Biplobi Barta

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ-সিপিবি কার্যালয়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশের নবনিযুক্ত ভিয়েতনামের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মি. ট্রান ভ্যান খোয়া আজ ৩১ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এসময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী এবং ভিয়েতনাম দূতাবাসের তৃতীয় সচিব মি. ট্রাণ বাত্ত সন উপস্থিত ছিলেন।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে ফুল দিয়ে পার্টি কার্যালয়ে স্বাগত জানান এবং রাষ্ট্রদূত ভিয়েতনাম সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত উপহার সিপিবি সভাপতির হাতে তুলে দেন। দ্বি-পাক্ষিক এ বৈঠকে কমরেড সেলিম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিপ্লবী সরকারের সমর্থন ও ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, দু দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে এবং একে অপরের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। কমরেড সেলিম অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কমরেড সেলিম অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের অগ্রগতি এবং সেদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অবদানের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি এ সমস্ত ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
মানব্যবর রাষ্ট্রদূত ট্রাণ ভ্যান খোয়া ভিয়েতনামের সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সিপিবি সভাপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিপিবি উল্লেখযোগ্য এবং গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রদূত ও দু দেশের জনগণ ও পার্টির মধ্যকার সম্পর্ক আরো জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭

শ্রম আইন নামে দাসত্বের শিকল



শ্রম আইনশুনলেই প্রথমে ধারণা হয় এই আইন শ্রমিকদের জন্য। প্রকৃতপক্ষে আইন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্যইতো হওয়া উচিৎ। যেই শ্রমিকদের শ্রমের ফলে মানব সভ্যতা বিকশিত হয়, প্রকৃতির সাথে সেই শ্রম যুক্ত হয়ে এই জগতের সকল বস্তু তৈরি হয়, পরিবর্তন হয়, মানুষের ব্যবহারযোগ্য হয়, যেই শ্রমিকের শ্রম ছাড়া এই দুনিয়া এক মুহূর্তও চলতে পারে- সেই শ্রমিকশ্রেণি শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে শোষণ ও বঞ্চনায় নিষ্পেষিত। বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী ঔপনিবেশিক শাসনের নামে আমাদের সম্পদ লুণ্ঠনের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের জনগণের ওপর তীব্র শোষণ ও দমনীতি চালিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসকরা যখন মানবিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পায়ের তলায় পিষ্ঠ করে আমাদের ওপর শোষণের স্টিমরুলার চালায় তার প্রধান শিকার হন শ্রমজীবী মেহনতি জনগণ। এ যাবৎকাল শ্রমিকের ওপর মালিকের শোষণ, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার-নির্যাতন যেমন চলছে তেমনি শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামেরও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ব্রিটিশের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন রকম আন্দোলন সংগ্রাম করে নানান অধিকার আদায় করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম বৃটেনে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ও অধিকার সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন হয় ১৮৮০ সালে। ভারতের শ্রমিকদের পর্ব থেকেও আইন প্রণয়নের দাবি তোলা হয় এবং পরের বছর ১৮৮১ সালে ভারতীয় শিল্প আইননামে আইন প্রণীত হয়। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য আইন প্রণীত হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পরেও ভারতবর্ষে/পাকিস্তানেও সেই আইনগুলো বহাল ছিল। যার ফলে তখন ৭ জন শ্রমিক মিলে একটি ইউনিয়ন করতে পারতো। ১৯৬৯ সালে সেই আইন পরিবর্তন করে ৩০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য না হলে ইউনিয়ন করা যাবে না মর্মে শর্ত জুড়ে দিয়ে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার খর্ব করা হয়। যাতে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসরণ করা হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৭ জন, ভিয়েতনামে ৮ জন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ায় ১০ জন শ্রমিক মিলে একটি ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান এখনও বহাল আছে। অতএব পূর্বের ন্যায় ৭ জন শ্রমিক একত্রিত হলেই একটি ইউনিয়ন করার অধিকার এখন সময়ের দাবি। শ্রমিক ও নাগরিক এবং মানুষকে রেজিষ্ট্রেশনের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখাটাই মানবাধিকার পরিপন্থি। ফলে মানবাধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি বাতিল করা আবশ্যক। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও বার বার শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়েছে নানাভাবেই। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যে সকল কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এদেশের আইন প্রণয়ন ও কার্যকর সেই সকল কনভেনশন অনুসারেই হওয়ার কথা। তার কোনোটাই হচ্ছে না। মজুরির ক্ষেত্রেও তাই কনভেনশন ১৩১ অনুসারে শ্রমিকের পরিবারের মানবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করার মতো মজুরি প্রদান করার কথা, তা আজও করা হয়নি। এমনিভাবে যেমন আইএলও কনভেনশন মানা হচ্ছে না, তেমনি দেশের সংবিধান, শ্রমনীতি এবং সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাও মানা হচ্ছে না। কেননা বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সকল নাগরিকের স্বাধীনভাবে সংগঠন করা ও মত প্রকাশের অধিকার থাকলেও শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে আইন-বিধি এমনভাবে করা হচ্ছে যেন আইন-কানুনই শ্রমিকদের হাতে পায়ে শিকল বেঁধে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। পাকিস্তান আমল থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ১৯ (ক) ধারাবলে শ্রমিকদেরকে চাকুরিচ্যুত করার অবাধ অধিকার মালিকদের ছিল। পরবর্তীতে সেই ধারা পরিবর্তন করে ১৯ (ক) এর পরিবর্তে ধারা ২৬ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন প্রকার কারণ ছাড়াই শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করার অবাধ অধিকার মালিককে দেয়া হয়েছে। যা বাতিলের জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে শ্রমনীতি করা হয়েছে ২০১২ সালে, যেখানে স্বীকার করা হয়েছে যে, লড়াই সংগ্রামের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও শ্রমিকদের অবদান সর্বজনবিদিত। এই শ্রমনীতি স্বীকার করছে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের শোষণমুক্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা। আসলে যেমন শিয়ালের কাছে মুরগি বরগা দিয়ে মুরগির নিরাপত্তা আশা করা আহাম্মকি ছাড়া কিছুই না তেমনি লুটেরা ধনিক গোষ্ঠীর কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা রেখে স্বাধীনতার স্বপ্ন, শ্রমিক কৃষকের অধিকার চাওয়া চরম আহাম্মকি। এর জন্য প্রয়োজন শ্রমিকশ্রেণির রাজনৈতিক উত্থান এবং শ্রমিক রাজ কায়েম করা। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে সকল সরকারের আমলেই উন্নয়নের কথা, অধিকার বাস্তবায়নের কথা শুনছি। কিন্তু শ্রমিকদের আইনানুগ অধিকার, সামাজিক অধিকার সবকিছু ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকশ্রেণির সাথে সব সরকারই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আজ শুধু শ্রম আইনের কতিপয় বিষয় তুলে ধরছিপরবর্তীতে এর সুফল ও কুফল বিস্তারিত বলবো। শ্রমনীতি অনুসারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদনশীল, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্ত ও সংশোধনের কথা বলা থাকলেও করা হচ্ছে তার উল্টাটা। বিএনপির শাসনামলে ২০০৬ সালে অতীতের সকল আইন, বিধি ও অধ্যাদেশ বাতিল করে শ্রম আইন-২০০৬ প্রণয়ন করে শ্রমিকদের অনেকগুলো অধিকার কর্তন করা হয়। একই সাথে এমন কতগুলো শর্ত আরোপ করা হয় যাতে মালিকরা ইচ্ছামত শ্রমিকদের চালাতে পারে। শ্রমিকদের স্বাধীনতা বলে কিছু রাখা হয়নি। যার ফলে আমরা শ্রমিকরা আইন সংশোধন করার দাবি তুলেছিলাম। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ওয়াদা করলেন ক্ষমতায় গেলে তারা শ্রমিকদের দাবি অনুসারে আইন সংশোধন করবেন। ক্ষমতায় আসার অনেক পরে রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনের হত্যাকাণ্ডের পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান চাপে শ্রম আইনের ৮৭টি ধারা সংশোধন করা হয়। সেখানে প্রায় সবগুলোতেই শ্রমিকদের দাবিকে উপেক্ষা করে মালিকদের স্বার্থে সংরক্ষণ করা হয়। পরিশেষে ২০১৫ সালে করা হয় শ্রমবিধিমালা। যেটি শ্রমিক নির্যাতনের হাতিয়ার। কেননা শ্রম আইনের ধারা ৩৫১ অনুসারে আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। অথচ এই বিধিমালাটি হুবহু মালিকদের করে দেয়া। যা শ্রম আইনের সাথেও অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সাংঘর্ষিক। বাস্তবে বার বার আইন, বিধি ইত্যাদি প্রণয়ন-সংশোধন যাহাই করা হচ্ছে তার সবটাতেই শ্রমিকদের সাথে ধাপ্পাবাজি করে স্বাধীনতার লক্ষ্যকে নস্যাৎ করে মালিকদেরকে শ্রম শোষণের মাত্রা বাড়িে দেয়ার পথ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। ২০১৬-১৭ সালের আইএলও কনফারেন্সে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত যেসব সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে আইএলওর নির্দেশক্রমে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনের জন্য ত্রি-পক্ষীয় কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী নভেম্বর২০১৭ এর মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনের কথা থাকায় ত্রি-পক্ষীয় আলোচনা চলছে। আলোচনা চলাকালীন ত্রি-পক্ষীয় মতামত ছাড়াই সরকার আইএলওর নিকট একটি সুপারিশমালা পেশ করেছে। মালিকদের শর্ত পূরণের জন্য সরকারের এক তরফা প্রস্তাবনাকে প্রত্যাখান করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে। কাগজপত্রে কার্যক্রম চালালে আর প্রত্যাখান করলেই হবে না, বাংলাদেশে ৬ কোটিরও বেশি শ্রমিক যাদের জীবন আজ বিপন্ন, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা সেইসব শ্রমিকদেরকে মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী বর্তমান শ্রম আইন দ্বারা শোষণ করেও লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী মালিকদের এবং তাদের সরকারের সন্তুষ্টি হচ্ছে না। এক সময় যেমন শ্রমিকের পায়ের সাথে লোহার শিকল দিয়ে মেশিনে বেঁধে কাজ করানো হতো এখন শ্রম আইন নামক শিকলে বাঁধার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। প্রয়োজন শ্রেণি সচেতন তীব্র শ্রমিক আন্দোলন, যেই শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রমিকশ্রেণির অর্থনৈতিক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। শ্রম দাসত্বের শিকল ভাঙতে হবে, সমাজতন্ত্র কায়েমের চেতনা শ্রমিকদের মাঝে নিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। সেই শক্তি শ্রমিক শ্রেণির আছে। আসুন শ্রম আইনের এই সংগ্রাম, মজুরির সংগ্রামে কমিউনিস্টরা যুক্ত হই, সফল হই। তাহলে এই সফলতার পথ ধরেই বিপ্লবের পথ রচনা হবে। শ্রমদাসত্বের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত শ্রম আইন নামক শিকল ভেঙে ফেলতে হবে। বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী।
লেখক : কাজী রুহুল আমিন, কার্যকরি সভাপতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

আশুলিয়া থানা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত




আজ ২৯ অক্টোবর ২০১৭ রোজ রবিবার দুপুর ২ ঘটিকায় আশুলিয়ার ইউনিক (ফকির বাড়ী) আলমের রিক্সা গ্যরেজে আশুলিয়া থানা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় । সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন আশুলিয়া থানা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রপ্ত সভাপতি আলম পারভেজ । সভায় আলচনা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ সভাপতি শ্রমিকনেতা ইদ্রীস আলী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শ্রমিকনেতা খাইরুল মামুন মিন্টু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সহ সভাপতি শ্রমিকনেতা সাইফুল্লাহ আল মামুন, আশুলিয়া থানা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল মজিদ, সাধারন সম্পাদক আলতাফ হোসেন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মামুন দেওয়ান, গাজীরচট ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ্‌ আলম । সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ।
সভা থেকে আগামী ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ আশুলিয়া থানা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের প্রথম সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয় ।

শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭

জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্থানীয় সরকার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ভবিষ্যৎ জাতীয় সংসদ ও সরকার নিয়ে এখন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনার জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘রাষ্ট্রক্ষমতায়’ কারা অধিষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু এমন একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে যে, এটিই হলো দেশের ‘রাষ্ট্রক্ষমতার’ প্রশ্নে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। এ কথা ঠিক যে, জাতীয় সংসদ দেশের ‘আইন প্রণয়ন’ করে থাকে এবং সরকার ‘জাতীয় পর্যায়ে নির্বাহী কর্তৃত্ব’ প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার কর্তৃত্বের বিষয়টি শুধু এই একক জায়গায় পরিপূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত নয়। বিভিন্ন স্তরের ‘স্থানীয় সরকার সংস্থা’ যথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিও রাষ্ট্রের ‘ক্ষমতাকাঠামোর’ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ ‘স্বশাসিত স্থানীয় সরকারের’ বিষয়টি বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি আলোচনায়ও ন্যক্কারজনকভাবে অবহেলিত।
স্থানীয় স্বশাসনের ব্যবস্থাটি আমাদের সমাজে সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। রাজা-মহারাজারা রাজ্য চালাতেন। পরস্পর যুদ্ধ করতেন। রাজ্যের-সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ভাঙাগড়া চলত। এসবের মাঝেই প্রশান্ত লয়ে আপন তালে প্রবাহিত হতো গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক-সামাজিক এককগুলো। অনেকেই একে ‘এশিয়েটিক সোসাইটি’ বলে বিশেষায়িত করেছেন। তারই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থার গণসংস্থাগুলো দ্বারা লালিত হতো গ্রামের এই প্রবহমান ফল্গুধারা। মাতব্বর, সর্দার ইত্যাদিসহ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ধারণার মধ্য দিয়ে সেই প্রাচীন গণশাসন কাঠামোর প্রতিচ্ছবি এখনো আমরা কিছুটা খুঁজে পাই।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা অচলায়তনের ধারায় সেই স্বশাসিত স্থানীয় শাসনব্যবস্থার ওপর প্রথম সবচেয়ে বড় রকম ধাক্কা আসে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত থেকে। ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে দেশের সর্বত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপ্ত করার রাজনৈতিক প্রয়োজনে স্থানীয় স্বশাসনব্যবস্থাকে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত করার পদক্ষেপ নেয়। ১৮৮৫ সালে তারা আমাদের দেশে প্রবর্তন করে ইউনিয়ন বোর্ড নামক সংস্থা। এর ফলে প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বড় রকম বিকৃতি সাধিত হয়েছিল। স্থানীয় স্বশাসিত ব্যবস্থা কার্যত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক শাসন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এগুলো হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্থানীয় চৌকি’। তবে এসব সত্ত্বেও তৃণমূলের নিবিড় সামাজিক শাসন প্রক্রিয়ার যেসব কাজ প্রাচীনকাল থেকে স্বশাসিত সংস্থাগুলো পরিচালনা করত, সেসব কাজের অনেকগুলোই ব্রিটিশদের তৈরি এসব ইউনিয়ন বোর্ডকেও অব্যাহত রাখতে হয়েছিল।
সেই ইউনিয়ন বোর্ড, জেলা বোর্ড ইত্যাদির উত্তরাধিকার বহন করেই সমকালীন ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদের গঠনধারা রচিত হয়েছে। আইয়ুব আমলে মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এদের দলীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর রচিত সংবিধানে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সাধিত এই মৌলিক বিকৃতি বহুলাংশে রদ করে তাকে তার প্রকৃত গণতান্ত্রিক মর্মবাণীর ভিত্তিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে সংবিধানে সম্পূর্ণ একটি পৃথক পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এবার তা হলে দেখা যাক, স্থানীয় সরকার সম্পর্কে দেশের সংবিধানে আসলে কী আছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি শিরোনামে ৯নং ধারায় এ বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণ সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দান করিবেন...।’ এখানে ‘সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি’ এবং তাদের ‘সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান’ - এই শব্দগুলো থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের’ বিষয়টিকেই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। অতঃপর ১১নং ধারায় গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ‘... এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ এখানে ‘সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে’ শব্দগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টিকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
অবশ্য সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের এসব বয়ান সম্পর্কে কেউ বলার চেষ্টা করতে পারেন যে, এগুলো তো রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কিত কথা। এসব হলো রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এসব এখনই অনুসরণ করতে হবে, সংবিধানে তেমন কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কথা সত্য! তা হলে দেখা যাক, সংবিধানের অন্যত্র এ বিষয়ে আর কী বলা আছে।
সংবিধানের চতুর্থ ভাগের (নির্বাহী বিভাগ সংক্রান্ত ভাগ) তৃতীয় পরিচ্ছেদে ‘স্থানীয় শাসন’ শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ পৃথক অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে যা বলা হয়েছে, তা আইনত বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয়। এ ক্ষেত্রে ৫৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনভার প্রদান করা হইবে।’ এখানে ‘প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনভার’ শব্দের দ্বারা স্পষ্টতই স্ব-স্ব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর এলাকা ইত্যাদির কথাই বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সেই স্থানীয় শাসনের ভার কার ওপর তা হলে অর্পণের কথা বলা হয়েছে? সে সম্পর্কে সংবিধানের স্পষ্ট নির্দেশনা হলো, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর।’ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদি সংস্থার ওপর। যেগুলো কিনা নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হতে হবে। এসব থেকে এ বিষয়টিই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইউনিয়ন স্তরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্য, উপজেলা স্তরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য, জেলা স্তরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সদস্যরা ইত্যাদির ওপর সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় শাসনভার অর্পিত হবে। এসব স্থানীয় পর্যায়ের কোনো স্তরের কর্মকা-ের ক্ষেত্রেই সংসদ সদস্য অথবা ইউএনও-কে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে কর্তৃত্ব প্রদানের প্রশ্ন কোনোক্রমেই আসতে পারে না।
কিন্তু সেই সাংবিধানিক পথনির্দেশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। রাষ্ট্রের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ আগাগোড়া যে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাতে থেকে গেছে, তারা তা আজও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। নিজের পায়ে কি সহজে কেউ কুড়াল মারতে রাজি হয়? আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের ওপর তাদের যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে চলেছে তা যেন হাতছাড়া না হয়, সে জন্য তারা মরিয়া হয়ে বাধা দিয়ে চলেছে ও ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
স্থানীয় স্বশাসিত সরকার সংস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। একদিকে তা ‘স্বশাসিত’ তথা নির্বাচিত এবং অন্যদিকে ‘সরকার’ অর্থাৎ নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগকারী। সে কারণেই এই উভয় দিকের কায়েমি শক্তিধরদের থেকে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে আছে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ‘অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন নির্বাচিত প্রতিনিধি’ বলে দাবিদার জাতীয় সংসদের সাংসদদের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে রয়েছে সরকারের ঊর্ধ্বতন স্তরের ‘বড় কর্তাদের’ দ্বারা পরিচালিত আমলাতান্ত্রিক কৌলীন্য ব্যবস্থা ও তার নিয়ন্ত্রিত তৃণমূলের আমলা ব্যবস্থার ‘ছোট কর্তাদের’ থেকে চ্যালেঞ্জ। সাংসদরা বলার চেষ্টা করেন যে, আমরাই তো ‘আসল’ নির্বাচিত প্রতিনিধি, তোমরা আবার কে? হ্যাঁ, তোমরা নির্বাচিত হয়ে থাকলেও সেই নির্বাচন ‘কম দামের’, তাই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তোমরা জাতীয় সংসদ সদস্যদের অধীনস্থ জুনিয়র পার্টনার মাত্র। আমলারা বলে থাকেন, তোমরা যেহেতু ‘সরকার’ তাই তোমরা দেশের ইউনিটারি সরকার ব্যবস্থার কর্তৃত্বের একটি তৃণমূলের অংশমাত্র। তোমাদের ‘আসল’ সরকারের নির্দেশ, যা কিনা আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে ওপর থেকে নিচ বরাবর প্রবাহিত, তা মেনে চলতে হবে।
তাই এ কথা বলা যায় যে, দুই গালে দুই তরফের বিরাশি সিক্কা ওজনের চপেটাঘাত খেয়ে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আজ চিতপটাং হওয়ার অবস্থা হয়েছে। একদিক থেকে ‘এমপিতন্ত্রের’ দড়াম্ ঘুষি, অন্যদিক থেকে ‘আমলাতন্ত্রের’ শক্তিশেল। এমপিতন্ত্র ও আমলাতন্ত্র এই দু’তরফের দ্বিমুখী আক্রমণের মুখে পড়ে স্থানীয় সরকারের এখন মরণদশা উপস্থিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের সংস্থাগুলো হয়ে উঠতে পারত সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু এগুলোকে জনগণের ক্ষমতায়ন প্রসারিত ও গভীরতর করার পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তৃণমূলে তার ক্ষমতার খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা সব সময়ই করা হয়েছে। তাই ক্ষমতার দড়ি টানাটানির খেলায়, একদিকে আমলাতন্ত্র আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রভৃতি বড় বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো, স্থানীয় সংস্থার ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সব সময় মরিয়া থেকেছে। স্থানীয় সংস্থাকে পূর্ণ স্বশাসনের ক্ষমতা দিলে তাদের ক্ষমতার দাপট আগের মতো আর থাকবে না, এই ভয়ে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টাকে নস্যাৎ করতে তারা সব সময় তৎপর ও বেপরোয়া থেকেছে।
ইউনিয়ম পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা। প্রজেক্টের কাজ, বিধবা ভাতা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদি হরেকরকমের কাজ সেখান থেকে করতে হয়। করার কথা। বিষয় হলো, এগুলোই ‘পাওয়ার’ দেখানোর আসল জায়গা। এই ‘পাওয়ার’ স্থানীয় সংস্থার হাতে ছেড়ে দিলে এমপি হওয়ার কিংবা আমলা হওয়ার ‘চার্ম’ আর থাকে না। তাই আমলা ও এমপিরা এসব বিষয়ে তাদের কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ।
ব্যাপারটা শুধু ‘পাওয়ারের’ বিষয় নয়। এই পাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে আর্থিক স্বার্থের ব্যাপারও। রাস্তাঘাট নির্মাণের টেন্ডার থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, গমের প্রজেক্ট অনুমোদন - সবকিছুর সঙ্গে জড়িত রয়েছে লেনদেন আর বিপুল পরিমাণের উপরি-আয়ের ব্যাপার। এরূপ মোহনীয় আর্থিক সুযোগকে তারা কি স্বেচ্ছায় ছাড়তে রাজি হতে পারে? তাই তো উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের মূল কর্তৃত্ব নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে দিতে তাদের এত আপত্তি।
এরশাদী স্বৈরাচারের আমলে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বলা হয়েছিল, প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বিকেন্দ্রীকরণ মোটেও গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের কোনো পদক্ষেপ ছিল না। সেটি আসলে ছিল স্বৈরতন্ত্রের শাখা-প্রশাখা তৃণমূলে বিস্তৃত করার একটি দুরভিসন্ধিমূলক প্রয়াসমাত্র। জেলখানায় আটক রেখে বন্দিদের স্বশাসন প্রদানকে যেমন মুক্তি প্রদান বলা যায় না, সামরিক স্বৈরশাসন বহাল রেখে উপজেলা পরিষদ গঠনকেও তেমনই ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা নিছক তামাশা বৈ অন্য কিছু নয়।
স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব সম্পর্কিত সংবিধানে উল্লিখিত বিধান দেশের বুর্জোয়া দলগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তারা তা করবেও না। কারণ তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা তারা রাখে না। লুটেরা ধনতন্ত্রের যে ধারায় তারা দেশ চালাচ্ছে তার সঙ্গে জনগণের স্বার্থের মৌলিক দ্বন্দ্ব বিরাজ করে। তাই জনগণের ক্ষমতায়ন ও সেই লক্ষ্যে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ বুর্জোয়া দলগুলোর মৌলিক স্বার্থের পরিপন্থী। লুটেরা ধনবাদের ধারায় বুর্জোয়া দলগুলোর শাসন এবং স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন - এ দুটি বিষয় হলো পরস্পর বৈরী তথা ‘অ্যান্টিথেসিস’। স্থানীয় সরকারের ইস্যুটি তাই স্পষ্টতই লুটেরা ধনতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি সমাজ বিপ্লব সংগঠিত করার কর্তব্যের সঙ্গে জড়িত। এ কাজের দায়িত্বটি তাই সমাজ বিপ্লবের অগ্রণী শ্রেণিশক্তি তথা শ্রমজীবী জনগণ ও সমাজ বিপ্লবের কর্মীদেরই কাঁধে তুলে নিতে হবে।

লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি




Post-editorial written by Mujahidul Islam Selim published in the 29th. October issue of Daily Amader Shomoy.

কার গোয়ালে কে দেয় ধোঁয়া


সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম একটি ঘোষণা যে সহসাই আসবে তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল! ঘোষণাটি হলো- সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীমন্ডলী, সংসদ সদস্যবৃন্দসহ ১৫টি সাংবিধানিক পদাধিকারীদের পারিতোষক তথা বেতন-ভাতা দ্বিগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সংসদে পাস করানোর পর ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে সেই জুলাই মাস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তও কার্যকর হতে শুরু হয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের সেই বর্ধিত বেতন-ভাতার সঙ্গে ‘সামঞ্জস্য’ বিধানের জন্য মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপি প্রমুখের জন্য এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনটা করার জন্য কোনটা করা হলো, পরেরটির জন্য আগেরটি না আগেরটির জন্য পরেরটি তা নিয়ে যথার্থ সন্দেহমূলক আলোচনা আছে। সে যাই হোক, সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সব পদাধিকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করার কাজ অবশেষে সমাপ্ত হলো। কিন্তু এদের মোট সংখ্যা হলো মাত্র ২১ লাখ। অথচ দেশের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হলো ৫-৬ কোটি। অর্থাৎ সরকার যাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করল তাদের সংখ্যা মাত্র ৪ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিল? তাদের প্রতি কি সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই? এ সরকার কি শুধু ৪ শতাংশের জন্য?
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি যর্থাথভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, প্রধানত দু’কারণে। বাজারে মূল্যস্ফীতির কারণে আগের বেতন-ভাতায় পূর্বের সমপরিমাণ দ্রব্য ও সেবাসামগ্রী যখন কোনো ব্যক্তি আর কিনে আনতে অপারগ হয়ে পড়ে, তখন তার ‘ক্রয়ক্ষমতা’ তথা ‘প্রকৃত আয়’ একান্তভাবে পূর্বাবস্থায় বজায় রাখার প্রয়োজনে বেতন-ভাতা বাড়ানোটা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ তার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস ঠেকাতে তা করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আরেকটি সম্ভাব্য দিক আছে। তা হলো, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের জীবন-মান যদি বাড়াতে হয় তাহলেও সমানুপাতে বেতন-ভাতা বাড়ানোর মাধ্যমে (কিংবা জনস্বার্থে মোট সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে) তা করা সম্ভব। এই দুটির কোনো একটি কারণে কিংবা উভয় কারণে বেতন-ভাতার ‘সামঞ্জস্য’ বিধানের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
কিন্তু সরকার এসব যুক্তির ধারেপাশে যায়নি। যদি তারা সেই যুক্তির পথে যেত তাহলে স্বাভাবিকভাবে উল্লিখিত ৯৬ শতাংশ কর্মজীবীর (যারা সরকারি বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আওতার মধ্যে পড়ে না) বেতন-ভাতা-আয়-উপার্জন আনুপাতিক হারে বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের কাছে সমভাবে প্রাসঙ্গিক হতো। কিন্তু এই ৯৬ শতাংশের ক্ষেত্রে সরকারের যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই! ভাবটা এমন যে, ৯৬ শতাংশের যা হওয়ার তা হোক, যে ৪ শতাংশ মানুষ সরাসরি সরকারের বা রাষ্ট্রের কাজ করে, তাদের ‘সেবা’ করলেই যথেষ্ট। অথচ এই ৪ শতাংশের ‘সেবা’ করার টাকার সিংহভাগ জোগান দিতে হয় সেই অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশ মানুষকে। তাই সঙ্গত প্রশ্ন, কার গোয়ালে কে দেয় ধোয়া? যে সরকার এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে সে কি নিজেকে কোনোভাবে ‘জনগণের সরকার’ বলে দাবি করতে পারে?
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, এমপি প্রমুখসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঢালাওভাবে প্রায় ডবল করে সমান পরিমাণে (প্রায় ১০০ শতাংশ) বাড়ানো হয়েছে। উচ্চপদে অধিষ্ঠিত যে কর্মকর্তার বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা তার বেতন বাড়ানো হয়েছে আরও ৪০ হাজার। আর যে স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মচারীর বেতন ছিল ৫ হাজার তার বেতন আর মাত্র ৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির কারণে দু’জনই সমান পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও উঁচুতলার মানুষদের বেতন বাড়ানো হয়েছে স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের তুলনায় ৮ গুণ বেশি। এর ফলে বৈষম্য কি আরও বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করা হলো না? অথচ সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্য নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিল।
তাই দেখা যাচ্ছে যে, ৪ শতাংশ মানুষের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করার ফলে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সেই সূত্রে তাদের জীবন-মানে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়বে। সেই ভিন্ন ভিন্ন প্রভাবগুলো কী?
প্রথমত, এ কথা ঠিক যে, এই ৪ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রাতারাতি কম-বেশি মাত্রায় বাড়বে। গত কয়েক বছরের মুদ্রাস্ফীতির হার বিবেচনায় নিলে এই বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত। তবে তাদের মধ্যে নিচের গ্রেডের কর্মচারীদের তুলনায়, মন্ত্রী-এমপিসহ ওপরের গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি ঘটবে অনেক বেশি পরিমাণে। সবার বেতন ‘সমান পরিমাণে’ বাড়ানোর পরিবর্তে ‘সমান অনুপাতে’ বাড়ানোর ফলে এমনটি ঘটাই স্বাভাবিক। ফলে মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, এই বৈষম্যের পরিমাণ আরও বাড়বে এই কারণে যে, উচ্চস্থানে অবস্থিতদের এখন তাদের বেতনের আগের তুলনায় বেশ কম শতাংশ নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র কেনার পেছনে খরচ করতে হবে (কেউ চাইলেও চাল, ডাল, তেল ইত্যাদির ভোগ ইচ্ছেমতো তথা ৮-৯ গুণ পরিমাণে বাড়াতে পারে না)। ফলে অপরিহার্য পণ্যাদির বাইরে বিলাসদ্রব্যসহ অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী কেনার বা তাদের বাড়তি সম্পদের একাংশ বিদেশে পাচারের সক্ষমতা তাদের ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে আরও বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
তৃতীয়ত, কর্মক্ষমদের ৪ শতাংশের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হওয়ার কারণে যদি দ্রব্যমূল্য একই অনুপাতে বৃদ্ধি পায় তাহলে শেষ পর্যন্ত কারোরই, বিশেষত নিম্নতর গ্রেডের কর্মচারীদের কোনো লাভই অবশিষ্ট থাকবে না। মূল্যস্ফীতির ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা আগের অবস্থায়ই ফিরে আসবে। আর নিম্নতর স্কেলের কর্মচারীরা মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের বর্ধিত বেতনের সুবিধা যেভাবে ও যতটা দ্রুত হারাবে, উচ্চতর স্কেলের কর্মকর্তারা তাদের সুবিধাটা ততটা দ্রুত হারাবে না। এর ফলেও উঁচু-নিচুর মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে।
চতুর্থত, ৪ শতাংশ মানুষের বেতন বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। এই ৪ শতাংশ কোনোরকমে তা কম-বেশি সামাল দিতে পারলেও অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে যারা শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের, তারা তাদের আয় সমান গতিতে বাড়াতে পারবে না। ফলে ৯৬ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রাতারাতি হ্রাস পাবে। আগেকার সেই ক্রয়ক্ষমতা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তাদের মধ্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতি মানুষের অনেক সময় লেগে যাবে। এর নিট ফলাফল দাঁড়াবে গরিব-মেহনতি মানুষের কাছ থেকে সম্পদ ওপরতলার মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির হাতে স্থানান্তর হবে।
পঞ্চমত, মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হলেও শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি স্কেলের সুপারিশ প্রণয়ন ও ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, অসংগঠিত খাতে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার খর্বিত থাকায় যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও এখন সেভাবে নেই। প্রবর্তিত শ্রম আইনও শ্রমিকের স্বার্থে নয়। ফলে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকসহ গ্রাম ও শহরের সাধারণ মেহনতি মানুষের মজুরির হার (টাকার অংকে) আগের স্তরেই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা যায়। কিন্তু মাত্র ৪ শতাংশের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে পরিমাণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, এসব ৯৬ শতাংশ শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, দিনমজুরসহ অন্যদের ‘প্রকৃত আয়’ও তখন ক্রয়ক্ষমতার হিসেবে, সেই পরিমাণে হ্রাস পাবে।
ষষ্ঠত, যে ৪ শতাংশের বেতন-ভাতা বেড়েছে তাদের বাইরে যে ৯৬ শতাংশ সাধারণ মানুষ রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই প্রকৃত আয় বিভিন্ন মাত্রায় কমবে। এদের মোট সংখ্যা হলো কম করে হলেও ৫-৬ কোটি। এই ৫-৬ কোটি মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার ফলে তাদের শ্রমের ফসল হিসেবে সৃষ্ট এক বিশাল পরিমাণের বাড়তি ‘উদ্বৃত্ত মূল্য’ শেষ পর্যন্ত জমা হবে মুষ্টিমেয় লুটেরা-ধনিকদের হাতে। এভাবেই যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি পাবে ও বৈষম্য বাড়বে, তেমনি একই সঙ্গে মদদ পাবে অর্থনীতিতে লুটপাটের কর্মকান্ড ও ধারা।
৪ শতাংশের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ফলে অবশিষ্ট ৯৬ শতাংশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ১০০ শতাংশ মানুষ তথা সবাই যেন সমানভাবে লাভবান হয় সে জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো একই সঙ্গে গ্রহণ করা দরকারঃ
প্রস্তাবিত পে-স্কেলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত পর্যায়ক্রমে ১ঃ৫ কিংবা নিদেনপক্ষে ১ঃ৬-এ নামিয়ে আনা। (উল্লেখ্য, এই অনুপাত সম্পর্কে স্বাধীনতার আগে-পরে সাধারণ ঐকমত্য ছিল)।
স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতি বছর যৌক্তিক হারে বেতন বৃদ্ধির স্থায়ী ব্যবস্থা করা।
কলকারখানা-ক্ষেতখামারের সব শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, দিনমজুর ও মেহনতি মানুষের জন্য ১০ হাজার টাকা ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারণ এবং তার প্রদান-প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কমিশন গঠন করা ও তার সুপারিশের ভিত্তিতে বর্ধিত মজুরি স্কেল বাস্তবায়ন করা। সব ধরনের শ্রমিকদের স্বার্থে যৌথ দরকষাকষির অধিকারসহ অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদান করে শ্রম-আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান সংশোধন করা।
পৃথক মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ‘কন্ট্রোল’ দামে চাল, ডাল, গম, তেল, চিনিসহ ১২ ধরনের পণ্য রেশন দোকানের মাধ্যমে সপ্তাহভিত্তিতে সরবরাহ করা এবং সর্বত্র সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুসহ শক্তিশালী, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু করা।
বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারিভাবে সাশ্রয়ী আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। 
... ইত্যাদি।
কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষাকারী সরকার কখনই এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। সুতরাং ...। বুঝহে সুজন!

লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)  


আমাদের সময়, চতুর্থ পাতা, বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ প্রকাশিত




শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭

অক্টোবর বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উপলক্ষে আলচনা সভা


আজ ২৭ অক্টোবর ২০১৭, রোজ শুক্রবার বিকাল ৪ টায়, আশুলিয়া, পলাশবাড়ী (পল্লিবিদ্যুত) অবস্থিত গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যলয়ের সামনে- বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিউসি) সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির উদ্যেগে অক্টোবর বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উপলক্ষে আলচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাইরুল মামুন মিন্টু, অনুষ্ঠানে প্রধান আলচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা এড মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ সভাপতি ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক পার্থ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক  কমিটির সহ সভাপতি ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক  কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা সাইফুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সহ সভাপতি ও আশুলিয়া থানা রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলম পারভেজ । বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র সাভার উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদা বেগম সাজু । আলচনা সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু । আলচনা সভায় আলচক বৃন্দ্র অক্টোবর বিপ্লবের ইতিহাস ও শ্রমিক শ্রেনীর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন শ্রমিক শ্রেনীর রাষ্ট সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হলে শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবেনা তাই শ্রমিক শ্রেনীর ঐক্য বদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেনীর রাষ্ট সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।