আমাদের দেশে (বেসরকারী পর্যায়ে) চাকরী-সংক্রান্ত বিষয়াবলী বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০১৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শ্রম আইন শ্রম (Labour) সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে বিধান দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী, কর্ম ঘণ্টা ও ছুটি, মজুরী ও তা পরিশোধ, কল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রভৃতি।
শ্রম আইনে
মজুরীর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হল- টাকায় প্রকাশ করা যায় বা এমন সকল পারিশ্রমিক যা চাকরীর
শর্তাবলী- প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই হোক না কেন যা শ্রমিককে তাঁর চাকরীর জন্য প্রদেয় হয় [শ্রম আইন, ধারা ২(৪৫)]।
আবার আরেক
জায়গায় বলা হয়েছে- নিয়োগের শর্ত মোতাবেক প্রদেয় কোন বোনাস বা অন্য কোন অতিরিক্ত পারিশ্রমিকও
মুজুরীর অংশ (শ্রম আইন, ধারা ১২০)।
বোনাসঃ বোনাস বা ভাতা হল কোন কর্মীর জন্য তাঁর নিয়মিত মজুরীর অতিরিক্ত বাড়তি পাওনা। কোন
প্রতিষ্ঠান কোন উপলক্ষ বা উৎসব পালন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন (যেমন- উৎপাদন), সময়ানুগ উপস্থিতি, নিষ্ঠার সংগে কর্ম সম্পাদন প্রভৃতির জন্য
বোনাস দিতে পারে।
শ্রম আইনে
বোনাসঃ যেসব শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর হয়েছে তাঁরা
বছরে দুটি উৎসব ভাতা (বোনাস) পাবেন। প্রতিটি উৎসব ভাতার পরিমাণ মাসিক মূল মজুরীর অধিক হবেনা (শ্রম বিধি ১১১)।
মজুরী ও তা
পরিশোধের দায়িত্বঃ শ্রম আইনের বিধান মোতাবেক, মালিক (নিয়োগকর্তা) তাঁর নিযুক্ত প্রত্যেক শ্রমিককে (এই
আইনের অধীন পরিশোধযোগ্য) মজুরী পরিশোধ করতে
দায়বদ্ধ। আমাদের এখানকার শ্রম আইন অনুযায়ী, মুজুরী হতে হবে মাসিক ভিত্তিতে। আর এই
মাস শেষের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে (ধারা ১২৩)।
শ্রমিকের মজুরী
মাসিক কিংবা অন্য কোনভাবে পরিশোধ করা হবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে আগেই তা নোটিশ আকারে জানাতে হবে। একই সংগে কখন
তা পরিশোধ করা হবে তাও জানাতে
হবে।
একই নিয়ম
বোনাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
অনাদায়ে
প্রতিকারঃ শ্রম আইন অনুযায়ী মজুরী ও অনান্য পাওনাদি অনাদায়ে আপোষ-মীমাংসা, মধ্যস্থতার আবেদন এবং শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। একই বিধান বোনাস
পরিশোধ না হলেও প্রযোজ্য হবে।
কোন শ্রমিক
তাঁর পাওনা যথাসময়ে না পেলে কিংবা তা থেকে বে-আইনীভাবে কেটে রাখা হলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক তাঁর
নিয়োগকারীকে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি (যদি
থেকে) তা করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে নিয়োগকারীকে দাবী
পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে (শ্রম বিধি ১১৩)।
এভাবে কোন ফল
না পেলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শকের কাছে
লিখিতভাবে আবেদন করা যাবে।
এইক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপসহ নিষ্পত্তির সময়সীমা ৫০ দিন (২০ + ৩০ দিন)। এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে বা
গৃহীত সিদ্ধান্ত কোন পক্ষ না মানতে চাইলে ছয় মাসের মধ্যে তারা শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
লেখক: শ্রম আইন
বিশেষজ্ঞ এবং এডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ।
(মতামত লেখকের নিজস্ব, এর সঙ্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতার কোন সম্পর্ক
নেই)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন