চাল, বিশেষত মোটা চালের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষের এখন ‘ভাত আনতে ফতুর হওয়ার’ অবস্থা। তাদের মাথায় বজ্রপাত! এ অবস্থায় সরকারের যা ভাবসাব তা দেখে মনে হয় সরকার হয়তো ভাবছে, কোনোভাবে ২-৩টি মাস পার করে দিতে পারলেই বর্তমান সংকট পার করে দেওয়া যাবে, অবস্থা চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং চালের উচ্চমূল্যজনিত ‘বিড়ম্বনা’ আর থাকবে না। এ কথা হয়তো ঠিক যে, সংকট ২-৩ মাস পর এমন প্রকট আকারে আর থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সবকিছুই কি আগের অবস্থায় পুরোপুরি ফিরে আসবে? অন্য অনেক কিছু আগের অবস্থায় ফিরে এলেও চালের দামের এহেন উল্লম্ফন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে অধিকতর বৈষম্যমূলক যে নতুন বিন্যাসের জন্ম দেবে, তা কিন্তু থেকেই যাবে। সমাজে শ্রেণিগত বৈষম্য আরও প্রকট রূপ নিয়ে স্থায়িত্ব পাবে। এ ঘটনাই ঘটে চলেছে সর্বদা। এভাবেই চালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে বৈষম্যের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
আমার অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবনে আমি হরেকরকম স্লোগান উচ্চারণ করেছি ও উচ্চারিত হতে শুনেছি। এর ভেতরে একবার দেশ বদল হয়েছে, বহুবার সরকার বদল হয়েছে, অসংখ্যবার পরিস্থিতি বদল হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বদল হয়েছে অনেক স্লোগাণ। কিন্তু কিছু কিছু স্লোগান এখনো পুরোপুরি বহাল আছে। যেমন কিনা - ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’, ‘অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’, ‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না’ ইত্যাদি। ভাত-কাপড়ের দাবিতে আরও কতদিন যে এ ধরনের স্লোগান দিয়ে যেতে হবে, বলতে পারব না।
আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থানের আগে ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে - এই স্লোগানটি আরও সুনির্দিষ্ট রূপ ধারণ করে ‘বিশ টাকা মণ দরে চাল চাই, দশ টাকা মণ দরে গম চাই’ - এই আওয়াজ পরিগ্রহ করেছিল। আমরা তখন গলা ফাটিয়ে এই স্লোগানে রাজপথকে প্রকম্পিত করতাম। বর্তমানে ২০ টাকায় এক মণ তো দূরের কথা তার শতভাগের একভাগ চালও কিনতে পাওয়া যায় না। চালের দাম বছর-বছর বেড়েই চলেছে। গত ১ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ, যার মধ্যে গত ১ মাসেই বেড়েছে ১৮ শতাংশ। খোলাবাজারে মোটা চালের দাম এখন কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ আইয়ুব আমলের তুলনায় বর্তমানে চালের দাম ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তি দেখানো হতে পারে যে, মানুষের আয়ও তো এ সময়কালে অনেক বেড়েছে। এ কথা ঠিক! তবে প্রশ্ন হলো, কার আয় কতটা বেড়েছে? এ কথা মিথ্যা নয় যে, দেশের একশ্রেণির হাতেগোনা কিছু মানুষের আয় কেবল ৫০-৬০ গুণ নয়, তা লক্ষ-কোটি গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চালের মূল্যবৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অধিকাংশ দেশবাসীর আয় বাড়েনি। পঞ্চাশ বছর আগে একজন অদক্ষ মাটি কাটার কামলার দৈনিক মজুরি ছিল আড়াই টাকা (মাসে ৭৫ টাকা)। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে একজন আধাদক্ষ গার্মেন্ট শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সেই তুলনায় মাত্র ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে মাসে সাড়ে তিন-চার হাজার টাকা। দেশের অধিকাংশ মানুষের আয়ের পরিমাণ অনেকটা এ রকমই। অতি সরল হিসাব এ কথাই বলে যে, গত ৫০ বছরে চালের দাম যদি ১০০ গুণ বেড়ে থাকে, আর আয় যদি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে মাত্র ৫০ গুণ, তা হলে এ সময়কালের মধ্যে সাধারণ মানুষের চাল কেনার ক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমেছে।
চালসহ কৃষিপণ্যের উৎপাদক হলো দেশের কৃষক। কিন্তু খুচরা ক্রেতার কাছে সরাসরি তাদের উৎপন্ন ফসল তারা বিক্রি করতে পারে না। কৃষকরা উৎপাদক হলেও তারা বাজারের প্রধান বিক্রেতা নয়। খুচরা দোকানদাররাও প্রধান বিক্রেতা নয়। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া-কারবারিরা ‘প্রধান বিক্রেতার’ আসন দখল করে নিয়েছে। তারা উৎপাদনকারী না হয়েও ‘বিক্রেতাদের’ অশুভ সিন্ডিকেট গঠন করে কৃষক ও ক্রেতাসাধারণ উভয়ের কাছ থেকেই সুবিধা উঠিয়ে নিচ্ছে। এরাই বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। অগণিত ক্রেতাসাধারণের ওপর তারাই উচ্চমূল্যের বোঝা চাপিয়ে রাতারাতি বিপুল মুনাফা কামিয়ে নেয়। এই বোঝা বইবার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের না থাকায়, এর ফলে তাদের ওপর নেমে আসে সর্বনাশ!
চাল যেমন একটি পণ্য, মানুষের ‘শ্রমশক্তিও’ তেমনই একটি পণ্য। এ দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চরিত্র এমনই যে, অধিকাংশ মানুষ যা বিক্রি করে সেই ‘শ্রমশক্তির’ দাম একটু-একটু করে বাড়লেও তা যে পরিমাণে বাড়ে তার চেয়ে লাফিয়ে-লাফিয়ে কয়েক ধাপ বেশি পরিমাণে বাড়ে সাধারণ মানুষ যা কিনে খায় তথা চালসহ সেসব পণ্যের দাম। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এটিই হলো একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।
চাল যেমন একটি পণ্য, মানুষের ‘শ্রমশক্তিও’ তেমনই একটি পণ্য। এ দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চরিত্র এমনই যে, অধিকাংশ মানুষ যা বিক্রি করে সেই ‘শ্রমশক্তির’ দাম একটু-একটু করে বাড়লেও তা যে পরিমাণে বাড়ে তার চেয়ে লাফিয়ে-লাফিয়ে কয়েক ধাপ বেশি পরিমাণে বাড়ে সাধারণ মানুষ যা কিনে খায় তথা চালসহ সেসব পণ্যের দাম। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এটিই হলো একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।
বাজারে ‘শ্রমশক্তি’ ছাড়া অগণিত নানারকম পণ্য আছে। এসবের যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে জনগণের আর্থিক বোঝা কমবেশি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মধ্যে যে পণ্যের পেছনে অধিকাংশ মানুষের আয়ের বৃহত্তর অংশ ব্যয় হয়, তার দাম বাড়লে এই আর্থিক বোঝা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ মানুষ যে পণ্য কেনার জন্য তার আয়ের বৃহত্তম অংশ খরচ করে - সে পণ্যটি হলো মানুষের খাদ্যসামগ্রী। বাঙালির ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে হলো চাল। অন্যান্য পণ্যের তুলনায় চালের মূল্য যতটা বেশি পরিমাণে বাড়ে, তার বোঝা তত বেশি পরিমাণে অন্যান্য শ্রেণির মানুষের তুলনায় সাধারণ মেহনতি জনগণের কাঁধে অর্পিত হয়। এর ফলে যারা দরিদ্র তাদের আপেক্ষিক দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি পায়। সমাজে ধনবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য আরও প্রসারিত হয়। এমনটাই বছর-বছর ধরে এ দেশে ঘটে চলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম নয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা যায়, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের আয়ের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় চালের পেছনে। মফস্বলের একজন ভ্যানচালক দৈনিক যা আয় করে তা থেকে প্রথমেই তাকে পরিবারের জন্য ২ কেজি চাল কিনে নিতে হয়। বর্তমানে এই ২ কেজি মোটা চালের দাম ১০০ টাকায় উঠে গেছে। চাল কেনার পর তার হাতে অবশিষ্ট থাকা টাকা দিয়ে তাকে তেল-লবণ-সবজি ইত্যাদি কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়তে হয়। সংসারের অন্যান্য গৃহস্থালি খরচ, চিকিৎসা-শিক্ষা ব্যয় ইত্যাদির কথা না হয় বাদই দিলাম। দেশের ৪০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও তাদের স্বল্প আয়ের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ চাল কেনার পেছনেই খরচ হয়ে যায়। অথচ যাদের আয় বেশি, তারা সবচেয়ে উঁচু মানের চাল কিনে খেলেও সে জন্য তাদের তাদের আয়ের ১০-১৫ শতাংশের বেশি খরচ করতে হয় না (বাসার কাজের লোক, দারোয়ান প্রমুখের জন্য চাল কেনার খরচসহ)। কোটিপতিদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ যে আরও নগণ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে চালের মূল্যবৃদ্ধির চাপ অবস্থাপন্নদের তুলনায় জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, অর্থাৎ সমাজের দরিদ্র ও হতদরিদ্রদের ওপর বহুগুণ বেশি চেপে বসে। এই চাপ পরিহার করার কোনো উপায় তাদের নেই। কারণ বেঁচে থাকার জন্য আগে খাদ্যের ব্যবস্থা করে নিয়ে তার পর অন্য খরচের কথা আসে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত বাঙালির ভালো-মন্দ এখনো তাই চালের দামের ওপর একান্তভাবে নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে বহুদিন আগের, আশির দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমি তখন ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আশ্বিন-কার্তিকের মঙ্গার কারণে বাজারে চাল তখন দুর্মূল্য। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য টেস্ট রিলিফ, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম, কাবিখা প্রভৃতি প্রকল্পের কাজ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করার দাবি নিয়ে আমরা তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটিশন নিয়ে গিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ও আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আমি মন্ত্রীকে বললাম, ‘মানুষের পেটে এখন ভাত নেই। অনাহারে থাকতে হচ্ছে। কচু-ঘেচু খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে...।’ কচু-ঘেচুর কথা তার কানে ঢুকতেই সচিব মহোদয় উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘এটা তো ভালো কথা! কচু তো ভালো জিনিস, তাতে প্রচুর আয়রন আছে।’ কিংবা সেই বিশ্বখ্যাত ঘটনাটির কথাই মনে করুন না কেন? ফরাসি বিপ্লবের আগে রাজপ্রাসাদের জানালা থেকে প্যারিসের রাজপথে ক্ষুধার্ত মানুষের ক্রোধান্বিত বিশাল মিছিল দেখে রানি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এরা চিৎকার করে কী চাচ্ছে?’ তার অনুচররা জবাব দিয়েছিল, ‘দেশে রুটির অভাব। তাই এরা রুটির জন্য চিৎকার করছে।’ রানি পাল্টা উক্তি করেছিলেন, ‘রুটি নেই তাতে তারা ক্রদ্ধ কেন? রুটির অভাব ঘটে থাকলেও ওরা তো কেক খেলেই পারে।’ কচু-ঘেচু অথবা কেক নিয়ে সচিব মহোদয় বা রানির এসব উক্তিতে যত নির্মম রসিকতাই থাকুন না কেন, বড় সত্য হলো এই যে, বাঙালির চাই ভাত। দিন আনি-দিন খাই ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসীর জন্য চালের দামের সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে আছে।
বিভিন্ন হিসাব থেকে দেখা যায়, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গত বছর মুদ্রাস্ফীতির হার যেখানে ছিল ৭.৩ শতাংশ সেখানে শুধু চালের মূল্যবৃদ্ধি এককভাবেই ৫০ শতাংশ হওয়ার ঘটনায় এ কথা প্রমাণিত হয় যে, মুদ্রাস্ফীতির প্রধান চাপ পতিত হয়েছে দরিদ্র-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর। চাল ছাড়া অন্যান্য বেশিরভাগ পণ্যের দাম, বিশেষত বিত্তবানরা যেসব জিনিসপত্র কেনার পেছনে তাদের আয়ের সিংহভাগ খরচ করে তার দাম বেড়েছে ৭.৩ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। যেমন কিনা সোনার দাম বেড়েছে ২.৫৯ শতাংশ হারে, যা গত কয়েকদিনে এখন উল্টো আরও কমতে শুরু করেছে। বাজারদর বৃদ্ধির এই বিভাজিত (differentiated) হারের কারণে সমাজে গত এক বছরে ধনবৈষম্য-শ্রেণিবৈষম্য ক্রমাগত আরও বেড়ে যাচ্ছে। যে ব্যবস্থায় দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে তাতে মূল্যবৃদ্ধির এই বিভাজিত হার অব্যাহতই থাকবে এবং এর ফলে গরিব আরও গরিব হওয়া আর ধনী আরও ধনী হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে - এটিই স্বাভাবিক।
শুধু আয়ের পার্থক্যের বিষয়টিই নয়, শ্রেণিভেদে কে কোন মানের চাল খায় সেটিও শ্রেণিবৈষম্য বৃদ্ধির উৎস হয়ে ওঠে। বাজারে বিভিন্ন মানের চাল পাওয়া যায়। একেক মানের চালের দাম একেকরকম। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গরিব মানুষরা যেসব নিম্নমানের মোটা চাল খায় সেসবের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় উচ্চবিত্তরা যেসব উন্নত মানের চাল খায় সেসবের দাম বৃদ্ধির পরিমাণ অনেকটাই কম। চালের মূল্যবৃদ্ধির চাপ ‘হজম’ করার ক্ষমতা উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্যই ‘বাজারের’ এহেন উদার ‘কনসেশন’ বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কিন্তু এরই নাম পুঁজিবাদী বাজার! এটিই হলো পুঁজিবাদের ‘অসম বিকাশ তত্ত্বের’ মূর্ত একটি দৃষ্টান্ত।
কয়েক বছর আগে প্রস্তুত করা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ৫ বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গরিব মানুষ যে মোটা চাল খায় তার ক্ষেত্রে বার্ষিক গড় মূল্যবৃদ্ধির হার হলো ১৬ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের ক্ষেত্রে তা ১১.৩ শতাংশ এবং উন্নত মানের সরু চালের ক্ষেত্রে তা ১৩.৫ শতাংশ। গত এক বছরে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এই বিপরীতমুখী বৈষম্য আরও বেড়েছে।
চালের বাজার নিয়ে এই সামগ্রিক ‘চালবাজির’ অবসান ঘটানো প্রয়োজন। এ জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা আবশ্যক সেগুলো হলো - সারা দেশে শক্তিশালী দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু করা, গরিব নাগরিকদের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, টিসিবিকে প্রকৃতই সচল ও শক্তিশালী করা, কসকোর দোকান চালু করা, উৎপাদক-সমবায় ও ক্রেতা-সমবায় গড়ে তুলে তাদের মধ্যে ‘ডাইরেক্ট টু ডাইরেক্ট’ অর্থাৎ সরাসরি বিপণন কার্যক্রম গড়ে তোলা, ন্যায্যমূল্যের সরকারি দোকান খোলা, সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বাফার স্টক গড়ে তোলা ইত্যাদি। কিন্তু তা করার জন্য ‘পুঁজিবাদী অবাধ বাজার অর্থনীতি’র ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর পথ পরিত্যাগ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারা ও রাষ্ট্রীয় চার নীতির পথে দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সমাজতন্ত্র অভিমুখিন অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করতে হবে।
বর্তমান সরকার সে পথ গ্রহণ না করে উল্টো পথে হাঁটছে। তাই চালসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সেই শক্তিকেই ক্ষমতায় আনতে হবে, যে এই উল্টো পথের বদলে মুক্তিযুদ্ধের ধারার সোজা পথ ধরে চলবে।
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
Post-editorial written by Mujahidul Islam Selim published in the 1st. October issue of Daily Amader Shomoy.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন