Biplobi Barta

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চাল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিন, চালের মূল্য কমান এক পয়সাও বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল জনগণ দিবে না-বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি বামপন্থি নেতৃবৃন্দ


 
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চালের দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চক্রান্তের বিরুদ্ধে সিপিবি-বাসদ, বাম মোর্চার আহ‚ত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদরে কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ,গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, একদিকে খাদ্যমন্ত্রী বলছেন চালের মজুতে কোনো সংকট নেই, অন্যদিকে ওএমএস-এ চালের দাম ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করা হয়েছে। ক্রয়ের পরিমাণ ৫ কেজি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অনভ্যস্ত মানুষকে আতপ চাল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। আতপ চাল পেয়ে গরীব মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মানুষের এই বিপর্যয়ের সময় তাদেরকে এ ধরনের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া অসহায় জনগণের প্রতি সরকারে উপহাস মাত্র। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর সাথে চাল ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন চালের বর্ধিত দাম হ্রাস পাবে। এতে বোঝা যাচ্ছে চালের দাম নির্ধারণের চাবিকাঠি রয়েছে ব্যবসায়ীদের হাতে। চালকলের মালিকরা এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা যোগসাজশে চালের দামবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এদের সহযোগিতা করেছে দুর্নীতিবাজ আমলাচক্র ও ক্ষমতাসীন অসৎ রাজনীতিবিদরা। চালকল মালিক-ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিবিদদের অসৎ সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চালের দাম কমানোর নামে চাল আমাদনীকারকদের ‘শূন্য’ মার্জিনে এলসি খোলার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে নির্দেশ প্রদান করেছে সরকার এবং চাল আমাদনীতে বাজেটে ঘোষিত শুল্ক হ্রাস করে ২% নির্ধারণ করেছে। এতে মুনাফা বেড়েছে চাল আমদানীকারকদের। কিন্তু বাজারে চালের দাম হ্রাস পায়নি। জনগণকে বর্ধিত দামেই চাল কিনতে হচ্ছে। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ১০ টাকা কেজিতে জনগণকে চাল সরবরাহ করবে। বাস্তবতা হচ্ছে জনগণকে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে ৩০ টাকা কেজিতে আতপ চাল কিনতে হচ্ছে। 
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পরিবর্তে সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সরকার। কৃত্রিমভাবে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা সরকারের প্রতি আহবান জানান। সেই সাথে কোন দুষ্টচক্র যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং সরকারি সংস্থা টিসিবিকে মূখ্য ভূমিকা নেয়ার দাবি জানান।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত প্রতিরোধের আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিইআরসি’র গণশুনানীতে আমাদরে ও ক্যাবের প্রতিনিধিবৃন্দ হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছেন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ১ টাকা ২৬ পয়সা কমানো যায়। আমাদের বক্তব্যে কর্ণপাত না করে বিইআরসি পিডিবি’র প্রস্তাব পাইকারী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮৭ পয়সা সংশোধন করে পাইকারী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫৭ পয়সা বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছে। সাত দিনব্যাপী গণশুনানীতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনাও বিবেচনায় নিবে বিইআরসি। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিইআরসি’র গণশুনানী গণপ্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। বিইআরসি দাম পরিস্থিতি মূল্যায়নের পরিবর্তে দাম বৃদ্ধির জন্যই গণশুনানী আহবান করে। এই শুনানী লোক দেখানো এবং প্রতারণাপূর্ণ। নেতৃবৃন্দ দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারাকে ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতির আর্থিক দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে বলেন, বিদ্যুতের দাম এক পয়সাও বৃদ্ধি করা যাবে না। যদি বৃদ্ধি করা হয় তবে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। 
সরকারের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সরকার বিনা ভোটের সরকার, এই সরকার ভাতে মারার সরকার। 
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন