মিয়ানমারের সেনা গণহত্যার মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি বড় অংশই অবিবাহিত তরুণী। এসব তরুণীর মধ্যে অনেক সুন্দরী তরুণী রয়েছেন।
উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে ঠাঁই নেওয়া এ সব মেয়েদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
তারা সবাই বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে
নানাভাবে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসলেও এসব তরুণীরা
শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত তাদের তাড়া করছে এ দেশীয় লম্পট ও দালালদের কালো হাত। এমনকি দালালরা কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে
যাওয়ারও আশ্বাস দিচ্ছেন এসব সুন্দরী মেয়েদের। এ নিয়ে তরুণীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায়
ভুগছেন তেমনি আস্থাহীনতায় পড়েছেন তাদের পরিবারও।
দলে দলে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নানাভাবে প্রত্যক্ষ
করে জানা যায় ভাড়া নিয়ে দালালদের বিড়ম্বনা, নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার, মোবাইল সেট কেড়ে নেয়া, গরু-ছাগল-মহিষ লুটপাট করা, পানি-খাবার সংকট ইত্যাদির পাশাপাশি চরম সমস্যায় ভুগছেন
রোহিঙ্গা সুন্দরী তরুণীরা। যেসব মা অথবা বাবার কাছে সুন্দরী তরুণী রয়েছে তারা চরম
নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছেন। মা-বাবার চেয়েও বেশি আতঙ্কে রয়েছেন সুন্দরী তরুণীরা।
পালিয়ে আসা তরুণীদের মধ্যে অধিকাংশরই কোনো না কোন আত্মীয় হত্যার শিকার হয়েছেন। এই
নিয়ে তারা শোকের সাগরে ভাসছে। তার উপর লম্পটদের হানা তাদেরকে আরো অসহায় করে
তুলেছে। জানা গেছে, একটি সিন্ডিকেট টেকনাফের উখিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়
অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সুন্দরী মেয়ে দেখলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তারা।
রোহিঙ্গা তরুণীদের বলা হচ্ছে, নিজ ভিটেতে থাকার জন্য বসত বাড়ি দেওয়া হবে। তাতে কোন প্রকার টাকাও
দিতে হবেনা। এটা শুধুই মানবতার খাতিরে বলে আশ্বাস দিচ্ছে ওই সিন্ডিকেট।
গার্মেন্টের চাকুরীসহ প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন তারা। একইভাবে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের উপর কুনজর দিয়েছে
স্থানীয় কিছু লম্পট শ্রেনীর লোক ও পতিতার দালালরা। তারা সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের
টার্গেট করে নানাভাবে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। ভাগে না পেয়ে অপহরণ পর্যন্ত করছে।
অন্যদিকে পতিতার দালাল চক্রও টার্গেট করেছে সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীদের। তারা
অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সুন্দরী তরুণী ও তাদের পরিবারকে ফুঁসলাচ্ছে। এতে নিরাপত্তা
সঙ্কট ভুক্তভোগীদের কুরে কুরে খাচ্ছে। উখিয়ার বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমার মংডু থেকে
আসা হামিদুল আজম। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে জান্নাতুলের বয়স ১৮ এবং ছোট মেয়ে
পারুলের বয়স ১৪। জান্নাতুল দেখতে খুবই রুপসী। হামিদুল বলেন, প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বড় মেয়ে জান্নাতের
বিয়েও ঠিক হয়েছিল, পার্শ্ববর্তী একটি ছেলের সাথে।
আমরা লাম্বার বিল সিমান্ত দিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করি। কিন্তু
আসার পথে দুইজন লোক তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে। বলেন, শহরে নিয়ে যাবে। চাকুরীর করার সুযোগ করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার আবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলে
একজন আমার বড় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি তাতে রাজি হয়নি। একই অভিযোগ
করেছেন, টেকনাফে’র ধামনখালীতে আশ্রয় নেওয়া মধ্যবয়সী নুরতাজ। দুটি মেয়ে
বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক ছেলের বউ এনেছেন। কিন্তু ছোট মেয়ে মনোয়ারাকে (১৬) নিয়ে
পালিয়ে আসতে হলো তাকে। এখানেই এসেই যতো বিপদ। তার সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে সে পড়েছে
সমস্যায়। বাবা হারা মেয়েটি কেমন জানি ভীতস্থ। চেষ্টা করেও কথা বলানো সম্ভব হয়নি।মিয়ানমারের
বুচিদং টমবাজার থেকে পালিয়ে এসে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছে
তরুণী হামিদা। তার বাবাকে মিয়ানমারের সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। মা ও এক ছোট
বোনের সাথে ৪ দিন আগে সে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসেও স্বস্তিতে
নেই তরুণী হামিদা ও মা আলেয়া খাতুন। সুন্দরী হওয়ায় কিছু লম্পট তরুণীটিকে ঘিরে
রয়েছে।একই সাথে দালালও তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। গত তিনদিন ধরে নানাভাবে তরুণী
হামিদা ও তার মাকে ফুঁসলাচ্ছে লম্পট ও দালালরা। নানাভাবে লোভও দেখাচ্ছে। তারা তরুণী
হামিদাকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছে। বিনিময়ে
টাকা দিবে বলে প্রলোভন দিচ্ছে। শুধু লম্পট যুবকেরা নয়, কয়েকজন দালালও হামিদার মাকে টাকার প্রস্তাব দিয়েছে।
তরুণী হামিদাকে তারা হোটেলে রাখবে। বিনিময়ে অনেক অনেক টাকা দেবে। হামিদা বলেন, ‘বাবাকে চোখের সামনে মরতে দেখেছি। নিজের প্রাণ বাঁচাতে
চরম আতঙ্ক নিয়ে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসেও শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত লম্পটদদের
কালো হাত তাড়া করছে। এই আতঙ্কের কারণে একটুও শান্তি পাচ্ছিনা। মা আলেয়া খাতুন বলেন, ‘নিজ দেশ ছেড়ে জান বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। সুন্দরী মেয়েকে
নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু রয়েছে। আমার খুব ভয়, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ
হাতে ধরে রেখেছি।’
এমন আরেকজন লিয়াকত আলী। তার দুটি মাত্র মেয়ে। একটি ছোট
অন্যটির বয়স ১৭ বছর। মেয়েটির নাম আয়েশা। লিয়াকত বলেন, মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু ধরে রয়েছে। আমার খুব
ভয়, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়।
তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ হাতে ধরে রেখেছি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেও শান্তি পাচ্ছি না। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সংখ্যা খুব অপ্রতুল হওয়ায় নিরাপত্তার
প্রকট সঙ্কট বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়ানোর
পাশাপাশি নজরদারি বাড়ালে লম্পট দালারদের খপ্পর থেকে বাচঁবে, প্রাণে বেঁচে আসা এসব তরুণীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন