Biplobi Barta

মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭

রাজনীতি :মতাদর্শ ও মতান্ধতা


রাজনীতি এখন আর ঠিক আগের মতো নেই। এ কথা সব মানুষেরই। কথাটি বহুলাংশে সঠিক। একসময় নীতি-আদর্শ ও সেই সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল রাজনীতির একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ‘নীতি-আদর্শ-মতাদর্শ’ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতো। যুগ বদলেছে। বর্তমানে এদেশেও ‘বাজার অর্থনীতির’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কয়েক দশক ধরে এই ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে আমাদের দেশ। ‘বাজার অর্থনীতি’ অবধারিতভাবে জন্ম দিয়েছে ‘বাজার রাজনীতির’। ঘটেছে রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রচেষ্টার পেছনে বাণিজ্যিক স্বার্থ প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। ‘নীতি-আদর্শ-মতাদর্শের’ বিষয়গুলো হয়ে পড়েছে গৌণ। হয়ে উঠেছে নিতান্তই উপযোগিতার (expediency) বিবেচ্য। রাজনীতিতে এখন তাই মতাদর্শ নিয়ে আলোচনা প্রায় হয় না বললেই চলে। দু’চারটি দলের মতাদর্শগত ভিত্তি যদিও অক্ষুণ্ন আছে, কিন্তু তা প্রধানত সীমাবদ্ধ ও আবদ্ধ হয়ে থাকছে নিজস্ব দলের ও রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের মধ্যে। তাছাড়া চলতি হাওয়ার রাজনীতির ‘বি-মতাদর্শকীকরণ’-এর প্রভাবে এসব দলের মতাদর্শিক চর্চার ক্ষেত্রেও ঘাটতি ও অবহেলা বাড়ছে। নীতি-আদর্শ-মতাদর্শের ক্ষেত্রে একাগ্র দলগুলোর মধ্যে একটি হলো কমিউনিস্ট পার্টি। এই দলের মতাদর্শ হলো ‘মার্কসবাদ’। কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শিক চর্চায় অবহেলা ঘটলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
নীতি-আদর্শ-মতাদর্শ নিয়ে আলোচনাকে অনেকে ‘তত্ত্বের কচকচানি’ বলে হেয় করে থাকে। একথা ঠিক যে, প্রয়োগ ও বাস্তব সংগ্রাম ছাড়া তত্ত্ব হলো বন্ধ্যা। সাথে সাথে একথাও সত্য যে, তত্ত্ব ছাড়া শুধু বাস্তব সংগ্রাম হলো অন্ধ। একথা মনে রেখেই মতাদর্শিক তত্ত্বচর্চায় মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। তত্ত্বচর্চা প্রসঙ্গে অভিযোগ আকারে অপর যে কথাটি বলা হয়ে থাকে তা হলো, মতাদর্শিক তত্ত্বচর্চা হলো জটিল ও দুর্বোধ্য কঠিন বিষয়। মাথা খাটিয়ে ও কষ্ট করে এসব তত্ত্বচর্চার বদলে কেবল ‘কমনসেন্স পলিটিক্স’ নিয়ে থাকাটিই সহজ ও ঝামেলামুক্ত! কিন্তু এ ধরনের ‘সহজ পন্থার’ চিন্তা রাজনীতিতে মতাদর্শিক স্খলনের পথ সুগম করে দেয়। মতাদর্শিক ভাবনা হলো ‘বিশেষ জ্ঞান’প্রসূত। শুধু ‘সাধারণ জ্ঞান’ দিয়ে তা আয়ত্ত করা যায় না। তাই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের, চিন্তার আলস্য ত্যাগ করে তত্ত্বচর্চার জটিল জগতে প্রবেশ করা একান্ত অপরিহার্য। মতাদর্শ সম্পর্কে আরেকটি অভিযোগ হলো—মতাদর্শ মাত্রই মতান্ধতার জন্ম দেয়। অন্য অনেক ক্ষেত্রে একথা সত্য হলেও ‘মার্কসবাদের’ ক্ষেত্রে এ অভিযোগ সত্য নয়। এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য কিছু কথা এখানে তুলে ধরছি।
যেকোনো মতাদর্শের প্রধান উপাদান হচ্ছে তার দার্শনিক ভিত্তি। সেই দার্শনিক ভিত্তির স্বরূপটি কখনো সূত্রায়িত থাকে, কিংবা কখনো তা অসূত্রায়িত আকারে বিরাজ করে। তাই, যেকোনো মতাদর্শের স্বরূপ ও মর্মকথা বুঝতে হলে সেই মতাদর্শের দার্শনিক ভিত্তিটি সম্পর্কে প্রথমে পরিষ্কার হওয়া একান্ত আবশ্যক। সব মতাদর্শেরই যেমন সূত্রায়িত অথবা অসূত্রায়িত একটি দার্শনিক ভিত্তি রয়েছে, ঠিক তেমনি সব মানুষেরই একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির গোড়ার কথা হলো তার সামগ্রিক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি। অর্থাত্ তার নিজের সাথে পারিপার্শ্বিক বহির্জগতের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে তার ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি। চেতনাসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে, নিজের মানব পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ রূপেই, কোনো না কোনোভাবে এ বিষয়ে একটি ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি যেকোনো মানুষের চিন্তাজগতে বিরাজ করতে বাধ্য। সবসময় সব মানুষ এ সম্পর্কে সচেতন না হলেও, তা তার মাঝে সতত বিরাজমান। দর্শন তথা সামগ্রিক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া কোনো মানুষের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আর যেহেতু দর্শনকে ঘিরে সৃষ্টি হয় নির্দিষ্ট মতাদর্শের, তাই মতাদর্শবিহীন মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই, থাকতে পারে না।
অনেকে আজকাল অতি পুরনো কথা নতুন করে বলতে শুরু করেছেন যে, “কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শের অনুসারী হওয়ার অর্থই হলো মুক্তচিন্তার ধারাকে সেই মতাদর্শের বাঁধাধরা সীমার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা”। তাই মুক্ত চিন্তার পূর্বশর্ত হলো “মতাদর্শ থেকে মুক্তি”। কিন্তু এ কথা কি পরিষ্কার নয় যে কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শ থেকে মুক্ত থাকার দৃষ্টিভঙ্গিটিই যখন কারো ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গি হয়, তখন সেটিই হয়ে ওঠে নতুন আরেকটি বিশেষ বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি, তথা দর্শন, তথা একটি নতুন মতাদর্শের ভিত্তি। ‘মতাদর্শবিহীনতার’ মতবাদই এ ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে আরেকটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ। এ যেন মতাদর্শ নিয়ে লুকোচুরি খেলার ব্যর্থ প্রয়াস। মানুষ যেহেতু মানুষ, তাই মতাদর্শ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ তার নেই। ঘুরে-ফিরে কোনো-না কোনো মতাদর্শ অবলম্বন করা ছাড়া তার উপায় নেই। তাই মুক্ত চিন্তার জন্য, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি লালনের জন্য, ‘মতাদর্শ থেকে মুক্তি’র প্রয়াস হবে নিষ্ফল প্রচেষ্টা মাত্র। মতাদর্শের বাইরে থাকার জন্য ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে তাই কোনো লাভ নেই। যা করতে হবে তা হলো, বিভিন্ন মতাদর্শের মধ্যে সেই মতাদর্শটিকে খুঁজে নিতে হবে (অথবা প্রয়োজনে নতুন সেই মতাদর্শই উদ্ভাবন করতে হবে) যা মুক্ত চিন্তার ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপূরক, যা বাস্তবতাকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে, বাস্তবতাকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখায় এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি সম্ভাবনাময় পথের নিশানা প্রদর্শন করে। মার্কসের নিজেরই ভাষায়, নিজের মতাদর্শ সম্পর্কে যার সারমর্ম কিনা, মূলত ‘সমালোচনামূলক’ এবং বিপ্লবী।
একথা সাধারণভাবে বলা যায় যে, অনেক সূত্রায়িত মতাদর্শই কোনো না কোনোভাবে ‘পরম সত্য’ ধারণ করার দাবি করে। কোনো কোনো মতাদর্শ অবশ্য তা উপস্থাপন করে একথা বলে যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হলো অজ্ঞেয়। কোনো কিছু সম্পর্কেই প্রকৃত ও পরম সত্য জানা সম্ভব নয়। কারণ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি মায়া-মরীচিকা, কিংবা তার অস্তিত্ব থাকলেও সে সম্পর্কে ‘মানুষের ইন্দ্রয়লব্ধ জ্ঞানের কোনো সত্যতা নেই’। কোনো কোনো মতাদর্শ আবার একথা বলে যে ‘পরম সত্য’ মানুষের চেতনার বাইরে (কেউ হয়তো তাকে অপার্থিব কোনো সত্তারূপে নির্দিষ্টকৃত করে থাকে) বিরাজ করছে। নিত্যরূপে বিরাজমান সেই পরম সত্যের অভিমুখে অভিযাত্রাই তখন মতাদর্শের কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে দেখা যায় যে, সাধারণভাবে সব মতাদর্শই নানাভাবে জ্ঞেয়, জ্ঞান ও সত্য সম্পর্কে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তনির্ভর। এক্ষেত্রে এসব মতাদর্শের যুক্তিগুলো হলো—যেহেতু মানুষের চেতনার বাইরে কিছুরই অস্তিত্ব নেই, অথবা কিছুই জ্ঞেয় নয়, বা কোনো জ্ঞানই পরম সত্য নয়, কিংবা সত্য হলো মানুষ ও বস্তুর বাইরে সদা বিরাজমান একটি অপার্থিব সত্তা ইত্যাদির কোনো একটি, তাই এ কারণে সাধারণভাবে সব সূত্রায়িত মতাদর্শ অনুসরণ করে সত্যানুসন্ধানের প্রচেষ্টা নিষ্ফল ও অর্থহীন প্রয়াস হতে বাধ্য। পরম সত্যকে সে তাই, সে সম্পর্কে উপস্থাপিত ফর্মূলার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। এ কারণে এসব মতাদর্শ হয়ে ওঠে মতান্ধতা, গোঁড়ামি ও ‘ডগমা’র উত্স। এসব সূত্রায়িত আবদ্ধ মতাদর্শ (closed formulated ideology) মানুষের আচরণ ও মননকে শাস্ত্রবদ্ধ করে রাখার প্রবণতার জন্ম দেয়। মানুষের জ্ঞানের বিকাশধারা হয়ে পড়ে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে রুদ্ধ। মতাদর্শ তখন হয়ে ওঠে সত্যের অচলায়তন। মতাদর্শ সম্পর্কে এ ধরনের প্রচলিত ধারণাই সাধারণভাবে স্বীকৃত। মার্কসবাদের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ অন্যরকম।
মতাদর্শের এই স্বীকৃত সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে যদি ‘মতাদর্শ’ অভিধা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে মার্কসবাদ হলো ‘মতাদর্শের’ নেতিকরণ অর্থাত্ an ideology which is anti-’ideology’। মার্কসবাদের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হলো মতাদর্শ সম্পর্কে ইতোপূর্বে উল্লিখিত এ ধরনের সার্বজনীন ধারণার বিপরীত। অন্যসব মতাদর্শ থেকে এক্ষেত্রে মার্কসবাদের মৌলিক চরিত্রগত পার্থক্যটা না বুঝতে পারলে মার্কসবাদের গোড়ার কথাটাই অনুধাবন করা যাবে না। মার্কসবাদের অন্যতম ভিত্তি হলো— বস্তু, দ্বন্দ্ব ও গতি। সেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগত তফাতের কারণেই মার্কসবাদ চিরযৌবনা, অনন্ত গতিময়তার প্রাণশক্তিসম্পন্ন একটি সৃষ্টিশীল জীবন্ত মতাদর্শ। সকল প্রকার সূত্রায়িত-আবদ্ধ মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়েই মার্কসবাদের জন্ম ও বিকাশ। যেখানেই মার্কসের অযোগ্য শিষ্যরা এই নিশান নামিয়ে ফেলেছেন, সেখানেই জন্ম নিয়েছে বিচ্যুতি ও বিকৃতি।
মার্কসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো— “এতোদিন দার্শনিকরা কেবল দুনিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন, কাজটা আসলে হলো তাকে পরিবর্তন করা।” এই বক্তব্যের মধ্যে একটি গভীর তাত্পর্য রয়েছে। অনেকে এই উক্তির অপব্যাখ্যা করে মার্কসবাদ সম্পর্কে এমন অপবাদ দিয়ে থাকেন যে, মার্কস তাঁর মতবাদকে হাজির করেছেন একান্তই প্রায়োগিক (Utilitarian) বিবেচনায়। তিনি মানবতাবাদী ও বিপ্লবী ছিলেন। বিপ্লবের জন্য একটি মতাদর্শ ‘প্রস্তুত’ করা বিশেষ জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেই প্রয়োজন থেকেই বিপ্লবের মতাদর্শ হিসাবে মার্কস তার মতবাদকে সৃষ্টি করেছেন। এটা নিতান্তই প্রায়োগিক। এর সাথে সত্য-মিথ্যার বিষয়টি কোনোভাবেই জড়িত নয়। এগুলোই হলো তাদের কথা। তাদের আরো কথা হলো, আজ বিপ্লবের যুগ যেহেতু শেষ হয়েছে (?), দুনিয়া অনেক বদলে গেছে, তাই সেই মতাদর্শের প্রাসঙ্গিকতা এখন আর নেই। তাছাড়া মার্কস তাঁর মতাদর্শ সম্পর্কে বলেছেন যে, এই মতাদর্শ শ্রেণিনিরপেক্ষ নয়, তা হচ্ছে শ্রমিকশ্রেণির মতাদর্শ। তাহলে কি এর দ্বারা একথাই স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে না যে, মার্কসবাদ আসলে শ্রেণি স্বার্থের দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে একটি পক্ষের স্বার্থ অবলম্বন করে ‘রচিত’ মতাদর্শ। সেখানে সত্য-মিথ্যা কোনো বিচার্য বিষয় নয়। মার্কসবাদকে এভাবে মূল্যায়ন করাটা হবে নিতান্তই ভ্রান্ত। তত্ত্বকে এবং তত্ত্বের সত্যতাকে প্রয়োগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এ ধরনের ভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
মার্কসবাদ নিঃসন্দেহেই বর্তমান সামাজিক বাস্তবতাকে রূপান্তরের তাগিদ থেকে উদ্ভূত। এই সমাজকে পাল্টাতে চায় বলেই মার্কসবাদ সমাজ ও জগেক অধিকতর পূর্ণতার সাথে বুঝতে চায়। সেই তাগিদই মার্কসবাদকে নিয়ে যায় বস্তুজগত্, চেতনাজগত্ তথা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষার অভিমুখে। কোনো কিছুকে বদলাতে হলে সে কাজটি তত বেশি ভালভাবে করা যায়, যত বেশি তার স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞান সত্যের কাছাকাছি হয়। বাস্তবতাকে বদলানোর প্রয়োজনেই দরকার হয় বাস্তবতা সম্পর্কে সত্য জ্ঞান। সেজন্যই প্রয়োজন হয় সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতির সুনির্দিষ্ট বাস্তবতা ও তার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যথাসম্ভব সত্য জ্ঞান। কিন্তু সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতি সম্পর্কে সত্য জ্ঞানানুসন্ধান নিশ্চিত করার জন্য স্বভাবতই প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞানানুসন্ধানের সঠিক পথ ও পদ্ধতি। এভাবেই, সমাজ পাল্টানোর তাগিদই মার্কসবাদকে নিয়ে যায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে সত্য জ্ঞানানুসন্ধানের পথ ও পন্থা নির্ধারণের দিকে। এভাবেই এসে পৌঁছায় তার মতাদর্শের মর্মকথায়, যার একটি প্রধান উপাদান হলো সত্যানুসন্ধানে তার বস্তুনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ পদ্ধতি। মার্কসবাদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তখন সম্ভব হয়ে ওঠে তত্ত্বের উদ্ভাবনের। তত্ত্ব উদ্ভাবন করে, সেই তত্ত্ব প্রয়োগ করে, বাস্তবতা থেকেই সেই তত্ত্বের সঠিকতা যাচাই করে নেয়া হয়। প্রয়োগের ধারায় উদ্ভাবিত তত্ত্বের সাথে ক্রমাগতই যুক্ত হতে থাকে নতুন মাত্রিকতা ও উপাদান।
এভাবে মার্কসবাদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তত্ত্বের নবায়নকে একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়ায় পরিণত করে। সে কারণে মার্কসবাদ কোনোভাবেই মতান্ধতা বা ‘ডগমাকে’ প্রশ্রয় দেয় না। এ কারণেই বলা যায় যে, মার্কসবাদ একাধারে যেমন পরিবর্তনের তাগিদে সৃষ্ট মতাদর্শ এবং সেই বিবেচনায় তার শ্রেণি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে, তেমনি তার মর্মকথা হলো তার সত্যানুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। শ্রেণি পক্ষপাতিত্বের কারণেই তাকে একটি সত্য মতাদর্শ হয়ে উঠতে হয়েছে। মতাদর্শ ও মতান্ধতা নিয়ে অতি সামান্য কিছু কথা সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। পাঠক সমাজের বিরক্তি ঘটছে না- এমনটি বোঝা গেলে, এসব বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলোচনা করার ইচ্ছে রইলো।
লেখক :মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন