Biplobi Barta

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭

‘রাজ্যলোভে হয়ো না ভ্রষ্ট ন্যায়ধর্ম হতে’


কেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
=================================================================================
রাজনীতিতে জয়-পরাজয় সম্পর্কে বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তা উদয় হওয়ায় আজ কলম ধরেছি। মনে পড়ে গেল ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র বিজয়ের কথা। সেবার কুমিল্লার দাউদকান্দি আসন থেকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করা হয়েছিল খন্দকার মোশতাককে। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, মোশতাক এবার জাসদের প্রার্থী রশিদ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পরাজিত হতে চলেছেন। এই আসনের ফলাফল ঘোষণা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক পরে, একেবারে শেষের দিকে ঢাকার নির্বাচন কমিশন দপ্তর থেকে মোশতাককে ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করা হয়েছিল। সবাই বুঝতে পেরেছিল, ভোট গণনায় কারচুপি করে মোশতাককে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেবার এভাবেই দাউদকান্দির আসনটিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু এই বিজয় কি সত্যিই আওয়ামী লীগের জন্য বিজয় ছিল? সেই বিজয়ী খুনি মোশতাকই তার সেই কলঙ্কিত বিজয়ের দুবছর যেতে না যেতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এ কথা তাই মনে রাখা প্রয়োজন যে, সব বিজয়ই বিজয় নয়। কিছু কিছু বিজয় পরাজয়ের চেয়েও কালিমালিপ্ত, গ্লানিকর ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
তেমনিভাবে এ কথাও আবার ঠিক যে, অনেক ‘পরাজয়’ বিজয়ের চেয়েও মূল্যবান ও গর্বের বিষয় হয়ে ওঠে। কিউবার বিপ্লবের অন্যতম স্বপ্নপুরুষ চে গুয়েভারা সিআইএ এজেন্ট ও বলিভিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তার ‘পরাজয়’ হয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক-রাষ্ট্র ‘প্যারি কমিউন’কে ৭০ দিনের মাথায় ‘পরাজয়’ বরণ করতে হয়েছিল। কিন্তু এ কথা কি সত্য নয় যে, এসব ‘পরাজয়’ ছিল অনেক বড়-বড় বিজয়ের চেয়ে মহৎ অর্জন? রাজনীতিতে তাই সব ‘বিজয়’ই বিজয় নয়। আবার সব ‘পরাজয়’ই পরাজয় নয়।
রবীন্দ্রনাথের ‘কাহিনী’ কাব্যগ্রন্থের ‘কর্ণকুন্তীসংবাদ’ কাব্য রচনাটি আমাকে সব সময় আকর্ষণ করে। কর্ণ ছিলেন সূর্য দেবতার ঔরসে কুন্তীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান। লোকলাজ ভয়ে কুমারী কুন্তী তার সেই প্রথম সন্তানটিকে পরিত্যাগ করে পথে ফেলে এসেছিলেন। পরে কুন্তী পঞ্চ পা-বের জন্ম দেন। কর্ণের কাছে তার পিতৃ-মাতৃ পরিচয় অজ্ঞাত থেকে যায়। ঘটনাচক্রে কৌরবদের কাছ থেকে কর্ণ সহানুভূতি ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়। সে ছিল কুরুপক্ষের একজন শ্রেষ্ঠতম যোদ্ধা। রাজ্য নিয়ে কৌরবদের সঙ্গে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পা-বরা একপর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়লে কুন্তী কর্ণের সামনে উপস্থিত হয়ে তার জন্মপরিচয় উন্মোচন করেন। কর্ণকে কুরুপক্ষ ত্যাগ করে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে তার পাঁচ পা-ব ভাইদেরসহ রাজ্য অধিকার করে সিংহাসনে অধিষ্ঠান নেওয়ার জন্য কুন্তী কর্ণকে অনুরোধ করেন। বীরের ধর্ম ত্যাগ করে এরূপ কাজ করার প্রস্তাবটি কর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। কুন্তীর এই প্রস্তাব সম্পর্কে কর্ণের যে দৃঢ় বলিষ্ঠ জবাব তা দিয়ে কবিগুরু তার উল্লিখিত সেই কবিতাটির সমাপ্তি টেনেছেন। তার কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি। কুন্তীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কর্ণ তার সদ্য পরিচয় পাওয়া মাকে বলছেন-
‘সিংহাসন! যে ফিরালো মাতৃস্নেহ পাশ
তাহারে দিতেছ মাতঃ, রাজ্যের আশ্বাস!
আজ যদি রাজ জননীরে মাতা বলি,
কুরুপতি কাছে বদ্ধ আজি যে বন্ধনে
ছিন্ন করে ধাই যদি রাজসিংহাসনে
তবে ধিক মোরে।
...
মাতঃ, করিয়ো না ভয়
কহিলাম পা-বের হইবে বিজয়। ...
যে পক্ষের পরাজয়
সে পক্ষ ত্যাজিতে মোরে কোরো না আহ্বান...
শুধু এই আশীর্বাদ দিয়ে যাও মোরে,
জয়লোভে যশোলোভে রাজ্যলোভে, অয়ি,
বীরের সদগতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই।’
রবীন্দ্রনাথের কলমে রচিত মহাভারতের এই উপাখ্যান অংশটির কিছুটা দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। ‘সিংহাসন বিজয়ের’ প্রশ্নের চেয়ে ‘বীরের ধর্ম’ রক্ষার প্রশ্ন যে অধিকতর মূল্যবান, সে শিক্ষাই এখান থেকে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের চলতি রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় প্রশ্নে নীতি-আদর্শ-দর্শনের বোধ ও বিবেচনা প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। বড় দলের নেতা-কর্মী-ক্যাডাররা আজকাল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত আখের গুছিয়ে নেওয়াকে ‘রাজনৈতিক বিজয়ের’ প্রধান বিবেচ্য ও উপাদান করে তুলেছে।
রাজনীতিতে এই প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। সব দেশেই তা কম-বেশি আছে। ব্রিটিশরা এ লোভ-লালসার প্রবণতাকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে তাদের শাসন কাঠামো স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রবণতা অব্যাহত থেকেছে। তবে গত সাড়ে চার দশকে এই প্রবণতাকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রায় একচ্ছত্র করে তোলা হয়েছে। গদিতে অধিষ্ঠিত হয়ে, রাষ্ট্রক্ষমতার কর্তৃত্ব বিভিন্ন স্তরে ও কায়দায় প্রয়োগ করে, লুটপাট চালিয়ে বিত্তবান হওয়ার সুযোগ গ্রহণই হয়ে উঠেছে দেশের বড় বুর্জোয়া দলগুলোর অধিকাংশ নেতা-কর্মী-ক্যাডারদের কাছে রাজনীতি করার আগ্রহের প্রধান বিষয়। ক্ষমতা হয়ে উঠেছে অর্থ-সম্পদের অধিকারী হওয়ার পথ রচনার একটি উৎকৃষ্ট অবলম্বন। রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য এই ব্যক্তিগত বৈষয়িক প্রণোদনাই হয়ে উঠেছে চলতি রাজনীতির প্রাণশক্তি। ‘রাজনৈতিক বিজয়’ হয়ে উঠেছে রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য একটি আবশ্যক শর্ত। রাজনীতিতে বিজয় অর্জন ও ব্যক্তিগত সম্পদ আহরণকে সমার্থক করে তোলা হয়েছে। সে কারণেই বিজয়ের জন্য বেপরোয়া নীতি বর্জিত সংঘাতের উদ্ভব। বড় দুটি দল প্রায় সর্বাংশে এই রোগে আক্রান্ত। এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে তফাৎ কেবল উনিশ-বিশ।
জাতীয় সংসদের জনৈক সাংসদের সেই বহুল আলোচিত বক্তব্যটি এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। সাংসদ মহোদয়কে অপর একজন সাংসদ সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘তিনি মুজিবের সময় মুজিবের দলে, মোশতাকের সময় মোশতাকের দলে, জিয়ার সময় জিয়ার দলে, এরশাদের সময় এরশাদের দলে। ব্যাপার কী! বারবার তিনি শুধু দল বদল করেন কেন?’ সেই সাংসদ একটি ঐতিহাসিক বক্তব্যের মাধ্যমে এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার! আল্লার কসম, আমি জীবনে কখনো দল বদল করিনি। আমি সব সময় সরকারি দল করি। বারবার শুধু সরকার বদল হয়, তাহলে আমি কী করব?’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবার ‘বিজয়’ অর্জন করে পুনর্বার ক্ষমতায় বসেছে। মহাজোট সরকারের নানা কাজকর্ম সম্পর্কে সমালোচনা বেড়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মতলববাজি, দলবাজি ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন যে, মনে হচ্ছে ‘বিভিন্ন রকম বাজিকরদের পাল্লায় পরে দেশের মানুষ এখন দিশেহারা।’ দেড় দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান ‘বাজিকরদের দৌরাত্ম্যের’ কথাটি বলেছিলেন। আওয়ামী লীগ এ ধরনের মন্তব্যে খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে থাকে- বিএনপি আমলে কি এসব ঘটনা ঘটেনি? যুক্তিটি অনেকটা এমন যে, আমি মন্দ তাতে কী? যে আমার প্রতিপক্ষ সে তো আরও মন্দ ছিল! এই যুক্তির ফাঁদে আটকা পড়লে দেশবাসীকে ‘মন্দের ভালো’ খোঁজার ধান্ধায় চিরদিন ব্যস্ত থাকতে হবে। ‘ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে’র মাঝে পর্যায়ক্রমে এপার-ওপার করতে হবে।
এ কথা ঠিক, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই বাজিকরদের নিয়ন্ত্রণ দূর হবে না। বরঞ্চ তা হয়তো আরও বাড়বে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিএনপির রাজত্ব হোক আর আওয়ামী লীগের রাজত্ব হোক ‘রাজনৈতিক বিজয়ের’ প্রধান অবলম্বন, কারিগর ও সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছে প্রধানত এসব বাজিকরের দল। সরকার বদল হয়, কিন্তু তাদের দাপট থেকে দেশবাসী রেহাই পায় না।
আওয়ামী লীগের কিছু নেতা অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য ‘ওয়ান টাইম’ মন্ত্রী-উপদেষ্টা-এমপিদের প্রাধান্যকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের কথার অর্থ হলো, মন্ত্রী-উপদেষ্টা-এমপিদের বড় একটি অংশ দলের নীতি ও আদর্শ-দর্শন ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামায় না। যতদিন রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে ততদিন সেটাকে কাজে লাগিয়ে আখের গোছানোর দিকেই তাদের প্রধান দৃষ্টি। কতদিন তারা তাদের বর্তমান ‘পজিশন’-এ থাকতে পারবেন, তা কারো জন্যই নিশ্চিত নয় বলে তারা মনে করেন। তাই ক্ষমতার গাভী দোহন করে যতটা দুধ দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে বের করে আনা যায় সেদিকেই তাদের একান্ত মাথাব্যথা। তাদের কাছে রাজনৈতিক নীতি-দর্শন ইত্যাদি হলো তুচ্ছ বিষয়, বৈষয়িকভাবে আখের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগটাই হলো ‘বিজয়ের’ মর্মকথা।
‘ওয়ান টাইম’ কিংবা ‘ডিসপোজেবল’-এর যুগ চলছে এখন দুনিয়ায়। স্কুলে-কলেজে যখন পড়তাম তখন আমার কলমটি ছিল আমার জীবনের সত্তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা একটি জীবন্ত বস্তু। প্রথমদিকের অলিভ গ্রিন রঙের রাইটার কলম, তারপর ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে পাইলট কলমটি এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের উপহার পাওয়া পার্কার কলমটির কথা আজও ভুলিনি। কলমের কোথায় একটা দাগ পড়েছে, ক্যাপের কোন দিকটায় স্ক্র্যাচ পড়েছে ইত্যাদি মুখস্থ থাকত। মাঝে মাঝে ওয়াশ করে কালির ফো ঠিক রাখতাম। কলমটি ছিল আমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের একটি সম্প্রসারিত অংশ, আমার সত্তার সঙ্গে অঙ্গীভূত। আমার মতোই অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রেও অবস্থানটি ছিল এরকমই। নিত্যব্যবহার্য সবকিছুর ক্ষেত্রেই ছিল এ ধরনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ডিসপোজেবলের যুগে আমরা যা ব্যবহার করি তার সঙ্গে আমার সত্তার জীবন্ত সংযোগটি আজকাল প্রায় সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নতা। ওয়ান টাইম ইউজ করে জিনিসটিকে ফেলে দাও। আনো নতুন একটা। সেটা ব্যবহার করে আবার ফেলে দাও। এসব বিষয় নিয়ে বিখ্যাত ভবিষ্যৎবিদ অ্যালভিন টফলার তার ‘দি থার্ড ওয়েভ’, ‘দি ফিউচার শক’ ইত্যাদি বইয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। পাঠককে পরামর্শ দেব, এই বইগুলো জোগাড় করে পড়ে দেখতে। আওয়ামী লীগের দু-একজন নেতা সঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতা, রাজনীতি, দল এগুলো এখন অনেক নেতা-কর্মী-ক্যাডারের দ্বারাই যেনতেন উপায়ে বিত্তবান হয়ে ওঠার নিছক একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের কাছে এই একান্ত ব্যক্তিগত বৈষয়িক স্বার্থই রাজনৈতিক ‘বিজয়ের’ একমাত্র প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য।
আওয়ামী লীগের অন্য এক নেতা বলেছেন, নানা অপকর্মের যেসব ঘটনা ঘটছে তার জন্য দায়ী দলের ও তার সহযোগী সংগঠনের ‘হাইব্রিড’ নেতা-কর্মী-সদস্যরা। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতিতে তারা দলে প্রবেশ করে তার বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। নীতি-আদর্শের কোনো বালাই নেই। শুধু নমিনেশন বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য ইত্যাদিতে টাকা ঢাললে এবং দলবাজি করলেই তো ব্রিডিং সম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাতারাতি দলের নেতা-কর্মী-ক্যাডার হয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে এসব হাইব্রিড নবাগতের। বিজয়ের লালসায় এসব রুগ্ন ‘হাইব্রিড’ নেতা-কর্মী-ক্যাডারকেও দলে নিয়ে নিতে কোনো অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
মনে পড়ে গেল মুক্তিযুদ্ধের পরের একটি চিত্র। আমি গেরিলা বাহিনীর বড় দল নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রবেশ করেছিলাম। অচিরেই উদ্ভব ঘটল ‘হাইব্রিড’ মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সবারই দাবি যে, তারা মুক্তিযোদ্ধা। কোথায় ফাইট করেছেন, তার কোনো খবর নেই। কিন্তু ভাবভঙ্গি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক ধাপ বেশি। অনেক অস্ত্রপাতিও তারা জোগাড় করে ফেলেছে। শত্রুমুক্ত দেশে তাদেরই লম্ফঝম্প বেশি। এদের আমরা নাম দিয়েছিলাম ‘সিক্সটিন্থ ডিভিশনের’ মুক্তিযোদ্ধা। কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে ১৬ ডিসেম্বরের পরে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনে এখন ‘টু থাউজেন্ট সিক্সটিন্থ ডিভিশনের’ দাপট।
প্রশ্ন হলো, বিষাক্ত হাইব্রিড আর ওয়ান টাইম নেতা-উপদেষ্টা-এমপিদের কর্তৃত্ব ও অপকর্মের হাত থেকে দলকে রক্ষা করার ক্ষমতা কি আওয়ামী লীগ হারিয়ে ফেলেছে? দলটি কি সেই অপশক্তির হাতেই জিম্মি হয়ে পড়েছে, যাদের হাতে আরও ভয়াবহভাবে জিম্মি হয়েছিল ও আছে বিএনপি? যদি তাই হয়, তাহলে সমস্যার গোড়াটা খুঁজতে হবে দল পরিচালনার প্রশ্নে দক্ষতা-অদক্ষতার ক্ষেত্রে নয়, তা খুঁজতে হবে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট দলের শ্রেণিচরিত্রের মাঝে।
রাজনীতিতেও নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা করা আজ খুবই জরুরি। রাজনীতিতেও, বীরের ন্যায়-ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে নয়, তা পরিপূর্ণভাবে অক্ষুণ রেখে প্রকৃত বিজয় ছিনিয়ে আনার মধ্য দিয়েই কেবল দেশকে সংকটমুক্ত করা সম্ভব হতে পারে। এ কাজে অন্য কোনো সহজ শর্টকাট নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন