Biplobi Barta

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বামপন্থিদের সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা শরণার্থী নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য-চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আহবান জাতিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আহবান




Image may contain: 6 people, people sitting

সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য-চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি, গণহত্যা-বর্বরতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সে দেশে ফেরত নিতে বাধ্য করা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা বাড়ানো, সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের উদ্যোগ বাড়াতে, কফি আনান কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ও ভারত-চীনসহ অন্যান্য দেশকে পাশে পেতে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো, মিয়ানমার সরকার ও সামরিক শক্তির গণহত্যা-বর্বরতার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জল-স্থল ভাগের সম্পদ রক্ষায় নজরদারী বাড়ানো এবং রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের যেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং কোন অপশক্তি তাদের ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ না করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। 
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘জাতিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না করতে পারলে, এই সমস্যাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি তাদের অভিসন্ধি কার্যকর করতে চাইবে। ইতোমধ্যে সম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন ধরনের উস্কানী ও প্রচারণা শুরু করেছে। যা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এদের উদ্দেশ্য আর মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের উদ্দেশ্য প্রকৃতপক্ষে এক। এসব অপশক্তি কখনই রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বন্ধু নয়- বরং রোহিঙ্গা জতিসত্ত্বা নিধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সকাল ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে বামপন্থি নেতৃবৃন্দের টেকনাফ-উখিয়া শরণার্থী ও শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সূচনা বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকবর খান। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, বাসদ (মাকর্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বাসদ এর কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক মিলু, কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার। এসময় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ এর কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, সিপিবি নেতা ল²ী চক্রবর্তী, কাফি রতন, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘১১ সেপ্টেম্বর সকালে টেকনাফে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ রোহিঙ্গাদের অবস্থান। ভয়ার্ত অসহায় চেহারার ছাপ স্পষ্ট সকলের মধ্যে। বাস-ট্রাকেও কিছু রোহিঙ্গাদের দেখা যায়। অজানা পথে তাদের যাত্রা। উখিয়া পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র রাস্তার পাশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দেখা যায়। নাফ নদী দিয়ে নৌপথে আসা শরণার্থীদেরও দেখতে পাই। পরিদর্শনের সময় আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৭৩টি রোহিঙ্গা পরিবারকে দেখতে পাই, যারাও ক্যম্পে অবস্থান করছেন। আমরা অনেক রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিকের পরিচয়পত্রও দেখতে পাই।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে দেখা যায় নতুন করে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের করুন অবস্থা। বৃষ্টির পানিতে সয়লাব বাসস্থান, শোচাগার নাই, পানি-খাদ্যের ত্রাণের আশায় তাকিয়ে থাকা অসহায় আর্তনাদ। চিকিৎসার সুবিধা নেই, নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। নাম তালিকাভুক্তির কথা জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, এ বিষয় সম্পর্কে তারা জানেন না। সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি সহায়তার তথ্য কেউ দিতে পারেননি।’ 
সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, গণহত্যা-বর্বরতা বন্ধসহ এসব মানুষকে মায়ানমারের নাগরিক মর্যাদায় সে দেশে নিতে বাধ্য করতে, ওই দেশে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানানো হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে রাখাইনের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর এই সংকটকালীন সময়ে জনগনের ঐক্য গড়ে তুলে সকলে মানবতা ও দেশের স্বার্থকে বিবেচনা করে দায়িত্বশীল আচরণের আহবান জানানো হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন