সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের রায় ঘোষিত হওয়ার
পর সরকারি মহল থেকে বিচার বিভাগ ও প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করে ক্রুদ্ধ বাক্যবাণ
নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তাদের সেসব দায়িত্বহীন বাচালতার উপাদানগুলো এক অনাকাক্সিক্ষত ও
বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। তবে যেসব পরস্পরবিরোধী
কথাবার্তা ইতোমধ্যে হয়েছে সেসবের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কিছু
মৌলিক বিশেষত্বের প্রসঙ্গও সামনে চলে এসেছে। সেগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা হওয়া
গণতন্ত্রের স্বার্থেই প্রয়োজন ও ইতিবাচক। এরূপ প্রেক্ষাপটে আলোচনার একটি কেন্দ্রীয়
বিষয় হয়ে উঠেছে ‘গণতন্ত্র’। এ নিয়ে নানাদিক থেকে আলোচনা হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্র হলো
বহুমাত্রিক একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো গণতন্ত্রের
সঙ্গে ‘জনগণের’ সম্পর্কের প্রসঙ্গটি। এর একটি বিশেষ দিক নিয়ে কিছু আলোচনার চেষ্টা
এখানে এখন করছি।
দেশের সমস্যা অফুরন্ত।
জনগণের জীবনে সমস্যা-সংকটেরও অন্ত নেই। বেপরোয়া লুটপাট, দুর্নীতি-সন্ত্রাসের
ক্রমবর্ধমান প্রকোপ, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, পুষ্টিহীনতা-অনাহার-বেকারত্ব, চরম হতে থাকা বৈষম্য
ইত্যাদি মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এসব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েই বিরাজ করছে দেশে
‘গণতন্ত্রহীনতার’ সমস্যা। এসব অন্তহীন সমস্যা
জনগণকে প্রতিনিয়তই হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ
পথের সন্ধান চায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ আজও সে পথ পরিষ্কারভাবে চিনে উঠতে পারেনি।
আজও তারা পরিপূর্ণভাবে এই অভিজ্ঞতা আত্মস্থ করে উঠতে পারেনি যে, এসব দুর্দশার উৎসমূল
হলো প্রচলিত ‘লুটপাটের সমাজব্যবস্থা’। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনো এক
ভ্রান্ত আশায় বিভোর হয়ে থাকছে যে, ‘একে’ বাদ দিয়ে ‘ওকে’ গদিতে আনতে পারলেই হয়তো
দুর্দশা দূর হবে। নৌকা, ধানের শীষ, ওয়ান-ইলেভেন ইত্যাদি শক্তি মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলার মতো, মানুষের এই ভ্রান্ত
আশাকে পুঁজি করে, সেই ‘রুগ্ন ব্যবস্থাকেই’ পালাক্রমে চালু রাখতে সক্ষম
হচ্ছে। গদির বদল হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আগের
অর্থনৈতিক-সামাজিকব্যবস্থা বদল হচ্ছে না। ফলে অবসান হচ্ছে না মানুষের
দুর্দশা-দুর্গতির।
এ অবস্থা থেকে
পরিত্রাণের পথ হলো সমাজতন্ত্র অভিমুখীন ‘সমাজ বিপ্লব’। সেরূপ সমাজ বিপ্লব
সাধনের শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে জনগণ, বিশেষত মেহনতি জনগণ।
বিপ্লবের শক্তি হয়ে ওঠার জন্য তাদের দরকার চেতনা, ঐক্য ও সংগঠন। এসব
প্রস্তুতিকাজ চালানোর জন্য স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি অনুকূল। তাই গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক শাসন, গণতান্ত্রিক অধিকার
ইত্যাদির বিষয়ে মেহনতি মানুষসহ জনগণের স্বার্থ ও আগ্রহই সবচেয়ে বেশি। জনগণকে যদি ‘বিপ্লব’ তথা ‘সর্বহারার গণতন্ত্র’ ও ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্রের’ মধ্যে একটিকে বেছে নিতে
হয়, তা হলে তাদের উচিত হবে সর্বহারার গণতন্ত্রকে বেছে নেওয়া। কিন্তু
যদি তার সামনে বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে একটিকে বেছে
নেওয়ার অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, তা হলে অবশ্যই তাদের উচিত হবে ‘গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার’ পক্ষে দাঁড়ানো। তাই
নিজেদের বিপ্লবী লক্ষ্যের বিবেচনা থেকেই মেহনতি জনগণ গণতন্ত্রকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা
করতে চায়।
তবে শুধু বিপ্লবী
লক্ষ্যের বিবেচনায়ই নয়, প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যেও মেহনতি মানুষ নিজেদের
স্বার্থকে যথাসম্ভব সংরক্ষণ ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক
শাসনকে সে রক্ষা করতে চায়। পক্ষান্তরে সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিকশ্রেণিসহ
শোষকশ্রেণি গণতন্ত্রকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করে। কারণ গণতন্ত্র একটি
ক্রমপ্রসরমান ও গভীরতর হতে থাকা বহুমাত্রিক বিষয়। এর মর্মকথা যেহেতু জনগণের শাসন, তাই এই ব্যবস্থা শুধু
৪-৫ বছর পরপর ভোটের প্রক্রিয়ায় (যেটিকে দেশি-বিদেশি শোষকরা টাকার জোরে ‘ম্যানেজ’ করতে সক্ষম বলে মনে
করে) সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি সব ক্ষেত্রে
তার প্রসার ঘটার প্রবণতাই হলো স্বাভাবিক। তাই শোষকরা পারতপক্ষে গণতন্ত্রের পথ
পরিহার করে গণতন্ত্রহীনতার স্বৈরতান্ত্রিক পথে দেশ পরিচালনায় স্বাভাবিক আগ্রহ
প্রদর্শন করে থাকে।
কিন্তু সেই পথ ধরে চলাও
তাদের জন্য মুশকিল। গণতন্ত্রহীনতার পথে চলতে থাকলে শোষকদের একটি অংশ তাদের নিজেদের
ষোল আনা স্বার্থ আদায় করে নিতে পারে! কিন্তু শোষকদের, অন্যান্য অংশ সেই বাড়তি
সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। তার ফলে শোষকদের প্রত্যেকের ও প্রতিটি অংশের স্বার্থ
সমান মাত্রায় দেখভাল করার নিশ্চয়তা দিতে তা সক্ষম হয় না। তাই শোষকদের শ্রেণিগত
স্বার্থেই ‘কিছুটা গণতন্ত্র’ বহাল রাখা প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া
আমজনতা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম চালায়, তাদের বুঝ দিয়ে সেটিকে
আশু বিপ্লবী জাগরণের সম্ভাবনা (শোষকদের কাছে আশঙ্কা!) রোধ করাও শোষকদের স্বার্থে
প্রয়োজন হয়। এসব কারণে তারা গণতন্ত্রের লেবাস লাগিয়ে মাঠে নেমে থাকে। তাই
গণতন্ত্রকে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে বেঁধে রেখে দেশ চালানোর পথ অনুসরণ করতে
তারা সচেষ্ট হয়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রেও
সমস্যা! কারণ প্রকৃত গণতন্ত্র তো দূরের কথা, এমনকি নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে
গণতন্ত্রকে আবদ্ধ রেখে পথ চলতেও দেশি-বিদেশি শোষকশ্রেণি অপারগ। লুটপাটের
ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে সৃষ্ট সংঘাত-সংঘর্ষ যে নৈরাজ্যের জন্ম দেয় তা
গোটা শোষণব্যবস্থার অস্তিত্বকেই বিপদাপন্ন করে তোলে। এমতাবস্থায় লেবাসি গণতন্ত্রের
মুখোশটি ধারণ করে চলাও তাদের জন্য আর সম্ভব হয় না। সামরিক অভ্যুত্থান, প্যারা-সামরিক
অভ্যুত্থান ইত্যাদি ঘটিয়ে শোষকদের স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট হওয়া ছাড়া তাদের জন্য তখন
অন্য কোনো পথ আর খোলা থাকে না। অন্যদিকে মেহনতি মানুষের বিপ্লবী আন্দোলন
যখন পরিপক্ব হয়ে ওঠে, তখন গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ষোল আনা অক্ষুণœ রেখে বিপ্লবের সম্ভাবনা
ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সেই অবস্থায় শোষকরা শক্ত হাতে ‘ছোটলোকদের জাগরণ’ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে
লেবাসি গণতন্ত্রের আবরণটুকুও ঝেড়ে ফেলে দিয়ে উন্মত্ত স্বৈরাচারের বর্বর রূপ ধারণ
করে। এটিই হলো ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্রের’ আসল স্বরূপ। আমাদের দেশের
সমসাময়িক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বব্যাপী রাজনীতির বহু বর্ণিল ইতিহাস এই শিক্ষাই তুলে ধরে।
গণতন্ত্রকে এভাবে ‘প্রকৃত’ কিংবা ‘বুর্জোয়া’,
‘মৌলিক’ (আইয়ুব খান কর্তৃক
প্রবর্তিত), ‘প্রতিনিধিত্বশীল’, ‘অংশগ্রহণমূলক’,
‘বহুপক্ষীয়’,
‘সর্বহারার’,
‘সমাজতান্ত্রিক’ ইত্যাদি বিশেষণে
বিশেষায়িত করলে অনেকেই কপাল কুঁচকে আপত্তি জানিয়ে থাকেন। তাদের কথা হলো, গণতন্ত্র হলো ‘গণতন্ত্রই’। তার আবার রকমফের হবে
কেন? তাদের এই বক্তব্য যুক্তির ধোপে টেকে না। কারণ গণতন্ত্র ইলেকট্রনিক
সুইচ অন করার মতো ‘এক ঝটকায়’ পূর্ণাঙ্গরূপে উদিত হওয়ার অনুরূপ কোনো ব্যাপার নয়। গণতন্ত্রশূন্যতা
থেকে গণতন্ত্রপূর্ণতায় উত্তরণ দেয়ালের এদিক-ওদিক করার মতো এক লাফে এপার-ওপার করার
একটি সরল বিষয় নয়। গণতন্ত্র হলো একটি বহুমাত্রিক বিষয়, যার রয়েছে বহু ধরনের
উপাদান। গণতান্ত্রিক বলে দাবিদার একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে থাকে বিভিন্ন মাত্রায়
গণতন্ত্রের বিভিন্ন উপাদানের সম্মিলনে। সব রাষ্ট্রের গণতন্ত্র এক কিছিমের নয়। এসব
বহু ধরনের ও মাত্রার গণতন্ত্রের মাঝ থেকেই
‘গণতন্ত্রের’ মর্মকথা সম্পর্কে ধারণাগত উপলব্ধি স্পষ্ট করা সম্ভব হতে পারে।
‘গণতন্ত্রের’ মর্মকথা সম্পর্কে ধারণাগত উপলব্ধি স্পষ্ট করা সম্ভব হতে পারে।
গণতন্ত্রের মৌলিক
ধারণাগত ভিত্তির সঙ্গে জড়িত হলো ‘গণ’, অর্থাৎ জনগণ। জনগণ বলতে
বোঝায় সব মানুষের ‘সর্বাংশ’। তার একাংশকে কিংবা তার প্রতিনিধিত্বশীল বলে দাবিদার একাংশকেও ‘জনগণ’ বলে ধরে নেওয়া যেতে
পারে না। তাই গণতন্ত্রের মূল কথা হলো, প্রাকৃতিক জগতের নিয়ন্ত্রণ-অসাধ্য
ঘটনাবলির বাইরে, মানুষের ইহলৌকিক সামাজিক জীবনের ওপর জনগণের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা।
অর্থাৎ জনগণের নিজেদের হাতে নিজেদের শাসনকাজের নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা
করা। এ ক্ষেত্রে ‘প্রক্সি’র বা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
গণতন্ত্রের অর্থবহ হতে
পারার ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একটি প্রধান ও
নির্ধারক প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গটি গণতন্ত্র সম্পর্কে সমাজতন্ত্রীদের ধারণার একটি মূল
স্তম্ভ। তাদের এই ধারণার সঙ্গে পুঁজিবাদী ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির’ প্রবক্তারা অবশ্য মোটেই
একমত নন। মতপার্থক্যটি চূড়ান্ত বিচারে এসে দাঁড়ায় উৎপাদন উপকরণের ওপর মালিকানার
আইনগত রূপ কী হবে সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। সেই মালিকানা যৌথতার ওপর প্রতিষ্ঠিত
থাকা উচিত, নাকি ব্যক্তিমালিকানার ‘স্বাধীনতার’ ওপর ভিত্তি করে
প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত - দুপক্ষের মধ্যে মূল দ্বন্দ্বটি হলো এ নিয়েই।
সেই বিতর্কে প্রবেশ না
করেই আমরা যদি শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিম-লে কার্যকর গণতন্ত্রের বিষয়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকি তাহলেও সে ক্ষেত্রে ‘জনগণের শাসনব্যবস্থা’র একটি আবশ্যিক শর্ত
হলো শাসনকাজে জনগণের সর্বাংশের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ ক্ষেত্রে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ যুক্তি প্রযোজ্য হতে
পারে না। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির যুক্তি দেখিয়ে, জনগণের জায়গায় ‘জনপ্রতিনিধিদের’ শাসন প্রতিস্থাপন করে
তাকে গণতন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে না। যেমন কিনা একইভাবে গণতান্ত্রিক
ধারায় পরিচালিত কোনো দলের কার্যপরিচালনায় তার সদস্যদের কর্তৃত্বের মৌলিক অধিকার, দলের নেতা বা নেত্রীর
একচ্ছত্র কর্তৃত্ব দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে না। প্রতিনিধিদের হাতে কর্তৃত্ব
আরোপ করে জনগণকে নিষ্ক্রিয় বসিয়ে রাখলে তার দ্বারা ‘এমপিতন্ত্র’,
‘চেয়ারম্যানতন্ত্র’ ইত্যাদি স্থাপন করা
সম্ভব হতে পারে বটে। কিন্তু তাতে ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা হয় না।
শাসনকাজে জনগণের স্বার্থরক্ষা কেবল জনগণের দ্বারাই করা সম্ভব। এ কথা কখনই ভুলে
যাওয়া উচিত নয় যে, ‘জমি বর্গা দেওয়া সম্ভব হলেও স্বার্থ কোনোদিন বর্গা দেওয়া যায় না।’ সমাজের সামগ্রিক
গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে এসব ধারণার অনুসরণ অত্যাবশ্যক।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে
বহুলাংশে এখনো ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলার মতো অবস্থা বিদ্যমান। এসব খেলায় খেলোয়াড়, রেফারি, লাইনসম্যান, আম্পায়ার প্রমুখ মিলে
মাত্র ডজন দুয়েক মানুষ মাঠে নেমে সক্রিয়ভাবে খেলে থাকেন। তারাই ‘প্লেয়ার’। তারাই শুধু খেলায়
অংশগ্রহণকারী। কিন্তু মাঠের চতুর্দিকের উঁচু গ্যালারিতে ঠাসা হয়ে বসে খেলা দেখেন
হাজার বা লাখো দর্শক। টেলিভিশনের সুবাদে সেই খেলা সরাসরি দেখে থাকে আরও কোটি
মানুষ। তারা খেলার অগ্রযাত্রার তালে তালে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, টেনশনে, হতাশায়, বেদনায় ভাসতে থাকেন।
জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদ বলে গলা ফাটিয়ে মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম হয়। মাঝে মাঝেই তারা
নিজেদের মধ্যে মারামারি করে নিহত-আহত হন। অথচ তারা কিন্তু প্রকৃত প্লেয়ার নন। আসল
প্লেয়ার হলো মাত্র সেই ডজন দুয়েকই। দেশে যে লেবাসি গণতন্ত্র এখন চলছে, তার অবস্থা আজ অনেকটাই
ফুটবল, ক্রিকেট খেলার মতো একইরকম হয়ে উঠেছে। এখন দেশের রাজনীতির প্রকৃত ‘প্লেয়াররা’ হলো মুষ্টিমেয়
দেশি-বিদেশি শাসক-শোষক এবং তাদের স্বার্থরক্ষাকারী দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রী, শীর্ষ রাষ্ট্রীয়
কর্মকর্তা প্রমুখ। ১৬ কোটি ‘পাবলিক’ হয়ে আছে গ্যালারির
দর্শক।
শাসক-শোষকরা ‘পাবলিক’ তথা জনগণকে গ্যালারি
থেকে নেমে মাঠের খেলোয়াড় হতে দিতে চায় না। কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে
হলে জনগণকে আর গ্যালারির দর্শক হয়ে শুধু জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদ করে দিন কাটালে চলবে
না। ১৬ কোটি দেশবাসীকে এখন দর্শকের গ্যালারি থেকে উঠে এসে ‘প্লেয়ার’ হয়ে মাঠে নামতে হবে।
তবেই প্রকৃত গণতন্ত্রের সত্যিকার রূপায়ণের পথ তৈরি সম্ভব হতে পারে। তাই দেশের ১৬
কোটি মানুষকে উদ্দেশ করে বলব - ‘জাগো বাহে! কোনঠে সবাই!!’
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম
সেলিম : সভাপতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
(২০
আগস্ট ২০১৭ ইং তারিখ আমাদের সুময় পত্রিকায় প্রকাশিত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন