খোলা চিঠি লেখা নোবেল বিজয়ীরা হলেন
আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, শিরিন এবাদি, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়ামস, অসকার আরিয়াস
সানচেজ, জোডি উইলিয়ামস,
লেইমাহ বোয়ি, মালালা ইউসাফজাই, তাওয়াক্কল কারমান, এলিজাবেথ
ব্ল্যাকবার্ন, স্যার রিচার্ড জে রবার্টস।
খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদকে
মনে করিয়ে দিতে চাই যে মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবীয় ট্র্যাজেডি ও মানবতার
বিরুদ্ধে অপরাধ যে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, তার অবসানে আপনাদের জরুরি হস্তক্ষেপ
প্রয়োজন। আপনাদের এই মুহূর্তের দৃঢ় সংকল্প ও সাহসী সিদ্ধান্তের ওপর মানব ইতিহাসের
ভবিষ্যৎ গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর
সাম্প্রতিক আক্রমণে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত
হচ্ছে। বহু গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের
নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আতঙ্কের বিষয়, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে
এই এলাকায় প্রায় একবারেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, যার কারণে
দারিদ্র্যপীড়িত এই এলাকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্থানীয় সরকার
সূত্রগুলোর মতে, গত দুই সপ্তাহে ৩ লাখের বেশি মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে
প্রবেশ করেছে। মৃত্যুর মুখে নারী,
পুরুষ ও শিশুদের এই ব্যাপক
বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সম্ভাব্য সব হস্তক্ষেপের অনুরোধ
জানাচ্ছি, যাতে নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে সামরিক আক্রমণ স্থায়ীভাবে
বন্ধ হয়, যাতে এই অসহায় মানুষগুলোকে নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে এবং
রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হতে না হয়।
বিশিষ্ট এই ব্যক্তিরা বলেন, মিয়ানমার সরকার যে
যুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে তা একেবারেই আজগুবি। সে দেশের
সামরিক শাসকেরা হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে বসে যে রোহিঙ্গারা বার্মিজ নয়। এরপর তারা
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় এবং সে দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করার জন্য বিভিন্ন
সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে। শুরু হয় জাতিগত ও ধর্মীয় নিধনের উদ্দেশ্যে
রোহিঙ্গাদের ওপর সুপরিকল্পিত নির্যাতন। তাঁরা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে
মিয়ানমার সরকার ২০১৬ সালে যে ‘রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন’ গঠন করেছিল, তার সুপারিশগুলো
বাস্তবায়নে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। কফি আনানের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিশন, যার অধিকাংশ সদস্যই
ছিলেন মিয়ানমারের নাগরিক।
নোবেল বিজয়ীসহ বিভিন্ন দেশের ২৯
বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, স্থায়ী শান্তির জন্য গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতির আরও
অবনতি ঘটবে, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তাঁরা কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাতটি সুপারিশ করেছেন। এগুলো হলো
আনান কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অবিলম্বে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা, শরণার্থীর প্রবাহ
বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিতভাবে
পীড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানানো, যেসব শরণার্থী ইতিমধ্যে দেশ ত্যাগ
করেছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, ফিরে যাওয়া
শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে
ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন, আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ মোতাবেক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব
দেওয়া, রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত
করা।
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সংকট
অবসানের জন্য জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি
লিখেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ২৯ জন। তাঁরা সংকট উত্তরণে
নিরাপত্তা পরিষদকে সম্ভাব্য সব হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা
পরিষদ এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন
করেছে—বিশ্ববাসী এটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন