুরীর হারে কোন ত্রুটি আছে সে ক্ষেত্রে সরকার বিষয়টি মজুরী বোর্ডের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে এবং উক্তরূপ প্রেরণ উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রেরণ বলিয়া গণ্য হইবে।
(৭) এই ধারার অধীন ঘোষিত নিম্নতম মজুরীর হার চূড়ান্ত হইবে এবং তৎসম্পর্কে কোনভাবে কোন আদালতে বা কোন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্ন করা বা আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না।

সুপারিশ প্রণয়নে বিবেচ্য বিষয়
===========================================
ধারা-১৪১। কোন সুপারিশ প্রণয়ন করা কালে মজুরী বোর্ড জীবন যাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ, দেশের এবং সংশিস্নষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করিয়া দেখিবে।

নিম্নতম মজুরী হারের পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা
===========================================
ধারা-১৪২। (১) ধারা ১৪১ এ উলিস্নখিত বিষয়াদি বা অন্য কোন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের কোন পরিবর্তনের কারণে প্রয়োজন হইলে মজুরী বোর্ড উহার কোন সুপারিশ পুনরায় পর্যলোচনা করিয়া দেখিবে এবং সরকারের নিকট ধারা ১৪০ এর অধীন ঘোষিত নিম্নতম মজুরী হারের কোন সংশোধন বা পরিবর্তন সুপারিশ করিবেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, কোন ৰেত্রে কোন বিশেষ পারিপাশ্বর্িক অবস্থার কারণ ব্যতীত কোন সুপারিশ উহা পেশের এক বৎসরের মধ্যে অথবা তিন বৎসর পরে উক্তরূপ পর্যালোচনা করা যাইবে না।
(২) এই ধারার অধীন কোন পর্যালোচনা এবং সুপারিশ ধারা ১৩৯ এর অধীন তদনত্দ এবং সুপারিশ বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং এই অধ্যায়ের বিধান, যতদূর সম্ভব এ ৰেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।

সংবাদপত্র শ্রমিকগণের মজুরী বোর্ড গঠন
===========================================
ধারা-১৪৩। (১) সরকার প্রয়োজন মনে করিলে, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংবাদপত্র শ্রমিকগণের মজুরী নির্ধারণের জন্য সংবাদপত্র শ্রমিক মজুরী বোর্ড নামে একটি স্বতন্ত্র মজুরী বোর্ড গঠন করিতে পারিবে।
(২) উক্ত বোর্ড, অতঃপর এই অধ্যায়ে সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড বলিয়া উলিস্নখিত, সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একজন চেয়ারম্যান এবং সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সংবাদপত্র শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী সমসংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে।

সংবাদ পত্র শ্রমিকগণের জন্য মজুরী নির্ধারণ
===========================================
ধারা-১৪৪। (১) সংবাদপত্র শ্রমিকগণের জন্য মজুরী নির্ধারণকালে সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড জীবন যাত্রার ব্যয়, সরকার, কর্পোরেশন এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য চাকুরীর মজুরীর বিরাজমান হার, দেশের বিভিন্ন এলাকার সংবাদপত্র শিল্পের অবস্থা এবং বোর্ডের বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিবে।
(২) সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড মেয়াদী কাজ ও ঠিকা কাজের জন্য মজুরীর হার নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(৩) মজুরী নির্ধারণ করার পর সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড উহার সিদ্ধানত্দ, যতশীঘ্র সম্ভব, সরকারের নিকট প্রেরণ করিবে।

সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রকাশ
===========================================
ধারা-১৪৫। (১) সরকার, সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের সিদ্ধানত্দ পরীৰা করিয়া দেখিবে এবং উহা প্রাপ্তির তিন মাসের মধ্যে তৎকর্তৃক প্রয়োজনীয় বিবেচিত এরূপ সংশোধনসহ উহা সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রকাশ করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রকাশিত উক্তরূপ সংশোধনসহ সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের সিদ্ধানত্দ উক্ত প্রজ্ঞাপনে উলিস্নখিত তারিখ হইতে অথবা উক্তরূপ কোন তারিখ না থাকিলে, উহা প্রকাশের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।

সংবাদ পত্র মজুরী বোর্ডের অন্তর্বর্তী মজুরী নির্ধারণের ক্ষমতা
===========================================
ধারা-১৪৬। (১) সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড কোন ৰেত্রে প্রয়োজন মনে করিলে, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, অনত্দর্বতর্ী মজুরীর হার নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(২) উক্তরূপ কোন অনত্দর্বতর্ী মজুরীর হার সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের সকল মালিকের জন্য অবশ্য পালনীয় হইবে এবং প্রত্যেক সংবাদপত্র শ্রমিক অনূ্যন উক্তরূপ অনত্দর্বতর্ী হারে মজুরী পাইবার অধিকারী হইবেন।
(৩) উক্তরূপ কোন অনত্দর্বতর্ী মজুরীর হার ধারা ১৪৫ (২) এর অধীন সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের সিদ্ধানত্দ কার্যকর না হওয়া পর্যনত্দ বলবৎ থাকিবে।

শ্রম আদালতে দরখাস্ত
===========================================
ধারা-১৪৭। যে ৰেত্রে ধারা ১৪৫ (২) এর অধীন প্রকাশিত সংশোধনসহ সংবাদপত্র মজুরী বোর্ডের কোন সিদ্ধানত্দের কারণে কোন সংবাদপত্র বা সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী বিন্যাস বা পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে কোন বিরোধ দেখা দেয় সে ৰেত্রে উক্তরূপ সিদ্ধানত্দের দ্বারা সংৰুব্ধ কোন ব্যক্তি বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালতে দরখাসত্দ করিতে পারিবেন।

নিম্নতম মজুরী প্রত্যেক মালিকের উপর অবশ্য পালনীয়
===========================================
ধারা-১৪৮। ধারা ১৪০ এর অধীন ঘোষিত অথবা ধারা ১৪৫ এর অধীন প্রকাশিত মজুরীর নিম্নতম হার সংশিস্নষ্ট সকল মালিকের উপর অবশ্য পালনীয় হইবে এবং প্রত্যেক শ্রমিক উক্তরূপ ঘোষিত বা প্রকাশিত মজুরীর অনূ্যন হারে মজুরী পাইতে অধিকারী হইবেন।

নিম্নতম মজুরী হারের কম হারে মজুরী প্রদান নিষিদ্ধ
===========================================
ধারা-১৪৯। (১) কোন মালিক কোন শ্রমিককে এই অধ্যায়ের অধীন ঘোষিত বা প্রকাশিত নিম্নতম হারের কম হারে কোন মজুরী প্রদান করিতে পারিবেন না।
(২) উপ-ধারা (১) এর কোন কিছুই কোনভাবে কোন শ্রমিকের এই অধ্যায়ের অধীন ঘোষিত বা প্রকাশিত নিম্নতম হারের অধিক হারে মজুরী অথবা অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা অব্যাহতভাবে পাইবার অধিকার ৰুণ্ন করিবে না, যদি কোন চুক্তি বা রোয়েদাদের অধীন বা অন্য কোন কারণে তিনি উক্তরূপ অধিক হারে মজুরী পাইবার অথবা কোন প্রথা অনুযায়ী উক্তরূপ সুযোগ-সুবিধা পাইবার অধিকারী হন।

রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

তাজরিন ফ্যাশনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের চার দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আজ ১২ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ রবিবার সকাল ১১ ঘটিকায় বাইপাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা অবস্থিত  আশুলিয়া প্রেসক্লাবে তাজরিন ফ্যাশনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের চার দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তাজরিন ফ্যাশনের আহত শ্রমিক জরিনা বেগম, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাজরিন ফ্যাশনে আহত শ্রমিক সবীতা রানী, আরো উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু, সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সাইফুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাজাহান, সংবাদ সম্মেলনে আহত শ্রমিকরা বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ আশুলিয়া’র নিসচিন্ত পুর অবস্থিত তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নি কাণ্ডের ৫ বছর পূর্ন হতে চলেছে অথচ আমরা যাহারা আহত হয়ে ছিলাম তারা এখনো সুচিকিৎসা অভাবে প্রতি নিয়ত মারা যাচ্ছি । কর্মহীন হয়ে পড়ার কারনে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন জাপন করছি এবং সন্তানেরা লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অথচ আমরা বিভিন্ন্য মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমাদের সহায়তার নামকরে দেশি-বিদেশি এনজিও এবং বিভিন্ন্য সংগঠন যে পরিমান সহযোগিতা সংগ্রহ করেছে কিন্তু আমরা সেই তুলনায় সহযোগিতা পাইনি গত ২৪ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখ যখন কারখানায় আগুন লাগে তখন আমরা প্রায় ২৫০০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলাম যার মধ্যে ১১৪ জন আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন আর বাকি শ্রমিকরা কোন না কোন ভাবে জখম হয়েছে । জখম কৃত শ্রমিকদের সু-চিকিৎসা না পাওয়ার ফলে আমেনা বেগম সহ এরি মধ্য অনেকেই মারা গেছে বা অনেকেই মারা যাবেএত জন শ্রমিক হত্যা হলো এত জন শ্রমিক আহত হল অথচ তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানার মালিকের ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি । সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকরা চার দফা দাবী উত্থাপন করেন ।
১। তাজরিন ফ্যাশনে আশেপাশে নিকটতম যে কোন স্থানে নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্প     স্থাপনের মাধ্যমে আহত শ্রমিকদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে ।
২। তাজরিন ফ্যাশনে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও শ্রমিকদের সন্তানের লেখাপড়া নিশ্চিত সহ ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক-শ্রমিক পরিবারকে স্থায়ী ভাবে পূর্নবাসন করতে হবে ।
৩। তাজরিন ফ্যাশনে শ্রমিক হত্যাকন্ডে মালিক সহ দায়ী বেক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে । সকল কারখানায় নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ।
৪। তাজরিন ফ্যাশনে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়ার কথা বলে কার কাছ থেকে কত টাকা আনা হয়েছে এবং কাকে কত টাকা কি বাবদ দেওয়া হয়েছে তার হিসাব প্রদান করতে হবেসংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, তাজরিন ফ্যাশনে আহত শ্রমিক, নাছিমা আক্তার, আনোয়ারা, রেহেনা, হোস্নেয়ারা, ছুলাইমান, মিয়াজুল, জিকরুল, আকাশ, রওশনরা, মোর্সেদা, রবিন, ফাতেমা, ফারুক, ছালমা, পারভিন, ছোয়োদেত, রত্না, মুক্তা বানু, মোকাদ্দেস, আলেয়া, চাইনা, রাসিদা, শিউলি, রাজবানু, হালিমা, রুবেল আহম্মেদ, আলম, আঞ্জুয়ারা, রিমা আক্তার, আছমা আক্তার, রুমা বেগম, জাহেদা, রুপা খাতুন, নাটা বেগম, রিনা বেগম, বানু রানী, জহিরুল, সাথী আক্তার, মরিয়ম, মনির, সাইদ, আলম, আরিফুল, নয়ন, বিলকিছ, রাজিব, আছলিমা, মমতাজ, নাজমুল, শফিকুল, ফেন্সি, হাসান শেখ, শান্তনা বেগম, ইসমাতারা, শামছুনাহার, মোঃ মোহন আলী, রবিউল, নাসির, কামাল, মানিক, হালিমা, রিনা, খাদিজা, হাফিজুল, তালেব, নিলুফা, আসমা, উজ্জ্বল, সাথী, মঞ্জুরুল, রাবেয়া, ইয়াছমিন, অঞ্জলী রানী সহ আরো অনেকে ।

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

“সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লবের শতবর্ষ : শিখা অনির্বাণ”

৭ নভেম্বর তারিখটি অনন্য। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ তারিখের উল্লেখ চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে। একশ বছর আগে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রুশ দেশে সংঘটিত হয়েছিল মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। মানব ইতিহাসে এর আগে অনেক দেশে আরও অনেক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু রুশ বিপ্লব ছিল সেসব বিপ্লব থেকে ভিন্ন ও গুণগতভাবে নতুন মাত্রিকতাসম্পন্ন। বস্তুত সেই বিপ্লবের মাধ্যমে ‘বিপ্লবের’ ক্ষেত্রেও সাধিত হয়েছিল একটি বিপ্লব। বলা যায়, এটি ছিল এক ‘মহাবিপ্লব’। এই বিপ্লব মানবজাতির ইতিহাসে সূচনা করেছিল এক নতুন যুগের।
যুগ যুগ ধরে মানুষ শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন কার্ল মার্কস-ফ্র্রেডারিখ এঙ্গেলস। তাদের মতাদর্শকে ধারণ করে কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের পরিচালনায় ও বলশেভিক পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে, পুরনো জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ২৫ অক্টোবর, আর নতুন গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ নামে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
‘সোভিয়েত বিপ্লবই’ প্রথম সফল বিপ্লব, যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল শোষণহীন এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা। সূচিত হয়েছিল শোষণমুক্ত সমাজের পথে মানবসভ্যতার যাত্রা। এ বিপ্লব পুঁজিবাদের ভিত্তিমূলে বড় রকমের ভাঙন ও চিড় ধরিয়েছিল। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছিল বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষকে। মানুষ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। কায়েম হয়েছিল শোষিত শ্রমিকশ্রেণির রাজত্ব। এর আগের অন্য সব বিপ্লব থেকে অক্টোবর ‘সোভিয়েত বিপ্লবের’ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি ছিল এই যে, আগের সব বিপ্লব কেবল শাসকশ্রেণির এবং শোষণের রূপ ও পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছিল। কিন্তু শোষণের অবসান ঘটাতে পারেনি। অন্যদিকে ‘সোভিয়েত বিপ্লবের’ মধ্য দিয়ে শুধু শোষক-শাসকশ্রেণির ও সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনই ঘটেনি, সূচনা হয়েছিল মানুষের ওপর মানুষের শোষণের চির অবসানের যুগ। সূচিত হয়েছিল শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের পথে যাত্রা।
এই মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আগে রাশিয়া ছিল পিছিয়ে থাকা একটি দেশ। রাশিয়াকে বলা হতো ‘ইউরোপের পশ্চাৎভূমি’। জারের আমলে (সে দেশের বাদশাহকে জার বলা হতো) অনাহার, দারিদ্র্য ও অসহনীয় শোষণ ছিল জনগণের নিত্যসঙ্গী। উন্নত শিল্প দূরের কথা, সাধারণ মাপের শিল্প উৎপাদনের ব্যবস্থাও সেখানে তখন তেমনভাবে ছিল না। দ্য ‘গ্রেট রাশিয়ান’দের দ্বারা অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলো শোষিত হতো। জারের শাসনামলে রাশিয়ায় সামান্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারও ছিল না। জারের শাসনের ভিত্তি ছিল বৃহৎ জমিদারতন্ত্র।
রাশিয়ার বিপ্লবী শক্তিগুলো, বিশেষত বলশেভিক পার্টি তথা কমিউনিস্ট পার্টি জার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। এসব সংগ্রাম ধীরে ধীরে বিপ্লবে রূপ নিয়েছিল। ১৯০৫ সালে এরূপ এক বিপ্লব ব্যর্থ হয়। তার পর ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরেকটি বিপ্লব হয়। সেই বিপ্লবে জার স্বৈরতন্ত্র উৎখাত হয় এবং মেনশেভিক দলের নেতা কারনেস্কির ‘অস্থায়ী সরকার’ গঠিত হয়। এ সরকার প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলোর সঙ্গে আপস করে ও বুর্জোয়াশ্রেণির স্বার্থরক্ষার পথে অগ্রসর হয়। এর ফলে সে সরকারটি ক্রমেই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সুযোগে জারতন্ত্রের পতিত শক্তি প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে থাকে। এসবের কারণে ‘অস্থায়ী সরকার’ শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে পড়ে। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর সে দেশে শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের নতুন এক ধরনের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক সংস্থা হিসেবে ‘সোভিয়েত’ গড়ে উঠেছিল। সোভিয়েতগুলোর মধ্যে বলশেভিক পার্টির অবস্থান ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে।
‘সোভিয়েতগুলোর হাতে সব ক্ষমতা দাও’ - এ আহ্বানে বলশেভিক পার্টি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। শ্রমিক বিক্ষোভ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। যুদ্ধক্লান্ত সৈনিকরাও ‘শান্তি’র জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা ‘অস্থায়ী সরকারের’ বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়তে শুরু করে। এ রকম এক পটভূমিতে লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক পার্টি অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২৫ অক্টোবর (৭ নভেম্বর) শ্রমিকদের সশস্ত্র অংশ এবং বিপ্লবী সেনারা অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে যুদ্ধজাহাজ ‘অরোরা’ থেকে ফাঁকা শেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী সৈনিক (যারা আসলে উর্দি পরা কৃষক) ও রেড গার্ড বাহিনীর সহায়তায় রাজধানী পেট্রোগ্রাডের শ্রমিকরা বুর্জোয়া সরকারের কেন্দ্র ‘উইন্টার প্যালেসে’ অভিযান শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই পতন হয় ‘উইন্টার প্যালেসের’। ‘অস্থায়ী সরকারের’ হাত থেকে ক্ষমতা চলে আসে শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের ‘সোভিয়েতের’ হাতে। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিরোধ ভেঙে মস্কো, গোটা রাশিয়া এবং পুরনো জার সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশে বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিকশ্রেণি ক্ষমতা দখল করে নেয়।
বিপ্লবের পর লেনিনের নেতৃত্বে গঠিত নতুন সোভিয়েত সরকারের প্রথম পদক্ষেপগুলো ছিল, প্রথমত, ‘শান্তির ডিক্রি’র মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরুর ঘোষণা করা। দ্বিতীয়ত, ‘জমির ডিক্রি’র মাধ্যমে খোদ কৃষককে জমির ওপর অধিকার প্রদানের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, সর্বপর্যায়ের সোভিয়েতগুলোর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা সংহত করা। অন্য ডিক্রিগুলো ছিল নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, অবৈতনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যরক্ষা এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের নতুন ইউনিয়ন গঠন সম্পর্কিত।
মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিজয়ের পর সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের কাজ শুরু করার আগেই সোভিয়েত বিপ্লব প্রতিবিপ্লবী শক্তির আক্রমণের মুখে পড়ে। অন্তত ১৪টি সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী দেশের সামরিক বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আগ্রাসন শুরু করে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয় দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতাচ্যুত শাসকশ্রেণির অনুগত শ্বেত সেনাবাহিনী। চার বছরের গৃহযুদ্ধের পর ‘লাল ফৌজ’ দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সেসব প্রত্যক্ষ আক্রমণগুলো পরাভূত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ‘লাল ফৌজে’র হাজার হাজার যোদ্ধাকে প্রাণ দিতে হয়।
সোভিয়েতবিরোধী আঘাত আরও ঘৃণ্যরূপ ধারণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ফ্যাসিবাদ বিশ্বকে গ্রাস করতে যুদ্ধ শুরু করে। হিটলারের নাৎসি বাহিনী দেশের পর দেশ দখল করে নিতে থাকে। কিন্তু ‘লাল ফৌজে’র অসীম সাহসী লড়াই ও বীরত্বের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল হিটলারের সেই কথিত অপরাজেয় বাহিনী সোভিয়েত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তিন কোটি মানুষের প্রাণের বিনিময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন রক্ষা করে বিশ্বকে, মানবসভ্যতাকে। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের অমূল্য অবদানের কারণেই বিংশ শতাব্দীর মহাবিপদ ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়।
এসব প্রবল বাধা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। মাত্র দুই দশকের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শোষিত-বঞ্চিত সব শ্রেণি নির্মম শোষণ থেকে মুক্তি পেয়েছিল। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছিল কাজ, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সাধারণ মৌলিক চাহিদাগুলো। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হয়েছিল। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এসেছিল। নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক সরকার ১৯২৭ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দু-তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়। ১৯২৯-৩৩ সালের মহামন্দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত পুঁজিবাদী দেশ আক্রান্ত হয়ে পড়লেও এ মহামন্দা সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্পর্শ করতে পারেনি। এসবের ফলে সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্যাদা গোটা বিশ্বে আরও ছড়িয়ে পড়ে।
সমাজতন্ত্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যা অর্জনের ব্যবস্থা করে দেয়, মানুষকে দীর্ঘ আয়ু দান করে, নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, শ্রমিকসহ মেহনতি মানুষকে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান এবং বঞ্চিত ও নিপীড়িত জাতিসমূহকে মুক্ত করে। সব ধরনের পুরনো সংস্কৃতি যেমন - গোষ্ঠীবাদ, জাতীয়তাবাদ, সংকীর্ণতাবাদ ইত্যাদির অপসারণ করা হয়। প্রতিক্রিয়াশীলতা, ভোগবাদ, কুসংস্কার, কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানো হয়। প্রলেতারিয়েতের মধ্যে নতুন চেতনা, মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদার উন্মেষ ঘটে। নিপীড়িত মানুষের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। শুধু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও ঘটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চা অগ্রসর করা হয়। মহাবিশ্বকে স্পর্শ করে স্পুটনিক। ১৯৫৯ সালে মহাশূন্যে প্রথম পাড়ি দেয় সোভিয়েত নভোচর ইউরি গ্যাগারিন। সব মিলিয়ে সোভিয়েত ব্যবস্থা উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সৃষ্টি করতে থাকে নতুন মানুষ। একটি পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে ওঠে একটি ‘পরাশক্তি’। সমাজতন্ত্রের পথ অনুসরণের ফলেই তার পক্ষে এসব কথার চোখ ধাঁধানো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
সোভিয়েত বিপ্লবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের আন্দোলন জোরদার ও বিস্তৃত হয় এবং একই সঙ্গে ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামও তীব্রতা লাভ করে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই বেগবান হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় এক ডজন দেশ সমাজতন্ত্রের পথ গ্রহণ করে। চীনে বিপ্লব সফল হয়। গড়ে ওঠে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। এশিয়া, আফ্রিকার শতাধিক দেশ অর্জন করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন এসব দেশের জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনেও সোভিয়ত ইউনিয়ন আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে। ঔপনিবেশিক ও নয়া-ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর পক্ষে দাঁড়ায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ, সামরিক সহায়তা, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করা, জাতিসংঘে পাক-মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তিন-তিনবার ভেটো প্রদানসহ সর্বাত্মক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন প্রদানসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা এর একটি অকাট্য প্রমাণ।
৭৩ বছর টিকে থাকার পর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়েছে। সেখানে গড়ে ওঠা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। একদিকে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী ষড়যন্ত্র ও অপরদিকে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে নানা ভুল-ত্রুটির কারণে এটি ঘটেছে। সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হলে সেসব ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে খোলামেলা আত্মপর্যালোচনা প্রয়োজন। সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সোভিয়েতের বিলুপ্তির কারণ তার লক্ষ্য ও তত্ত্বের মধ্যে ছিল না। বিলুপ্তির কারণ ছিল প্রয়োগে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর পুঁজিবাদপন্থি অনেক প-িত সমাজতন্ত্রকেই নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ যে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম ও প্রাসঙ্গিকতা বিলুপ্ত হওয়া বোঝায় না, তার নিদর্শন আজ আমরা দেশে দেশে, এমনকি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখতে পাচ্ছি।
সমাজতন্ত্রের শক্তি কিছুটা দুর্বল হলেও তা নিঃশেষ হয়নি। বরঞ্চ দেশে-দেশে তা আবার জেগে উঠতে শুরু করেছে। তা এখন বর্ধিষ্ণু। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের ক্ষয় ক্রমাগত ঘটে চলেছে। তা এখন ক্ষয়িষ্ণু। বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখন গভীর সংকটে। একবিংশ শতাব্দীতে নয়া-উদারনীতিবাদ গোটা পৃথিবীতে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬৬টি ধনী পরিবারের কাছে যে সম্পদ আছে, তা ৩৫০ কোটি মানুষের মোট সম্পদের চেয়ে বেশি। কয়েক বছর আগে বিশ্ব পুঁজিবাদ ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল। তখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠেছিল ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ মুভমেন্ট, ‘ধনী ১ শতাংশের বিরুদ্ধে বাকি ৯৯ শতাংশের’ লড়াই। পুঁজিবাদের অবক্ষয় ও সংকটাবস্থা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
অক্টোবর বিপ্লবের মহান আদর্শ, সমাজতন্ত্রের মহান নীতিগুলো আজও অম্লান। মুক্তিকামী মানবতার কাছে তার অবদান অনিঃশেষ। মহান ‘অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’ যে স্বপ্ন দেখিয়েছে ও দেখিয়ে চলেছে, তা মানব ইতিহাসের অগ্রসরমাণ ধারায় অনির্বাণ শিখা হয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল।

লেখক: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
 ৫ নভেম্বর ২০১৭, দৈনিক আমাদের সময় প্রকাশিত