Biplobi Barta

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭

শহীদ সঞ্জয় তলাপাত্র

শহীদ সঞ্জয় তলাপাত্র,ক্যাম্পাসের প্রমিথিউস
============================== 
শহীদ সঞ্জয় তলাপাত্র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় নাম।সঞ্জয়রা কোন দিন হারিয়ে যায় না। যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে সঞ্জয় তলাপাত্র'রা।তাঁদের স্মৃতি বেঁচে থাকে অনন্তকাল।
সঞ্জয় তলাপাত্র একমাত্র নিজের ইচ্ছায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। পাশাপাশি সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে যুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে।
১৯৯৮-এর আগস্টের আগেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন। ফলে সেই সময়ে প্রায় প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আর রেল স্টেশনে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। ২০ আগস্ট। সেদিন সকালে বটতলী স্টেশনে মিছিলের কোন কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার পূর্বে হঠাৎ শিবির কর্মীরা রড, লাঠি আর বাঁশ নিয়ে হামলা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।ফলে আহত হয় অনেক শিক্ষার্থী।
সেদিনের ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বটতলী স্টেশনে বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বড় মিছিল করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেদিনের হামলার সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ ছিল স্টেশনে মৌলবাদী ঘাতকদের দ্বারা সঞ্জয়ের মারাত্মক আহত হওয়া।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও সঞ্জয় খাতা আর তুলির ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সকালের শাটল ট্রেনে যেতে চেয়েছিল তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু মৌলবাদী চক্রের লাঠি আর রডের আঘাতে তাকে আর ক্যাম্পাসে পৌঁছতে দেয়নি। সঞ্জয় তলাপাত্রকে রক্তাক্ত অবস্থাতে নিয়ে যেতে হয়েছিলো হাসপাতালে।
কিন্তু দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ২২ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে সঞ্জয় চিরতরে চলে যায়।থমকে যায় সময়। থেমে যায় একটি প্রাণবন্ত জীবন।অনেক বেশি কষ্টের বিষয় ছিল সেদিনের ২২ আগস্ট ছিল সঞ্জয় তলাপাত্রে'র ২৪ তম জন্মদিন।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সঞ্জয়ের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছলে ১৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ক্ষোভে, ঘৃণায়, প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে আর আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বলেছিল মাগো তোমায় কথা দিলাম, সঞ্জয় হত্যার বদলা নেব।’ 'সঞ্জয়ের ক্যাম্পাসে খুনী শিবিরের ঠাঁই নেই'সঞ্জয়ের আত্মত্যাগ সেদিন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস শিখিয়েছিল। কারণ দীর্ঘ ১২ বছরের অবরুদ্ধ ক্যাম্পাসকে সেদিন মুক্ত করার শক্তি যোগায় সঞ্জয়ের মৃত্যু। ১৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর সম্মিলিত প্রতিরোধে সঞ্জয়ের হত্যাকারী ঘাতকরা সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
এখন ২০১৭ সাল। দীর্ঘ এই ১৯ বছরেও সঞ্জয় হত্যার কোনো বিচার হয়নি। কি অপরাধ ছিল সঞ্জয়ের? অন্যায়ের প্রতিবাদ? হত্যাকরীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। এই খুনী শিবিরের বিরুদ্ধে আমরা কি বা করতে পেরেছি? সঞ্জয়ের মা এখনো ছেলের জন্মদিনে পায়েস তৈরি করেন। ছোট বোন শান্তা তলাপাত্র নিঃশব্দে কাঁদে প্রিয় ভাইটির জন্য। আর বাবা সঞ্জয়ের রেখে যাওয়া সামান্য স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন।বার বার ভুলে যেতে চান সঞ্জয় নেই।
সঞ্জয় তলাপাত্র একটি অসাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসমুক্ত, শোষণহীন সমাজ চেয়েছিল। চেয়েছিল তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন না থাকে কোন দখলদারিত্বের রাজনীতি। কিন্তু শিবিরের ঘাতকরা ভয় পেয়ে সঞ্জয়কে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সঞ্জয়ের মৃত্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী মুক্ত করেছিল একযুগের অবরুদ্ধ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে।সঞ্জয় হত্যা সহ সকল ছাত্র হত্যার বিচার চাই। লাল সালাম কমরেড সঞ্জয় তলাপাত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন