লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ।
----------------------------------------------
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবেলা করে বাংলাদেশের নারীরাও এখন কর্মক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে । পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সবধরনের কাজকর্ম করে থাকেন । অথচ কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ-সুবিধা নিরাপত্তা নেই বললেই চলে । বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০৯ নং ধারাতে বলা আছে ‘কোন মহিলা শ্রমিককে তাহার বিনা অনুমতিতে কোন প্রতিষ্ঠানে রাত দশ ঘটিকা হইতে ভোর ছয় ঘটিকা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন কাজ করিতে দেওয়া হইবেনা’ অথচ আমরা দেখতে পায় গার্মেন্ট কারখানা গুলতে মহিলা শ্রমিকদের দিয়ে দিনে রাত্রে সোমানে তাদের দিয়ে কাজ করানো হয় । গার্মেন্ট শিল্পে মোট শ্রমিকের প্রায় ৯০ ভাগ মহিলা শ্রমিক কাজ করে । এক জন মহিলা শ্রমিক যদি তার সকাল ০৮ টায় কারখনার কাজে উপস্থিত থাকতে হয় তাহলে তাকে রাত্রি ০৩ টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে , কারন শ্রমিকরা যে বাসা গুলতে থাকে সেখানে অনেক গুল রুমের জন্য একটা বাথরুম, তাও পানি ঠিক মত থাকেনা । রান্না করার জন্য পরিমান মত চুলা না থাকার কারনে, রান্নার জন্য সিরিয়াল দিতে হয় । ইচ্ছে থাকলেও পছন্দ মত তরকারি রান্না করতে পারেনা । রাত্রি ০৩ টায় ঘুম থেকে উঠে রান্না শেষ করে স্বামী-সন্তান্দের ঘুম থেকে তুলে তাদের খাবার রেডি করে দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুল যাওয়ার জন্য রেড়ি করে দিয়ে এক জন মহিলা শ্রমিক কারখানাতে কাজে যায় । দুপুরে ০১ ঘন্টা খাওয়ার জন্য কারখানায় কাজের বিরতি থাকে । এই এক ঘণ্টা কোন রকম বিশ্রাম নেওয়ার সুময় নেই তাদের । গভীর রাত্রে কারখানা থেকে বাসাই ফিরে , আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতে নিতে ঠিক মত ঘুমানোর সুময় নেই তাদের । গভীর রাত্রে বাসায় ফিরতে গিয়ে অনেক সুময় ধর্ষনের স্বীকার হচ্ছে । আর কারখানার ভিতরে কর্মকর্তাদের দারা যৌন নির্যাতন তো আছেই । বেসির ভাগ সুময় মানসম্মানের ভয়ে কারো কাছে বিচার দেইনা আর দিলেও এটাকে নানা ভাবে ধামা চাপা দেওয়া হয় । ধর্ষন কারিদের ভয়ে ধর্ষিত মহিলাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় । প্রতিটা কারখানাতে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ কারখানা গুলতে ডে-কেয়ার সেন্টার না থাকার কারনে ছোট ছোট বাচ্চাদের নানি-দাদিদের কাছে রেখে তাদের কাজ করতে হয় ।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা নং ৪৫ এ বলা আছে , ১, কোন মালিক তাহার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোন মহিলাকে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করাতে পারিবেন না । ২, কোন মহিলা কোন প্রতিষ্ঠানে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করিতে পারিবেন না । ৩, কোন মালিক কোন মহিলাকে এমন কোন কাজ করার জন্য নিয়োগ করিতে পারিবেন না যাহা দুস্কর বা শ্রম-সাধ্য অথবা যাহার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে হয় অথবা যাহা তাহার জন্য হানিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যদি- (ক) তাহার এই বিশ্বাস করার কারণ থাকে, অথবা যদি মহিলা তাহাকে অবহিত করিয়া থাকেন যে, দশ সপ্তাহের মধ্যে তাহার সন্তান প্রসব করার সম্ভাবনা আছে ; (খ) মালিকের জানামতে মহিলা পূর্ববর্তী দশ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করিয়াছেন । তবে শর্ত থাকে যে, চা-বাগান শ্রমিকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চা-বাগানের চিগিৎসক কর্তৃক যত দিন পর্যন্ত সক্ষমতার সার্টিফিকেট পাওয়া যাইবে ততদিন পর্যন্ত উক্ত শ্রমিক হালকা ধরণের কাজ করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ কাজ যতদিন তিনি করিবেন ততদিন তিনি উক্ত কাজের জন্য প্রচলিত আইন অনুসারে নির্ধারিত হারে মজুরী পাইবেন, যাহা প্রসূতি কল্যাণ ভাতার অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হইবে ।
ধারা নং ৪৬ এ বলা আছে, ১, প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক তাহার মালিকের নিকট হইতে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিতি পূর্বর্তী আট সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের অব্যবহিতি পরবর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইবেন এবং তাহার মালিক তাহাকে এই সুবিধা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, কোন মহিলা উক্তরুপ সুবিধা পাইবেন না যদি না তিনি তাহার মালিকের অধীনে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিতি পূর্বে অন্যূন ছয় মাস কাজ করিয়া থাকেন । ২, কোন মহিলাকে উক্তরুপ সুবিধা প্রদেয় হইবে না যদি তাহার সন্তান প্রসবের সময় তাহার দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকে, তবে এক্ষেত্রে তিনি কোন ছুটি পাইবার অধিকারী হইলে তাহা পাইবেন ।
ধারা নং ৪৭ এ বলা আছে, ১, কোন অন্তঃসত্তা মহিলা এই আইনের অধীনে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইলে তিনি যে কোন দিন মালিককে লিখিত বা মৌখিক এই মর্মে নোটিশ দিবেন যে, নোটিশের আট সপ্তাহের মধ্যে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে, এবং উক্ত নোটিশে তাহার মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই সুবিধা যিনি গ্রহন করিবেন তাহার নামও উল্লেখ থাকিবেন । ২, কোন মহিলা উক্তরুপ কোন নোটিশ প্রদান না করিয়া থাকিলে তাহার সন্তান প্রসবের সাত দিনের মধ্যে তিনি উক্তরুপ নোটিশ প্রদান করিয়া তাহার সন্তান প্রসব সম্পর্কে মালিককে অবহিত করিবেন । ৩, উপ-ধারা ১ অথবা ২ এ উল্লিখিত নোটিশ প্রাপ্তির পর মালিক সংশ্লিষ্ট মহিলাকে-ক, উপ-ধারা ১ এর অধীন নোটিশের ক্ষেত্রে, উহা প্রদানের তারিখের পরের দিন হইতে; খ, উপ-ধারা ২ এর অধীন নোটিশের ক্ষেত্রে, সন্তান প্রসবের তারিখ হইতে, সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ পুর্যন্ত, কাজে অনুপস্থিত থাকিবার জন্য অনুমতি দিবেন । ৪, কোন মালিক সংশ্লিষ্ট মহিলার ইচ্ছানুযায়ী নিম্নলিখিত যে কোন পন্থায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, যথা-ক, যে ক্ষেত্রে কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নিকট হইতে এই মর্মে প্রপ্ত প্রত্যয়নপত্র পেশ করা হয় যে, মহিলা আট সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে, সে ক্ষেত্রে প্রত্যয়ন পত্র পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রসব পূর্ববর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, এবং মহিলার সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রদেয় উক্তরূপ সুবিধা প্রদান করিবেন; অথবা খ, মালিকের নিকট সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে সন্তান প্রসবের তারিখসহ উহার পূর্ববর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, এবং উক্ত প্রমাণ পেশের পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট মেয়াদের সুবিধা প্রদান করিবেন; অথবা গ, সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে উক্ত সম্পুর্ণ সময়ের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, এই উপ-ধারার অধীন যে প্রসূতি কল্যাণ বা উহার কোন অংশ প্রদান সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশের উপর নির্ভরশীল, সেরূপ কোন প্রমাণ কোন মহিলা তাহার সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে পেশ না করিলে তিনি এই সুবিধা পাইবার অধিকার হইবেন না । ৫, উপ-ধারা ৪ এর অধীন যে প্রমাণ পেশ করিতে হইবে, উক্ত প্রমাণ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর অধীন প্রদত্ত জন্ম রেজিস্টারের সত্যায়িত উদ্ধৃতি, অথবা কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র, অথবা মালিকের নিকট গ্রহনযোগ্য অন্য কোন প্রমাণ হইতে পারিবে ।
ধারা নং ৪৮ এ বলা আছে, ১, এই আইনের অধীন যে অসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদেয় হইবে উহা উপ-ধারা ২ এ উল্লিখিত পন্থায় গণনা করিয়া দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক, যে ক্ষেত্রে যাহা প্রযোজ্য, গড় মজুরী হারে সম্পূর্ণ নগদে প্রদান করিতে হইবে ।
ধারা নং ৪৯ এ বলা আছে, ১, এই অধ্যায়ের অধীন প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী কোন মহিলা সন্তান প্রসবকালে অথবা উহার পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করিলে মালিক, শিশু সন্তানটি যদি বাঁচিয়া থাকে, যে ব্যক্তি শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহাকে, এবং, যদি শিশু সন্তান জীবিত না থাকে, তাহা হইলে এই অধ্যায়ের অধীন মহিলার মনোনীত ব্যক্তিকে অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকিলে মৃত মহিলার আইনগত প্রতিনিধিকে উক্তরুপ সুবিধা প্রদান করিবেন । ২, যদি উক্তরূপ কোন মহিলা প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হওয়ার সময় সীমার মধ্যে কিন্তু সন্তান প্রসবের পূর্বে মারা যান, তাহা হইলে মালিক উক্ত মহিলার মৃত্যুর তারিখসহ তৎপূর্ববর্তী সময়ের জন্য উক্তরূপ সুবিধা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন, তবে ইতিমধ্যে প্রদত্ত উক্তরূপ সুবিধা হইতে বেশী হয়, তাহা হইলেও উহা আর ফেরত লইতে পারিবেন না, এবং মহিলার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত যদি মালিকের নিকট এই বাবাবদ কিছু পাওনা থাকে, তাহা হইলে তিনি এই অধ্যায়ের অধীন মহিলার কোন মনোনীত ব্যক্তিকে, অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকিলে, তাহার আইনগত প্রতিনিধিকে উহা প্রদান করিবেন ।
ধারা ৫০ এ বলা আছে, যদি কোন মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্ববর্তী ছয় মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ মেয়াদের মধ্যে তাহাকে চাকুরী হইতে ডিসচার্জ, বরখাস্ত বা অপসারণ করার জন্য অথবা তাহার চাকুরী অন্যভাবে অবসানের জন্য মালিক কোন নোটিশ বা আদেশ প্রদান করেন, এবং উক্তরূপ নোটিশ বা আদেশ যদি যথেষ্ট কোন কারণ না থাকে তাহা হইলে, এই নোটিশ বা আদেশ প্রদান না করা হইলে এই অধ্যায়ের অধীন সংশ্লিষ্ট মহিলা যে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইতেন, উহা হইতে তিনি বঞ্চিত হইবেন না ।
শ্রম আইনের উক্ত ধারা গুলতে কিছু অধিকার নারী শ্রমিকদের পক্ষে থাকলেও বাস্তবে মালিকরা মানতে চায়না । কর্মক্ষেত্রে মহিলারা গর্ভবতি হলেই তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয় । তার যা আইনানুগ পাওনা দেওয়া হয়না । প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর অমানবিক নির্যাতন নেমে আসে, শুধু তার উপরেই না তার পরিবারের উপরেও নির্যাতন নেমে আসে । গার্মেন্ট শিল্পে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার উপর তীব্র দমন-নির্যাতন ও শোষণের মধ্যে শ্রমিকরা জীবন অতিবাহিত করছে । অন্যদিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর কর্মস্থল এবং অমানবিক কর্ম পরিবেশে কাজ করার ফলে অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য গার্মেন্ট শ্রমিকের জীবন । অথচ এই সব গার্মেন্ট মালিকরা সামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে স্বল্প সুদে ঋণ ও বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা সহ বিভিন্ন সময়ে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে আজ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক । তারা ইচ্ছে করলে শ্রমিকদের ভাল রাখতে পারতেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা তা পারেনা ।
নারীরা কারখানা-অফিসের মধ্যে সিমাবদ্ধ নেই আন্দলন সংগ্রামেও তারা অনেক ভুমিকা রেখে চলেছে । সোয়ান গার্মেন্ট এর প্রায় ৪০০ নারী শ্রমিক ২০ দিন প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে তারা তাদের দাবি আদাই করে ঘরে ফিরেছে । গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রেখে আসছে নারী শ্রমিকরা ।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নতুন করে বিষাক্ত ফনা তুলেছে । নারীদের দমীয়ে রাখার অপচেষ্টা চলছে । সকল অপচেষ্টা অতিক্রম করে নারী এগিয়ে যাবে প্রগতির পথে ।
----------------------------------------------
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবেলা করে বাংলাদেশের নারীরাও এখন কর্মক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে । পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সবধরনের কাজকর্ম করে থাকেন । অথচ কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ-সুবিধা নিরাপত্তা নেই বললেই চলে । বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০৯ নং ধারাতে বলা আছে ‘কোন মহিলা শ্রমিককে তাহার বিনা অনুমতিতে কোন প্রতিষ্ঠানে রাত দশ ঘটিকা হইতে ভোর ছয় ঘটিকা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন কাজ করিতে দেওয়া হইবেনা’ অথচ আমরা দেখতে পায় গার্মেন্ট কারখানা গুলতে মহিলা শ্রমিকদের দিয়ে দিনে রাত্রে সোমানে তাদের দিয়ে কাজ করানো হয় । গার্মেন্ট শিল্পে মোট শ্রমিকের প্রায় ৯০ ভাগ মহিলা শ্রমিক কাজ করে । এক জন মহিলা শ্রমিক যদি তার সকাল ০৮ টায় কারখনার কাজে উপস্থিত থাকতে হয় তাহলে তাকে রাত্রি ০৩ টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে , কারন শ্রমিকরা যে বাসা গুলতে থাকে সেখানে অনেক গুল রুমের জন্য একটা বাথরুম, তাও পানি ঠিক মত থাকেনা । রান্না করার জন্য পরিমান মত চুলা না থাকার কারনে, রান্নার জন্য সিরিয়াল দিতে হয় । ইচ্ছে থাকলেও পছন্দ মত তরকারি রান্না করতে পারেনা । রাত্রি ০৩ টায় ঘুম থেকে উঠে রান্না শেষ করে স্বামী-সন্তান্দের ঘুম থেকে তুলে তাদের খাবার রেডি করে দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুল যাওয়ার জন্য রেড়ি করে দিয়ে এক জন মহিলা শ্রমিক কারখানাতে কাজে যায় । দুপুরে ০১ ঘন্টা খাওয়ার জন্য কারখানায় কাজের বিরতি থাকে । এই এক ঘণ্টা কোন রকম বিশ্রাম নেওয়ার সুময় নেই তাদের । গভীর রাত্রে কারখানা থেকে বাসাই ফিরে , আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতে নিতে ঠিক মত ঘুমানোর সুময় নেই তাদের । গভীর রাত্রে বাসায় ফিরতে গিয়ে অনেক সুময় ধর্ষনের স্বীকার হচ্ছে । আর কারখানার ভিতরে কর্মকর্তাদের দারা যৌন নির্যাতন তো আছেই । বেসির ভাগ সুময় মানসম্মানের ভয়ে কারো কাছে বিচার দেইনা আর দিলেও এটাকে নানা ভাবে ধামা চাপা দেওয়া হয় । ধর্ষন কারিদের ভয়ে ধর্ষিত মহিলাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় । প্রতিটা কারখানাতে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ কারখানা গুলতে ডে-কেয়ার সেন্টার না থাকার কারনে ছোট ছোট বাচ্চাদের নানি-দাদিদের কাছে রেখে তাদের কাজ করতে হয় ।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা নং ৪৫ এ বলা আছে , ১, কোন মালিক তাহার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোন মহিলাকে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করাতে পারিবেন না । ২, কোন মহিলা কোন প্রতিষ্ঠানে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করিতে পারিবেন না । ৩, কোন মালিক কোন মহিলাকে এমন কোন কাজ করার জন্য নিয়োগ করিতে পারিবেন না যাহা দুস্কর বা শ্রম-সাধ্য অথবা যাহার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে হয় অথবা যাহা তাহার জন্য হানিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যদি- (ক) তাহার এই বিশ্বাস করার কারণ থাকে, অথবা যদি মহিলা তাহাকে অবহিত করিয়া থাকেন যে, দশ সপ্তাহের মধ্যে তাহার সন্তান প্রসব করার সম্ভাবনা আছে ; (খ) মালিকের জানামতে মহিলা পূর্ববর্তী দশ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করিয়াছেন । তবে শর্ত থাকে যে, চা-বাগান শ্রমিকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চা-বাগানের চিগিৎসক কর্তৃক যত দিন পর্যন্ত সক্ষমতার সার্টিফিকেট পাওয়া যাইবে ততদিন পর্যন্ত উক্ত শ্রমিক হালকা ধরণের কাজ করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ কাজ যতদিন তিনি করিবেন ততদিন তিনি উক্ত কাজের জন্য প্রচলিত আইন অনুসারে নির্ধারিত হারে মজুরী পাইবেন, যাহা প্রসূতি কল্যাণ ভাতার অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হইবে ।
ধারা নং ৪৬ এ বলা আছে, ১, প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক তাহার মালিকের নিকট হইতে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিতি পূর্বর্তী আট সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের অব্যবহিতি পরবর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইবেন এবং তাহার মালিক তাহাকে এই সুবিধা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, কোন মহিলা উক্তরুপ সুবিধা পাইবেন না যদি না তিনি তাহার মালিকের অধীনে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিতি পূর্বে অন্যূন ছয় মাস কাজ করিয়া থাকেন । ২, কোন মহিলাকে উক্তরুপ সুবিধা প্রদেয় হইবে না যদি তাহার সন্তান প্রসবের সময় তাহার দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকে, তবে এক্ষেত্রে তিনি কোন ছুটি পাইবার অধিকারী হইলে তাহা পাইবেন ।
ধারা নং ৪৭ এ বলা আছে, ১, কোন অন্তঃসত্তা মহিলা এই আইনের অধীনে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইলে তিনি যে কোন দিন মালিককে লিখিত বা মৌখিক এই মর্মে নোটিশ দিবেন যে, নোটিশের আট সপ্তাহের মধ্যে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে, এবং উক্ত নোটিশে তাহার মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই সুবিধা যিনি গ্রহন করিবেন তাহার নামও উল্লেখ থাকিবেন । ২, কোন মহিলা উক্তরুপ কোন নোটিশ প্রদান না করিয়া থাকিলে তাহার সন্তান প্রসবের সাত দিনের মধ্যে তিনি উক্তরুপ নোটিশ প্রদান করিয়া তাহার সন্তান প্রসব সম্পর্কে মালিককে অবহিত করিবেন । ৩, উপ-ধারা ১ অথবা ২ এ উল্লিখিত নোটিশ প্রাপ্তির পর মালিক সংশ্লিষ্ট মহিলাকে-ক, উপ-ধারা ১ এর অধীন নোটিশের ক্ষেত্রে, উহা প্রদানের তারিখের পরের দিন হইতে; খ, উপ-ধারা ২ এর অধীন নোটিশের ক্ষেত্রে, সন্তান প্রসবের তারিখ হইতে, সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ পুর্যন্ত, কাজে অনুপস্থিত থাকিবার জন্য অনুমতি দিবেন । ৪, কোন মালিক সংশ্লিষ্ট মহিলার ইচ্ছানুযায়ী নিম্নলিখিত যে কোন পন্থায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, যথা-ক, যে ক্ষেত্রে কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নিকট হইতে এই মর্মে প্রপ্ত প্রত্যয়নপত্র পেশ করা হয় যে, মহিলা আট সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে, সে ক্ষেত্রে প্রত্যয়ন পত্র পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রসব পূর্ববর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, এবং মহিলার সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে অবশিষ্ট সময়ের জন্য প্রদেয় উক্তরূপ সুবিধা প্রদান করিবেন; অথবা খ, মালিকের নিকট সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে সন্তান প্রসবের তারিখসহ উহার পূর্ববর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেন, এবং উক্ত প্রমাণ পেশের পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট মেয়াদের সুবিধা প্রদান করিবেন; অথবা গ, সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশ করার পরবর্তী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে উক্ত সম্পুর্ণ সময়ের জন্য প্রদেয় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদান করিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, এই উপ-ধারার অধীন যে প্রসূতি কল্যাণ বা উহার কোন অংশ প্রদান সন্তান প্রসবের প্রমাণ পেশের উপর নির্ভরশীল, সেরূপ কোন প্রমাণ কোন মহিলা তাহার সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে পেশ না করিলে তিনি এই সুবিধা পাইবার অধিকার হইবেন না । ৫, উপ-ধারা ৪ এর অধীন যে প্রমাণ পেশ করিতে হইবে, উক্ত প্রমাণ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর অধীন প্রদত্ত জন্ম রেজিস্টারের সত্যায়িত উদ্ধৃতি, অথবা কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র, অথবা মালিকের নিকট গ্রহনযোগ্য অন্য কোন প্রমাণ হইতে পারিবে ।
ধারা নং ৪৮ এ বলা আছে, ১, এই আইনের অধীন যে অসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রদেয় হইবে উহা উপ-ধারা ২ এ উল্লিখিত পন্থায় গণনা করিয়া দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক, যে ক্ষেত্রে যাহা প্রযোজ্য, গড় মজুরী হারে সম্পূর্ণ নগদে প্রদান করিতে হইবে ।
ধারা নং ৪৯ এ বলা আছে, ১, এই অধ্যায়ের অধীন প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী কোন মহিলা সন্তান প্রসবকালে অথবা উহার পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করিলে মালিক, শিশু সন্তানটি যদি বাঁচিয়া থাকে, যে ব্যক্তি শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহাকে, এবং, যদি শিশু সন্তান জীবিত না থাকে, তাহা হইলে এই অধ্যায়ের অধীন মহিলার মনোনীত ব্যক্তিকে অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকিলে মৃত মহিলার আইনগত প্রতিনিধিকে উক্তরুপ সুবিধা প্রদান করিবেন । ২, যদি উক্তরূপ কোন মহিলা প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হওয়ার সময় সীমার মধ্যে কিন্তু সন্তান প্রসবের পূর্বে মারা যান, তাহা হইলে মালিক উক্ত মহিলার মৃত্যুর তারিখসহ তৎপূর্ববর্তী সময়ের জন্য উক্তরূপ সুবিধা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন, তবে ইতিমধ্যে প্রদত্ত উক্তরূপ সুবিধা হইতে বেশী হয়, তাহা হইলেও উহা আর ফেরত লইতে পারিবেন না, এবং মহিলার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত যদি মালিকের নিকট এই বাবাবদ কিছু পাওনা থাকে, তাহা হইলে তিনি এই অধ্যায়ের অধীন মহিলার কোন মনোনীত ব্যক্তিকে, অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকিলে, তাহার আইনগত প্রতিনিধিকে উহা প্রদান করিবেন ।
ধারা ৫০ এ বলা আছে, যদি কোন মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্ববর্তী ছয় মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ মেয়াদের মধ্যে তাহাকে চাকুরী হইতে ডিসচার্জ, বরখাস্ত বা অপসারণ করার জন্য অথবা তাহার চাকুরী অন্যভাবে অবসানের জন্য মালিক কোন নোটিশ বা আদেশ প্রদান করেন, এবং উক্তরূপ নোটিশ বা আদেশ যদি যথেষ্ট কোন কারণ না থাকে তাহা হইলে, এই নোটিশ বা আদেশ প্রদান না করা হইলে এই অধ্যায়ের অধীন সংশ্লিষ্ট মহিলা যে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাইবার অধিকারী হইতেন, উহা হইতে তিনি বঞ্চিত হইবেন না ।
শ্রম আইনের উক্ত ধারা গুলতে কিছু অধিকার নারী শ্রমিকদের পক্ষে থাকলেও বাস্তবে মালিকরা মানতে চায়না । কর্মক্ষেত্রে মহিলারা গর্ভবতি হলেই তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয় । তার যা আইনানুগ পাওনা দেওয়া হয়না । প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর অমানবিক নির্যাতন নেমে আসে, শুধু তার উপরেই না তার পরিবারের উপরেও নির্যাতন নেমে আসে । গার্মেন্ট শিল্পে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার উপর তীব্র দমন-নির্যাতন ও শোষণের মধ্যে শ্রমিকরা জীবন অতিবাহিত করছে । অন্যদিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর কর্মস্থল এবং অমানবিক কর্ম পরিবেশে কাজ করার ফলে অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য গার্মেন্ট শ্রমিকের জীবন । অথচ এই সব গার্মেন্ট মালিকরা সামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে স্বল্প সুদে ঋণ ও বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা সহ বিভিন্ন সময়ে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে আজ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক । তারা ইচ্ছে করলে শ্রমিকদের ভাল রাখতে পারতেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা তা পারেনা ।
নারীরা কারখানা-অফিসের মধ্যে সিমাবদ্ধ নেই আন্দলন সংগ্রামেও তারা অনেক ভুমিকা রেখে চলেছে । সোয়ান গার্মেন্ট এর প্রায় ৪০০ নারী শ্রমিক ২০ দিন প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে তারা তাদের দাবি আদাই করে ঘরে ফিরেছে । গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রেখে আসছে নারী শ্রমিকরা ।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নতুন করে বিষাক্ত ফনা তুলেছে । নারীদের দমীয়ে রাখার অপচেষ্টা চলছে । সকল অপচেষ্টা অতিক্রম করে নারী এগিয়ে যাবে প্রগতির পথে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন