শ্রমিক আওয়াজের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০০৬ সালে
ইদ্রীস ভাই এর মাধ্যেমে । আমরা শ্রমিকরা
অনেক কষ্টে থাকলেও আমাদের কথা কোন প্রত্রিকাতে তা লেখা হতনা । তাই আমি ইদ্রীস ভাইকে
বললাম আমাদের একটা প্রত্রিকা থাকলে শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা সেই প্রত্রিকায়
লেখা হত । ইদ্রিস ভাই আমাকে তখন শ্রমিক আওয়াজ এর সম্পাদক জাফর ভাই এর সাথে দেখা
করিয়ে দিলেন । তখন জাফর ভাই বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পাশে একটা বাসায়
থাকতেন । সেদিন জাফর ভাইকে প্রথম দেখে আমার জাফর ভাইকে সম্পাদক মনে হয়নি, আমার মনে
ছিল জাফর ভাই এক জন সাধারণ শ্রমিক । তার পর থেকে জাফর ভাই এর সাথে শ্রমিক আওয়াজ
নিয়ে নিয়মিত কথা হতো । শ্রমিক আওয়াজে শ্রমিকদের বিভিন্ন সমাস্যা কিভাবে তুলে ধরা
যায়, সাধারণ শ্রমিকদের কাছে কিভাবে শ্রমিক আওয়াজ পৌছে দেওয়া যায়, শ্রমিকদের কথা
শ্রমিকরা যাতে লেখে এই রকম নানান বিষয় । শ্রমিক আওয়াজকে রক্ষা করতে জাফর ভাই
চাকুরী হারিয়েছেন, সংসার হারিয়েছেন তবু শ্রমিক আওয়াজ ছাড়েননি । জাফর ভাইকে আমি
দেখেছি টাকার অভাবে না খেয়ে দিন কাটাতে, মাইলকে মাইল পায়ে হেটে পথ চলতে । আমরা
প্রতিদিন কারখানা ছুটির পর শ্রমিক আওয়াজ নিয়ে শ্রমিকদের বাসায় বাসায়-ম্যাসে ম্যাসে
গিয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলচনা করতাম । ২০০৮
সালে
ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার না থাকার কারনে আমরা শ্রমিকদের নিয়ে মিটিং-মিছিল করতে
পারতামনা কিন্তু আমরা শ্রমিক আওয়াজ এর কারনে শ্রমিক আওয়াজ বিক্রির কথা বলে
প্রতিদিন ম্যাসে ম্যাসে শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করতে পারতাম । শ্রমিক আওয়াজ শ্রমিকদের
কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠল, শ্রমিক আওয়াজ শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার
মাধ্যেমে পরিনত হল । ১৯৯৩ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী ৯৩০ টাকা
নির্ধারন হওয়ার পর ঘর ভাড়া, চাল, ডাল, আটা, সোয়াবিন সহ সকল জিনিসের দাম বেড়ে গেলেও
২০০৬ সাল পর্যন্ত আর মজুরী বাড়েনি । ২০০৬ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিদ্রোহের পর
সরকার বাধ্য হয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করে । ২০০৬
সালের পর শ্রমিকরা সংগঠিত হওয়ার কারনে গার্মেন্ট শ্রমিকরা মজুরী বৃদ্ধির জন্য ১৩
বছর অপেক্ষা করেনি । ২০১০ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলনের
মাধ্যেমে সরকারকে বাধ্য করেছে মজুরী বৃদ্ধি করতে । যার
অনেক খানি ভূমিকা শ্রমিক আওয়াজ রেখেছে । বিভিন্ন সুময় গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী
বৃদ্ধির আন্দোলনকে অনেকে অনেক রকম ভাবে প্রচার করার চেষ্টা করেছে, কোন কোন
প্রত্রিকা, টিভি নিউজ গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দলনকে বিদেশি সড়যন্ত্র কিংবা বিরোধী
দলের উস্কানি প্রচার করেছে কিন্তু শ্রমিক আওয়াজ এক মাত্র পত্রিকা শ্রমিকদের ন্যয্য
দাবির কথা তুলে ধরেছেন । শ্রমিকদের ন্যয্য দাবি তুলে ধরার করনে জাফর ভাইকে
সরকার-বিজিএমইএ কাছ থেকে অনেক হুমকি ধামকিও পেতে হয়েছে ।গত ডিসেম্বর ২০১৬ সালে
গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দলনের কথা সবায় অবগত থাকার কথা, ২০১৩ সালে
গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী বেসিক বেতন ৩০০০ টাকা নির্ধারণ হওয়ার পর এই তিন
বছরে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেয়াজ, তেল, লবন, ঘর ভাড়া, শিক্ষা-চিকিৎসা, যাতায়াত সহ
প্রায় সকল ব্যায় দিগুন হলেও শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি উপরন্তু প্রতিটা কারখানাতে তিন
জন শ্রমিকের কাজ দুজনকে দিয়ে করানো হয় । ইউনিয়ন করতে গেলেই শ্রমিকদের উপর নেমে আসে
ছাটাই-নির্যাতন, মামলা-হামলা । গার্মেন্ট শ্রমিকদের এত কষ্ট এত দুঃখ নিয়ে বেতন
বৃদ্ধির দাবি জানালেও মিডিয়া গুল গার্মেন্ট শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে
ধরেনি । কিন্তু শ্রমিক আওয়াজ সাহসিকতার সাথে শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে
ধরেছে । শ্রমিক আওয়াজের এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে শ্রমিক আওয়াজ যে সাহসি ভূমিকা
রেখেছে তা আগামীতেও সেই ভূমিকা রেখে যাবে সেই শুভ কামনা রইলো ।
লেখকঃ কে এম মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক, গার্মেন্ট
শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন