Biplobi Barta

শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র'র উদ্যোগে- গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত



গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রসঙ্গে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শ্রম আইনের যেসব ধারা দেশের সংবিধান, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, আইএলও কনভেনশনের পরিপন্থী অবিলম্বে সেসব ধারা বাতিল করে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারসমূহের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিলের বিধান আছে। প্রচলিত শ্রম আইন বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেনে। তারা বলেন, আন্দোলন ছাড়া শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে আইন অর্জিত হবে না।
পুরানা পল্টন মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।
সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বর্ষীয়ান শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খান, শ্রম আইন সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির সদস্য শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান রতন, শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট নেসার আহমেদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি শ্রমিকনেতা মাহাবুব আলম, গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসির কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমীন, শ্রমিকনেতা আসলাম খান, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসনা হাবিব বুলবুল, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা রাজু আহমেদ প্রমুখ।
মনজুরুল আহসান খান বলেন, অতীতে শ্রম আইনে শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার জন্য এদেশের শ্রমিকশ্রেণিকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এখন এসে একের পর এক শ্রমিক আন্দোলনের সেসব অর্জন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন আদায় করতে হলে শ্রমিকদের জীবনপন লড়াই করতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো মজুরির প্রশ্নে শ্রমিকরা যতটা সচেতন আইনের প্রশ্নে শ্রমিকদের সচেতনতার অভাব ততটাই। শ্রমিকদের সচেতন করে আন্দোলন না গড়ে উঠলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। একারণেই বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নিবন্ধন ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের আওয়াজ তুলতে হবে।
শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের জন্য ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠিত হলেও সরকার শ্রমিক পক্ষকে না জানিয়েই সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। সরকারের এই গর্হিত কাজ থেকে এটাই অনুমেয় হয় শ্রম আইনের আসন্ন সংশোধন শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল হবে।
তিনি আরো বলেন, আইএলওর চাপে সরকার শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও নানান কৌশলে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা চলছে।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রচলিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার সঙ্কুচিত এবং কাঠামোগতভাবে মালিক ও আমলাদের সন্তুষ্টির দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার হরণ করার হাতিয়ার হিসেবে শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা ব্যবহার হচ্ছে। একইভাবে ইপিজেড এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পৃথক আইনে রোহিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সংগঠন করার ও সমবেত হওয়ার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জবরদস্তিমূলক সব ধরনের শ্রমকে নিষিদ্ধ করেছে। কর্মের অধিকার, কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিচারে যুক্তিসঙ্গত মজুরির অধিকার, বিশ্রাম, বিনোদন, অবকাশের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার ইত্যাদিকে সংবিধানে জনগণের মৌলিক প্রয়োজন বলা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে এসব নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন