আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে পুঁজিবাদী সমাজ বিদ্যমান। সেই সমাজে বিরাজ করে অযৌক্তিক অমানবিক কুৎসিত সব বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উপাদান। এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত-বৈপরীত্য সমাজ বাস্তবতার অবিচ্ছেদ্য ও অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। তা সত্ত্বেও সেগুলো অনেক সময়ই মানুষের উপলব্ধি ও অনুধাবনকে এড়িয়ে যায়। অরণ্যের মাঝে যার পরিপূর্ণ বসত, অরণ্যের স্বরূপ সম্পর্কে পূর্ণ অনুধাবন-অক্ষমতা তার ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বাভাবিক। তেমনি চারপাশের অস্তিত্বমান বৈপরীত্যের মাঝে বসবাস করে সেই বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সার্বিক উপলব্ধি মানুষের বোধে আসতে পারাটাও অনেক সময়ই হয়ে ওঠে কষ্টকর। তবে বাস্তবের অভিঘাত এতই অমোচনীয় যে, চোখে আঙুল দিয়ে একটু সজাগ করে দিলেই তা অতি সহজেই উপলব্ধির মর্মে এসে স্থান করে নেয়। ক্ষুব্ধ চমকে তখন জেগে ওঠে উপলব্ধির আলো! সব অন্তরাত্মা চিৎকার করে বলে ওঠে, সত্যিই তো, এমনই তো সমাজের আসল চেহারা!
অনেকেই ছোট-ছোট বাণী, উপমা, দৃশ্যবর্ণনার সাহায্যে সমাজের সেসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। তেমন কয়েকটি দৃশ্যপটের চিত্র এখানে তুলে ধরছি।
এক.) প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে সমাজতন্ত্রের প্রথম পাঠ নেওয়ার দিনগুলোয় আমার পঠিত প্রখ্যাত ব্রিটিশ সমাজতন্ত্রী জন স্ট্র্যাচির একটি বইয়ে বর্ণনা করা একটি উপাখ্যানের কথা আমি এখনো ভুলিনি। লেখক সেখানে কয়লার জন্য বিখ্যাত ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল এলাকার একজন খনি শ্রমিকের বাসায় শ্রমিকের স্ত্রী ও তার শিশুপুত্রের মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথনের বিবরণ তুলে ধরেছেন। হাড় কাঁপানো শীতের রাতে তাদের মধ্যে চলা কথাবার্তা হলো এ রকম -
ছেলে : মা, বাড়িতে আজ ঘর গরম করার চুল্লিতে কয়লা জ্বালাওনি কেন? ঠা-ায় তো মরে যাচ্ছি।
মা : কয়লা জ্বালাবে কী করে? বাসায় যে এক খ- কয়লাও আর নেই। আমাদের সব কয়লা যে শেষ হয়ে গেছে।
ছেলে : কয়লা শেষ হয়ে থাকলে বাজার থেকে কয়লা কিনে এনে রাখোনি কেন?
মা : কয়লা কিনতে যে টাকা লাগে। কিন্তু হাতে যে আমাদের কোনো টাকা-পয়সা নেই।
ছেলে : টাকা-পয়সা নেই কেন, মা?
মা : তোমার বাবা যে বেতন পায়নি। তার চাকরি যে চলে গেছে। এখন তার বেতন নেই। তাই টাকা-পয়সা নেই।
ছেলে : বাবার চাকরি চলে গেছে কেন?
মা : বাজারে কয়লার মজুদ বেশি হয়ে গেছে। সে জন্য খনির কাজ বন্ধ। ফলে তোমার বাবার চাকরি গেছে। চাকরি নেই, তাই হাতে টাকা নেই। টাকা নেই, তাই কয়লা কেনা যায়নি। বাজারে কয়লার পরিমাণ ‘বেশি’ হয়ে যাওয়ার কারণে আজ আমাদের ঘরে কয়লা ‘কম’।
মা : কয়লা জ্বালাবে কী করে? বাসায় যে এক খ- কয়লাও আর নেই। আমাদের সব কয়লা যে শেষ হয়ে গেছে।
ছেলে : কয়লা শেষ হয়ে থাকলে বাজার থেকে কয়লা কিনে এনে রাখোনি কেন?
মা : কয়লা কিনতে যে টাকা লাগে। কিন্তু হাতে যে আমাদের কোনো টাকা-পয়সা নেই।
ছেলে : টাকা-পয়সা নেই কেন, মা?
মা : তোমার বাবা যে বেতন পায়নি। তার চাকরি যে চলে গেছে। এখন তার বেতন নেই। তাই টাকা-পয়সা নেই।
ছেলে : বাবার চাকরি চলে গেছে কেন?
মা : বাজারে কয়লার মজুদ বেশি হয়ে গেছে। সে জন্য খনির কাজ বন্ধ। ফলে তোমার বাবার চাকরি গেছে। চাকরি নেই, তাই হাতে টাকা নেই। টাকা নেই, তাই কয়লা কেনা যায়নি। বাজারে কয়লার পরিমাণ ‘বেশি’ হয়ে যাওয়ার কারণে আজ আমাদের ঘরে কয়লা ‘কম’।
এভাবেই, পাশাপাশি ‘বেশি’ ও ‘কমের’ বৈপরীত্যমূলক বাস্তবতার যুগপৎ অবস্থান দ্বারা পণ্যনির্ভর পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির অমানবিক ও কুৎসিত বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র প্রকাশিত হয়ে পড়েছে।
দুই.) কবিতার চয়নে লেখা হয়েছে, আমরা এমন এক সমাজ বাস্তবতায় বসবাস করি যেখানে -
‘ডাক্তার মরে রোগীর অভাবে, আর রোগী মরে ডাক্তারের অভাবে।’
মনে মনে অবস্থাটি ভাবুন! পাস করা ‘দামি’ ডাক্তার সাহেব সদর রাস্তায় স্থাপিত তার চেম্বারের বাইরে ‘কনসালটেশন ফি ৫০০ টাকা’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে ভেতরে টেবিল-চেয়ার পেতে রোগীর অপেক্ষায় বসে আছেন। বাইরে হাজার হাজার দরিদ্র-রুগ্ন রোগীর দল। কিন্তু ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন নিরন্ন-দরিদ্র এসব মানুষ কোথায় পাবে কনসালটেশন ফির টাকা। ডাক্তারখানার দরজা থেকে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হয়। এভাবে ‘রোগী মরে ডাক্তারের অভাবে!’ এদিকে ডাক্তারের সম্ভাব্য পেশেন্টরা টাকার অভাবে তার কাছে আসতে না পারায় ডাক্তারেরও আয় হয় না। ফলে ‘ডাক্তার মরে রোগীর অভাবে।’ যে সমাজে চিকিৎসাসেবাকে সামাজিক দায়িত্বের বদলে ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ও বিনিময়যোগ্য বাজারি-পণ্যে পরিণত করে রাখা হয়, সেখানে এরূপ অমানবিক বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটা অবধারিত। ডাক্তার ও রোগীর মাঝে যে অদৃশ্য ও দুর্ভেদ্য দেয়াল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, সেটিই ‘পুঁজিবাদ’। এ দেয়াল না ভাঙতে পারলে এরূপ অসঙ্গতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না।
তিন.) কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তার ‘মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ’ কবিতায় বিদ্যমান সমাজের একটি চিত্র তুলে ধরে লিখেছেন -
‘যার হাত আছে তার কাজ নেই,
যার কাজ আছে তার ভাত নেই,
আর যার ভাত আছে তার হাত নেই।’
যার কাজ আছে তার ভাত নেই,
আর যার ভাত আছে তার হাত নেই।’
অর্থাৎ আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে যারা হাত দিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ ও দেশের সম্পদ সৃষ্টিতে সক্ষম তাদের অনেকেই কর্মহীন বেকার জীবন কাটাতে হয়। ‘হাত’ থাকলেও তাদের ‘কাজ’ নেই! আবার যাদের কাজ আছে তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তাদের শ্রমের উপযুক্ত দাম পায় না। তাই ‘কাজ’ থাকলেও তাদের ‘ভাত’ নেই! অন্যদিকে সমাজের ‘পেট ভরে খাওয়া’ মানুষরা হাত দিয়ে কাজ না করেই অন্যের শ্রমের ফসল দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে। তাদের থাকে পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ। তাদের নেই কোনো দয়া-মায়ার ‘হাত’। আছে শুধু পা দিয়ে লাথি মারার প্রবৃত্তি ও শোষণের লালসা।
চার.) আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশের ‘কল্যাণে’ ফেসবুকের পাতায় অনেক মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। এসব মন্তব্যের মধ্যে অনেক গভীর চিন্তার খোরাক থাকে। একজন বন্ধুর স্ট্যাটাসে একবার নিম্নলিখিত বয়ানটি চোখে পড়েছিল।
“আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করি যেখানে -
পিৎজা ডেলিভারির গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পুলিশ আসতে পারার আগেই উপস্থিত হয়ে যায়।
বিলাসবহুল গাড়ির জন্য বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সুদমুক্ত ঋণ পেলেও শিক্ষা ঋণের জন্য সুদ দিতে হয় ১২ শতাংশ হারে।
মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, কিন্তু মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ফ্রি পাওয়া যায়।
জুতা বিক্রি হয় দেয়াল ও কাচে ঘেরা এসি রুমে, কিন্তু সবজি, ফল-ফলারি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হয় খোলা আকাশের নিচে, এমনকি ফুটপাতে।
আমরা খাই কৃত্রিম লেবুর রস, আর আসল লেবুর রস দিয়ে করা হয় ‘ফেইসওয়াশ’।
ভুয়া ডিগ্রিধারীরা টাকার জোরে সমাজের মাথা হয়, আর সত্যিকার মেধাবীরা থাকে কর্মহীন।”
পিৎজা ডেলিভারির গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পুলিশ আসতে পারার আগেই উপস্থিত হয়ে যায়।
বিলাসবহুল গাড়ির জন্য বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সুদমুক্ত ঋণ পেলেও শিক্ষা ঋণের জন্য সুদ দিতে হয় ১২ শতাংশ হারে।
মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, কিন্তু মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ফ্রি পাওয়া যায়।
জুতা বিক্রি হয় দেয়াল ও কাচে ঘেরা এসি রুমে, কিন্তু সবজি, ফল-ফলারি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হয় খোলা আকাশের নিচে, এমনকি ফুটপাতে।
আমরা খাই কৃত্রিম লেবুর রস, আর আসল লেবুর রস দিয়ে করা হয় ‘ফেইসওয়াশ’।
ভুয়া ডিগ্রিধারীরা টাকার জোরে সমাজের মাথা হয়, আর সত্যিকার মেধাবীরা থাকে কর্মহীন।”
আমাদের চতুর্দিকে নিত্যদিন পদে পদে এ ধরনের অসঙ্গতি, বৈপরীত্যের আরও ভূরি ভূরি ঘটনা ঘটে চলেছে। রুটিন জীবনের গৎবাঁধা ছন্দের মধ্যে থাকায় হয়তো সেসব আমাদের মনোযোগ এড়িয়ে যায়। কিন্তু একটু চোখ মেলে দেখার চেষ্টা করলেই সেসবের দেখা পাওয়া খুবই সহজ।
পাঁচ.) আরেকটি ফেসবুক পোস্টে যে ইংরেজি বার্তাটি চোখে পড়েছিল তার বাংলা রূপান্তর হবে অনেকটা এ রকম।
“পরীক্ষায় ‘প্রথম শ্রেণিতে’ যারা পাস করে তারা অধিকাংশই টেকনিক্যাল কাজ পায়। তারা হয়ে ওঠে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ইত্যাদি।
‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে’ যারা পাস করে তারা একটি অতিরিক্ত এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে হয়ে ওঠে ‘পরিচালক’ এবং তারা তখন ‘প্রথম শ্রেণি’ অর্জনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে।
‘তৃতীয় শ্রেণিতে’ যারা পাস করে তারা ‘রাজনীতি’তে প্রবেশ করে এবং ‘প্রথম শ্রেণি’ ও ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে যারা পাস করে তাদের উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে।
সর্বশেষ, কিন্তু যা অবজ্ঞা করার বিষয় মোটেও নয় তা হলো, যারা ‘ফেল’ করে তারা ‘অপরাধ জগতে’ প্রবেশ করে এবং উপরোক্ত প্রত্যেককেই নিয়ন্ত্রণ করে।
আর যারা একেবারেই স্কুলে যায় না, তারা হয়ে ওঠে ভ- গুরুজী, পীর ইত্যাদি এবং অন্য সবাই হাজিরা দেয় তাদের কাছে!”
‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে’ যারা পাস করে তারা একটি অতিরিক্ত এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে হয়ে ওঠে ‘পরিচালক’ এবং তারা তখন ‘প্রথম শ্রেণি’ অর্জনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে।
‘তৃতীয় শ্রেণিতে’ যারা পাস করে তারা ‘রাজনীতি’তে প্রবেশ করে এবং ‘প্রথম শ্রেণি’ ও ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে যারা পাস করে তাদের উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে।
সর্বশেষ, কিন্তু যা অবজ্ঞা করার বিষয় মোটেও নয় তা হলো, যারা ‘ফেল’ করে তারা ‘অপরাধ জগতে’ প্রবেশ করে এবং উপরোক্ত প্রত্যেককেই নিয়ন্ত্রণ করে।
আর যারা একেবারেই স্কুলে যায় না, তারা হয়ে ওঠে ভ- গুরুজী, পীর ইত্যাদি এবং অন্য সবাই হাজিরা দেয় তাদের কাছে!”
ছয়). ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে দায়িত্ব শেষ করার পর আশির দশকের শুরুতে ক্ষেতমজুর সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সেই আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে আমি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম। তখন আমাকে গ্রামে গ্রামে চষে বেড়াতে হতো। অনেক রকম গল্প মিশিয়ে ক্ষেতমজুর ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে হতো। তেমনই একটি গল্পের কথা আমার এখনো মনে আছে।
“এক গরিব কাঠুরিয়া জঙ্গল থেকে লাকড়ি কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এ কাজ খুব পরিশ্রমের। বার্ধক্য আসার পর এই কষ্টসাধ্য পরিশ্রমের কাজ কাঠুরিয়ার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল। জঙ্গল থেকে ফেরার সময় সে প্রায়ই দারোগা সাহেবকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে হনহনিয়ে তার পাশ দিয়ে ছুটে যেতে দেখত। কাঠুরিয়া কেবলই ভাবত, ঘোড়ার কাঁধে লাকড়ির বোঝা চাপিয়ে এবং পিঠে নিজে সওয়ার হয়ে যদি সে জঙ্গলে আসা-যাওয়াও করতে পারত তাহলে তার পক্ষে এতদিনের পেশা চালিয়ে বেঁচে-বর্তে থাকা সম্ভব হতো!
একদিন লাকড়ির বোঝা কাঁধে নিয়ে শহরে ফেরার পথে কাঠুরিয়া দেখে যে দারোগা সাহেব পথে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে তার ঘোড়াটি। সেটি ছিল একটি মাদি ঘোড়া। সদ্য একটি বাচ্চা প্রসব করেছে। সদ্যপ্রসূত ঘোড়ার বাচ্চাটি পাশে মাটিতে পড়ে রয়েছে। দারোগা কাঠুরিয়াকে পেয়ে ধমক দিয়ে তাকে হুকুম দিল, ‘ঘোড়ার বাচ্চাটি পিঠে নিয়ে থানায় পৌঁছে দিয়ে আয়।’ কাঠুরিয়া নিরুপায়। দারোগার ধমক ও হুকুম। ভয়ে থরো থরো হয়ে সে কাঁধের বোঝা নামিয়ে রেখে ঘোড়ার বাচ্চাকে পিঠে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকল। হাঁটতে হাঁটতে মনের দুঃখে সে আপন মনে বলতে থাকল, ‘আমি চেয়েছিলাম ঘোড়ার পিঠে চড়তে, আর এখন কিনা উল্টা ঘোড়াকে আমার পিঠে উঠে বসিয়েছে।”
একদিন লাকড়ির বোঝা কাঁধে নিয়ে শহরে ফেরার পথে কাঠুরিয়া দেখে যে দারোগা সাহেব পথে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে তার ঘোড়াটি। সেটি ছিল একটি মাদি ঘোড়া। সদ্য একটি বাচ্চা প্রসব করেছে। সদ্যপ্রসূত ঘোড়ার বাচ্চাটি পাশে মাটিতে পড়ে রয়েছে। দারোগা কাঠুরিয়াকে পেয়ে ধমক দিয়ে তাকে হুকুম দিল, ‘ঘোড়ার বাচ্চাটি পিঠে নিয়ে থানায় পৌঁছে দিয়ে আয়।’ কাঠুরিয়া নিরুপায়। দারোগার ধমক ও হুকুম। ভয়ে থরো থরো হয়ে সে কাঁধের বোঝা নামিয়ে রেখে ঘোড়ার বাচ্চাকে পিঠে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকল। হাঁটতে হাঁটতে মনের দুঃখে সে আপন মনে বলতে থাকল, ‘আমি চেয়েছিলাম ঘোড়ার পিঠে চড়তে, আর এখন কিনা উল্টা ঘোড়াকে আমার পিঠে উঠে বসিয়েছে।”
বাস্তব জীবনেও জনগণের ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারাটি আর হয়ে ওঠে না। ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হওয়ার জন্য তার আশা জাগে। শক্তি উজাড় করে সে জন্য সে প্রয়াস চালায়। আশায় চোখের তারা চক্চক্ করে ওঠে। কিন্তু হায়! পরিশেষে দেখে সবই মরীচিকা। ঘোড়ার পিঠে সে চড়বে কী, উল্টো ঘোড়াই তার কাঁধে উঠে চেপে বসে।
যে সমাজের অসঙ্গতি, বৈপরীত্য, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের স্বরূপ এ ধরনের, সে সমাজ সম্পর্কে একটি কথাই প্রযোজ্য। তা হলো -‘এ সমাজ ভাঙতে হবে, নতুন সমাজ গড়তে হবে।’ এই আওয়াজকে আজ আরও বুলন্দ করতে হবে!
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
Post-editorial written by Mujahidul Islam Selim published in the 24th. September issue of Daily Amader Shomoy.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন