Biplobi Barta

শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭

"বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আজ হুমকিতে"

সম্প্রতি দেশে এক গুরুতর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলির মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটেছে। এসব ঘটনাবলি নিয়ে সত্য-অসত্য-অর্ধসত্য বিভিন্ন কথাবার্তা ও জল্পনা-কল্পনা মানুষের মুখে মুখে ছড়াচ্ছে। জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন। অধিকাংশ মানুষ এসব ঘটনায় হতভম্ব ও বিচলিত। ঘটনাবলির কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একটি মহলের মতে, তিনি ‘নায়ক’, আরেকটি মহলের মতে, তিনি ‘খলনায়ক’। ঘটনাবলি প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও বিষয়টি নিছক কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। বিচার বিভাগের মর্যাদা, সম্মান ও বিশেষত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’র অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসব ঘটনার দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা ও তার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবিতে পাকিস্তান আমলে দেশবাসীকে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অন্যান্য অনেক মৌলিক অর্জনের পাশাপাশি এই দাবিটির সাংবিধানিক স্বীকৃতিও অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন শুরু থেকেই বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানাবিধ উপায়ে বিচার বিভাগের ওপর সরকার তথা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরশাদী সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামকালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দাবিটি অন্যতম গণদাবি হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। ঐতিহাসিক ‘তিন জোটের রূপরেখায়’ ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করার বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু এরশাদী স্বৈরশাসনের পর, নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের অধ্যায় শুরু হলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে নিরঙ্কুশ করার পথে দেশ অগ্রসর হতে পারেনি। দেশের প্রধান দুটি বুর্জোয়া দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই এ জন্য প্রধানত দায়ী। এটি হলো বুর্জোয়া রাজনীতি ও বুর্জোয়া দলগুলোর চরম ব্যর্থতার জ্বলন্ত নিদর্শন। একই সঙ্গে তা হলো বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার দেউলিয়াপনার স্পষ্ট প্রকাশ।
নব্বইয়ের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ‘তিন জোটের রূপরেখা’র প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারগুলোর কথা প্রায় ভুলে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘গদি দখলের প্রতিযোগিতা’র নোংরা খেলায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। দেশের রাজনীতির প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছিল লুটপাট ও তার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দুপক্ষের প্রতিযোগিতা। পরিণতিতে লুটেরাদের হাত করা, সন্ত্রাসী-ক্যাডার ও হোন্ডা-গু-ার অপশক্তিকে দলে ভেড়ানো, নিজ দলকে অন্যের চেয়ে বেশি ‘ইসলাম পছন্দ’ হিসেবে প্রমাণ করা ইত্যাদি ‘অপরাজনীতি’র নানা বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্লাপাল্লির প্রতিযোগিতা রাজনীতির অঙ্গনকে রুগ্নতার অন্ধকারে গ্রাস করে ফেলেছে। হানাহানি, সন্ত্রাস, লুটপাট, নৈরাজ্যে দেশ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। নিছক ‘গদি দখল’কেন্দ্রিক এই ধারায় ‘রাজনীতি’র অবধারিত পরিণতিতে বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতার’ বিষয়টি পরিত্যক্ত হয়ে, বিচার বিভাগের ওপর উল্লিখিত দুটি পক্ষের দলীয় প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
যে কোনো বুর্জোয়া ধারার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো পরিচালিত হয় পরস্পর সম্পর্কিত কিন্তু পরস্পর থেকে স্বাধীনভাবে কর্মরত, রাষ্ট্রের তিনটি মূল স্তম্ভ বা বিভাগকে ভিত্তি করে। এগুলো হলো নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও কেউ কারো অধীনস্থ নয়। তাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রাষ্ট্রে ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ ও ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণ’ মর্মে সংবিধানের নির্দেশনা কার্যকর করা সম্ভব হয়ে থাকে। কিন্তু সর্বজন স্বীকৃত সেই নীতি ও ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে না। সামরিক সরকারগুলোর সময় নির্বাহী বিভাগকে যেভাবে অন্য দুটি বিভাগের ওপর খবরদারি ও নিয়ন্ত্রণের আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল, সে ধারা এখনো বহাল রাখা হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি সে পথই অনুসরণ করেছে। আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সরকার তথা নির্বাহী কর্তৃত্বের প্রভাবে পরিচালনার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগও এ বিষয়ে বিএনপির পথেই হাঁটছে। ‘গদি দখল’কেন্দ্রিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়ায় নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের হাতে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত করার এই চেষ্টার বলি হতে হয়েছে বিচার তথা আদালতের স্বাধীন কর্তৃত্ব।
আমাদের দেশে এই রেওয়াজই এখন প্রায় স্থায়ী হয়ে গেছে যে, ক্ষমতাসীন দলের যিনি দলীয়প্রধান, তিনিই একই সঙ্গে সরকারপ্রধান ও সংসদের নেতা। দলীয়প্রধান হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে তার মতামতই চূড়ান্ত হওয়ায় কাদের নিয়ে সংসদ গঠিত হবে সেটি তার ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে। এবারের সংসদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটগ্রহণ ছাড়াই, কেবল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সুবাদেই ১৫৪ জন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হয়েছেন। এই সংখ্যা সাধারণ আসনের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এদিকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সব সাংসদই ‘সংসদীয় দলের’ সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট দিতে বাধ্য। অন্যথায় তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। তা ছাড়া যেহেতু একই ব্যক্তি দলীয়প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদ নেতা, সে কারণে আইন বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের ও দলীয় নেতৃত্বের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা স্বাভাবিকভাবেই ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। সেরূপ একটি ‘নিয়ন্ত্রিত’ সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা অর্পিত হলে তা যে কার্যত বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বে পরিণত হবে এ কথা বুঝতে পারাটি মোটেও কঠিন নয়। এ কথাও পরিষ্কার যে, তেমন হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিনষ্ট হবে।
কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার’ চেয়ে ‘গদি দখলে রাখার’ বিবেচনা হলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সরকারের সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক ‘অভিযান’ পরিচালনার পেছনে এটিই হলো আসল কারণ। বলা বাহুল্য যে, বিএনপির শাসনামলে সে দলটিও একই চিন্তায় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। দুটি দলের শাসনামলেই এর ফলে বলি হয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
সংসদের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য যেসব সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব নির্বাচনী সংস্কার সাধন ইত্যাদি কাজ একান্ত প্রয়োজন - সেসব না করেই আওয়ামী লীগ কিছুদিন আগে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ বদলে ‘সংসদের’ হাতে নিয়ে এসে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছিল। আদালতে সেটি চ্যালেঞ্জ করা হলে হাইকোর্ট সেই সংশোধনীটি বাতিল করে রায় দিয়েছিল। সুপ্রিমকোর্ট তার বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে সম্প্রতি চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছেন। এর পর পরই শুরু হয়ে যায় বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সরকার ও সংসদের নোংরা বিষোদ্গার ও আক্রমণের সাম্প্রতিক নবপর্ব।
ষোড়শ সংশোধনী সম্পর্কে বিচার বিভাগের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি উল্লাস করেছিল। মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি করেছিল। এদিকে বিচার বিভাগের এই ‘স্বাধীন সিদ্ধান্ত’ সরকার ও সরকারি দলকে প্রচ-ভাবে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। বিচার বিভাগের প্রতি উভয় দলের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি যে ‘সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ’ - তা আবার নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল।
সুপ্রিমকোর্টের ৭ জন বিচারপতি সর্বসম্মতক্রমে এই রায় দিলেও সরকারপ্রধান বিচারপতিকে টার্গেট করে বিষোদ্গারের ঝড় তোলেন। রায়ে প্রধান বিচারপতির বিস্তৃত ‘পর্যবেক্ষণ’ থেকে সত্য-মিথ্যা উদ্ধৃতি ও মনগড়া অপব্যাখ্যা ইত্যাদি দ্বারা তারা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে শুরু করেন। অনেকে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তাকে উদ্দেশ করে কেউ কেউ ঘোষণা দিয়ে বসেন, ‘তোমাকে পদও ছাড়তে হবে, দেশও ছাড়তে হবে।’ প্রধান বিচারপতিকে প্রচ- চাপে রাখার প্রয়াসে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকার ও প্রশাসনের নানা শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রচার করা হয়, তিনি অসুস্থ ও ক্যানসারে আক্রান্ত। অথচ প্রধান বিচারপতি নিজমুখে জানান, তিনি সুস্থই আছেন। তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রিত করা হয়। জনমনে সন্দেহ জাগে, সবকিছু করা হচ্ছে প্রধান বিচারপতিকে ‘পদছাড়া ও দেশছাড়া’ করার জন্য সরকারের ‘অভিযানের’ অংশ হিসেবে।
দেশের প্রধান বিচারপতি এখন ছুটিতে বিদেশ আছেন। নভেম্বরে তার দেশে ফিরে আসার কথা। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্বের মেয়াদ বহাল আছে। কিন্তু আইনমন্ত্রী বলেছেন, ফিরে এলেও তার পক্ষে আদালতের বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করা ‘সুদূরপরাহত’। এদিকে প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন, অদক্ষতা ইত্যাদি ধরনের ১১টি অভিযোগ আছে বলে জানানো হয়েছে। এসবের সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তা ছাড়া এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পক্ষে সাফাই গাওয়ার বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য আমার নেই। তদুপরি বিষয়টি এখন তদন্তাধীন ও বিচারাধীন। আমি বিচলিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ নিয়ে। এ বিষয়ে আমার অবস্থান দৃঢ় আছে ও থাকবে।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পর্কে আইনানুগ পথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এটিই কাম্য। অভিযোগের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার পর তিনি চাইলে সে বিষয়ে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে পাঠাতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদকালজুড়ে তিনিই প্রধান বিচারপতি আছেন ও থাকবেন। তবে এতদসত্ত্বেও মানুষের অনেক জিজ্ঞাসা। তাদের মনে প্রশ্ন হলো, এসব অভিযোগ আগে কেন প্রকাশ করা হলো না? এসব অভিযোগের কথা আগেই যদি সরকারের জানা ছিল, তবে সে বিষয়ে আগেই কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? আর আইনের চোখে সবাই যদি সমানই হয়, তবে এসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হলো? ইত্যাদি।
প্রচার করা হচ্ছে, একটি ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। সেটি ‘প্রিয়েম্পট’ করা বা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার জন্যই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘অভিযান’ চালানো হয়েছে। এসব কথার সত্যতা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। কেউ আজ কারো কোনো কথা চট করে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। কিন্তু সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন, এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, ‘অসৎ পথে কোনো সৎ উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সাধন করা যায় না।’ যেমন কিনা ‘আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না’, তেমনি ‘ষড়যন্ত্রকে পাল্টা ষড়যন্ত্র দিয়ে নিঃশেষ করা যায় না।’
গত মঙ্গলবার একজন সিনিয়র মন্ত্রী প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কথা কম বলার পরামর্শ দিয়েছেন ও প্রধান বিচারপতির বর্তমান পরিণতি সম্পর্কে ইঙ্গিত করে তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কথা কম বলুন।’ এ থেকে কি এ কথাই মন্ত্রী মহোদয় স্বীকার করে নিলেন না যে, প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা, ছুটি, বিদেশ যাওয়া, ১১টি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া ইত্যাদি ঘটনাবলি ঘটেছে তার ‘বেশি কথা’ বলার জন্য, অন্য কোনো কারণে নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘অবাধ্য’ হলে তার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটবে। তার এ কথা দিয়ে তিনি কি ঘটনাবলির পেছনের ‘আসল কথাটি’ প্রকাশ করে দিলেন না?
প্রকৃত ঘটনা যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত মূল আঘাত এসে পড়ছে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’র ওপর। উদ্বেগের বড় উৎস হলো এখানেই। বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়ার বিপদের মুখে পতিত হয়। এর দ্বারা ‘গদির রাজনীতি’র পাটীগণিতে সাময়িক সুবিধা অর্জন সম্ভব হলেও তা পরবর্তী সময়ে ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারার’ মতো ব্যাপার হয়ে উঠতে বাধ্য। এটিই ইতিহাসের শিক্ষা। কিন্তু ইতিহাসের এটিও শিক্ষা যেÑ ইতিহাস থেকে সবাই শিক্ষা নেয় না। ‘গাছের আগায় বসে ডালের পেছনটা কাটা’, দেশের জন্য তো বটেই, শাসক দলের জন্যও যে এক সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেÑ সে কথা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করব।

লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)


 দৈনিক আমাদের সময়,২২ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ প্রকাশিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন