ব্রিটিশ
বিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু একটি ইতিহাস । সম্ভবত তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের
সর্ব কনিষ্ঠ বিপ্লবী । দেশ থেকে ব্রিটিশ হঠাও আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিনি হাসি মুখে
ফাঁসীর মঞ্চে গিয়ে দাড়িয়েছিলেন । তাঁর এই আত্মত্যাগ ভারত বর্ষকে স্বাধীনতা
লাভে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছিল। তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তীর মহা নায়ক । তাঁকে
নিয়ে রচিত হয়েছিল গান , সিনেমা ।একবার
বিদায় দে মা ঘুরে আসিগানটি এখনো মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে যায় ।
বিপ্লবী
ক্ষুদিরাম বসু ৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯ পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর জেলাশহরে কাছাকাছি হাবিবপুর
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ আগস্ট ১৯০৮ফাঁসি হয় । তাঁর পিতা ত্রৈলকানাথ বসু ছিল নাদাজল
প্রদেশের শহরে আয় এজেন্ট। তার মা লক্ষীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি
তার মায়েরচ তুর্থ সন্তান।তার দুই পুত্র আগেই মৃত্যুবরণ করেন।অপর পূত্রের
মৃত্যুর আশংকায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়
বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের (শস্যের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের
বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম রাখা হয়।ক্ষুদিরাম বসু পরবর্তিতে তার বড়
বোনের কাছেই বড়
হন।বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়
হয় বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে। সত্যেন্দ্রনাথ তাকে সে যুগের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ
বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন ‘যুগান্তর’
দলের সদস্য করে নেন। এই দল সুসংগঠিত করার
লক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ এক তাঁতশালা স্থাপন করেছিলেন। তাঁতশালার আড়ালে তিনি
তাঁর শিষ্যদের লাঠিখেলা, অসি
চালনা, বোমা ফাটানো, পিস্তল, বন্দুক ছোড়াইত্যাদি শিক্ষা দিতেন।অচিরেই এই তাঁতশালার দক্ষ সদস্য
হয়ে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম। তখনই বোনের বাড়ির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় চিরদিনের জন্য।
১৯০৬
সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেদিনীপুরের মারাঠা কেল্লায় এক শিল্প প্রদর্শনী হয়। সেখানে সেই
যুগের বিখ্যাত
রাজদ্রোহমূলক পত্রিকা সোনার বাংলা বিলি করার দায়ে পুলিশ ক্ষুদিরামকে ধরতে গেলে তিনি পুলিশকে
আঘাত করে পালিয়ে যান।১৯০৭ সালে বিপ্লবী দলের অর্থের প্রয়োজনে ক্ষুদিরাম এক ডাক
হরকরার কাছ থেকে মেইলব্যাগ ছিনিয়ে নেন। সে সময় বিপ্লবীদের রাজদ্রোহ মামলায়
কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট
কিংসফোর্ড মরিয়া হয়ে ওঠেন।
ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূলে
কাঁপন ধরাতে বিপ্লবীরা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেন কিংসফোর্ডকে হত্যা করার। যথাসময় এ
দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। আর তার সহযোগী করা হয় রংপুরের আরেক যুবক
বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে। বিপ্লবীদের সম্ভাব্য আক্রমণ এড়াতে কিংস ফোর্ডকে
বদলি করা হয় মজফফরপুরে। জীবনের কঠিন ব্রত পালন করতে তারাও রওনা দিলেন
মজফফরপুর। দুজনে আশ্রয় নিলেন কিংসফোর্ডের বাসভবনের পাশের একটি হোটেলে। সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কিংসফোর্ডের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন। কিংসফোর্ডের
বাসভবনের পাশেই ইউরোপিয়ান ক্লাব। অফিস আর ক্লাব ছাড়া কিংসফোর্ড বাইরে
যেতেন না।
১৯০৮
সালের ৩০ এপ্রিল।
বাইরে আগে থেকেই দুই বিপ্লবী প্রস্তুত ছিলেন। গাড়িটি ফটক পার হতে না হতেই প্রচণ্ড
শব্দে পুরো শহর কাঁপিয়ে একটি বোমা বিস্ফোরিত হলো। কেনেডির
স্ত্রী ও তার মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।
বিধ্বস্ত গাড়িটি এক পাশে উল্টে পড়ে। যাকে হত্যার জন্য বোমার বিস্ফোরণ,সেই কিংসফোর্ডের গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় মাত্র কয়েক হাত দূরে
দাঁড়িয়ে।বোমা নিক্ষেপ করেই দুই বিপ্লবী ছুটলেন দুই দিকে। পরদিন সকালে ওয়াইসি রেলস্টেশনে
পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ক্ষুদিরাম। ওদিকে প্রফুল্ল চাকীও পুলিশের হাতে ধরা
পড়তেই নিজের
পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করলেন।ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা
শহর যেন মুহূর্তে
ভেঙে পড়ল। পুলিশবেষ্টিত ক্ষুদিরামকে একনজর দেখতে হাজারো লোক ভিড় জমাল ওয়াইসি
রেলস্টেশনে। উৎসুক জনতার উদ্দেশে ক্ষুদিরামের কণ্ঠে তখন ধ্বনিত হলো বজ্রনিনাদ
বন্দেমাতরম…!অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ
এই তরুণ বিপ্লবীকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার অনেকটা বিপাকেই পড়ে যায়। যত দিন যাচ্ছিল,
সারা ভারতে ক্ষুদিরামকে নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা
তৈরি হচ্ছিল।ব্রিটিশের মাথা থেকে সেই বোঝা নেমে যায় সেদিন, যেদিন মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ৩০২
ধারা মোতাবেক ক্ষুদিরামের
মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ক্ষুদিরামকে তারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সেই রায় কার্যকর করেছিল
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ।
আজকের এই দিনে এই মহান বিপ্লবীর প্রতি অজস্র
শ্রদ্ধাঞ্জলী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন