-অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে ১৯ অক্টোবর ১১টায় অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটিভ‚ক্ত ১১টি বাম-প্রগতিশীল কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের উদ্যোগে “অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ: কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিপ্লবী পুনর্গঠন” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির অন্যতম আহŸায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরাটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলাদেশ কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি মোর্শেদ আলী, জাতীয় কৃষক ক্ষেতমজুর সমিতির নেতা টিপু বিশ্বাস, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কৃষক সংহতির সভাপতি আনসার আলী দুলাল, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আলম মিঠু, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির নেতা আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশ কৃষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বিশাল ও কৃষক-ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতা নাসিরউদ্দিন নাসু প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, কম্যুনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম, বাসদ এর জুলফিকার আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য কৃষক আন্দোলনের শিক্ষা তুলে ধরে বলেন, রাশিয়া ইউরোপের মধ্যে শিল্প বিকাশের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া একটি দেশে কমরেড লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক বিপ্লব সফল করতে পেরেছিল কারণ লেনিন শ্রমিক এবং কৃষকের মৈত্রী গড়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে। তিনি বলেন, বিপ্লব পূর্ব রাশিয়া ছিল মূলত কৃষি অর্থনীতি নির্ভর, চাষাবাদও হতো সেকেলে পদ্ধতিতে।
১৮৬০ - ১৮৯০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় শিল্প বলতে মূলত ছিল বয়ন শিল্প, কয়লা খনি, লোহা ও ইস্পাত শিল্প। ১৮৬১ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর বিদ্রোহ-বিক্ষোভের ফলে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়। কৃষি এবং কৃষকের সমস্যা সমাধান না করে বিপ্লব অগ্রসর সম্ভব নয়। শ্রমিকের সংগ্রামের সাথে কৃষক সংলগ্ন থাকবে মার্কস এর এটা বিরাট শিক্ষা। চীন কিংবা ভিয়েতনামেও কৃষকদের সাথে নিয়ে বিপ্লব তরান্বিত হয়। নজরুল বলেছিলেন কৃষককে সামনে আনতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে কৃষকের কাছে সাম্যবাদী আন্দোলন যেতে পারেনি। মজুর এবং কৃষকের সম্মিলিত আন্দোলনই মুক্তির পথ। বঙ্কিমচনদ্র ছিলেন মধ্য বিত্তের প্রতিনিধি। তাই কৃষকের দুঃখ বেদনার কথা সাহিত্যে বর্ণনা করলেও বিপ্লব তথা সমাজ পরিবর্তনের কথা ভাবেননি। কৃষকদের কথা শরৎচন্দ্র বলেছেন কৃষক অনগ্রসর। লাঙ্গলের কাজ লাঙ্গলের লোককেই করতে দেন। রবীন্দ্রনাথও বিপ্লবের কথা ভাবতে পারেন নি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনের সাথে কৃষকের সংশ্লিষ্টতাই এ আন্দোলনকে প্রাণ দিয়েছিল। বামপন্থীরা ৬৯ এর অভ্যুত্থানকে কাজে লাগাতে পারেনি। ৭১ এ কৃষকের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ভ‚মিকা রেখেছেন। বিপ্লবী আন্দোলন সংস্কারমূলক আন্দোলন নয়। অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে লেনিন যেভাবে শ্রমিক কৃষকের সমন্বয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম করে বিপ্লব করেছিলেন। এখনও সারা দুনিয়ায় এবং বাংলাদেশে তা প্রাসঙ্গিক।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব পশ্চাদপদ রাশিয়াকে আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতায় সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। জমি, রুটি, শান্তির জন্য শ্রমিক কৃষক বিপ্লবে সামিল হয়েছিল। তাই বিপ্লবের সাথে সাথেই প্রথম ডিক্রী জারী করেন শান্তির দ্বিতীয় ডিক্রী জারী করেন জমির। সোভিয়েতের মাধ্যমে জমির ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হতো। আয়তনে রাশিয়া বড় হলেও আবাদী জমি ছিল তুলনামূলক কম। অধিকাংশ জমিই ছিল কর্ষণের অনুপযোগি।
তারপরেও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করে কয়েক দশকের মধ্যেই বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনে সোভিয়েত অসামান্য অগ্রণী ভ‚মিকা রাখে। ১৯৫৮ সালের আমেরিকার এক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, আমেরিকা বিশ্বে মোট কৃষি উৎপাদনের ১৬% উৎপাদন করে এবং রাশিয়া ১১% উৎপাদন করে (বেল ১৯৬১) যদিও সোভিয়েতে আবাদযোগ্য জমি আমেরিকার তুলনায় কম ছিল।
রাশিয়ায় বিপ্লবের পর পরই কৃষির আধুনিকীকরণ করা যায়নি, বাস্তবে গৃহযুদ্ধের পরই ১৯২৩ সাল থেকে আধুনিকীকরণ শুরু হয়। বিপ্লব পূর্ব রাশিয়ার জনগণ অভ্যস্ত ছিল প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ, অনাহারে। প্রবল শীতের প্রকোপ ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, অপুষ্টিতে ভুগতো; বিপ্লবের পর তারা পেলো শিক্ষা, চিকিৎসা ও ভাত, কাপড়রে নিশ্চয়তা।
বিপ্লবের পর রাশিয়ায় ৫ ধরনের মালিকানা ছিল - (১) ব্যক্তি মালিকানা (২) লীজ মালিকানা (৩) সমবায় মালিকানা (৪) যৌথ খামার ও (৫) রাষ্ট্রীয় মালিকানা। এই দীর্ঘ পথ তাদের অতিক্রম করতে বহু কঠিন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বহু বাধা বিঘœ পেরুতে হয়েছে।
বক্তাগণ বলেন, লেনিন ১৮৯৭ সালের এক সেন্সাস থেকে উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৬ ভাগের ৫ ভাগ কৃষির সাথে জড়িত। কৃষকেরা ছিল নিরক্ষর। অনেক জাতির ভাষা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এরকম একটি পশ্চাদপদ দেশে বিপ্লব করছেন লেনিন।
এঙ্গেলস বলেছিলেন মার্কসবাদ হচ্ছে ‘মানব সমাজ এবং চিন্তার গতি ও বিকাশের নিয়মসমূহের বিজ্ঞান’ এর প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সৃজনশীলতায় করতে হয়।
বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে নতুন আবিষ্কার করলে তা তাত্তি¡ক ও প্রায়োগিক বিকাশ হিসেবে গণ্য হয়। লেনিন মার্কসবাদের বহু সিদ্ধান্তকে নতুনভাবে উপস্থিত করে বিকশিত করেছেন। ক্রশ্চেভরা প্রয়োজনবাদকে হাতিয়ার করে বিকাশের বদলে বিকৃত করে হয়েছেন সংশোধনবাদী।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশও একটি কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখানে ৮০% মানুষ কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের সাথে যুক্ত। ফলে এই বিশাল অংশ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে বিপ্লবী আন্দোলন সফল হবেনা। লেনিন যেমন শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বিপ্লব করেছিলেন সঙ্গে কৃষকের ছিল দৃঢ় মৈত্রী। তেমনি আমাদের দেশেও শ্রমিক-কৃষকের দৃঢ় মৈত্রীর ভিত্তিতে বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশে কৃষক কিনতে ঠকে, বেচত ঠকে। ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না, উপকরণের দাম হু হু করে বাড়ে। কৃষি ভিত্তিক শিল্প পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে। ক্ষেতমজুরেরা সারা বছর কাজ পায় না, তাদের সন্তানের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা নাই। গ্রামীণ রেশনিংসহ কৃষক ক্ষেতমজুরদের দাবি আজ উপেক্ষিত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হাওড়ে এত বড় দুর্যোগ হলো, উত্তরাঞ্চলে বন্যায় কৃষক সর্বশান্ত হলো। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। মৌসুমে ধানের দাম কম। সিÐিকেটের দৌরাত্মে এখন চাল কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তাগণ, অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ কৃষক-ক্ষেতমজুর আন্দোলন গড়ে তোলা এবং শোষণ মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার জন্য আহŸান জানান। একই সাথে আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় কমিটির মহাসমাবেশ লাল পতাকা মিছিল সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানান।
পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে ১৯ অক্টোবর ১১টায় অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটিভ‚ক্ত ১১টি বাম-প্রগতিশীল কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের উদ্যোগে “অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ: কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিপ্লবী পুনর্গঠন” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির অন্যতম আহŸায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরাটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলাদেশ কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি মোর্শেদ আলী, জাতীয় কৃষক ক্ষেতমজুর সমিতির নেতা টিপু বিশ্বাস, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কৃষক সংহতির সভাপতি আনসার আলী দুলাল, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আলম মিঠু, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির নেতা আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশ কৃষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বিশাল ও কৃষক-ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতা নাসিরউদ্দিন নাসু প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, কম্যুনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম, বাসদ এর জুলফিকার আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য কৃষক আন্দোলনের শিক্ষা তুলে ধরে বলেন, রাশিয়া ইউরোপের মধ্যে শিল্প বিকাশের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া একটি দেশে কমরেড লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক বিপ্লব সফল করতে পেরেছিল কারণ লেনিন শ্রমিক এবং কৃষকের মৈত্রী গড়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে। তিনি বলেন, বিপ্লব পূর্ব রাশিয়া ছিল মূলত কৃষি অর্থনীতি নির্ভর, চাষাবাদও হতো সেকেলে পদ্ধতিতে।
১৮৬০ - ১৮৯০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় শিল্প বলতে মূলত ছিল বয়ন শিল্প, কয়লা খনি, লোহা ও ইস্পাত শিল্প। ১৮৬১ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর বিদ্রোহ-বিক্ষোভের ফলে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়। কৃষি এবং কৃষকের সমস্যা সমাধান না করে বিপ্লব অগ্রসর সম্ভব নয়। শ্রমিকের সংগ্রামের সাথে কৃষক সংলগ্ন থাকবে মার্কস এর এটা বিরাট শিক্ষা। চীন কিংবা ভিয়েতনামেও কৃষকদের সাথে নিয়ে বিপ্লব তরান্বিত হয়। নজরুল বলেছিলেন কৃষককে সামনে আনতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে কৃষকের কাছে সাম্যবাদী আন্দোলন যেতে পারেনি। মজুর এবং কৃষকের সম্মিলিত আন্দোলনই মুক্তির পথ। বঙ্কিমচনদ্র ছিলেন মধ্য বিত্তের প্রতিনিধি। তাই কৃষকের দুঃখ বেদনার কথা সাহিত্যে বর্ণনা করলেও বিপ্লব তথা সমাজ পরিবর্তনের কথা ভাবেননি। কৃষকদের কথা শরৎচন্দ্র বলেছেন কৃষক অনগ্রসর। লাঙ্গলের কাজ লাঙ্গলের লোককেই করতে দেন। রবীন্দ্রনাথও বিপ্লবের কথা ভাবতে পারেন নি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনের সাথে কৃষকের সংশ্লিষ্টতাই এ আন্দোলনকে প্রাণ দিয়েছিল। বামপন্থীরা ৬৯ এর অভ্যুত্থানকে কাজে লাগাতে পারেনি। ৭১ এ কৃষকের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ভ‚মিকা রেখেছেন। বিপ্লবী আন্দোলন সংস্কারমূলক আন্দোলন নয়। অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে লেনিন যেভাবে শ্রমিক কৃষকের সমন্বয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম করে বিপ্লব করেছিলেন। এখনও সারা দুনিয়ায় এবং বাংলাদেশে তা প্রাসঙ্গিক।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব পশ্চাদপদ রাশিয়াকে আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতায় সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। জমি, রুটি, শান্তির জন্য শ্রমিক কৃষক বিপ্লবে সামিল হয়েছিল। তাই বিপ্লবের সাথে সাথেই প্রথম ডিক্রী জারী করেন শান্তির দ্বিতীয় ডিক্রী জারী করেন জমির। সোভিয়েতের মাধ্যমে জমির ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হতো। আয়তনে রাশিয়া বড় হলেও আবাদী জমি ছিল তুলনামূলক কম। অধিকাংশ জমিই ছিল কর্ষণের অনুপযোগি।
তারপরেও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করে কয়েক দশকের মধ্যেই বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনে সোভিয়েত অসামান্য অগ্রণী ভ‚মিকা রাখে। ১৯৫৮ সালের আমেরিকার এক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, আমেরিকা বিশ্বে মোট কৃষি উৎপাদনের ১৬% উৎপাদন করে এবং রাশিয়া ১১% উৎপাদন করে (বেল ১৯৬১) যদিও সোভিয়েতে আবাদযোগ্য জমি আমেরিকার তুলনায় কম ছিল।
রাশিয়ায় বিপ্লবের পর পরই কৃষির আধুনিকীকরণ করা যায়নি, বাস্তবে গৃহযুদ্ধের পরই ১৯২৩ সাল থেকে আধুনিকীকরণ শুরু হয়। বিপ্লব পূর্ব রাশিয়ার জনগণ অভ্যস্ত ছিল প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ, অনাহারে। প্রবল শীতের প্রকোপ ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, অপুষ্টিতে ভুগতো; বিপ্লবের পর তারা পেলো শিক্ষা, চিকিৎসা ও ভাত, কাপড়রে নিশ্চয়তা।
বিপ্লবের পর রাশিয়ায় ৫ ধরনের মালিকানা ছিল - (১) ব্যক্তি মালিকানা (২) লীজ মালিকানা (৩) সমবায় মালিকানা (৪) যৌথ খামার ও (৫) রাষ্ট্রীয় মালিকানা। এই দীর্ঘ পথ তাদের অতিক্রম করতে বহু কঠিন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বহু বাধা বিঘœ পেরুতে হয়েছে।
বক্তাগণ বলেন, লেনিন ১৮৯৭ সালের এক সেন্সাস থেকে উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৬ ভাগের ৫ ভাগ কৃষির সাথে জড়িত। কৃষকেরা ছিল নিরক্ষর। অনেক জাতির ভাষা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এরকম একটি পশ্চাদপদ দেশে বিপ্লব করছেন লেনিন।
এঙ্গেলস বলেছিলেন মার্কসবাদ হচ্ছে ‘মানব সমাজ এবং চিন্তার গতি ও বিকাশের নিয়মসমূহের বিজ্ঞান’ এর প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সৃজনশীলতায় করতে হয়।
বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে নতুন আবিষ্কার করলে তা তাত্তি¡ক ও প্রায়োগিক বিকাশ হিসেবে গণ্য হয়। লেনিন মার্কসবাদের বহু সিদ্ধান্তকে নতুনভাবে উপস্থিত করে বিকশিত করেছেন। ক্রশ্চেভরা প্রয়োজনবাদকে হাতিয়ার করে বিকাশের বদলে বিকৃত করে হয়েছেন সংশোধনবাদী।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশও একটি কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখানে ৮০% মানুষ কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের সাথে যুক্ত। ফলে এই বিশাল অংশ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে বিপ্লবী আন্দোলন সফল হবেনা। লেনিন যেমন শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বিপ্লব করেছিলেন সঙ্গে কৃষকের ছিল দৃঢ় মৈত্রী। তেমনি আমাদের দেশেও শ্রমিক-কৃষকের দৃঢ় মৈত্রীর ভিত্তিতে বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশে কৃষক কিনতে ঠকে, বেচত ঠকে। ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না, উপকরণের দাম হু হু করে বাড়ে। কৃষি ভিত্তিক শিল্প পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে। ক্ষেতমজুরেরা সারা বছর কাজ পায় না, তাদের সন্তানের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা নাই। গ্রামীণ রেশনিংসহ কৃষক ক্ষেতমজুরদের দাবি আজ উপেক্ষিত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হাওড়ে এত বড় দুর্যোগ হলো, উত্তরাঞ্চলে বন্যায় কৃষক সর্বশান্ত হলো। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। মৌসুমে ধানের দাম কম। সিÐিকেটের দৌরাত্মে এখন চাল কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তাগণ, অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ কৃষক-ক্ষেতমজুর আন্দোলন গড়ে তোলা এবং শোষণ মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার জন্য আহŸান জানান। একই সাথে আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় কমিটির মহাসমাবেশ লাল পতাকা মিছিল সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন