কমরেড ফিডেল ক্যাস্ট্রো
================
নানা ষড়যন্ত্র, বিদেশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ৫০ বছরের বেশি কিউবা শাসন করে ইতিহাসে অমর হয়ে রইলেন বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি অসংখ্য স্মরণীয় বাণী উচ্চারণ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি বাণী হলো- বিপ্লব কোনো গোলাপ ছড়ানো ফুলের বিছানা নয়।
বিপ্লব হলো ভবিষ্যৎ ও অতীতের মধ্যে লড়াইয়ের নাম (এ রেভ্যুলুশন ইজ নট এ বেড অব রোজেজ। এ রেভ্যুলুশন ইজ এ স্ট্রাগল বিটুইন দ্য ফিউচার অ্যান্ড দ্য পাস্ট)। এখানে বিভিন্ন সময়ে তার করা বিখ্যাত কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো: ১৯৫৩ সালে কিউবার সান্তিয়াগোতে মোনকাডা সামরিক ব্যারাকে প্রায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে বিচারে তখনকার তরুণ আইনজীবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো আদালতে বলেন, আমি আমার নিন্দা জানাই। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নই। আমাকে বিচারকরবে ইতিহাস।
১৯৫৯ সালে তিনি বলেন, ৮২ জন সদস্যকে নিয়ে আমি বিপ্লব শুরু করেছিলাম। আমি যদি আবার সেটা করতে পারতাম তাহলে আমি শুধু ১০ জন বা ১৫ জন অথবা শুধু বিশ্বাসকে বুকে নিয়ে করতে পারতাম। আপনার যদি বিশ্বাস ও একশন পরিকল্পনা থাকে তাহলে আপনি কতটা ক্ষুদ্র সেটা কোনো বিষয় নয়।
বিপ্লবের ৩০ দিন পরে ১৯৫৯ সালে সিবিএসের অ্যাডওয়ার্ড মারো’কে একটি সাক্ষাৎকার দেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তিনি এ সময় বলেন, আমি দাড়ি কাটার কথা ভাবছি না। কারণ আমি দাড়িতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। এই দাড়ি আমার দেশের জন্য অনেক অর্থ বহন করে। যখন আমি দেশে সুশাসনের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূর্ণ করতে পারবো তখনই তা কেটে ফেলবো।
১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি ঘোষণা দেন, সিগারেট পান করা ছেড়ে দিয়েছেন। এ ঘোষণায় তিনি বলেন, এটা যে করবো তা অনেক আগেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিউবার জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য ধূমপান নিষিদ্ধ করতে আমাকে এই ত্যাগটি করতে হতো। সত্যিকার অর্থেই সিগারেটের কথা এখন আমার আর অত মনেই হয় না।
১৯৮৫ সালে তিনি বলেন, যদি সমাজতন্ত্রী সম্প্রদায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় তাহলে একবার ভাবুন তো পৃথিবীতে কি ঘটবে। যদি এটা সম্ভব হয় তবু আমি বিশ্বাস করবো না (সমাজতন্ত্রী সম্প্রদায়ের বিনাশ ঘটবে)।
কিউবায় আন্তর্জাতিক পর্যটনের উন্নয়ন নিয়ে ১৯৯০ সালে তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমরা ভদ্র মানুষ। আমরা সত্য বলতে জানি। বিনিময়েকারো কাছ থেকে অর্থ নেয়ার কথা ভাবিও না।
১৯৯২ সালে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে জেল খাটেন ভেনিজুয়েলার নেতা হুগো শাভেজ। তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। সোজা হাভানা সফরে চলে যান। এসময় তাকে যে অভ্যর্থনা দেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো তা আসলে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য বরাদ্দ থাকে। ওই সময় ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, এমন কাজে (অভ্যর্থনায়) কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এমন অনেক ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর মতো অনেক সুযোগ যদি আমি পেতাম! এ ঘটনার পাঁচ বছর পরে হুগো শাভেজ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হন।
২০০৩ সালে ‘কমান্ডেন্ট’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেনপরিচালক অলিভার স্টোন। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেন, বিপ্লবের অন্যতম বৃহৎ সুবিধাগুলোর অন্যতম হলোআমাদের পতিতারা পর্যন্ত কলেজ গ্রাজুয়েট। ২০০৫ সালে তিনি বলেন, অনেক বছর পর এখন আমি শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। আমরা হয়তো অনেকভুল করেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল হলো আমরা কাউকে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে আমরা জেনেছি কিভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আমরা মনে করি এটাই হলো ফর্মুলা। আর্জেন্টিনায় ২০০৬ সালে লাতিন আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের এক সম্মেলন ডাকা হয়। তাতে যোগ দিয়ে ২১শে জুলাই ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, আমি ৮০ বছর বয়সে পৌঁছতে পেরে আসলেই খুশি। আমি এমনটা কখনো আশাও করিনি। এমন একজন প্রতিবেশীও চাইনি যে বিশ্বের সবচেয়েবড় শক্তিধর, তারা আমাকে প্রতিটি দিন হত্যার চেষ্টা করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন