একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ভবিষ্যৎ জাতীয় সংসদ ও সরকার নিয়ে এখন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনার জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘রাষ্ট্রক্ষমতায়’ কারা অধিষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু এমন একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে যে, এটিই হলো দেশের ‘রাষ্ট্রক্ষমতার’ প্রশ্নে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। এ কথা ঠিক যে, জাতীয় সংসদ দেশের ‘আইন প্রণয়ন’ করে থাকে এবং সরকার ‘জাতীয় পর্যায়ে নির্বাহী কর্তৃত্ব’ প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার কর্তৃত্বের বিষয়টি শুধু এই একক জায়গায় পরিপূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত নয়। বিভিন্ন স্তরের ‘স্থানীয় সরকার সংস্থা’ যথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিও রাষ্ট্রের ‘ক্ষমতাকাঠামোর’ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ ‘স্বশাসিত স্থানীয় সরকারের’ বিষয়টি বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি আলোচনায়ও ন্যক্কারজনকভাবে অবহেলিত।
স্থানীয় স্বশাসনের ব্যবস্থাটি আমাদের সমাজে সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। রাজা-মহারাজারা রাজ্য চালাতেন। পরস্পর যুদ্ধ করতেন। রাজ্যের-সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ভাঙাগড়া চলত। এসবের মাঝেই প্রশান্ত লয়ে আপন তালে প্রবাহিত হতো গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক-সামাজিক এককগুলো। অনেকেই একে ‘এশিয়েটিক সোসাইটি’ বলে বিশেষায়িত করেছেন। তারই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থার গণসংস্থাগুলো দ্বারা লালিত হতো গ্রামের এই প্রবহমান ফল্গুধারা। মাতব্বর, সর্দার ইত্যাদিসহ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ধারণার মধ্য দিয়ে সেই প্রাচীন গণশাসন কাঠামোর প্রতিচ্ছবি এখনো আমরা কিছুটা খুঁজে পাই।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা অচলায়তনের ধারায় সেই স্বশাসিত স্থানীয় শাসনব্যবস্থার ওপর প্রথম সবচেয়ে বড় রকম ধাক্কা আসে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত থেকে। ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে দেশের সর্বত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপ্ত করার রাজনৈতিক প্রয়োজনে স্থানীয় স্বশাসনব্যবস্থাকে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত করার পদক্ষেপ নেয়। ১৮৮৫ সালে তারা আমাদের দেশে প্রবর্তন করে ইউনিয়ন বোর্ড নামক সংস্থা। এর ফলে প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বড় রকম বিকৃতি সাধিত হয়েছিল। স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থা কার্যত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক শাসন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এগুলো হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্থানীয় চৌকি’। তবে এসব সত্ত্বেও তৃণমূলের নিবিড় সামাজিক শাসন প্রক্রিয়ার যেসব কাজ প্রাচীনকাল থেকে স্বশাসিত সংস্থাগুলো পরিচালনা করত, সেসব কাজের অনেকগুলোই ব্রিটিশদের তৈরি এসব ইউনিয়ন বোর্ডকেও অব্যাহত রাখতে হয়েছিল।
সেই ইউনিয়ন বোর্ড, জেলা বোর্ড ইত্যাদির উত্তরাধিকার বহন করেই সমকালীন ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদের গঠনধারা রচিত হয়েছে। আইয়ুব আমলে মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এদের দলীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর রচিত সংবিধানে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সাধিত এই মৌলিক বিকৃতি বহুলাংশে রদ করে তাকে তার প্রকৃত গণতান্ত্রিক মর্মবাণীর ভিত্তিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে সংবিধানে সম্পূর্ণ একটি পৃথক পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এবার তা হলে দেখা যাক, স্থানীয় সরকার সম্পর্কে দেশের সংবিধানে আসলে কী আছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি শিরোনামে ৯নং ধারায় এ বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণ সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দান করিবেন...।’ এখানে ‘সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি’ এবং তাদের ‘সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান’ - এই শব্দগুলো থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের’ বিষয়টিকেই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। অতঃপর ১১নং ধারায় গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ‘... এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ এখানে ‘সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে’ শব্দগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টিকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
অবশ্য সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের এসব বয়ান সম্পর্কে কেউ বলার চেষ্টা করতে পারেন যে, এগুলো তো রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কিত কথা। এসব হলো রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এসব এখনই অনুসরণ করতে হবে, সংবিধানে তেমন কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কথা সত্য! তা হলে দেখা যাক, সংবিধানের অন্যত্র এ বিষয়ে আর কী বলা আছে।
সংবিধানের চতুর্থ ভাগের (নির্বাহী বিভাগ সংক্রান্ত ভাগ) তৃতীয় পরিচ্ছেদে ‘স্থানীয় শাসন’ শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পৃথক অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে যা বলা হয়েছে, তা আইনত বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয়। এ ক্ষেত্রে ৫৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনভার প্রদান করা হইবে।’ এখানে ‘প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনভার’ শব্দের দ্বারা স্পষ্টতই স্ব-স্ব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর এলাকা ইত্যাদির কথাই বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সেই স্থানীয় শাসনের ভার কার ওপর তা হলে অর্পণের কথা বলা হয়েছে? সে সম্পর্কে সংবিধানের স্পষ্ট নির্দেশনা হলো, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর।’ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদি সংস্থার ওপর। যেগুলো কিনা নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হতে হবে। এসব থেকে এ বিষয়টিই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইউনিয়ন স্তরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্য, উপজেলা স্তরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য, জেলা স্তরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সদস্যরা ইত্যাদির ওপর সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় শাসনভার অর্পিত হবে। এসব স্থানীয় পর্যায়ের কোনো স্তরের কর্মকা-ের ক্ষেত্রেই সংসদ সদস্য অথবা ইউএনও-কে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে কর্তৃত্ব প্রদানের প্রশ্ন কোনোক্রমেই আসতে পারে না।
কিন্তু সেই সাংবিধানিক পথনির্দেশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। রাষ্ট্রের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ আগাগোড়া যে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাতে থেকে গেছে, তারা তা আজও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। নিজের পায়ে কি সহজে কেউ কুড়াল মারতে রাজি হয়? আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের ওপর তাদের যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে চলেছে তা যেন হাতছাড়া না হয়, সে জন্য তারা মরিয়া হয়ে বাধা দিয়ে চলেছে ও ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
স্থানীয় স্বশাসিত সরকার সংস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। একদিকে তা ‘স্বশাসিত’ তথা নির্বাচিত এবং অন্যদিকে ‘সরকার’ অর্থাৎ নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগকারী। সে কারণেই এই উভয় দিকের কায়েমি শক্তিধরদের থেকে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে আছে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ‘অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন নির্বাচিত প্রতিনিধি’ বলে দাবিদার জাতীয় সংসদের সাংসদদের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে রয়েছে সরকারের ঊর্ধ্বতন স্তরের ‘বড় কর্তাদের’ দ্বারা পরিচালিত আমলাতান্ত্রিক কৌলীন্য ব্যবস্থা ও তার নিয়ন্ত্রিত তৃণমূলের আমলা ব্যবস্থার ‘ছোট কর্তাদের’ থেকে চ্যালেঞ্জ। সাংসদরা বলার চেষ্টা করেন যে, আমরাই তো ‘আসল’ নির্বাচিত প্রতিনিধি, তোমরা আবার কে? হ্যাঁ, তোমরা নির্বাচিত হয়ে থাকলেও সেই নির্বাচন ‘কম দামের’, তাই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তোমরা জাতীয় সংসদ সদস্যদের অধীনস্থ জুনিয়র পার্টনার মাত্র। আমলারা বলে থাকেন, তোমরা যেহেতু ‘সরকার’ তাই তোমরা দেশের ইউনিটারি সরকার ব্যবস্থার কর্তৃত্বের একটি তৃণমূলের অংশমাত্র। তোমাদের ‘আসল’ সরকারের নির্দেশ, যা কিনা আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে ওপর থেকে নিচ বরাবর প্রবাহিত, তা মেনে চলতে হবে।
তাই এ কথা বলা যায় যে, দুই গালে দুই তরফের বিরাশি সিক্কা ওজনের চপেটাঘাত খেয়ে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আজ চিতপটাং হওয়ার অবস্থা হয়েছে। একদিক থেকে ‘এমপিতন্ত্রের’ দড়াম্ ঘুষি, অন্যদিক থেকে ‘আমলাতন্ত্রের’ শক্তিশেল। এমপিতন্ত্র ও আমলাতন্ত্র এই দু’তরফের দ্বিমুখী আক্রমণের মুখে পড়ে স্থানীয় সরকারের এখন মরণদশা উপস্থিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের সংস্থাগুলো হয়ে উঠতে পারত সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু এগুলোকে জনগণের ক্ষমতায়ন প্রসারিত ও গভীরতর করার পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তৃণমূলে তার ক্ষমতার খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা সব সময়ই করা হয়েছে। তাই ক্ষমতার দড়ি টানাটানির খেলায়, একদিকে আমলাতন্ত্র আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রভৃতি বড় বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো, স্থানীয় সংস্থার ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সব সময় মরিয়া থেকেছে। স্থানীয় সংস্থাকে পূর্ণ স্বশাসনের ক্ষমতা দিলে তাদের ক্ষমতার দাপট আগের মতো আর থাকবে না, এই ভয়ে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টাকে নস্যাৎ করতে তারা সব সময় তৎপর ও বেপরোয়া থেকেছে।
ইউনিয়ম পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা। প্রজেক্টের কাজ, বিধবা ভাতা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদি হরেকরকমের কাজ সেখান থেকে করতে হয়। করার কথা। বিষয় হলো, এগুলোই ‘পাওয়ার’ দেখানোর আসল জায়গা। এই ‘পাওয়ার’ স্থানীয় সংস্থার হাতে ছেড়ে দিলে এমপি হওয়ার কিংবা আমলা হওয়ার ‘চার্ম’ আর থাকে না। তাই আমলা ও এমপিরা এসব বিষয়ে তাদের কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ।
ব্যাপারটা শুধু ‘পাওয়ারের’ বিষয় নয়। এই পাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে আর্থিক স্বার্থের ব্যাপারও। রাস্তাঘাট নির্মাণের টেন্ডার থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, গমের প্রজেক্ট অনুমোদন - সবকিছুর সঙ্গে জড়িত রয়েছে লেনদেন আর বিপুল পরিমাণের উপরি-আয়ের ব্যাপার। এরূপ মোহনীয় আর্থিক সুযোগকে তারা কি স্বেচ্ছায় ছাড়তে রাজি হতে পারে? তাই তো উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের মূল কর্তৃত্ব নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে দিতে তাদের এত আপত্তি।
এরশাদী স্বৈরাচারের আমলে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বলা হয়েছিল, প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বিকেন্দ্রীকরণ মোটেও গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের কোনো পদক্ষেপ ছিল না। সেটি আসলে ছিল স্বৈরতন্ত্রের শাখা-প্রশাখা তৃণমূলে বিস্তৃত করার একটি দুরভিসন্ধিমূলক প্রয়াসমাত্র। জেলখানায় আটক রেখে বন্দিদের স্বশাসন প্রদানকে যেমন মুক্তি প্রদান বলা যায় না, সামরিক স্বৈরশাসন বহাল রেখে উপজেলা পরিষদ গঠনকেও তেমনই ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা নিছক তামাশা বৈ অন্য কিছু নয়।
স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব সম্পর্কিত সংবিধানে উল্লিখিত বিধান দেশের বুর্জোয়া দলগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তারা তা করবেও না। কারণ তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা তারা রাখে না। লুটেরা ধনতন্ত্রের যে ধারায় তারা দেশ চালাচ্ছে তার সঙ্গে জনগণের স্বার্থের মৌলিক দ্বন্দ্ব বিরাজ করে। তাই জনগণের ক্ষমতায়ন ও সেই লক্ষ্যে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ বুর্জোয়া দলগুলোর মৌলিক স্বার্থের পরিপন্থী। লুটেরা ধনবাদের ধারায় বুর্জোয়া দলগুলোর শাসন এবং স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন - এ দুটি বিষয় হলো পরস্পর বৈরী তথা ‘অ্যান্টিথেসিস’। স্থানীয় সরকারের ইস্যুটি তাই স্পষ্টতই লুটেরা ধনতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি সমাজ বিপ্লব সংগঠিত করার কর্তব্যের সঙ্গে জড়িত। এ কাজের দায়িত্বটি তাই সমাজ বিপ্লবের অগ্রণী শ্রেণিশক্তি তথা শ্রমজীবী জনগণ ও সমাজ বিপ্লবের কর্মীদেরই কাঁধে তুলে নিতে হবে।
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
Post-editorial written by Mujahidul Islam Selim published in the 29th. October issue of Daily Amader Shomoy.