পেরুর গণযুদ্ধে নারী
গণযুদ্ধে
মেয়েরা সমভূমিকা পালন করছে, সে যুদ্ধের ধারণা আপনাকে আকস্মিক অভিভূত করবে।
এক যুবতী কিষাণ তার চেহারায় ফুটে উঠছে বহুদিনের ক্রোধ, যন্ত্রণা আর
দারিদ্রের বিরক্তি। বুক-আড়াআড়ি রাইফেল রাখার কায়দায় প্রকাশ পাচ্ছে ওর মনের
দৃঢ়তা। সে বিশ্বাসে অটল; গর্বোন্নত তার শির। পেরুর গণযুদ্ধে মেয়েদের
ভূমিকা আপনাকে নাড়া দেবে যে কোনভাবেই- অত্যাচারী অত্যাচারিত আপনি যাই হোন
না কেন।
অত্যাচারী শাসকদের জন্য এ যুদ্ধ আতঙ্কজনক। ধারণার বাহিরে এ যুদ্ধের কৌশল।
নারীদের
ভূমিকা সকল সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে গেছে। নারীসুলভ ভীরুতার হয়েছে উৎপাটন। ওরা
এখন শোষক শ্রেণির জন্য ভয়াবহ। বন্দুকধারী নারীরা মার্কসবাদী মন্ত্রে
উদ্বুদ্ধ। ওরা এখন আকাংখা ও লক্ষ্যের চেয়েও অকল্পনীয় ও দুর্দান্তভাবে
এগিয়ে যাচ্ছে। নির্যাতিত-নিপীড়িতদের দলে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। আর
মেয়েরা পালন করছে সর্বঅগ্রণী ভূমিকা। নেপাল-ফিলিপিনস-ভারতের
অন্ধ্র্র-দন্ডকারণ্য-বিহার ও আমাদের দেশের নারীরাও এ সংগ্রামের অংশীদার।
ওরা আমাদের মতোই। আমাদের রক্ত, ঘাম ও কান্নার সাথী। শুধু বেঁচে থাকার
প্রশ্ন নয়, বরং ওরা নতুন বিপ্লবী দিনের উন্মোচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পেরুর
এ মেয়েরা উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা। যেখানে ধনী-গরীবের কোন বৈষম্য
নেই। যেখানে মেয়েদের প্রতি কুকুরের মতো আচরণ করা হয় না। আর মেয়েরা তাদের
কর্মকা-ে প্রমাণ করছে ভবিষ্যত সর্বহারাদেরই নিয়ন্ত্রণে। সহযোদ্ধা হিসেবে
ওরা পুরুষদের মতোই সকল ঝুঁকির মোকাবেলা করছে। পৃথিবীর সকল প্রান্তে
বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে আন্তরিক সহযোগিতা করছে। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি
পরিচালিত পেরুর গণযুদ্ধ নারীমুক্তির প্রশ্নে অনমনীয় ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নারী
নির্যাতনের বিরোধিতা এ সংগ্রামের সার্বিক কর্মসূচির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
(কৌশল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য)। এ বিপ্লব যে প্রেক্ষিতে সকলের কাছে বিখ্যাত তার
মধ্যে একটি বিষয়বস্তু হলো- যুদ্ধের সূচনাকাল থেকেই মেয়েদের সক্রিয় ভূমিকা ও
নেতৃত্ব যা সর্বজনজ্ঞাত ও স্বীকৃত। বিপ্লবী নেতা মাও সেতুঙ “মেয়েরা
আকাশের অর্ধেক ধরে রেখেছে,” (“Women hold up half of the sky”) এই উক্তির
মাধ্যমে যে কথা বুঝাতে চেয়েছেন এগুলো হচ্ছে তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। কেন আজ
হাজার হাজার পেরুবাসী নারী গণযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে? চলমান শাসন ব্যবস্থাকে
ভাঙতে হবে- এ ধারণা বদ্ধমূল। সমাজ ব্যবস্থাকে নিম্নধাপ থেকে উপরিধাপ
পর্যন্ত পুনর্নির্মাণের জন্য শাসন ব্যবস্থার বিবর্তন অপরিহার্য। ওরা এমন
একটি সংগ্রামে লিপ্ত যে সংগ্রামের লক্ষ হ’ল বর্তমান শ্রেণি বিভক্ত সমাজ
ব্যবস্থায় সর্ব বিষয়ে, সর্বস্থানে পুরুষদের পদতলে তাদের ঘৃণিত বর্তমান
অবস্থান ও কঠোর নিয়মের উচ্ছেদ করা। করুণা নির্ভর সংস্কারে বিশ্বাসী নয়।
অবদমিত জীবন কিংবা মরণ ওরা চায় না।
ওরা জানে গণযুদ্ধ শাইনিং পাথের (Shining path)* গণমুক্তি
বাহিনীর সেনা কর্তৃক লাঞ্ছিতা হবে না। নারী অথবা জাতিগত কারণে তাদের
যুদ্ধে যোগদানে কোন বাধা নেই। বরং তারা বিপ্লব বিষয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক
প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের হাতে বন্দুক তুলে দেয়। যে সমাজ ব্যবস্থায় জন্মের পর
থেকে তাদের অবস্থান ছিল ঘৃণিত সেই সমাজ ব্যবস্থায় পদাঘাত করে ওরা গড়ে উঠবে
আস্থাশীল নেত্রী ও যোদ্ধা হিসাবে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যারা
সকল ধরনের নিগ্রহ মুক্ত নতুন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন, পেরুর বিপ্লবী
মেয়েদের দৃষ্টান্ত থেকে তারা মনোবল অর্জন করতে পারেন। হতে পারেন
তেজোদীপ্ত। কারণ ওরা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চলতি সকল সংগ্রামের
সাথী, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে। অত্যাচারমুক্ত এক
উজ্জ্বলতর ভবিষ্যত ওদের স্বপ্ন। নিম্নবর্ণিত দৃশ্যপটে ফুটে উঠেছে পেরুর
বিপ্লবী ধারা, বিবৃত হয়েছে গণযুদ্ধে নারীদের শক্তিমত্তা। কেমন করে ওরা খান
খান করে ছিঁড়ছে নারী নির্যাতনের সকল শেকল।
গ্রামে-গঞ্জে নারী গেরিলা যোদ্ধারা
কোন
কোন “গণ গেরিলা বাহিনী” অধিকাংশই মেয়েদের নিয়ে গঠিত। যেখানে রাজনৈতিক
নেতৃত্ব ও সামরিক নির্দেশনায় মেয়েরাই প্রাধান্যে। যে দেশে সামন্ত প্রভু ও
তাদের জুলুমবাজ গু-াবাহিনী মাঝে মাঝেই কৃষাণ মেয়েদের উপর বলাৎকার করে, সেই
কৃষাণ নারীদের বিপ্লবী উথানে নারী দলনকারী সামন্ত প্রথা এখন এক বজ্র কঠিন
হুমকির সম্মুখীন।
পেরুর গ্রাম এলাকায় চলছে বিপ্লবীদের সম্মেলন
প্রস্তুতি। সাম্যবাদী কাস্তে- হাতুড়ী খচিত লাল পতাকা আর ফেষ্টুন উচানো হাতে
মেয়েরা চলছে জোর কদমে। একজন নারীর নেতৃত্বে গ্রামে ফিরছে বিপ্লবী
শ্লোগানে মুখরিত জনতা- “পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি)- জিন্দাবাদ!”
“পেরুর গণ গেরিলা বাহিনী জিন্দাবাদ!”
এক যুবতি কন্যা, মাথায় ওর সাহেবী
টুপি, পরনে স্বচ্ছন্দ চলার মতো নীল জিন্স, সংগ্রামী সাথীদের নিয়ে বসা
অবস্থায় ক্রোড়ে তার আবদ্ধ বন্দুক। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত- “গণ গেরিলা
বাহিনীর একজন যোদ্ধা হিসাবে আমি গর্বিত ও বিপ্লবের জন্য আমি জীবন দিতে
প্রস্তুত। আর সারা দেশব্যাপী যে ক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি তা রক্ষা করতে
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
আয়াকুচোতে* চলছে আর এক সম্মেলনের প্রস্তুতি। এখানে
গণযুদ্ধ শক্তি অর্জন করে চলেছে। এক বিশেষ বিজয় উদ্যাপনের জন্য কৃষকরা
একত্র হয়েছে। বন্দুক সজ্জিত এক যুবতী মেয়ে জনতার ভীড় ঠেলে সামনে বেরিয়ে
আসে।
তার টুপির অগ্রভাগে খচিত এক ফুল। পিঠে বাঁধা ওর কম্বল ও খাদ্য
সামগ্রী। মুখে তার অনিশ্চয়তার অভিব্যক্তি; ক্রমান্বয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে
ওঠে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাতের উদ্দেশে সে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে
বলতে থাকে-
“আজ আমরা জনগণের প্রকাশ্য গণকমিটির (Open Peoples Committee)
ঘোষণা দিচ্ছি। …………………….বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত! আমাদের কী আছে? কিছুই না। কী
আমাদের অভাব? সবকিছুরই। ধনী সম্প্রদায় বর্জিত এক নতুন সমাজ আমাদের কাম্য।
………………আমরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ রক্ষা ও প্রয়োগের মাধ্যমে উজ্জ্বল চলার পথ সৃষ্টি করবো…………।”
বীরত্বের দিনে আত্মবলিদানকারী পেরুর নারীরা
১৯৮৬-এর
১৯ জুন ছিল এক বীরত্বের ও সাহসিকতার দিন। এই দিনে পেরুর বিপ্লবী জেল
বন্দীদের এক সাহসী উত্থান সরকার চালিত বর্বরোচিত ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়।
লিমার নিকটবর্তী তিনটি জেলখানায় যুদ্ধ বন্দীরা সরকারি এক গণহত্যার
ষড়যন্ত্রকে বাধা দেয়ার উদ্দেশে এ অভ্যুত্থান ঘটায়। ওরা প্রচুর পরিমাণ
অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রহরী ও জেলখানাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং দাবি
জানায় সরকার যেন বন্দীদের জীবনের নিরাপত্তা চুক্তিটি ভঙ্গ না করে।
গণযুদ্ধকে আরও গতিশীল করার জন্য ওরা দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করে।
ফ্রন্টন
দ্বীপের এক জেলখানায় বন্দীরা প্রধানত দেশি অস্ত্রশস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র, তীর ও
অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সরকারি নৌ ও হেলিকপ্টারের ভয়ানক গোলাগুলির
আক্রমণকে ২০ ঘণ্টা অবধি ঠেকিয়ে রাখে। কেল্লাওর মেয়েদের জেলখানায় ৭৫ জন
বন্দীর মধ্যে ২ জনকে হত্যা ও ৬ জনকে প্রচ- প্রহার করা হয়। পেরুর কমিউনিস্ট
পার্টির সদস্য ও সমর্থক হওয়ার অপরাধে লুরিগাঞ্চা জেলখানায় ১৩৫ জন বন্দীর
সকলকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে সরকারি ফ্যাসিস্ট বাহিনী
বন্দী করে ঠান্ডা মস্তিষ্কে হত্যা করে। ফ্রন্টনে কমপক্ষে ১১৫ জন বিপ্লবীকে
হত্যা করে।
এক বছর পরে ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি
নিম্নলিখিত বক্তব্য দিয়ে এ বীরত্বের দিনটিকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে, “ওরা
কখনো মাথা নত করেনি। ওরা অসীম বীরত্বের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে শেষ পর্যন্ত
যুদ্ধ চালিয়ে যায়। আর তাদের জীবন-পণ যুদ্ধ পেরুর পুরনো ঘুণে ধরা সমাজকে
যুদ্ধের উজ্জ্বল কেন্দ্রে পরিণত করে। সমাধির অন্তরাল থেকে ওরা বিজয় অর্জন
করে চলেছে। কারণ ওরা চঞ্চল, আমাদেরই মত নব নব বিজয়ে মণ্ডিত। ওদের সতেজ ও
স্থায়ী অস্তিত্বে বিষয়টি কল্পনা করুন; ওরা জ্বলছে। বর্তমান-ভবিষ্যত ও
চিরকালের জন্য এই মহান শহীদ বিপ্লবীরা আমাদের কাছে শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে
থাকবে। আমরা যেন ওদের মতই পার্টি-বিপ্লব-জনগণের জন্যই জীবন উৎসর্গ করতে
পারি।”
পেরুর চলমান সংগ্রামে বন্দী বিপ্লবী মেয়েরা এক বীরত্বগাথা ভূমিকা
পালন করে চলেছে। বিপ্লবের সাথে একাত্ম এ মেয়েদের উপর শাসকগোষ্ঠী চালাচ্ছে
কঠোর নির্যাতন। একদিনই ওরা ৬০০ জন নারীকে ঘেরাও করে জেলে নিক্ষেপ করেছে ।
কিন্তু সরকার নারী যোদ্ধাদের বিপ্লবী চেতনার অবসান ঘটাতে পারেনি। জেল
বন্দী নারীরা কোন মতেই আত্মসমর্পণ করেনি। বরং ওরা বিপ্লবী চেতনা ও সংকল্পে
আরও বলিয়ান হয়েছে। জেল অভ্যন্তরে ফ্যাসিস্টদের হিংস্র নির্যাতনকে উপেক্ষা
করে ভবিষ্যত সংগ্রামের লক্ষে চালিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতা।
কারাগার পরিণত হয়েছে বিপ্লবীদের বিশ্রামাগার এবং শিক্ষাকেন্দ্রে।
সাথী
পুরুষ যোদ্ধাদের মত হাজার হাজার জেলবন্দী মেয়েরা জেলখানাগুলোকে “যুদ্ধের
নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে” পরিণত করেছে। শাসকদের নির্যাতনে ওরা
পরাজিত-অধঃপতিত কিংবা ভেঙ্গে পড়েনি। বরং আরও হয়ে উঠেছে বিপ্লব নিবেদিতা,
চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশুনা, আঁকড়ে ধরছে সঠিক বিপ্লবী পথ। এভাবে বন্দী নারী
বিপ্লবীরা পেরু ও সারা বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের সহায়তা
করছে। ভয়ঙ্কর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে
ওরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিপ্লবী সংগ্রামে জীবন-মরণ পণ
প্রায়
দেড় যুগ ধরে পেরুতে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। শুরু থেকেই এ মুক্তিযুদ্ধে
বিপ্লবী যোদ্ধা ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নারীদের প্রায় অর্ধ সংগঠন-শক্তি
রয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনী অনেক নারীকে হত্যা করেছে। শাসকগোষ্ঠী
বন্দী করেছে অনেক মেয়েকে। অসংখ্য নারীকে বন্দীশালায় অত্যাচার-নির্যাতনের
পর হত্যা করা হয়েছে- গুম করা হয়েছে। বিপ্লবী যুদ্ধে নজিরবিহীন
আত্মবলিদানের জন্য আজ ওরা স্মৃতিতে ভাস্বর ও সম্মানিত।
এদের মধ্যে বীর
নারী শহীদ এদিথ লাগোস অন্যতম। ১৯৮২-এর দিকে এই মেয়েটি ছিল ১৯ বছরের নবীন
গেরিলাযোদ্ধা। সে আয়াকুচো জেলখানায় গোপন গর্ত খননের কাজে একটি ছোট গেরিলা
দলের নেতৃত্ব দেয়। এই গেরিলা দল সকল বন্দী বিপ্লবীদের মুক্ত করে নিরাপদে
ফিরে আসে। এই ঘাঁটি থেকে বহু সরকারি অস্ত্রশস্ত্র দখল হয়। পরবর্তীতে এদিথ
লাগোস পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। শাসকশ্রেণি তাদেরই সৃষ্ট আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়ে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
বিপ্লবী
কর্মকাণ্ডের জন্য এদিথ লাগোস আয়াকুচোতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তার
মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য শেষকৃত্যানুষ্ঠানে জনতার সমাবেশকে সরকার বেআইনী
ঘোষণা করে। তবুও ৭০,০০০ জনপদ অধ্যুষিত আয়াকুচোর ৩০,০০০ লোক এদিথের
বিদায়ের শোক মিছিলে যোগদান করেন। শুধু পেরুতেই নয়- এদিথ লাগোস বিশ্বব্যাপী
বিপ্লবীদের আদর্শের প্রতীকে পরিণত হন। ’৯২ সালে জার্মানির তরুণ বিপ্লবীরা
এদিথ লগোস গ্রুপ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। বিভিন্ন দেশে বিপ্লবী কবিতা
গানে এদিথ লাগোসের বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়েছে।
আর এক মহান বিপ্লবী নারী
যোদ্ধা হচ্ছেন লোরা জ্যাম্বানো পাছিলা নামে একজন স্কুল শিক্ষিকা। যিনি
মিচি নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৮৪ সালে তাকে বন্দী করে ১০ বছরের সাজা দেয়া
হয়। শাসকগোষ্ঠী মিচি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে রাজধানী লিমা অঞ্চলে পার্টি
সংগঠনে রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য।
১৯৮১ সালের মার্চে জারিকৃত তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী ৪৬ ধারা অনুসারে তাকে
দোষী বলে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রেসিডেন্ট এই অধ্যাদেশ বলে পেরুর কমিউনিস্ট
পার্টি (পিসিপি)-কে বেআইনী ঘোষণা করে। তারা সন্ত্রাস শব্দটির একটি আইনগত
সংজ্ঞা প্রদান করে- যার অর্থ হ’ল, পিসিপি চালিত সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে
যেকোন মন্তব্যই সন্ত্রাসের আওতাধীন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত “বিশ্ব বিজয়” (A
World to win- AWTW) পত্রিকায় ১৯৮৫ সালে মিচি’র একটি বিবৃতি প্রকাশিত
হয়েছিল। সে বিবৃতিতে মিচি বিশ্ববাসীকে বলেছিলেন- “যে পুরনো ঘুণে ধরা
শোষণনীতি, অত্যাচারী আইন ও বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে তা এই রাষ্ট্র
ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিবিপ্লবী বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরেছে। এমনকি এই আইনী
ব্যবস্থার অন্ধ ও অমানবিক খুঁটিনাটি দিকগুলোকেও নগ্নভাবে প্রকাশ করে
দিয়েছে। কিন্তু আইনের নামে এই কশাইখানার শাস্তি ও শোষণ নীতি বিপ্লবীদের
দমন করতে পারেনি। ওরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং বিপ্লবী সংগ্রামের মধ্য
দিয়ে সকল কালাকানুন প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০ জুলাই দু’জন মহিলা পুলিশ
আমাকে আটক করে। ২৩ জুলাই পর্যন্ত সিভিল গার্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকি। সে
কয়দিন প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাকে সকল ধরনের নির্যাতন চালায়। ওরা আমার সকল
মনোবল চুরমার করে দিতে চেষ্টা করে। মিথ্যা স্বীকারোক্তির জন্য আমার উপর
অত্যাচার চালায়। সবচেয়ে জঘন্য ও বিকৃত নির্যাতনের মাধ্যমে আমার বিপ্লবী
নৈতিকতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমাকে সন্ত্রাস দমনকারী
পুলিশ বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়। যেখানে ৪ আগষ্ট শনিবার পর্যন্ত আমাকে তাদের
মাটির নিচে কারাকক্ষে থাকতে হয়। আমাকে তিন ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
(১)
মানসিক নির্যাতন- যাতে ছিল নিদ্রাহীন ও বিশ্রামহীন অবস্থায় একনাগাড়ে
চারদিন দাঁড়িয়ে থাকা, সর্বক্ষণ প্রহরীর দৃষ্টির আওতায় আতঙ্কিত ও নির্যাতিত
অবস্থায়।
(২)
এভাবে ওদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলে, আমার দেহের বিভিন্ন অংশ পিটাতে আরম্ভ
করে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনী, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে।
(৩)
তারপর পিঠ মুড়ে হাত বেঁধে আমাকে শিকল দিয়ে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আর
আমার সর্ব অঙ্গে চলতে থাকে প্রহার। তারপর এসিড কিংবা পায়খানার মলের মধ্যে
ডুবিয়ে রাখা হয়। কারণ ওরা আমাকে শারীরিকভাবে ধ্বংস করে দিতে চেষ্টা করে।
রক্তপাত ঘটিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিপ্লবকে ধ্বংস করার স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু যতই রক্তপাত ঘটছে বিপ্লব ততই তীব্র হচ্ছে। ঝরে যাওয়া রক্তে বিপ্লব
তলিয়ে যায় না বরং ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রতিক্রিয়াশীল হায়েনার দল জনগণের লাশ
খাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রামের লেলিহান শিখা তাদের পুড়িয়ে
ছাই ভস্মে পরিণত করবে। আমাদের লক্ষ্য পৃথিবীকে পরিবর্তন করা। নয়া বিশ্ব
পুরনো দুনিয়াকে পরাজিত করবেই।”
জেল অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস
স্থানঃ ক্যান্টোগ্র্যান্ডে
সময়ঃ মার্চ, ১৯৯২
লিমার
(লিমা পেরুর রাজধানী- অনু) অন্যতম কারাগার। কঠোরতম বেষ্টনীতে আবদ্ধ
বিপ্লবী কারাবন্দী মেয়েরা এখানে সুশৃংখল ও সংগঠিত। ওরা নিজেরাই খাবার
রান্না করে এবং নিজেরাই পরিবেশন করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, রাজনৈতিক
পড়াশুনা করে, ভলিবল-বাস্কেটবল খেলে। বন্দীদের বাসগৃহের দেয়ালে দেয়ালে হাতে
আঁকা মার্কস-এঙ্গেলস, লেনিন ও মাও-এর ছবি। কারাগার অঙ্গনের প্রশস্ত দেয়াল
গণযুদ্ধ ও পার্টি নেতার বিচিত্র রঙ্গে অসংখ্য চিত্রে সজ্জিত।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবসে নারী বন্দীরা একটি তেজোদীপ্ত ও বিস্তারিত কর্মসূচির পরিকল্পনা ও
তা বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। বন্দীরা দীর্ঘ সারি বেঁধে নিজ
নিজ হাতে তৈরি কালো প্যান্ট ও সবুজ খাকি শার্ট ও মাও-টুপি লাগিয়ে উন্নত
শিরে কুচকাওয়াজের তালে তালে কারাগার প্রদক্ষিণ করে। হাতে ওদের বড় বড় লাল
পতাকা, আর কুচকাওয়াজের তালে তালে প্রত্যেকের হাতেই আন্দোলিত হচ্ছে লাল
রূমাল। ওরা বহন করছে পার্টি-নেতার বৃহদাকার প্রতিকৃতি (ছবি)।
বাদ্যের
তালে তালে বন্দীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল বিপ্লবী গণসঙ্গীত। কারাগারের
উঁচু দেয়াল ডিঙ্গিয়ে সেই বলিষ্ঠ কণ্ঠের সঙ্গীত ধ্বনি- বিপ্লবী যোদ্ধা ও
অগ্রণী জনতা, ক্ষুধা ও শোষণের বিরুদ্ধে আমাদের এ সশস্ত্র সংগ্রাম। আমরা
মানব জাতির শত্রু সাম্রাজ্যবাদকে উৎখাত করবোই, বিজয় আজ জনতার, বিজয় আজ
অস্ত্রের, বিজয় আজ গণ নারী আন্দোলনের। ……………আমরা আলোকজ্জ্বল পথের অনুসারী,
শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাবো, নতি স্বীকার না করার প্রশ্নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
ওরা
ব্যঙ্গ রচনা পঠন ও নারী মুক্তি সম্পর্কে মার্কস-লেনিন-মাওয়ের উদ্ধৃতি
প্রদর্শন করে হাতে তৈরি কাঠের বন্দুক উঁচিয়ে ধরে ওরা মাও সেতুঙ ও চীনে
সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের সঙ্গীত পরিবেশন করে।
কারাবন্দী মেয়েদের এক প্রতিনিধি বলেন, আমরা হলাম যুদ্ধ বন্দী। গণ গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধাদের মত আমরা তিনটি কাজ করি- (১) সরকারের বন্দী গণহত্যার নীল নক্সার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম; (২) জেল বন্দীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম এবং (৩)
মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী আদর্শিক রাজনীতিতে সজ্জিত হওয়ার জন্য
সংগ্রাম। আমরা সর্বদাই আত্মনির্ভরশীল হতে চেষ্টা করি যাতে জনগণের ওপর বোঝা
না হয়ে পড়ি।
ক্যান্টোগ্র্যান্ডের বীর সন্তানগণ
আন্তর্জাতিক
নারী দিবসের দু’মাস পর ১৯৯২ সালের মে মাসের ৬ তারিখে পেরুর খুনী সরকারি
বাহিনী ক্যান্টোগ্রান্ডে জেলখানায় ৫০০ বিপ্লবী জেল বন্দীকে আক্রমণ করে।
সারা দুনিয়ার মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের ঐক্যের কেন্দ্র বিপ্লবী
আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন (আর আই এম) কমিটির এক বিবৃতি থেকে এ সম্পর্কে
জানা যায়।
যে দু’টি জেলখানায় মেয়ে ও ছেলে বিপ্লবীরা বসবাস করতো সরকারি
বাহিনী তা অবরোধ করে রাখে। ফলে বন্দীরা খুবই সতর্ক হয়ে পড়ে এবং গোপনে সারা
বিশ্বে প্রচার করে দিতে সক্ষম হয় যে, সরকারি বাহিনী জেলখানার নিয়ন্ত্রণ
পনুরুদ্ধারের জন্য বন্দী হত্যার ফন্দি আঁটছে। আর বিপ্লবী বন্দীদের পরস্পর
থেকে বিছিন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন জেলে বদলি করার চেষ্টা করছে।
এপ্রিল
মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পেরুর প্রেসিডেন্ট কুখ্যাত ফুজিমোরি,
সরকারের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ নিজ হাতে গ্রহণ করে। এজন্য দেশি-বিদেশি
পৃষ্টপোষকদের কাছে ফুজিমোরির নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করা এবং তার
বিরুদ্ধবাদীদের ছায়া দূর করার জন্য এমন একটা গণহত্যাযজ্ঞ প্রয়োজন ছিল।
ভারী
অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী ও পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাগণ ৬ মে মেয়েদের
জেলখানা ঘেরাও করে। তারা আশা করেছিল প্রথমে মেয়েদের এবং পরে ছেলেদের আটক
করবে। কিন্তু তা পারেনি। যে কারাগার ওরা তৈরি করেছিল সেই কারাগারই ওদের
রুখে দাঁড়াল। ঘন সিমেন্টের প্রলেপ দেয়া দেয়াল ও উঁচু ছাদের উপর দাঁড়িয়ে
মেয়েরা বন্দুক-গোলাগুলি-বিস্ফোরণ-ধোঁয়া, টিয়ার গ্যাস, জলকামানের বৃষ্টির
মধ্যেও যাদের কিঞ্চিত দেখা যাচ্ছিল- হাতের কাছে যার যা ছিল তাই
আক্রমণকারীদের
ছুঁড়ে মারল। বাড়িতে তৈরি গ্যাস মুখোশ পড়ে বন্দীরা প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে
গেলেন। এতে কমপক্ষে দু’জন পুলিশ নিহত হয়। যে দালানে পুরুষ বন্দীদের রাখা
হয়েছিল মেয়েরা সে দালান দখল করে ফেললো। তারপর মেয়ে পুরুষ উভয় মিলে ৯ মে
অবধি সংগ্রাম চালিয়ে পুলিশদের তাড়িয়ে দিল। অবশেষে আধ ঘণ্টা ব্যাপী এক
স্থায়ী যুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সম্ভাব্য সকল ভারী অস্ত্র কাজে লাগিয়ে
বিপ্লবীদের পরাজিত করলো।
১০ মে এক কুৎসিত বিজয় উৎসব পালনের উদ্দেশে
স্বয়ং খুনী ফুজিমোরিকে জেল পরিদর্শনে আনা হলো। ঘাড়ের পিছনে হাত মোড়া ও
অধঃমুখী অবস্থায় কারাবন্দীদের তার পেছনে দেখা গেলো। বেত ও মুগুর দিয়ে ওদের
প্রহার করা হলো, উন্মত্ত কুকুরগুলোকে বিপ্লবীদের দিকে লেলিয়ে দেয়া হলো।
তথাপিও দেখা গেল বন্দীরা বিপ্লবী সংগীত গেয়ে চলেছে।
ক্যান্টোগ্র্যান্ডিতে
৪০ জনেরও বেশি বন্দীকে হত্যা করা হয়; ১০০ জনেরও বেশি বন্দীকে আহত করা হয়।
যুদ্ধের পর বিপ্লবী নেতাদের অনেককে পৃথক করে ফাঁসির মঞ্চে চড়ানো হয়।
সংগ্রামী এলাকায় নতুন শক্তি ও নতুন মেয়েদের অবস্থান
পল্লী
অঞ্চলের ঘাঁটি এলাকাগুলোতে গণযুদ্ধে নতুন জনশক্তি গড়ে উঠেছে। জনগণ নতুন
নতুন সংগঠন, নতুন রেজিমেন্টে সংগঠিত এবং নতুন বিপ্লবী কর্মসূচি বাস্তবায়ন
করছে। মেয়েদের জীবনে এ কর্মসূচি প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলছে। নারী নির্যাতনের
মূলভিত্তি উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যাচ্ছে,
প্রতিটি বিষয়ে নারী ও পুরুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসছে। যার মধ্যে রয়েছে
সামাজিক সম্পদ ও সম্পর্কের কথা।
গণকমিটি নির্বাচিত হচ্ছে। তাদের
নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন সংস্কৃতি, বিচার ব্যবস্থা,
জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক। গণ প্রতিনিধিগণ এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
উন্নয়নের মাধ্যেমে পুরনো ঘুণে ধরা উৎপাদন ও বিনিময় সম্পর্ক উচ্ছেদ করে নতুন
পদ্ধতি চালু করেছে। অতীতে বড় বড় সামন্ত প্রভু ও মাদক ব্যবসায়ীদের
খবরদারীতে উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হ’ত। এখন গণযুদ্ধের অনুকূলে যৌথ
শ্রম ও আত্মনির্ভরশীলতার ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংঘটিত।
জমিদারদের জমি দখল করে ভূমিহীন ও গরীব চাষীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
জমি শুধু পরিবার প্রধান পুরুষের নামে দেয়া হয়নি, পরিবারের সকল সদস্যদের
নামে বরাদ্দ করা হয়। সম্পত্তির উপর মেয়েদের সমান অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ থাকে।
প্রত্যেক পরিবারকে ভিন্ন ভিন্ন জমি বরাদ্দ করা হলেও চাষাবাদ
ব্যবস্থা/পদ্ধতি পরিবার ভিত্তিক নয়। চাষের কাজ যৌথভাবে পরিচালিত হয়।
যেখানে সার্বিক সমাজ কল্যাণে সকলকেই অংশগ্রহণ করতে হয়। দাবি জানালে বিবাহ
বিচ্ছেদের অনুমতি প্রদান করা হয়। নারী ও সন্তানেরা স্বামী কিংবা পিতার
সম্পত্তি নয়। পিতা অথবা স্বামীর অনুমতি ছাড়াই মেয়েরা ইচ্ছা করলে গেরিলা
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে। গণকমিটিগুলো বেশ্যাবৃত্তি, মাদকাশক্তি, স্ত্রী
পিটানো বন্ধ করে দিয়েছে। বিধবা ও বয়স্করা সমাজের কাছ থেকে প্রয়োজনীয়
সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। শিক্ষা সুবিধা সকলের জন্য সহজলভ্য। সামন্ত ও
পুঁজিবাদী প্রথায় জবরদস্তিমূলকভাবে কৃষকদের যে অবস্থায় বাস করতে বাধ্য হতে
হতো- এসব ব্যবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
সংগ্রামী এলাকাগুলোতে
সর্বক্ষেত্রেই অভিনব রূপান্তর কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। এভাবেই
গণযুদ্ধ সমগ্র জাতির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পথকে প্রস্তুত করে দিচ্ছে।
১৯৮২
সালে এল কাল্লাওতে এক নারী বন্দীর সাক্ষাতকারে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা
বিপ্লবী কর্মকান্ডে মেয়েদের ভূমিকার গুরুত্বকে তুলে ধরে। লিলিয়ান টয়েছ
ছিলেন লিমার রাজপথের ফেরিওয়ালা। গণযুদ্ধে যোগদানের অপরাধে তাকে জেল বন্দী
করা হয়। তিনি বলেন, প্রথম যখন রো আমাকে পার্টিতে যোগদানের প্রস্তাব আনে,
তখন আমি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিন্তু পরিশেষে আমি যখন বুঝতে পারলাম,
আমি শুধু পেরুর জন্য যুদ্ধ করছি না, আমি যুদ্ধ করছি সারা বিশ্বকে শৃংখল
মুক্ত করার জন্য, বিশ্ববিপ্লবের জন্য। তখন আমি আতঙ্কমুক্ত হলাম। অবশেষে
বুঝলাম আমার বাঁচা-মরার কিছু উদ্দেশ্য আছে।
তখন আমি বাজারের সবজির মত
বেচাকেনা হতে অস্বীকার করলাম। এমনি ধারণায় সজ্জিত হয়ে অসংখ্য মেয়ে যোদ্ধা
বিপ্লবকে শক্তিশালী ও বিজয়মণ্ডিত করতে এগিয়ে আসছে।
শেষ করার আগে
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদে
সজ্জিত পেরুর নারী গেরিলারা গ্রাম ও শহর-কারাগার সর্বত্রই কাঁধে বন্দুক
হাতে লাল পতাকা নিয়ে শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
সামন্তবাদের সৃষ্ট পুরুষতন্ত্র ও ধর্মীয় সংস্কারের পুরনো সামাজিক
মূল্যবোধকে দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে ধ্বংস করে নতুন বিপ্লবী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার
সংগ্রাম এগিয়ে নিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় পেরুর নারী বিপ্লবীরা নয়া গণতন্ত্র ও
সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সকল প্রকার শোষণ উচ্ছেদ করবেই।
[নোটঃ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বিপ্লবী পত্রিকা- রেভ্যুলিউশনারী ওয়ার্কার, লন্ডন থেকে প্রকাশিত “বিশ্ব বিজয়” (AWTW) এবং বৃটেনের টিভি চ্যানেল ফোর কর্তৃক প্রচারিত পেরুর যুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল পত্র-পত্রিকা অবলম্বনে লিখিত।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন